তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ বা তাওহীদুল ‘ইবাদাহ হলো:- আল্লাহ 0 মানব জাতিকে যে কাজের জন্য; যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, সেই কাজে তথা ‘ইবাদাতে আল্লাহ্র এককত্ব অক্ষুন্ন রাখা এবং ‘ইবাদাতে আল্লাহ্কে একক ও অদ্বিতীয় প্রমাণিত করা। মোটকথা, সকল প্রকার ‘ইবাদাত এক আল্লাহ্র জন্য নিবেদিত করা। তিনি ব্যতীত তাঁর সৃষ্টি; আর কাউকে আহবান না করা এবং ‘ইবাদতের বিন্দুমাত্র আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে নিবেদন না করা। এমনকি আল্লাহর নৈকট্যশীল কোন ফিরিশতাকে কিংবা আল্লাহ্র প্রেরিত কোন নাবীকেও না। যে ব্যক্তি এসকল ‘ইবাদাত থেকে সামান্য কিছু গায়রুল্লাহ্র (আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো) জন্য নিবেদন করবে, সে মুশরিক-কাফির বলে গণ্য হবে।
আল্লাহ্ (0) ইরশাদ করেছেন:-
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ. لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ.سورة الأنعام- ١٦٢-١٦٣
অর্থাৎ- আপনি বলুন! নিশ্চয়ই আমার নামায ও আমার ক্বোরবানী এবং আমার জীবন ও মৃত্যু বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহ্র জন্য নিবেদিত। তার কোন শরীক নেই এবং এজন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। আর আমি প্রথম আত্মসমর্পণকারী একজন।ছূরা আল আন‘আম- ১৬২-১৬৩
আল্লাহ 7 আরো ইরশাদ করেছেন:-
وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ.سورة المؤمنون- ١١٧
অর্থাৎ- যে কেউ আল্লাহ্র সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, তার কাছে যার ছনদ (প্রমাণ) নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফিররা সফলকাম হবে না।ছূরা আল মু’মিনূন- ১১৭
রাছূলের 1 সাথে তাঁর উম্মাতের দ্বন্দ্ব-বিবাদের মূল বিষয়-বস্তু ছিল এই তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ। কেননা পূর্ববর্তী অধিকাংশ মুশরিকগণ আল্লাহ্র রুবূবিয়্যাতের (প্রতিপালকত্বের) এককত্বে বিশ্বাসী ছিল। তারা এটা স্বীকার করতো যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা এবং জগত পরিচালনাকারী নেই। কিন্তু তারা তাঁর সাথে ‘ইবাদাতে অন্যকে শরীক করতো। তাদের ধারণা ছিল যে, এ সকল অংশীদার তাদের জন্য আল্লাহ্র (0) কাছে সুপারিশকারী হবে।
যেমন- আল্লাহ 8 তাদের কথা বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন:-
وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ.سورة الزمر- ٣
অর্থাৎ- যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যদেরকে অলী হিসেবে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের (দেব-দেবীদের) উপাসনা কেবল এ জন্যই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহ্র নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফায়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফিরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।ছূরা আয্যুমার- ৩
আর এ জন্যই আল্লাহ 0 সমস্ত রাছূলদেরকে খালিস আল্লাহ্র এককত্বের প্রতি দা‘ওয়াত দেয়ার জন্য প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ.سورة الأنبياء- ٢٥
অর্থাৎ- আর আমি আপনার পূর্বে যে রাছূলই প্রেরণ করেছি, তার প্রতি এই প্রত্যাদেশই করেছি যে, আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ‘ইবাদাত করো।ছূরা আল আম্বিয়া- ২৫
বর্তমান যুগের মুশরিক এবং পূর্ববর্তী যুগের মুশরিকদের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, পূর্বেকার যুগের মুশরিকদের তুলনায় বর্তমান যুগের মুশরিকদের শিরক আরো জঘন্য ও মারাত্মক। পূর্ববর্তী যুগের মুশরিকগণ সুখে-আনন্দে আল্লাহ্র সাথে শরীক করতো, কিন্তু তারা দুঃখ-কষ্টে, বিপদে-আপদে আল্লাহকে ডাকতো, আল্লাহ্র আশ্রয় গ্রহণ করতো এবং তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতো। যেমন- এ সম্পর্কে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
فَإِذَا رَكِبُوا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ إِذَا هُمْ يُشْرِكُونَ.سورة العنكبوت- ٦٥
অর্থাৎ- তারা যখন নৌযানে আরোহন করতো তখন তারা আল্লাহ্কে ডাকতো দ্বীনকে তাঁর জন্য খালিস করে একনিষ্ঠভাবে। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে স্থলের আশ্রয় দিতেন তখনই তারা তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন করত।ছূরা আল ‘আনকাবুত- ৬৫
আর বর্তমান যুগের মুশরিকরা তারা সুখে-শান্তিতে, আনন্দে, বিপদে-আপদে সর্বাবস্থায় গায়রুল্লাহ্র আশ্রয় গ্রহণ করে এবং তাদেরকে আহবান করে। যেমন আমাদের সমাজে অহরহ দেখা যায়, মুছলমান বলে দাবিদার অনেকে মুর্তি, পাথর অথবা মৃত ক্বাব্রবাসীর নিকট বালা-মুসীবত থেকে মুক্তি ও নিষ্কৃতি কামনা করছে, তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছে এবং তাদের উদ্দেশ্যে পশু উৎসর্গ ও নয্র-মানত করছে। নিজের মনোবাসনা পূরণ হওয়ার জন্য ক্বাব্রের পাশে অবস্থান করছে, ক্বাব্র ত্বাওয়াফ করছে, আর সাথে সাথে মৃত ক্বাব্রবাসীর প্রতি নিজের প্রয়োজন পূরণ করে দেওয়ার আশা পোষণ করছে। তাদের অনেককে আবার একথাও বলতে শুনা যায়:- “যখন তোমরা কোন বিষয়ের সমাধান না পেয়ে দিশেহারা হয় যাবে, তখন তোমরা ক্বাব্রবাসীদের আশ্রয় গ্রহণ করো”। أَعَاذَنَا اللَّهُ مِنْ ذَلِكَ
এদের সম্পর্কেই আল্লাহ 7ইরশাদ করেছেন:-
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ. وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِينَ.سورة الأحقاف- ٥-٦
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আল্লাহ্র পরিবর্তে এমন বস্তুর পূজা করে, যে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দেবে না, তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? তারা তো তাদের পূজা সম্পর্কেও বেখবর। যখন মানুষকে হাশরে একত্রিত করা হবে, তখন তারা তাদের শত্রু হবে এবং তাদের ‘ইবাদাত অস্বীকার করবে।ছূরা আল আহ্ক্বাফ- ৫-৬
অথচ মৃতরা ক্বাব্রে তাদের নিজেদেরই কোন উপকারের সাধ্য বা অধিকার রাখেনা, অন্যদের উপকারের সাধ্য বা অধিকার রাখা তো দূরের কথা। যারা নিজেদের কোন উপকার করতে পারে না, তারা অন্যের উপকার করবে কি করে? উপকার-অপকারের কর্তা ও মালিক তো একমাত্র আল্লাহ 0। এ সম্পর্কে আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-
وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يَمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.سورة الأنعام- ١٧
অর্থাৎ- আল্লাহ্ যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা অপসারণকারী কেউ নেই। আর যদি তিনি তোমার মঙ্গল করেন, তবে তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।ছূরা আল আন‘আম- ১৭