তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ বলতে কি বুঝায়?

তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ হলো- ”আল্লাহ 0 তাঁর সকল কর্মে একক, অদ্বিতীয় ও সম্পূর্ণরূপে অংশীদারহীন”, একথা নিজের ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাস, কথা ও কাজের দ্বারা প্রতিয়মান করা। আল্লাহ 8 তাঁর সকল কাজে, যেমন- সৃষ্টি করা, হুক্‌ম প্রদান, রিয্‌ক্ব দান, জীবন ও মৃত্যুদান, সমগ্র জগতের রাজত্ব ও পরিচালনা ইত্যাদিতে একক, অদ্বিতীয় ও সম্পূর্ণরূপে অংশীদারহীন বলে সর্বতোভাবে বিশ্বাস করা। অর্থাৎ এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ্ 0 সমগ্র জগতের সকল কিছুর একক ও একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, রিয্‌ক্ব দাতা, অধিপতি, সকল বিষয়ের পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক। তার ফায়সালাকে প্রত্যাখ্যান ও খন্ডনকারী কেউ নেই এবং তার নির্দেশই হলো চূড়ান্ত, যার পরে আর কোন নির্দেশ হতে পারে না।

তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ্‌র প্রমাণ হলো আল্লাহ্‌র (7) এ বাণী:-

إِنَّ رَبَّكُمُ اللّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلاَ لَهُ الْخَلْقُ وَالأَمْرُ تَبَارَكَ اللّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ.سورة الأعراف- ٥٤

অর্থাৎ- নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হলেন আল্লাহ! যিনি আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি ‘আরশের উপর আসীন হয়েছেন। তিনি রাতকে দিনের উপর সমাচ্ছন্ন করে দেন, যাতে রাত দ্রুত গতিতে দিনের অনুসরণ করে চলে। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজি। সবই তার নির্দেশে পরিচালিত। জেনে রেখো, সৃষ্টি আর হুক্‌ম প্রদানের মালিক তিনিই। চির মঙ্গলময় মহান আল্লাহ, তিনিই সর্বজগতের রাব্‌।ছূরা আল আ‘রাফ- ৫৪

এই প্রকার তাওহীদে পূর্ববর্তী মুশরিকরাও বিশ্বাসী ছিল, কিন্তু এই বিশ্বাস ও স্বীকৃতিদান তাদেরকে ইছলামে প্রবেশ করাতে পারেনি। কারণ তারা এ তাওহীদের অপরিহার্য বিষয় তাওহীদুল উলূহিয়্যূাহ্‌কে অস্বীকার করত। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ 0 ইরশাদ করেছেন:-

وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ الْعَزِيزُ الْعَلِيمُ.سورة الزخرف- ٩

অর্থাৎ- আর আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন- আকাশ ও যমীন কে সৃষ্টি করেছেন। তাহলে তারা অবশ্যই বলবে এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন মহাপরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞানী আল্লাহ।ছূরা আয্ যুখরুফ- ৯

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ b ইরশাদ করেছেন:-

وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ فَأَنَّى يُؤْفَكُونَ.سورة الزخرف- ٨٧

অর্থাৎ- আর আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন- কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে। তাহলে তারা অবশ্যই বলবে- আল্লাহ। তাহলে তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে?ছূরা আয্‌ যুখরুফ- ৮৭

রুবূবিয়্যাহ্‌তে আল্লাহ্‌র (0) এককত্বের যৌক্তিক ও নক্বলী (তাত্ত্বিক তথা ক্বোরআন ও ছুন্নাহ ভিত্তিক) অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। তাছাড়া সৃষ্টিই (সৃষ্টবস্তুই) তো হলো সৃষ্টিকর্তার প্রমাণ। শিল্পের মধ্যেই তো রয়েছে তার শিল্পির অস্তিত্বের প্রমাণ। কেননা কোন বস্তুই নিজে নিজে অস্তিত্ব লাভ করতে পারে না। বরং তার জন্য একজন উদ্ভাবক বা অস্তিত্বপ্রদানকারী; সৃষ্টিকর্তার অবশ্যই প্রয়োজন হয়। আর সেই উদ্ভাবক, অস্তিত্ব প্রদানকারী তথা সৃষ্টিকর্তাই হলেন মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন।

তাইতো আল্লাহ্ b ইরশাদ করেছেন:-

أَمْ خُلِقُوا مِنْ غَيْرِ شَيْءٍ أَمْ هُمُ الْخَالِقُونَ.سورة الطور- ٣٥

অর্থাৎ- তারা কি কোন কিছু ছাড়া এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই (নিজেদের) স্রষ্টা?ছূরা আত্‌ত্বূর- ৩৫

আল্লাহ 0 আরো ইরশাদ করেছেন:-

وَفِي الْأَرْضِ آيَاتٌ لِّلْمُوقِنِينَ. وَفِي أَنفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ. وَفِي السَّمَاء رِزْقُكُمْ وَمَا تُوعَدُونَ.سورة الذاريات- ٢٠-٢٢

অর্থাৎ- বিশ্বাসীদের জন্য ভূমন্ডলে ও তাদের নিজেদের মধ্যে অনেক নিদর্শনাবলী রয়েছে। অতএব তারা কি তা দেখে না এবং আকাশে রয়েছে তোমাদের রিয্‌ক্ব এবং যা তোমাদেরকে অঙ্গীকার দেয়া হয়েছে।ছূরা আয্‌ যারিয়াত- ২০-২২১০

এছাড়াও আরো অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে, যেগুলো আল্লাহ্‌র (7) অস্তিত্ব ও তাঁর শক্তির পরিপূর্ণতা ও সর্বব্যাপীতা প্রমাণ করে। প্রতিটি বস্তুতেই রয়েছে তাঁর নির্দশন, যা তাঁর একত্ব প্রমাণিত করে।


১. سورة الأعراف- ٥٤ 
২. ছূরা আল আ‘রাফ- ৫৪ 
৩. سورة الزخرف- ٩ 
৪. ছূরা আয্ যুখরুফ- ৯ 
৫. سورة الزخرف- ٨٧ 
৬. ছূরা আয্‌ যুখরুফ- ৮৭ 
৭. سورة الطور- ٣٥ 
৮. ছূরা আত্‌ত্বূর- ৩৫ 
৯. سورة الذاريات- ٢٠-٢٢ 
১০. ছূরা আয্‌ যারিয়াত- ২০-২২ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close