নিঃসন্দেহে শা‘বান মাস অত্যন্ত ফাযীলাতপূর্ণ মাস। এ মাসের অবস্থান দেখলেই বুঝা যায় এটি কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। “রাজাব” যেটি হলো আশহুরুল হুরুম বা নিষিদ্ধ মাসসমূহের একটি, অপরদিকে “রামাযান মাস” যেটি হলো ক্বোরআনে কারীম নাযিলের মাস – এ দু’টি মোবারাক মাসের মধ্যখানে শা‘বান মাসের অবস্থান।
এ মাসেই মানুষের ‘আমালনামা বাৎসরিকভাবে আল্লাহ্র (0) দরবারে পেশ করা হয়। যেমন করে ফাজ্র ও ‘আসরের সময় দৈনিক ‘আমালনামা এবং প্রত্যেক সোমবার ও বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ‘আমালনামা আল্লাহ্র নিকট পেশ করা হয়। অর একারণেই রাছূলুল্লাহ 1 এমাসে বেশি বেশি রোযা রাখতেন। ছুনানু আবী দাঊদ এবং ছুনানুন নাছায়ী-তে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীছে রয়েছে, উছামাহ ইবনু যাইদ h তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন-
قُلْتُ للنبي صلى الله عليه و سلم: رَأَيْتُكَ تَصُومُ فِي شَعْبَانَ مَا لَا تَصُومُ فِي غَيْرِهِ مِنَ الشُّهُورِ؟، قَالَ: ” ذَاكَ شَهْرٌ يَغْفُلُ النَّاسُ عَنْهُ بَيْنَ رَجَبٍ وَرَمَضَانَ، وَفِيهِ تُرْفَعُ الْأَعْمَالُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ فَأَنَا أُحِبُّ أَنْ يُرْفَعَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ.بيهقي
অর্থ- আমি নাবী-কে (j) বললাম- আমি আপনাকে শা‘বান মাসে যত (নাফ্ল) রোযা রাখতে দেখি অন্য কোন মাসে এত রোযা রাখতে দেখি না? রাছূলুল্লাহ 1 বললেন:- রাজাব এবং রামাযানের মধ্যবর্তী এটি এমন এক মাস, যে মাস সম্পর্কে বেশিরভাগ লোকই উদাসীন (বেখবর) থাকে। এ মাসে ‘আমালসমূহ আল্লাহ্র নিকট পেশ করা হয়, তাই আমি পছন্দ করি যে আমি রোযাদার অবস্থায় আমার ‘আমালসমূহ আল্লাহ্র নিকট উপস্থাপিত হোক।বায়হাক্বী
এই বিশুদ্ধ হাদীছ থেকে জানা যায় যে, শা‘বান মাস হলো আল্লাহ্র দরবারে মানুষের বাৎসরিক ‘আমাল উপস্থাপনের মাস। এ মাসে রাছূলুল্লাহ 1 বেশি বেশি রোযা রাখতেন। তাই মুছলমাদের উচিত এ মাস সম্পর্কে খুবই সচেতন থাকা। মন্দ কাজে লিপ্ত না হওয়া, যাতে মন্দ কাজরত অবস্থায় নিজের ‘আমাল আল্লাহ্র নিকট উপস্থাপিত না হয়। সর্বোপরি উত্তম হলো রাছূলুল্লাহ 1 এর অনুসরণার্থে এ মাসে বেশি বেশি রোযা পালন করা। কমপক্ষে মাসের আইয়্যামে বীয অর্থাৎ ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোযা পালন করা। এখানে একটি কথা জেনে রাখা আবশ্যক যে, আইয়্যামে বীযের রোযা রাখতে যেয়ে ১৫ই শা‘বান রোযা পালনে কোন দোষ নেই। এমনিভাবে কেউ যদি আগে থেকে রোযা পালন করে আসছে, আর সেই ধারাবাহিকতায় যদি মধ্য শা‘বানের অর্থাৎ ১৫ই শা‘বান রোযা পালন করে, এবং এই দিন রোযা পালনে বিশেষ কোন ফাযীলত আছে বলে যদি মনে না করে, তাহলে তাতে কোনঅসুবিধা নেই।
মধ্য শা‘বানের রাত্রি:- অর্ধ শা‘বনের রাত্রি তথা ১৪ই শা‘বান দিবাগত রাতের ফাযীলাত সম্পর্কে বিভিন্ন ছনদে (বর্ণনাসূত্রে) বেশক’টি হাদীছ বর্ণিত রয়েছে। এগুলোকে সামনে রেখে নিঃসন্দেহে একথা বলা যেতে পারে যে, এটি একটি ফাযীলাতপূর্ণ রাত।
কেন এ রাতটি ফাযীলাতপূর্ণ, কী এর বৈশিষ্ট্য?
হ্যাঁ, এ রাতের ফাযীলাত সম্পর্কে বর্ণিত অধিকাংশ হাদীছই যা‘য়ীফ এবং অনেকগুলো মাওযূ‘ বা বানোয়াট। তবে ছনদ (বর্ণনাসূত্র) এবং মতন (মূল বক্তব্য) বিবেচনায় এতদ্বিষয়ে গ্রহণযোগ্য কয়েকটি হাদীছও বর্ণিত রয়েছে সেগুলো হলো যথা:-
(এক) আবূ ছা‘লাবাহ আল খুশানী 3 বর্ণিত হাদীছ। তিনি বলেছেন যে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
يَطَّلِعُ اللهُ – جَلَّت قدرتُهُ – إلى خلقِهِ في ليلةِ النصفِ من شعبان, فيغفرُ للمؤمنينَ, وَيُمْلِي لِلْكَافِرِينَ, ويدعُ – أي: يترك – أهلَ الحقدِ بحقدِهِم حتى يدعُوهُ.شعب الإيمان للبيهقي
অর্থ- অর্ধ শা‘বানের রাতে মহা ক্ষমতাশীল আল্লাহ স্বীয় বান্দাহ্দের প্রতি তাকান। অতঃপর তিনি মু’মিনদের ক্ষমা করে দেন, কাফিরদের অবকাশ দেন, আর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের হিংসা-বিদ্বেষ সমেত ছেড়ে দেন যে পর্যন্ত না তারা তা পরিত্যাগ ও বর্জন করে।শু‘আবুল ঈমান- লিল বাইহাক্বী
(দুই) মু‘আয ইবনু জাবাল 3 হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
يَطْلُعُ اللَّهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ.طبراني, صحيح بن حبان, شعب الإيمان للبيهقي
অর্থ- অর্ধ শা‘বানের রাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির দিকে তাকান অতঃপর তিনি মুশরিক এবং হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।ত্বাবারানী, সাহীহ ইবনু হিব্বান। শব্দের সামান্য হেরফেরসহ বাইহাক্বীও তাঁর শু‘আবুল ঈমান গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।
এসব হাদীছ থেকে জানা যায় যে, এ রাতে কাফির-মুশরিক, এবং হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত অন্য সকল মু’মিন-মুছলিমদের আল্লাহ 7 গণহারে ক্ষমা করেন।তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে এ রাতের ফাযীলাত বা বৈশিষ্ট্য হলো- এটি সাধারণ ক্ষমা ও মুক্তি লাভের রাত।
এখন এ বিষয়ে দু’টি প্রশ্ন দেখা দিতে পারে:-
প্রথম প্রশ্ন হলো- আবূ হুরাইরাহ 3 বর্ণিত সাহীহ হাদীছ থেকে জানা যায় যে, রাছূলুল্লাহ 1 বলছেন:-
يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخَرُ ، فَيَقُولُ : مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبُ لَهُ ؟ ، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيهِ ؟ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرُ لَهُ ؟متفق عليه
অর্থ:- প্রতি রাতে- রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা দুন্ইয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন:- কে আছো আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছো আমার কাছে চাইবে! আমি তাকে দান করব। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে! আমি তাকে ক্ষমা করব।সাহীহ বুখারী ও সাহীহ মুছলিম
তাই যেহেতু প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশেই আল্লাহ 0 তাঁর বান্দাহ্দের ক্ষমা করে থাকেন, সুতরাং তা অর্ধ শা‘বান রাত্রির বৈশিষ্ট্য বা ফাযীলাত হলো কিভাবে?
এর উত্তরে আমরা বলব যে, এই প্রশ্নের সমাধান এতদসম্পর্কিত হাদীছেই সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান রয়েছে। অর্ধ শা‘বান রাতের ফাযীলাত সম্পর্কিত হাদীছের ভাষ্য থেকে জানা যায় যে, ঐ রাতে ক্ষমার বিষয়টি শুধুমাত্র রাতের শেষ তৃতীয়াংশে সম্পাদিত হয় না, বরং সমগ্র রাতব্যাপী হয়ে থাকে। অর্ধাৎ মধ্য শা‘বানের রাতে আল্লাহ b নির্দিষ্ট কয়েকপ্রকার লোক ব্যতীত তাঁর সকল বান্দাহ্কে সারা রাতব্যাপী ক্ষমা করতে থাকেন। আর এটাই হলো অন্য সাধারণ রাতের চেয়ে অর্ধ শা‘বান রাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও ফাযীলাত। কেননা প্রতিরাতে দুন্ইয়ার আকাশে আল্লাহ্র (0) অবতরণ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছের ভাষ্য থেকে জানা যায় যে, সাধারণত আল্লাহ 7 প্রতিরাতে নির্দিষ্ট কয়েকপ্রকার লোক ব্যতীত অন্যান্য সকল বান্দাহ্কে ক্ষমা করে থাকেন শুধুমাত্র রাতের শেষ তৃতীয়াংশে।
এছাড়া অর্ধ শা‘বান রাতের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- সাধারণত প্রতিরাতের শেষভাগে আল্লাহ b কেবল তাদেরই ক্ষমা করে থাকেন যারা তাঁর কাছে ঐ সময়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। পক্ষান্তরে অর্ধ শা‘বান রাত্রির ফাযীলাত সম্পর্কিত হাদীছ থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ 0 নির্দিষ্ট কয়েকপ্রকার লোক ব্যতীত তাঁর অন্য সকল বান্দাহ্কে- তারা ঐ রাতে ক্ষমা প্রার্থনা করুক বা না করুক, সারা রাত ধরে সাধারণভাবে ক্ষমা করতে থাকেন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো:- যেহেতু এ রাতটি আল্লাহ্র পক্ষ হতে ক্ষমা ও মুক্তি লাভের রাত, তাই এ রাতে আল্লাহ্র নিকট বেশি বেশি তাওবাহ, ইছতিগফার, যিক্র, দো‘আ, ক্বোরআন তিলাওয়াত ও নামায-বন্দেগী করলে দোষ কী? এসব তো এ রাতের উপযোগী আ‘মাল বলেই মনে হয়।
এ প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিতভাবে আমরা ইত্তিলা‘ ৫ম সংস্করণে “শবে বরাত ও লাইলাতুল বারাআত” শিরোনামের প্রবন্ধে উল্লেখ করেছি, তবুও এখানে আরেকটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। আর তা হলো- সাহীহ হাদীছ থেকে জানা যায় যে, সাধারণতঃ প্রতিরাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ্র পক্ষ হতে ক্ষমা লাভের জন্য আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা স্বীয় বান্দাহ্দেরকে তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেন। যারা তখন তাঁর কাছে ক্ষমা চায় কেবল তাদেরকেই তিনি তখন ক্ষমা করে থাকেন। পক্ষান্তরে অর্ধ শা‘বান রাত্রির বিষয়টি এ রকম নয়। এ রাতে তিনি তাঁর বান্দাহ্দেরকে ক্ষমা লাভের জন্য তাঁর কাছে বিশেষভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেননি। (যদিও এরকম কিছু কথা একটি হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, তবে ঐ হাদীছটি অত্যন্ত দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য) বরং এ সম্পর্কিত হাদীছ থেকে স্পষ্টতঃ এ কথাই বুঝা যায় যে, নির্দিষ্ট কয়েক প্রকার লোক ব্যতীত অন্য সকল বান্দাহ্কে- তারা ক্ষমা প্রার্থনা করুক বা না করুক, আল্লাহ আরহামুর্ রাহিমীন স্বীয় অসীম দয়াগুণে ক্ষমা করে থাকেন।
মোটকথা, এ রাত্রটি হলো গণমুক্তি ও সাধারণ ক্ষমা লাভের রাত্রি। যদি ক্ষমা প্রার্থনা ব্যতীত ক্ষমা লাভের সুযোগ এই রাতে না থাকত, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ 0 তাঁর বান্দাহ্কে ঐ সময়ে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য বলতেন। যেমন- ক্বাদ্রের রাতে, জুমু‘আর দিনে এক বিশেষ মূহুর্তে, রাতের শেষ তৃতীয়াংশে বিশেষভাবে দু‘আ, ইছতিগফার ও ‘ইবাদাত-বন্দেগী করার নির্দেশ রয়েছে। যদি বিষয়টি এমনই হতো, তাহলে রাছূলুল্লাহ 1 তাঁর উম্মাতকে ঐ রাতে বিশেষভাবে নামায, তাওবাহ, ইছতিগফার ইত্যাদি ‘আমাল-বন্দেগী করার কথা বলতেন, যা তাঁর থেকে বিশুদ্ধ বা গ্রহণযোগ্য ছনদে আমাদের কাছে পৌঁছাত, যেভাবে অন্যান্য মাছনূন দু‘আ, যিক্র-আযকার ও ‘আমল-বন্দেগীর কথা পৌঁছেছে। কিন্তু দেখা যায় যে, রাছূলুল্লাহ 1 তাঁর উম্মাতকে এ বিষয়ে কোন নির্দেশ প্রদান করেননি। এমনকি ঐ রাতে উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ-কে (f) বিছানায় শায়িত রেখে রাছূলুল্লাহ 1 মাক্ববারাতুল বাক্বী‘-তে গমন সম্পর্কিত যে যা‘য়ীফ হাদীছটি ‘আয়িশাহ f সূত্রে বর্ণিত রয়েছে, সেই হাদীছকে যদি আমরা মেনেও নেই, তাহলে দেখা যায় যে, রাছূলুল্লাহ 1 উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ-কেও (f) ঐ রাতে বিশেষভাবে কোন ‘ইবাদাত-বন্দেগী, নামায, যিক্র, দু‘আ, দুরুদ বা তাওবাহ -ইছতিগফার করতে বলেননি। বরং ঐ রাতে কি হয়, কেবল সে বিষয়ে তাঁকে অবহিত করেছেন। তাছাড়া উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ f সম্পর্কে তো এরূপ কল্পনাও করা যায় না যে, রাছূলুল্লাহ 1 এর নির্দেশ বা নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তিনি এতো ফাযীলাতপূর্ণ একটি রাত ঘুমিয়ে কাটাবেন। কেননা্, উম্মাহাতুল মু’মিনীন ও সাহাবায়ে কিরাম 4 তারা প্রত্যেকেই আল্লাহ্র b ক্ষমা, রাহ্মাত, কল্যাণ ও জান্নাত লাভের পথে দৌড়ে এগিয়ে যেতেন, সৎকর্মে ঝাপিয়ে পড়তেন, আশা ও ভীতি নিয়ে আল্লাহ্কে (7) ডাকতেন। তারা ছিলেন আল্লাহ্র (0) প্রতি অতিশয় বিনয়ী।
অপরদিকে রাছূলুল্লাহ 1 সম্পর্কেও একথা আদৌ কল্পনা করা যায় না যে, তিনি তাঁকে (‘আয়িশাহ রাযিয়াল্লাহু ‘আনহা-কে) এতো ছাওয়াব ও সুবর্ণ সুযোগ লাভ থেকে বঞ্চিত হতে দেবেন; তাঁকে ঘুম থেকে জাগাবেন না। না, এরূপ কক্ষনো হতে পারে না। উত্তম-কল্যাণকর এমন কোন কাজ নেই যে সম্পর্কে রাছূলুল্লাহ 1 তাঁর উম্মাতকে অবহিত করেননি এবং মন্দ-ক্ষতিকর এমন কোন কাজ নেই যে সম্পর্কে রাছূলুল্লাহ 1 স্বীয় উম্মাতকে সতর্ক ও সাবধান করেননি।
(আল্লাহ্র অশেষ রাহ্মাত ও কল্যাণ বর্ষিত হোক রাছূলুল্লাহ 1 এর প্রতি এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবায়ে কিরামের প্রতি)
এবার তাহলে প্রশ্ন হলো- এ রাতে করণীয় কি কিছুই নেই?
এর উত্তরে আমরা বলব– হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। আর করণীয়টা কী, সে বিষয়ে ফাযীলাত সম্পর্কিত উল্লেখিত হাদীছ সমূহে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। তা হলো- এসব হাদীছে রাছূলুল্লাহ 1 জানিয়ে দিয়েছেন যে, “সাধারণ ক্ষমা ও মুক্তি দানের এ রাতেও কাফির, মুশরিক, হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ইত্যাদি নির্দিষ্ট কয়েকপ্রকার লোককে আল্লাহ 0 ক্ষমা করেন না”। এ কারণে প্রত্যেক মুছলমানের উপর ওয়াজিব, এই রাত্রিটি আসার আগেই ছোট, বড়, প্রকাশ্য, গোপনীয় সকলপ্রকার শির্ক ও কুফ্র থেকে নিজের কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম ও ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাসকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও পবিত্র করে নিয়ে এবং নিজের অন্তর থেকে দুনইয়াওয়ী (ব্যক্তিগত ও জাগতিক বিষয়ে) যাবতীয় হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা, রেষারেষি ও পঙ্কিলতা সম্পুর্ণরূপে ঝেড়ে ফেলে নিজেকে ঐ রাতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের সাধারণ ক্ষমা লাভের যোগ্য ও উপযুক্ত হিসেবে তাঁর সামনে হাযির করা।
শির্ক, কুফ্র, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি চরম অমার্জনীয় ও মন্দ অপরাধ থেকে মুক্ত ও বিরত থাকা প্রত্যেক আদম সন্তানের প্রতিটি মূহুর্তের কর্তব্য। তথাপি পরম দয়ালু আল্লাহ্র (7) পক্ষ হতে সাধারণ ক্ষমা ও মুক্তি লাভের সুবর্ণ সুযোগগুলো এসব পাপ-পঙ্কিলতার মধ্যে লিপ্ত থেকে যেন নষ্ট ও হাতছাড়া না হয় , সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন অপরিহার্য।
আসুন! আমরা আল্লাহ্র (b) রাহ্মাত, মাগফিরাত, কল্যাণ, বারাকাত, সফলতা, মুক্তি এবং আল্লাহ্র (0) সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের পথে দ্রুত এগিয়ে যাই। আমাদের অঙ্গীকার হোক: শির্কমুক্ত তাওহীদ, কুফ্রমুক্ত ইছলাম, বিদ‘আমুক্ত ‘আমাল-‘ইবাদাত এবং পবিত্র-পরিচ্ছন্ন, সরল ও সুশান্ত অন্তর।