আরাবী হার্‌ফ কয়টি ও কি কি?

‘আরাবী হার্‌ফ ২৯টি। যথা:- 

ا ب ت ث ج ح خ د ذ ر ز س ش ص ض ط ظ ع غ ف ق ك ل م ن و ه ء ي

মাখরাজের বিবরণ ও তার উচ্চারণ পদ্ধতি:-

যে স্থান থেকে হার্‌ফ (বর্ণ) উচ্চারিত হয় সে স্থানকে তথা হার্‌ফ উচ্চারণের স্থানকে মাখরাজ বলা হয়।

‘আরাবী হার্‌ফের মাখরাজ (উচ্চারণস্থল) ১৭টি-

১। আক্বসায়ে হাল্‌ক্ব বা গলার শেষভাগ যা বুকের সাথে লাগানো। এখান থেকে দু’টি হার্‌ফ উচ্চারিত হয়। ء- এবং  ه (হামযা ও হা)।

২। অছতে হাল্‌ক্ব বা গলার মধ্যভাগ । এখান থেকে দু’টি হার্‌ফ উচ্চারিত হয়- ع-ح

৩। আদনায়ে হাল্‌ক্ব বা গলার প্রথমভাগ যা মুখের নিকটবর্তী। এখান থেকে দু’টি হার্‌ফ উচ্চারিত হয় خ -غ-

উপরোক্ত ছয়টি হার্‌ফের   (ء- ه- ح- ع- خ- غ) উচ্চারণস্থল হালক্ব অর্থাৎ গলা বা কন্ঠদেশ হওয়ার কারণে এগুলোকে হুরুফে হালক্বীয়্যাহ বলা হয়।

৪। আক্বসায়ে লিছান বা জিহবার গোড়া ও তার সোজা বরাবর উপরের তালু। এখান থেকে ق উচ্চারিত হয়। (জিহবার গোড়াটুকু তার সোজা বরাবর উপরের তালুর সাথে ধাক্কা লাগিয়ে ق উচ্চারণ করতে হয়।)

৫। জিহবার গোড়া থেকে একটু সামনের অংশ ও তার বরাবর উপরের তালু। এখান থেকে ك উচ্চারিত হয়। (জিহবার গোড়া থেকে একটু সামনের অংশ তার বরাবর উপরের তালুর সাথে ধাক্কা লাগিয়ে ك উচ্চারণ করতে হয়।)

৬। অছতে লিছান বা জিহবার মধ্যভাগ ও তার বরাবর উপরের তালু। এখান থেকে ج- ش- ي এই তিনটি হার্‌ফ উচ্চারিত হয়। (জিহবার মধ্যভাগ তার বরাবর উপরের তালুর সাথে লাগিয়ে ج- ش- ي এই তিনটি হার্‌ফ উচ্চারণ করতে হয়।)

উপরে বর্ণিত ‘আরাবী ১১টি হার্‌ফের উচ্চারণে যেহেতু দাঁতের কোন সম্পর্ক নেই, তাই এগুলোকে অদন্তি হার্‌ফ বলা হয় এবং বাকি হার্‌ফগুলোর উচ্চারণে যেহেতু দাঁতের সংযোগ রয়েছে তাই ওগুলোকে দন্তযোগী হার্‌ফ বলা হয়।

দন্তযোগী (দাঁতের সংযোগে উচ্চারিত) হার্‌ফগুলো সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে তাজওয়ীদের পরিভাষায় দাঁতের নাম-পরিচয় জানা আবশ্যক।

সাধারণতঃ একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মোট ৩২টি দাঁত থাকে। এই দাঁতগুলো ছয়ভাগে বিভক্ত। তাজওয়ীদের পরিভাষায় সেগুলো হলো:-

১) ছানায়া ২) রোবা‘ইয়্যাহ ৩) আন্‌ইয়াব ৪) যাওয়াহিক ৫) তাওয়াহিন ৬) নাওয়াজিয। এই ছয় প্রকারের প্রতিটি আবার দু’ভাগে বিভক্ত:- ১) ‘উল্ইয়া বা উপরস্থ।  ২) ছুফলা বা নিম্নস্থ।

মুখের সম্মুখের মধ্যখানের উপরের দু‘টি দাঁতকে ছানায়া ‘উলইয়া এবং এর ঠিক নিচের দুটি দাঁতকে ছানায়া ছুফলা বলা হয়।

 ছানায়া ‘উলইয়ার দু্ই পাশে (ডানে ও বামে) একটি করে মোট দু‘টি এবং ছানায়া ছুফলার দু্ই পাশে (ডানে ও বামে) একটি করে মোট দু‘টি; সর্বমোট এই চারটি দাঁতকে রুবা‘ইয়্যাহ বলা হয়। তন্মধ্যে উপরের দু‘টি দাঁতকে রুবা‘ইয়্যাহ ‘উলইয়া এবং এর ঠিক নিচের দুটিকে রুবা‘ইয়্যাহ ছুফলা বলা হয়।

রুবা‘ইয়্যাহ্‌ ‘উলইয়ার দুই পাশে (ডানে ও বামে) একটি করে মোট দু‘টি এবং রুবা‘ইয়্যাহ ছুফলার দু্ই পাশে (ডানে ও বামে) একটি করে মোট দু‘টি; সর্বমোট এই চারটি দাঁতকে যথাক্রমে আন্‌ইয়াবে ‘উলইয়া এবং আন্‌ইয়াবে ছুফলা বলা হয়।

আন্‌ইয়াবে ‘উলইয়ার ডানে ও বামে একটি করে মোট দু‘টি দাঁতকে যাওয়াহিকে ‘উলইয়া এবং আন্‌ইয়াবে ছুফলার ডানে ও বামে একটি করে মোট দুটি দাঁতকে যাওয়াহিকে ছুফলা বলা হয়।

যাওয়াহিকে ‘উলইয়ার ডানে ও বামে তিনটি করে মোট ছয়টি দাঁতকে তাওয়াহিনে ‘উলইয়া এবং যাওয়াহিকে ছুফলার ডানে ও বামে তিনটি করে মোট ছয়টি দাঁতকে তাওয়াহিনে ছুফলা বলা হয়।

তাওয়াহিনে ‘উলইয়ার ডানে ও বামে একটি করে মোট দু‘টি দাঁতকে নাওয়াজিযে ‘উলইয়া এবং তাওয়াহিনে ছুফলার ডানে ও বামে একটি করে দু‘টি দাঁতকে নাওয়াজিযে ছুফলা বলা হয়।

(ছানায়া, রুবা‘ইয়্যাহ এবং আন্‌ইয়াবের বারোটি দাঁত ব্যতীত অন্য ২০টি দাতকে একত্রে আযরাছ বলা হয়।)

৭। জিহবার গোড়ার ডান কিংবা বাম কিনারা এবং উপরের যাওয়াহিকের একটি, উপরের তাওয়াহিনের তিনটি ও উপরের নাওয়াযিযের একটি এই মোট পাঁচটি দাঁত- এটি হলো ض এর মাখরাজ বা উচ্চারণ স্থল।

(জিহবার ডান কিংবা বাম কিনারা উক্ত দাঁতগুলোর ভিতর দিকের উপরি অংশে দাঁতের গোড়া ও মাঢ়ির সাথে সংযুক্ত করে ض উচ্চারণ করতে হয়।)

এ হার্‌ফটির আওয়ায বা উচ্চারণ নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির কারণে বাঙালী মুছলিম সমাজে অনেক বিবাদ ও ফিতনা-ফাছাদ পরিলক্ষিত হয়। স্বভাবতই এ হার্‌ফটি সর্বাধিক কঠিন ‘আরাবী হার্‌ফ। যে কারণে সাধারণ লোক তো দূরের কথা, অনেক ‘আরাবী শিক্ষিত লোককেও এই হার্‌ফটির সঠিক উচ্চারণে হিমশিম খেতে দেখা যায়, এবং অনেকেই তাতে ভুল করে ফেলেন। মূলত এই হার্‌ফটিকে “দাল” (د) এর আওয়াযে (যেমন-) দওয়াল্লীন পড়া কিংবা স্পষ্ট “যওয়া” (ظ) এর আওয়াযে যওয়াল্লীন পড়া উভয়টাই মারাত্মক ভুল। তাই অবশ্যই হার্‌ফটিকে তার মাখরাজ থেকে সঠিকভাবে উচ্চারণের চেষ্টা করতে হবে।

৮। জিহবার কিনারা, রুবা‌‘ইয়্যাহ ‘উলইয়া, আন্‌ইয়া‌ব ‘উলইয়া, ও যাওয়াহিকে ‘উলইয়া নামক দাঁতের গোড়া ও মাঢ়ি এবং জিহবার অগ্রভাগ (জিহবার মাথা), ছানায়া ‘উলইয়া দাঁতের গোড়া ও মাঢ়ি এবং তৎসংলগ্ন সোজা বরাবর তালু, এখান থেকে ل (লাম) উচ্চারিত হয়।

(জিহবার কিনারাকে রুবা‌‘ইয়্যাহ ‘উলইয়া, আন্‌ইয়া‌ব ‘উলইয়া, ও যাওয়াহিকে ‘উলইয়া এই দাঁতগুলোর গোড়া ও মাঢ়ির সাথে লাগিয়ে এবং জিহবার অগ্রভাগকে ছানায়া ‘উলইয়া দাঁতের গোড়া ও মাঢ়ির সাথে এবং তৎসংলগ্ন সোজা বরাবর তালুর সাথে ধাক্কা লাগিয়ে ل উচ্চারণ করতে হয়।)

৯। “নূন” এর মাখরাজ (উচ্চারণস্থল) “লাম” এর মাখরাজের খুব কাছাকাছি। জিহবার কিনারা, রুবা‌‘ইয়্যাহ ‘উলইয়া ও আন্‌ইয়া‌বে ‘উলইয়া দাঁতের গোড়া ও মাঢ়ি, জিহবার অগ্রভাগ, ছানায়া ‘উলইয়া দাঁতের গোড়া ও মাঢ়ি এবং তৎসংলগ্ন সোজা বরাবর তালু। এখান থেকে ن (নূন) উচ্চারিত হয়। (জিহবার কিনারাকে রুবা‌‘ইয়্যাহ ‘উলইয়া, আন্‌ইয়াবে ‘উলইয়া- এই দাতগুলোর গোড়া ও মাঢ়ির সাথে লাগিয়ে এবং জিহবার অগ্রভাগকে ছানায়া ‘উলইয়া দাঁতের গোড়া ও মাঢ়ির সাথে এবং তৎসংলগ্ন তালুর সাথে খুব হালকা ভাবে ধাক্কা লাগিয়ে ن উচ্চারণ করতে হয়।

তবে শুধু জিহবার অগ্রভাগকে সঠিকভাবে ছানায়া ‘উলইয়া দাঁতের গোড়া ও মাঢ়ির সাথে এবং তার বরাবর উপরের তালুর সঙ্গে লাগিয়ে ن উচ্চারণ করলে তা সঠিক মাখরাজ থেকে আদায় হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, জিহবা যেন যাওয়াহিকে ‘উলইয়াহ্‌ দাঁতের মাঢ়ির সাথে না লাগে।

১০। ر (রা) এর মাখরাজ “নূন” এর মাখরাজের খুব কাছাকাছি। জিহবার অগ্রভাগের পিঠ এবং তার বরাবর উপরের তালু । এখান থেকে ر উচ্চারিত হয়। (জিহবার অগ্রভাগের পিঠকে তার বরাবর উপরের তালুর সাথে ঘষা দিয়ে “রা” উচ্চারণ করতে হয়।)

১১। জিহবার অগ্রভাগ এবং ছানায়া ‘উলইয়া দাঁতের গোড়া। এখান থেকে  “ত্বোয়া” (ط) “দাল” (د)  এবং “তা” (ت) এই তিনটি হার্‌ফ উচ্চারিত হয়।

(জিহবার অগ্রভাগ ছানায়া ‘উলইয়া দাঁতের অর্থাৎ মুখের সামনের উপরের দুই দাঁতের গোড়ার সাথে লাগিয়ে ط , د এবং  ت এই তিনটি হার্‌ফ উচ্চারণ করতে হয়।

১২। জিহবার অগ্রভাগ এবং ছানায়া ‘উলইয়া ও ছানায়া ছুফলার (মুখের সামনের উপরের দুটি ও নিচের দুটি) দাঁতের উপারিভাগ।  এখান থেকে ص -س – ز এই তিনটি হার্‌ফ উচ্চারিত হয়।

(জিহবার অগ্রভাগকে মুখের সামনের উপরের দুটি ও নিচের দুটি দাঁতের অগ্রভাগের সাথে লাগিয়ে ز (ঝা) س (ছিন) ও ص (সোয়াদ) এই তিনটি হার্‌ফ উচ্চারণ করতে হয়।)

১৩। জিহবার অগ্রভাগ এবং ছানায়া ‘উলইয়া এর উপরি অংশ। এখান থেকে ظ -ذ  ث- এই তিনটি হার্‌ফ উচ্চারিত হয়। (জিহবার অগ্রভাগকে সামনের উপরের দুই দাঁতের অগ্রভাগের সঙ্গে লাগিয়ে ছা, যাল ও যোয়া উচ্চারণ করতে হয়।)

১৪।  নিচের ঠোঁটের পেট এবং সামনের উপরের দুই দাঁতের অগ্রভাগ। এখান থেকে ف এই একটি হার্‌ফ উচ্চারিত হয়। (নিচের ঠোঁটের পেটের সাথে সামনের উপরের দুই দাঁতের অর্থাৎ ছানায়া ‘উলইয়া দাঁতের অগ্রভাগ লাগিয়ে “ফা” উচ্চারণ করতে হয়।)

১৫। দুই ঠোঁট হতে ب – م- و উচ্চারিত হয়। ب “বা” দুই ঠোঁটের ভিতর দিকের ভিজা অংশ একত্রিত করে এবং م “মীম” দুই ঠোঁটের কিছুটা বাহির দিকের শুকনো অংশ একত্রিত করে উচ্চারণ করতে হয়। আর ঠোঁট দুটিকে সংকুচিত ও গোল করে দুই ঠোঁটের মধ্যখানে সামান্য সরু ফাঁক রেখে و “ওয়াও” উচ্চারণ করতে হয়।

“বা” “মীম” “ওয়াও” ও “ফা” এই চারটি হার্‌ফকে একত্রে হুরুফে শাফাওয়্যিয়াহ বলে।

১৬। ا- و- ى  (“আলিফ” “ওয়াও” এবং “ইয়া”) এই তিনটি হার্‌ফ যখন ছাকিন হবে এবং তাদের ডানের অক্ষরে তাদের অনুযায়ী হারকাত হবে অর্থাৎ ওয়াও ছাকিনের ডানে পেশ, ইয়া ছাকিনের ডানে যের এবং জয্‌ম বিহীন আলিফ ছাকিনের ডানে যবর হবে তখন এ তিনটি হার্‌ফ মুখের ভিতরের শূন্যস্থান থেকে উচ্চারিত হবে।

১৭। নাকের বাঁশী বা নাসিকামূল হতে গুন্নাহ উচ্চারিত হয়। গুন্নাহ হলো- নাক দিয়ে নম্র আওয়ায বের করা।  যেমন- ان – انت

 

সূত্র:-

১) মাতনুল জাযারিয়্যাহ লিশ্‌শাইখ শামছুদ্‌ দ্বীন মুহাম্মাদ ইবনুল জাযারী।

২) আল মুখতাসারুল মুফীদ লিশ্‌শাইখ মুহাম্মাদ ‘আব্দুর্‌ রাহীম বদরুদ্‌ দ্বীন।

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close