ইছলাম ভঙ্গ ও বিনষ্টকারী অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে মৌলিক ও প্রধান দশটি কারণ হলো নিম্নরূপ:-
(১) ‘ইবাদাতে আল্লাহ্র সাথে শরীক বা অংশীদার নির্ধারণ করা।
এর প্রমাণ হলো আল্লাহ্র (0) এ বাণী:-
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ.سورة يونس- ١٨
অর্থাৎ- এবং তারা উপাসনা করে আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে এমন বস্তুর, যা না তাদের কোন ক্ষতিসাধন করতে পারে না লাভ এবং বলে- “এরা তো আল্লাহ্র কাছে আমাদের সুপারিশকারী”। আপনি বলুন! তোমরা কি আছমান ও যমীনের এমন বিষয়ে আল্লাহ্কে অবহিত করছ, যে সম্পর্কে তিনি অবহিত নন? তিনি পুতঃপবিত্র ও মহান সে সমস্ত থেকে, যা তোমরা শরীক করছো।ছূরা ইউনুছ- ১৮
সুতরাং যে ব্যক্তি ‘ইবাদাতে আল্লাহ্র সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করবে, তার ঈমান বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে ইছলাম বহির্ভূত; কাফির-মুশরিক বলে গণ্য হবে।
(২) নিজের ও আল্লাহ্র মধ্যে কাউকে মাধ্যম নির্ধারণ করা, তার নিকট সুপারিশ প্রার্থনা করা, তাকে আহবান করা, তার উপর ভরসা করা ইত্যাদি।
ক্বোরাইশের কাফির-মুশরিকরা এ জাতীয় শির্কেই লিপ্ত ছিল। আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের জন্য তারা কতক মাধ্যম ও সুপারিশকারী সাব্যস্ত করেছিল। অথচ তারা রুবূবিয়্যাহ্ বা পালনকর্তৃত্বে আল্লাহ্র একত্বে বিশ্বাসী ছিল। তাদের এ ধরনের শির্ক সম্পর্কেই আল্লাহ্ 7 ইরশাদ করেছেন:-
أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ.سورة الزمر- ٣
অর্থাৎ- জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ ‘ইবাদাত আল্লাহ্রই জন্যে। যারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে এবং বলে যে, আমরা তাদের ‘ইবাদাত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহ্র নিকটবর্তী করে দেয়, নিশ্চয় আল্লাহ্ তাদের মধ্যে তারা যে বিষয়ে মতবিরোধ করছে সে ব্যাপারে ফায়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফিরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।ছূরা আয্ যুমার- ৩
বর্তমান যুগেও নিজেদেরকে মুছলমান বলে দাবিদার এমন কতক লোক রয়েছে, যারা জীবিত কিংবা মৃত বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে, কিংবা কোন তারকা, নক্ষত্র, গাছ, পাথর ইত্যদি সম্পর্কে, কিংবা আল্লাহ ভিন্ন তাদের কোন উপাস্যের আদলে (আকৃতিতে) গড়া মূর্তি, প্রতিমা ও ছবি সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করে যে, এগুলো তাদের জন্য আল্লাহ্র নিকট সুপারিশকারী, কিংবা জগত পরিচালনায় এদেরও কিছু ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব রয়েছে, এগুলো তাদের সমস্যার সমাধান করে দিতে বা প্রয়োজন পূরণ করে দিতে, কিংবা বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধার করতে সমর্থ ও সক্ষম। এসব কাজ যারা করে, তারা যদিও নিজেকে ঈমানদার ও মুহাম্মাদ 1 এর অনুসারী বলে দাবি করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা হলো ইছলাম বহির্ভূত; কাফির-মুশরিক। ইছলামের নাবী মুহাম্মাদ 1 এ জাতীয় শির্ককে ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং মাক্কার কাফির-মুশরিকসহ গোঁটা মানবজাতিকে এ ধরনের শির্ক সম্পূর্ণরূপে পরিহার ও বর্জন করার আহবান জানিয়েছেন।
আল্লাহ্ b ইরশাদ করেছেন:-
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ. وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ.سورة سبا- ٢٢-٢٣
অর্থাৎ- বলুন! তোমরা তাদেরকে আহবান করো, যাদেরকে উপাস্য মনে করতে আল্লাহ্ ব্যতীত, তারা নভোমন্ডল ও ভু-মন্ডলের অণু পরিমাণ কোনকিছুর মালিক নয়, এদু’য়ের মাঝে তাদের কোন অংশও নেই এবং তাদের কেউ আল্লাহ্র সহায়কও নয়। যার জন্যে অনুমতি দেয়া হয়, তার জন্যে ব্যতীত আল্লাহ্র কাছে কারও সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না।ছূরা ছাবা- ২২-২৩
অন্য আয়াতে আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ قُلْ أَفَرَأَيْتُمْ مَا تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ قُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُونَ.سورة الزمر- ٣٨
অর্থাৎ- যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আছমান ও যমীন কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে- আল্লাহ। বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি আল্লাহ আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তবে তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত যাদেরকে ডাকো, তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি রাহ্মাত করার ইচ্ছা করলে তারা কি সে রাহ্মাত রোধ করতে (ঠেকাতে) পারবে? বলুন, আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে।ছূরা আয্ যুমার- ৩৮
আল্লাহ 0 আরো ইরশাদ করেছেন:-
وَاتَّخَذُوا مِنْ دُونِ اللَّهِ آلِهَةً لِيَكُونُوا لَهُمْ عِزًّا. كَلَّا سَيَكْفُرُونَ بِعِبَادَتِهِمْ وَيَكُونُونَ عَلَيْهِمْ ضِدًّا. سورة مريم- ٨١-٨٢
অর্থাৎ- তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য ইলাহ (উপাস্য) গ্রহণ করেছে, যাতে তারা তাদের জন্যে সাহায্যকারী হয়। কখনই নয়, তারা (উপাস্যরা) তাদের ‘ইবাদাত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিপক্ষে চলে যাবে।ছূরা মারইয়াম- ৮১-৮২
মুছলমান বলে দাবিদার অনেককে দেখা যায় যে, তারাও মুশরিকদের অনুসরণ ও অনুকরণে ক্বব্র-মাযারকে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও পূজা করছে। ক্বব্র ও মাযারবাসীর উদ্দেশ্যে পশু জবাই ও বিভিন্ন প্রকার নয্র-মানত পেশ করছে। তাদের নিকট নিজের সমস্যা সমাধান করে দেয়ার বা প্রয়োজন পূরণ করে দেয়ার জন্য প্রার্থনা করছে এবং তাদেরকে নিজেদের ও আল্লাহ্র মধ্যে মাধ্যম বলে বিবেচনা করছে। প্রকৃতপক্ষে এসব কাজই হলো সুস্পষ্ট কুফ্র ও শির্ক। তাই যে ব্যক্তি এ ধরনের কোন কাজ করবে, তার ঈমান বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে ইছলাম বহির্ভূত, কাফির-মুশরিক বলে গণ্য হবে।
(৩) ধর্মত্যাগী মুরতাদ ও মুশরিকদেরকে কাফির-মুশরিক বলে মনে না করা, কিংবা তারা যে কাফির-মুশরিক, সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা অথবা তাদের পথ ও মতকে সঠিক বলে বিশ্বাস করা। এমনিভাবে এ ধরনের কোন কথা বলা যে, ইয়াহুদী, খ্রিষ্ট, ইছলাম, সব ধর্মই সঠিক ও সত্য এবং এসকল প্রতিটি ধর্মই তার অনুসারীকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছায়। তাই যার যে ধর্ম ইচ্ছা ও পছন্দ হয়, সে তা গ্রহণ করতে পারে, তাতে কোন অসুবিধা নেই”।
এ ধরনের কথাবার্তা ও ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাস হলো ইছলাম বিনষ্টকারী ও ইছলাম থেকে বহিষ্কারকারী সুস্পষ্ট কুফ্র (আল্লাহ্কে অস্বীকার করা) ও শির্ক (আল্লাহ্র সাথে আংশীদার করা)। কেননা আল্লাহ্র একত্বে বিশ্বাস তথা তাওহীদের অপরির্হায দাবি ও শর্ত হলো দু’টি।
(এক) সকল প্রকার তাগুতকে অস্বীকার করা। অর্থাৎ আল্লাহ 7 ভিন্ন সকল উপাস্য ও তাদের উপাসনাকারীদের অস্বীকার করা এবং তাদের থেকে নিরাপদ দূরে থাকা।
(দুই) এক আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
আর এটাই হলো কালিমাহ ‘‘লা-ইলাহা ইল্লালাহ”। (আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সত্যিকার মা‘বুদ নেই) এর প্রকৃত অর্থ, তাৎপর্য, দাবি ও চাহিদা। এ সম্পর্কে আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ.سورة الممتحنة- ٤
অর্থাৎ- তোমাদের জন্যে ইবরাহীম ও তাঁর সংঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা যখন তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলেন- তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে যাদের ‘ইবাদাত কর, তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি। তোমরা এক আল্লাহ্তে বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা ও বিদ্বেষ থাকবে।ছূরা আল মুমতাহিনাহ- ৪
আল্লাহ্ 1 আরো ইরশাদ করেছেন:-
لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَدْ تَبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ.سورة البقرة- ٢٥٦
অর্থাৎ- দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নিঃসন্দেহে হিদায়াত গুমরাহী (ভ্রষ্টতা ও বিপথগামীতা) থেকে পৃথক হয়ে গেছে। সুতরাং যে তাগুতদেরকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিবে সুদৃঢ় হাতল যা ভাঙ্গবার নয়। আল্লাহ্ সবই শুনেন এবং জানেন।ছূরা আল বাক্বারাহ- ২৫৬
রাছূল 1 বলেছেন:-
مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَكَفَرَ بِمَا يُعْبَدُ مَنْ دُونِ اللهِ، حَرُمَ مَالُهُ، وَدَمُهُ، وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ.رواه مسلم
অর্থ- যে ব্যক্তি “আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মা‘বূদ নেই” একথা স্বীকার করে এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য যা কিছুর উপাসনা করা হয়, সে সবকে অস্বীকার করে, তাঁর সম্পদ ও প্রাণ নিরাপদ এবং তার হিসাব আল্লাহ্র নিকট।সাহীহ্ মুছলিম
এ হাদীছ থেকে স্পষ্টতঃ বুঝা যায় যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মা‘বূদ নেই” একথা মুখে স্বীকার করলেও আল্লাহ ব্যতীত যা কিছুর উপাসনা করা হয় সেগুলোকে অস্বীকার ও বর্জন করে না, তার জান ও মাল ইছলামী শারী‘য়াতের দৃষ্টিতে নিরাপদ নয়। এমনিভাবে মুশরিক অথবা আহলে কিতাবদের (ইয়াহুদী-নাসারা সম্প্রদায়কে) কাফির বলে বিশ্বাস না করার কিংবা কারো কাফির হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়া সত্যেও তাকে কাফির বলা থেকে বিরত থাকার, বা নীরবতা অবলম্বন করার অথবা যাদের কাফির হওয়ার বিষয়টি ক্বোরআন ও ছুন্নাহ দ্বারা সুনির্ধারিত, সুনিশ্চিত ও সুস্পষ্ট, তাদের কাফির হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয় পোষণ করার অর্থ হলো আল্লাহ্কে (b), তাঁর কিতাবকে ও তাঁর রাছূল মুহম্মাদকে (1) অস্বীকার করা এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য রাছূলের (1) রিছালাতের সামগ্রিকতা ও সর্বজনীনতাকে (অর্থাৎ রাছূলের 1 রিছালাত যে সমগ্র মানবজাতির জন্য, একথাকে) অস্বীকার ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
সমগ্র মুছলিম উম্মাহ এ বিষয়ে একমত, যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে (0), তাঁর কিতাবকে ও তাঁর রাছূল মুহম্মাদকে (1) এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য রাছূলের রিছালাতের সামগ্রিকতা ও সর্বব্যাপীতাকে অস্বীকার ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, সে আর মুছলমান থাকে না, বরং সে কাফির-মুশরিকে পরিণত হয়।
“ধর্ম নিরপেক্ষতা”, “মুছলিম-অমুছলিম সবাই ভাই ভাই, সবাই পরস্পর মিত্র”, “জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায়” ইত্যাদি বিভিন্ন দাবি ও শ্লোগানের নামে ইছলাম ভঙ্গ ও বিনষ্টকারী এ কারণটি বর্তমানে মুছলমানদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিরাজমান। তাই প্রত্যেক মুছলমানের এ সব বিষয়ে বিশেষভাবে সর্তক ও সাবধান হওয়া অবশ্য কর্তব্য।
(৪) এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, রাছূল মুহাম্মাদ (1) এর নির্দেশিত হিদায়াত তথা শারী‘য়াত থেকে অন্য পথ বা ধর্ম অধিক পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ, কিংবা রাছূলের (1) অনুসৃত ও নির্দেশিত বিধান (হুক্ম-আহ্কাম ও নিয়ম-নীতি) থেকে অন্য কারো বিধান অধিক উত্তম।
মোটকথা, রাছূল 1 এর বিধান থেকে অন্য কোন বিধানকে বেশি প্রাধান্য ও মর্যাদা দেয়া ইছলাম ভঙ্গ ও বিনষ্টের অন্যতম কারণ। তাই প্রত্যেক মুছলমানের এই বিশ্বাস পোষণ করা ওয়াজিব যে, রাছূল 1 এর যাবতীয় কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম ও সম্মতি হলো আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অহী তথা এক প্রকার প্রত্যাদেশ। অহীর দিক থেকে রাছূলের (1) ছুন্নাহ হলো ক্বোরআনেরই সাথী বা সহযাত্রী।
এ সম্পর্কে আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى. إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى.سورة النجم- ٣-٤
অর্থাৎ- এবং তিনি (মুহাম্মাদ) প্রবৃত্তির তাড়নায় (মনগড়া) কথা বলেন না। ক্বোরআন হলো অহী, যা প্রত্যাদেশ (নাযিল করা) হয়।ছূরা আন্ নাজম- ৩-৪
এ কারণেই ছালাফে সালিহীন p ক্বোরআন এবং ছুন্নাহ দু’টোকেই অহী বলে আখ্যায়িত করতেন। সকল মুছলমানগণও এ বিষয়ে একমত যে, রাছূলের ছুন্নাহ হলো এক প্রকার অহী।
হাছান ইবনু ‘আতিয়্যাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, জিবরাঈল 5 রাছূলের (1) নিকট যেভাবে ক্বোরআন নিয়ে অবতরণ করতেন, তেমনি তিনি ছুন্নাহ নিয়েও রাছূলের (1) নিকট অবতরণ করতেন।
ক্বোরআন যেমন আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অহী, তেমনি ছুন্নাহ্ও হলো আল্লাহ্র পক্ষ হতে অহী। ছুন্নাহ হলো ক্বোরআনেরই ব্যাখ্যা ও সম্পূরক। এ কথাটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ‘উলামায়ে কিরাম ও সাধারণ জনগণের নিকট সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত।
তাই রাছূলের (1) ছুন্নাতকে অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করা, ক্বোরআনকে অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করার নামান্তর এবং ছুন্নাহ বিরোধিতা করার অর্থ হলো ক্বোরআনে কারীমের বিরোধিতা করা।
রাছূলের (1) ছুন্নাহ হলো মানব জাতির জন্য সর্বোত্তম হিদায়াত তথা পথ প্রদর্শক। যেমন- হযরত জাবির 3 থেকে বর্ণিত, রাছূল 1 ইরশাদ করেছেন:-
خَيْر الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ، وَخَيْر الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ.رواه مسلم
অর্থ- সর্বোত্তম বাণী হলো আল্লাহ্র কিতাব আর সর্বোত্তম হিদায়াত (পথ নির্দেশ) হলো মুহাম্মাদ 1 এর হিদায়াত।সাহীহ্ মুছলিম
মুহাম্মাদ 1 এর নিয়ে আসা শারী‘য়াত হলো পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ, তাতে কোনপ্রকার ক্রটি বা অসম্পূর্ণতা নেই।
আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا.سورة المائدة- ٣
অর্থাৎ- আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইছলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৩
আল্লাহ্ 0 মানব জাতির উপর মুহাম্মাদ 1 এর অনুসৃত (পালনকৃত) শারী‘য়াত পালন করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তিনি মানব জাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাছূলের (1) অনুসৃত ও নির্দেশিত শারী‘য়াত (বিধান ও নিয়ম-নীতি) অবলম্বন করে চলে এবং সে অনুযায়ী ফায়সালা গ্রহণ করে।
আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا.سورة الحشر- ٧
অর্থাৎ- রাছূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা কিছু থেকে তিনি নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো।ছূরা আল হাশর- ৭
আল্লাহ 8 আরো ইরশাদ করেছেন:-
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا.سورة النساء- ٦٥
অর্থাৎ- তারা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না আপনাকে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানকারী বলে মেনে নেয়। অতঃপর আপনার প্রদত্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোন সংকীর্ণতা বোধ না করে এবং পরিপূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করে।ছূরা আন্নিছা- ৬৫
তাই যে ব্যক্তি রাছূল 1 অনুসৃত ও নির্দেশিত হুক্ম বা ফায়সালার উপর অর্থাৎ শারী‘য়াতে ইছলামিয়্যাহ্র উপর অন্য কোন বিধান বা ফায়সালাকে প্রাধান্য দেবে, কিংবা আল্লাহ্র শারী‘য়াতকে অন্য কোন বিধান দিয়ে পরিবর্তন করবে অথবা আল্লাহ্র দেয়া শারী‘য়াতের পরির্বতে অন্য কোন শারী‘য়াতকে উত্তম মনে করে গ্রহণ ও অবলম্বন করবে, সে আল্লাহ্কে অস্বীকারকারী; কাফির বলে গণ্য হবে।
একথার প্রমাণ হলো আল্লাহ্র (7) এ বাণী:-
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ.سورة المائدة- ٤٤
অর্থাৎ- যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই কাফির।ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৪৪
আল্লাহ্ 0 আরো ইরশাদ করেছেন:-
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ.سورة ال عمران- ٨٥
অর্থাৎ- যে লোক ইছলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, তার নিকট থেকে কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত।ছূরা আ-লে ‘ইমরান- ৮৫
তদ্রুপ যে ব্যক্তি এই ধারণা বা বিশ্বাস পোষণ করবে যে, মুহাম্মাদ 1 এর নিয়ে আসা শারী‘য়াতের (জীবন বিধানের) চেয়ে অন্য কোন শারী‘য়াত (তা আছমানী শারী‘য়াত হোক যেমন- বিকৃত-বিবর্তিত ইয়াহুদী ও নাসরানী শারী‘য়াত, অথবা মানব রচিত কোন বিধান হোক) উত্তম কিংবা তা মানব জাতির জন্য অধিক কল্যাণকর এবং তাদের জীবন, জীবিকা ও সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বেশি উপযোগী, তা হলে তার ইছলাম বিনষ্ট হয়ে যাবে। সে ইছলাম বহির্ভূত কাফির বলে গণ্য হবে, যদিও সে আল্লাহ্র বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করে এবং বাহ্যিকভাবে আল্লাহ্র বিধান মেনে চলে। এ বিষয়ে মুছলিম জাতির সত্যিকার ‘আলিমগণ সকলেই একমত পোষণ করেছেন। কেননা আল্লাহ্ 0 ও তাঁর রাছূলের (1) প্রতি ঈমানের দাবি হলো:- আল্লাহ্র নির্দেশের প্রতি আত্মসমর্পণ করা, আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধ সমূহকে সন্তুষ্টচিত্তে পালন করা, আল্লাহ্ b ও তাঁর রাছূলের (1) দেয়া ফায়সালাকে কথা-বার্তায়, কাজে-কর্মে ও ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাসে যথাযথভাবে মেনে নেয়া এবং জান-মাল কিংবা অধিকার সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে কোন প্রকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বিবাদ-বিসম্বাদ বা মতবিরোধ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে আল্লাহ্র কিতাব ও রাছূলের ছুন্নাহ্র দিকে প্রত্যার্বতন করা। কেননা সর্ব বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাছূলের (1) দেয়া সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত- এ ব্যাপারে কোন মুছলমান দ্বিমত বা সংশয় পোষণ করতে পারে না।
তাই শাসকবর্গের উপর ওয়াজিব, আল্লাহ্র দেয়া বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করা। আর শাসিতদের তথা সাধারণ জনগণের উপর ওয়াজিব, সর্বাবস্থায় ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্র আশ্রয় গ্রহণ করা এবং ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্র দেয়া সিদ্ধান্তকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়া। আল্লাহ্ 0 ইরশাদ করেছেন:-
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا.سورة النساء- ٦٠
অর্থাৎ- আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবি করে যে, যা আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ করা হয়েছে তারা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছে। তারা (বিরোধপূর্ণ বিষয়ে) ত্বাগুতের সিদ্ধান্ত নিতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাকে (ত্বাগুতকে) অমান্য করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।ছূরা আন্নিছা- ৬০
(৫) শারী‘য়াতে ইছলামিয়্যাহ্র কোন বিষয়ের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ পোষণ করা, ঈমান ও ইছলাম বিনষ্টের অন্যতম কারণ।
যে ব্যক্তি মুহাম্মদ 1 এর আনীত শারী‘য়াতের এবং তাঁর নির্দেশিত হিদায়াতের কোন কিছুর প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ পোষণ করবে, তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে এবং সে কাফির হয়ে যাবে, যদিও সে অসন্তুষ্টচিত্তে রাছূলের (1) প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী ‘আমাল করে থাকে।
এর প্রমাণ হলো আল্লাহ্র (b) এ বাণী:-
ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ.سورة محمد- ٩
অর্থাৎ- এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা অবর্তীণ করেছেন তারা তা পছন্দ করে না, সুতরাং আল্লাহ 7 তাদের কর্ম নিষ্ফল করে দেবেন।ছূরা মুহাম্মাদ- ৯
এ জাতীয় কুফ্রীর অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো যথা:-
(ক) আল্লাহ্র (0) নির্দেশানুসারে চোরের হাত কাটা, বিবাহিত ব্যাভিচারীকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা ইত্যাদি, আল্লাহ্র এসব বিধানকে আধুনিক সভ্যতার পরিপন্থি মনে করা কিংবা এসব বিধানকে অন্যায়, অমানবিক, অজ্ঞতা ও বর্বরতার প্রতীক হিসাবে চিহিৃত করা।
এমনিভাবে একাধিক বিবাহের শার‘য়ী বিধানকে কুরুচিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা। একজন পুরুষ সাক্ষির মুক্বাবিলায় দু’জন মহিলা সাক্ষির বিধানকে নারীদের অবমূল্যায়ন, তাদের প্রতি অবিচার ও হীনমন্যতার পরিচায়ক বলা কিংবা ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্তে বর্ণিত গায়িবী (অদৃশ্য) কোন খবরকে যুক্তি, বাস্তবতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরিপন্থি বলে আখ্যায়িত করা ।
(খ) ইছলামের কোন বিধানকে নির্দ্ধিধায় সন্তুষ্টচিত্তে মেনে না নেয়া, বরং এ বিষয়ে অন্তরে সংকোচ বোধ করা।
আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا.سورة النساء- ٦٥
অর্থাৎ- কিন্তু না, আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা মু’মিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার আপনার উপর অপর্ণ না করে, অতঃপর আপনার দেয়া সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের মনে কোন দ্বিধা থাকে এবং সর্বান্তকরণে উহা মেনে না নেয়।ছূরা আন্নিছা- ৬৫
(গ) কোন সাহীহ্ হাদীছকে অস্বীকার করা। আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-
مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا.سورة الحشر- ٧
অর্থাৎ- রাছূল তোমাদের যা প্রদান করেন, তোমরা তা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদের নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক।ছূরা আল হাশ্র- ৭
‘আল্লামা ইবনু বাত্ত্বাহ বলেছেন:- “কোন ব্যক্তি যদি কেবল একটি বিষয় ব্যতীত রাছূলের (1) নিয়ে আসা সকল বিষয়ের প্রতি ঈমান আনে, তা হলে ঐ ব্যক্তি শুধু একটি বিষয়কে প্রত্যাখানের কারণেই কাফির বলে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে এটাই হলো ‘উলামায়ে কিরামের সর্বসম্মত অভিমত। কিন্তু কোন ব্যক্তি যদি অজ্ঞতা বশতঃ রাছূলের (1) কোন ছুন্নাহ অস্বীকার করে, তাহলে তাকে কাফির বলা যাবে না। তবে তাকে জানানোর পর এবং হাদীছটি তার নিকট সঠিক প্রমাণিত হবার পরও সে যদি তা অস্বীকার করে, তাহলে তার ইছলাম ও ঈমান বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে কাফির বলে গণ্য হবে।
কেননা আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا.سورة النساء- ١١٥
অর্থাৎ- যে কেউ তার নিকট সরল-সঠিক পথ প্রকাশ হবার পর যদি রাছূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু‘মিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তাহলে আমি তাকে যে দিকে সে ফিরে যায় সে দিকেই ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর উহা কতই না মন্দ বাসস্থান।ছূরা আন্নিছা- ১১৫
উল্লেখ্য যে, মানুষের মধ্যে মানবীয় স্বভাবজাত কিছু ঘৃণা ও অসন্তুষ্টি রয়েছে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও যা তার থেকে প্রকাশ পেয়ে থাকে। এ ধরনের ঘৃণা বা অসন্তুষ্টি যদি শারী‘য়াতের মূল বিধানের প্রতি না হয় অর্থাৎ শারী‘য়াতের বিধান বলে সেটাকে যদি কেউ ঘৃণা ও অপছন্দ না করে বরং তা নিছক স্বভাবজাত হয়, তাহলে সে ইছলাম বহির্ভূত কাফির বলে গণ্য হবে না। যেমন কোন স্ত্রীর তার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েকে অপছন্দ করা, শীতের দিনে অযূ বা গোছল করা ইত্যাদি। দ্বীনে ইছলামের কোন বিধানের প্রতি এ ধরনের অসন্তুষ্টি পোষণের কারণে ইছলাম বা ঈমান ভঙ্গ ও বিনষ্ট হবে না। কেননা এটা হলো মানুষের স্বভাবজাত এবং এটা তার সাধ্যের বাইরে।
(৬) দ্বীনে ইছলামের কোন বিষয়কে নিয়ে কিংবা আল্লাহ্র ওয়া‘দাকৃত ‘আযাব-গযব, নি‘মাত, দান বা পুরস্কার নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা ঈমান ও ইছলাম বিনষ্টের অন্যতম কারণ।
যদি কেউ আল্লাহ্কে নিয়ে, তাঁর কোন ফিরিশতাকে নিয়ে, কোন নাবী-রাছূলকে (m) নিয়ে কিংবা ক্বোরআনে কারীমের কোন আয়াতকে নিয়ে অথবা দ্বীনে ইছলামের ফার্য তথা অবশ্য করণীয় বা বর্জনীয় কোন বিষয়কে নিয়ে, কিংবা সঠিক ও অকাট্যভাবে দ্বীন হিসাবে প্রমাণিত কোন বিষয়কে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, ঠাট্রা-তামাশা করে, অথবা দ্বীনে ইছলামের কোন বিষয়কে গালী-গালাজ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বা এতদসম্পর্কে মর্যাদাহানীকর কিছু বলে, তাহলে তার ঈমান ও ইছলাম বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে ইছলাম বহির্ভূত; কাফির বলে গণ্য হবে। এর প্রমাণ হলো আল্লাহ্র (0) এ বাণী:-
قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ. لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ.سورة التوبة- ٦٥-٦٦
অর্থাৎ- (হে রাছূল) আপনি বলুন! তোমরা কি ঠাট্টা-তামাশা করছিলে আল্লাহ ও তাঁর আয়াতগুলো এবং তাঁর রাছূল সম্বন্ধে? এখন আর ‘উয্র পেশ করো না। তোমরা ঈমান আনার পর কুফ্রী করলে।ছূরা আত্ তাওবাহ- ৬৫-৬৬
যারা আল্লাহ্র দ্বীন ও তাঁর আয়াত নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে, আল্লাহ 7 তাদেরকে লাঞ্ছনাকর শাস্তি দানের ওয়া‘দা দিয়েছেন। আর ক্বোরআনে কারীমে লাঞ্ছনাকর শাস্তি (‘আযাবে মুহীন) প্রদানের কথা শুধুমাত্র কাফির-মুশরিকদের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে।
আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
وَإِذَا عَلِمَ مِنْ آيَاتِنَا شَيْئًا اتَّخَذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ.سورة الجاثية- ٩
অর্থাৎ- যখন সে আমার কোন আয়াত অবগত হয়, তখন সেটাকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করে। এদের জন্যই রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।ছূরা আল জাছিয়াহ- ৯
‘আল্লামা ইবনু হায্ম আন্দালুছী, ক্বাযী আবূ ইয়া‘লা হাম্বালী, ইমাম আছ্ছাম‘আনী, শাইখুল ইছলাম ইবনু তাইমিয়াহ, ‘আল্লামা ইবনু কাছীর (p) প্রমুখ প্রখ্যাত ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন:- কেউ যদি ঢালাওভাবে সাহাবায়ে কিরামকে (4) গাল-মন্দ করে কিংবা তাদের একজনকেও যদি তাঁর দ্বীন ও দ্বীনদারীর কারণে (ব্যক্তিগত বিষয়ে নয়) বা রাছূলের (1) সাহচর্য লাভের (সাহাবী হওয়ার) কারণে গালী-গালায করে, তাহলে সে ব্যক্তি কাফির ও ইছলাম পরিত্যাগকারী মুরতাদ বলে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে ‘উলামায়ে কিরাম সর্বসম্মত অভিমত পোষণ করেছেন।
এমনিভাবে কেউ যদি কোন নেক্কার; আল্লাহওয়ালা লোকের সাথে তাঁর নেক্কারী তথা দ্বীনদারীর কারণে কিংবা কোন ‘আলিমে দ্বীনের সাথে তাঁর ‘ইলমে দ্বীনের কারণে ঠাট্রা-বিদ্রূপ করে, তা হলে সে কাফির ও ইছলাম পরিত্যাগকারী মুরতাদ বলে গণ্য হবে।
একদা ইমাম শাফি‘য়ীকে (o) জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র কোন আয়াতকে (নিদর্শনকে) নিয়ে উপহাস (ঢং-তামাশা) করে, শারী‘য়াতের দৃষ্টিতে তার হুক্ম কি ? উত্তরে তিনি বলেছেন:- সে ব্যক্তি কাফির এবং এর প্রমাণে (তিনি ইমাম শাফি‘য়ী o) ক্বোরআনে কারীমের এ আয়াত পেশ করেন:-
قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ. لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ.سورة التوبة- ٦٥-٦٦
অর্থাৎ- (হে রাছূল!) আপনি বলুন- তোমরা কি ঠাট্টা-তামাশা করছিলে আল্লাহ ও তাঁর আয়াতগুলো এবং তার রাছূল সম্বন্ধে? এখন আর ‘উয্র পেশ করো না। তোমরা ঈমান আনার পর কুফ্রী করলে।ছূরা আত্ তাওবাহ- ৬৫-৬৬
ঠাট্টা-বিদ্রূপ দু’ভাবে করা হয়ে থাকে-
প্রথমতঃ- স্পষ্ট বিদ্রূপাত্মক, তামাশামূলক, অশ্লীল-অশালীন কিংবা তাচ্ছিল্যপূর্ণ কথা দ্বারা। যেমন- খৃষ্টান সম্প্র্রদায়ের কথা- “ ‘ঈছা (5) আল্লাহ্র ছেলে”। (تعالي الله عن ذالك علوا كبيرا) ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের কথা- ‘‘আল্লাহ্র হাত রুদ্ধ” (বন্ধ বা আটকানো), “আল্লাহ অভাবগ্রস্ত ও আমরা অভাবমুক্ত” (تعالي الله عن ذالك علوا كبيرا) এবং তথাকথিত আধুনিক বুদ্ধিজীবীদের কথা- “ইছলাম ধর্ম বর্তমান আধুনিক দুন্ইয়াতে অচল-অনুপযোগী” ইত্যাদি।
যদি কোন মুছলমান জেনে শুনে এ ধরনের কোন কথা বলে, তাহলে তার ঈমান ও ইছলাম বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে ধর্মত্যাগকারী (মুরতাদ) কাফির বলে গণ্য হবে।
দ্বিতীয়তঃ- কাজ-কর্ম বা ইশারা-ইঙ্গিতে ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ, ঠাট্রা, তামাশা করা । যেমন- দ্বীনে ইছলামের কোন বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন বা ছবি আঁকা, ক্বোরআনে কারীমের তিলাওয়াত শুনে কিংবা রাছূলের কোন হাদীছ শুনে অথবা আল্লাহর ‘আযাব-গযব, নি‘মাত-পুরস্কার, জান্নাত, জাহান্নাম, ক্বব্রের ‘আযাব ইত্যদির আলোচনা শুনে কানে আঙ্গুল ঢুকানো, উচ্চস্বরে কথা বলা বা রেডিও-টিভির ভলিয়ম বাড়িয়ে দেয়া, অথবা আল্লাহ্র কোন আয়াত বা নিদর্শনের কথা শুনে সেটাকে হেয় ও তুচ্ছ জ্ঞান করতঃ কোনরূপ অঙ্গভঙ্গি করা। যেমন- হাত টিপা, চোঁখ টিপা, জিহ্বা বের করা, মুখ বাঁকানো ইত্যাদি। যদি কোন মুছলমান জেনে-শুনে, বুঝে ইচ্ছাপূর্বক এ ধরনের কোন কাজ-কর্ম করে, তাহলে সে ইছলাম বহির্ভূত হয়ে পড়বে এবং কাফির ও মুরতাদ বলে গণ্য হবে।
মোটকথা, দ্বীনে ইছলামের কোন বিষয়কে গালি-গালাজ বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, অথবা দ্বীনে ইছলামের কোন বিষয়কে নিয়ে ঢং-তামাশা, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা হলো কুফ্র ও শির্ক; যা ইছলামকে ধ্বংস ও বিনষ্ট করে দেয় এবং মুছলমানকে ধর্মত্যাগকারী (মুরতাদ) কাফির-মুশরিকে পরিণত করে।
(৭) যাদু। যাদু হলো ঈমান ও ইছলাম বিনষ্টকারী এবং মুছলমানকে কাফিরে পরিণতকারী কাজ।
অাভিধানিক অর্থে যাদু বলা হয়- এমন প্রতিটি ক্রিয়াকলাপকে যার কারণ গোপন ও অস্পষ্ট থাকে, কিন্তু এর প্রভাব-প্রতিক্রিয়া দেখা বা বুঝা যায়।
শারী‘য়াতের পরিভাষায় যাদু হলো- এমন কিছু গিরা, কবচ, ঝাড়-ফুঁক, তেলেসমাতী ও তন্ত্র-মন্ত্রের নাম, যদ্বারা জিন বা শয়তানকে ব্যবহারের মাধ্যমে কারো ক্ষতি করার অপচেষ্টা করা হয়। সাধারণত যাদু মানুষের অন্তরে, মস্তিষ্কে কিংবা দেহের ভিতরে কাজ করে। তবে দেহের বাইরেও এর প্রভাব পড়ে থাকে।
যাদু দু’টি কারণে শির্কের পর্যায়ভুক্ত। প্রথমতঃ এতে (যাদুর মধ্যে) অধিকাংশ ক্ষেত্রে হারাম ও নিকৃষ্ট কাজের মাধ্যমে জিন ও শয়তানের সন্তুষ্টি, নৈকট্য ও সাহায্য কামনা করা হয়। অথচ আল্লাহ 0 ব্যতীত অন্য কারো নৈকট্য বা সাহায্য কামনা করা হলো সুস্পষ্ট শির্ক। এ ছাড়া যাদু হলো শয়তানের শিক্ষা এবং শয়তানী শিক্ষা।
আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ.سورة البقرة- ١٠٢
অর্থাৎ- ছুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত, তারা তাই অনুসরণ করল । ছুলাইমান কুফ্র (আল্লাহ্কে অবিশ্বাস বা অস্বীকার) করেননি; বরং শয়তানরাই কুফ্র করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিত।ছূরা আল বাক্বারাহ- ১০২
দ্বিতীয়তঃ- এতে গায়িবের (অদৃশ্য বিষয়াদীর) ‘ইলম দাবি করা হয়। যাদুকর বা তার সাহায্যকারী জিন ও শয়তানরা নিজেকে গায়িব সম্পর্কে অবগত বলে দাবি করে। অথচ প্রকৃতপক্ষে একমাত্র আল্লাহ 8 ব্যতীত আর কেউই গায়িবের জ্ঞান রাখে না এবং আল্লাহ ব্যতীত আর কেউই গায়িব সম্পর্কে অবগত নয়।
আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-
قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ.سورة النمل- ٦٥
অর্থাৎ- (হে নবী!) আপনি বলুন, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আকাশে ও যমীনে যারা আছে তারা কেউই গায়িব জানে না।ছূরা আন্ নাম্ল- ৬৫
গায়িবের জ্ঞান হলো আল্লাহ্র একক বৈশিষ্ট্য। সুতরাং আল্লাহ ব্যতীত কারো গায়িবের জ্ঞান দাবি করার অর্থ হলো আল্লাহ্র একক বৈশিষ্ট্যে অংশীদারিত্ব দাবি করা। আর এটাই হলো সুস্পষ্ট কুফ্র ও শির্ক।
যাদুর আকর্ষণ ও বিকর্ষণ দু’টোই কুফরী। যাদুর আকর্ষণ হলো- অবৈধভাবে কোন নর-নারীর মধ্যে যাদু-মন্ত্র দ্বারা একজনকে অপরজনের প্রতি আকৃষ্ট করা। আর যাদুর বিকর্ষণ হলো- পরস্পরের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা। অর্থাৎ কোন মানুষকে তার আপনজনের প্রতি বিরাগভাজন বা বিদ্বেষী করা বা পরস্পরের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টির অপচেষ্টা করা।
হযরত আবূ হুরায়রাহ 3 থেকে বর্ণিত, রাছূল 1 বলেছেন:-
مَنْ عَقَدَ عُقْدَةً ثُمَّ نَفَثَ فِيهَا فَقَدْ سَحَرَ، وَمَنْ سَحَرَ فَقَدْ أَشْرَكَ.رواه النسائي
অর্থ- যে ব্যক্তি গিট বেঁধে এর উপর ফুঁক দিল সে যাদু করল। আর যে যাদু করল, সে শির্ক করল।ছুনানুন্ নাছায়ী
ইমাম আবু হানীফাহ, ইমাম মালিক ও ইমাম আহ্মাদ ইবনু হাম্বাল p যাদু করাকে এবং যাদু শিক্ষাকে কুফ্রী বলে অভিহিত করেছেন।
শাইখ ছুলাইমান ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ‘আব্দিল ওয়াহ্হাব o বলেছেন:- শয়তানের মাধ্যমে যে যাদু করা হয়, তা আল্লাহ্র সাথে শির্ক করা ব্যতীত রপ্ত বা আয়ত্ত করা যায় না।
মোটকথা, সাধারণত যাদুর মধ্যে মৌলিক যেসব বিষয় বা উপাদান থাকে সে গুলো হলো শির্ক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাদুর মধ্যে ঈমানের পরিপন্থি কথাবার্তা ও কাজকর্ম অবলম্বন করা হয়। তাই যাদু করা, যাদু করানো কিংবা যাদু শিক্ষা করা হলো কুফ্র ও শির্ক যা ইছলামকে ধ্বংস ও বিনষ্ট করে দেয় এবং মুছলমানকে ধর্মত্যাগকারী (মুরতাদ); কাফির-মুশরিকে পরিণত করে।
আর যদি যাদুতে ঈমানের পরিপন্থি কিছু অবলম্বন না করা হয়, তাহলে এ জাতীয় যাদু যদিও কুফ্র বা শির্ক বলে গণ্য হবে না তথাপি তা কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই যাদু এবং যাদুর সাথে সকল প্রকার সম্পৃক্ততা সম্পূর্ণরূপে পরিহার ও বর্জন করা, আল্লাহ্র একত্বে বিশ্বাসী প্রত্যেক মুছলমানের অবশ্য কর্তব্য।
(৮) মুছলিমদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদেরকে সাহায্য, সহযোগিতা করা ঈমান ও ইছলাম বিনষ্টের অন্যতম কারণ। কেননা ঈমানদারগণকে আল্লাহ b কাফির-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব না রাখার এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা না করার জন্য অত্যন্ত কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি (আল্লাহ 7) বলে দিয়েছেন যে, কাফির-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব পোষণকারীগণ তাদেরই দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। এ বিষয়ে ক্বোরআনে কারীমে বহু আয়াত বর্ণিত রয়েছে। যেমন- আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ.سورة المائدة- ٥١
অর্থাৎ- হে মু’মিনগণ, তোমরা ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ যালিমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৫১
আল্লাহ 7 আরো ইরশাদ করেছেন:-
فَلَا تَكُونَنَّ ظَهِيرًا لِلْكَافِرِينَ.سورة القصص- ٨٦
অর্থাৎ- অতএব (হে রাছূল!) আপনি কোন অবস্থাতেই কাফিরদের সাহায্যকারী হবেন না।ছূরা আল ক্বাসাস- ৮৬
মুছলমানদের বিরুদ্ধে কোন মুশরিকককে সাহায্য-সহযোগিতা করার অর্থ হলো- আল্লাহ্র (0) সাথে, তাঁর রাছূল 1 ও মু’মিনদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা এবং নিজেকে আল্লাহ্র (b) ওয়া‘দাকৃত ‘আযাব ও গযবে নিপতিত করা।
আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
تَرَى كَثِيرًا مِنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنْفُسُهُمْ أَنْ سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ. وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَكِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ فَاسِقُونَ.سورة المائدة- ٨١-٨٢
অর্থাৎ- আপনি তাদের অনেককে দেখবেন, তারা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা নিজেদের জন্যে যা পাঠিয়েছে তা অবশ্যই অতিশয় মন্দ। আর তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ ক্রোধান্নিত হয়েছেন এবং তারা চিরকাল শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। যদি তারা আল্লাহ ও নাবীর প্রতি এবং তাঁর (নাবীর) প্রতি নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই দুরাচারী (ফাছিক্ব)।ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৮০-৮১
কাফির-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব পোষণ করা কিংবা মুছলমানের বিরুদ্ধে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা হলো মুনাফিক্বদের বৈশিষ্ট্য। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে মুছলমানদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদেরকে আর্থিক, শারীরিক, মানসিক ও অন্যান্যভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করবে, কিংবা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সে নিঃসন্দেহে কাফির বলে গণ্য হবে।
আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
بَشِّرِ الْمُنَافِقِينَ بِأَنَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا. الَّذِينَ يَتَّخِذُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَيَبْتَغُونَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا.سورة النساء- ١٣٨-١٣٩
অর্থাৎ- সেসব মুনাফিক্বকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বেদনাদায়ক ‘আযাব, যারা মুছলমানদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয়। তারা (মুনাফিক্বরা) কি তাদের (কাফিরদের) কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে? অথচ যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহ্রই জন্য।ছূরা আন্নিছা- ১৩৮-১৩৯
আল্লাহ 7 আরো ইরশাদ করেছেন:-
لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ.سورة المجادلة- ٢٢
অর্থাৎ- যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাছূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা।ছূরা আল মুজাদালাহ- ২২
তাই প্রত্যেক মুছলমানের উপর ওয়াজিব, কোন কাফির, মুশরিক, মুরতাদ কিংবা আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদী-নাসারাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ না করা এবং এদের কাউকে, এমনকি নিজের একান্ত কোন আপনজনকেও ইছলাম ও মুছলমানের বিরুদ্ধে কোনভাবে সাহায্য-সহযোগিতা না করা।
যদি কোন মুছলিম ইছলামের এ বিধান জানা সত্ত্বেও স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে কোন কাফির-মুশরিককে ইছলাম ও মুছলমানের বিরূদ্ধে কোন ভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে, কিংবা তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, বা তার সাথে আন্তরিকভাবে বন্ধুসুলভ আচরণ করে, তা হলে তার ঈমান বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে কাফির বলে গণ্য হবে।
কেননা “লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” এই কালিমাহ্র অপরিহার্য দাবি হলো:- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্ত শুধুমাত্র ঈমানদারগণের (আল্লাহ্র একত্বে বিশ্বাসীদের) প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা, তাদের সাথে আন্তরিকভাবে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং কাফির-মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
(৯) ঈমান ও ইছলাম বিনষ্টের আরেকটি কারণ হলো- ব্যক্তি বিশেষের জন্য ইছলামী বিধান থেকে বের হয়ে যাওয়া বৈধ বলে মনে করা, কিংবা ব্যক্তি বিশেষকে ইছলামী বিধি-বিধানের উর্দ্ধে বলে মনে করা।
অর্থাৎ- যদি কেউ এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, “কোন লোকের জন্য আল্লাহর (8) প্রবর্তিত এবং রাছূলের (1) নির্দেশিত বিধান থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া তথা শারী‘য়াতে ইছলামিয়্যাহ্র অনুসরণ না করা জায়িয”, কিংবা এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, “এমন কতক ব্যক্তিবর্গ আছেন যাদের জন্য আল্লাহ্র বিধান প্রযোজ্য নয়”, তাহলে তার ঈমান ও ইছলাম বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে কাফির হয়ে যাবে। যেমনটি অনেক ভন্ড সূফী-সাধক ও বাত্বিল মা‘রিফাতপন্থী লোক মনে করে।
এ জাতীয় ‘আক্বীদাহ পোষণের অর্থ হলো যে, ইছলাম সমগ্র মানবজাতির জন্য তথা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত আগত প্রতিটি বনী আদমের জন্য আল্লাহ্র মনোনীত ধর্ম নয় এবং শারী‘য়াতে ইছলামিয়্যাহ্’র অনুসরণ ও অনুশীলন সকলের জন্য আবশ্যকীয় নয়, কিংবা মুহাম্মাদ 1 এর রিছালাত সর্ব সাধারণের জন্য সর্বজনীন রিছালাত নয়।
এ ধরণের ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাস পোষণ করা ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্তে বর্ণিত সুস্পষ্ট প্রমাণাদী অস্বীকার করারই নামান্তর।
অথচ ক্বোরআন ও ছুন্নাহ দ্বারা অকাট্য ও সুস্পষ্টরূপে একথা প্রমাণিত যে, ইছলামই হলো আল্লাহ্র মনোনীত একমাত্র সর্বজনীন দ্বীন এবং মুহাম্মাদ 1 হলেন সমগ্র জগতের প্রতি আল্লাহ্র প্রেরিত সর্বশেষ রাছূল। আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ.سورة ال عمران- ١٩
অর্থাৎ- আল্লাহ্র নিকট একমাত্র ধর্ম হলো ইছলাম।ছূরা আলে ‘ইমরান- ১৯
রাছূল মুহাম্মাদ 1 সম্পর্কে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا.سورة سبا- ٢٨
অর্থাৎ- আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি।ছূরা ছাবা- ২৮
আল্লাহ্ 7 আরো ইরশাদ করেছেন:-
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا.سورة الأعراف- ١٥٨
অর্থাৎ- বলে দিন, হে মানব জাতি! তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ্র প্রেরিত রাছূল।ছূরা আল আ‘রাফ- ১৫৮
আবূ হুরায়রাহ 3 থেকে বর্ণিত, রাছূল 1 ইরশাদ করেছেন:-
أُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً، وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ.رواه مسلم
অর্থ- আমাকে সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রতি রাছূল হিসেবে পাঠানো হয়েছে এবং আমাকে প্রেরণের মাধ্যমে নাবুওয়্যাতের ধারাবাহিকতা সমাপ্ত করা হয়েছে (অর্থাৎ আমিই সর্বশেষ নাবী, আমার পরে আর কোন নাবী-রাছূল আসবেন না)।সাহীহ্ মুছলিম
আল্লাহ b তাঁর রাছূলকে (1) যে দ্বীন বা শারী‘য়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন, তা যথাযথভাবে গ্রহণ ও পালন করা এবং সর্বক্ষেত্রে রাছূলের ( 1) আনুগত্য ও অনুসরণ করা প্রতিটি মানুষের অবশ্য কর্তব্য। কেননা ইছলামের বিধি-বিধান সর্বতোভাবে গ্রহণ ও পালন করা ব্যতীত এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাছূলের (1) আনুগত্য ও অনুসরণ ব্যতীত আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন এবং ইহ-পরকালীন মুক্তি লাভের অন্য কোন উপায় নেই। কেউ যদি দ্বীনে ইছলাম ব্যতীত অন্য কোন পথ অনুসরণ করে তাহলে তা আল্লাহর নিকট আদৌ গ্রহণযোগ্য হবে না, বরং তা হবে প্রত্যাখ্যাত।
আল্লাহ্ 0 ইরশাদ করেছেন:-
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ.سورة ال عمران- ٨٥
অর্থাৎ- আর যে ব্যক্তি ইছলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম তালাশ করবে, তবে সেটা তার থেকে গৃহীত হবে না। আর সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।ছূরা আ-লে ‘ইমরান- ৮৫
রাছূলের (1) আনুগত্য ও অনুসরণ সম্পর্কে আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ.سورة ال عمران- ٣١
অর্থাৎ- (হে নবী!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভালোবাস তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদিগকে ভালোবাসবেন।ছূরা আ-লে ‘ইমরান- ৩১
অন্য আয়াতে আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا.سورة الأحزاب- ٧١
অর্থাৎ- যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাছূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল।ছূরা আল আহ্যাব- ৭১
আল্লাহ 0 আরো ইরশাদ করেছেন:-
قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ.سورة ال عمران- ٣٢
অর্থাৎ- বলুন, আল্লাহ্ ও রাছূলের আনুগত্য করো। বস্তুতঃ যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে আল্লাহ কাফিরদিগকে ভালোবাসেন না।ছূরা আ-লে ‘ইমরান- ৩২
তাই কেউ যদি এ ধরনের কোন বিশ্বাস পোষণ করে যে, রাছূলের (1) আনুগত্য ও অনুসরণ ছাড়া অন্য কোন পন্থায় আল্লাহ্র পথে চলা বা আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করা সম্ভব, কিংবা এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, কোন লোক চেষ্টা-সাধনা বা আরাধনা করে অসাধারণ মর্যাদার আসনে পৌঁছে গেলে তার জন্য নাবী মুহাম্মাদ 1 ও শারী‘য়াতে ইছলামিয়্যাহ্র অনুসরণ করা জরুরী নয়, বরং এ ধরনের লোকের জন্য রাছূলের (1) দ্বীন অনুসরণ না করা, বিভিন্ন ফার্য কাজ ছেড়ে দেয়া এবং নানারকম পাপ কাজ করা জায়িয তথা বৈধ, যদি কেউ এরূপ কোন ধারণা-বিশ্বাস পোষণ করে, তাহলে তার ঈমান ও ইছলাম বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে ব্যক্তি কাফির বলে গণ্য হবে।
যেহেতু উম্মাতে মুছলিমাহ্র সকল ইমাম ও‘উলামায়ে কিরামের সর্বসম্মত অভিমত হলো যে, যে ব্যক্তি অকাট্য ও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত ক্বোরআন বা ছুন্নাহ্র একটি বিধানকে অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করবে, সে কাফির হয়ে যাবে।
সুতরাং যে ব্যক্তি সামগ্রিকভাবে রাছূলের (1) রিছালাতকে অস্বীকার করবে, তার হুক্ম যে কি হতে পারে তা তো খুব সহজেই অনুমেয়।
শাইখুল ইছলাম ইবনু তাইমিয়াহ o বলেছেন- যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস পোষণ করবে যে, “মুহাম্মাদ এর শারী‘য়াতের অনুসরণ হতে মুক্ত হওয়া কারো জন্য বৈধ” সে কাফির এবং তাকে হত্যা করা ওয়াজিব।
তিনি আরো বলেছেন- যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, “আল্লাহ্র কিছু খাস বান্দাহ আছেন যাদের জন্য রাছূলের অনুসরণের কোন প্রয়োজন নেই”, সে ব্যক্তি ইছলাম ত্যাগকারী; মুরতাদ ও কাফির, এ বিষয়ে সকল ইমাম ঐকমত্য পোষণ করেছে।
(১০) ঈমান ও ইছলাম বিনষ্টের অন্যতম আরেকটি কারণ হলো, ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া তথা দ্বীনে ইছলামকে উপেক্ষা ও বর্জন করা। আর তা হলো:- “ইছলামের মৌলিক ও অপরিহার্য বিষয়াদীর জ্ঞান অর্জন থেকে বিরত থাকা। ইছলামী শারী‘য়াত অনুযায়ী ‘আমাল বা অনুশীলন না করা। ইছলাম যে সব বিষয় অবশ্য পালনীয় বলে নির্দেশ দিয়েছে সেগুলো পালন না করা এবং যে সব বিষয় অবশ্য বর্জনীয় ও হারাম ঘোষণা করেছে সে সবকে বর্জন না করা। সঠিকভাবে দ্বীনে ইছলাম সম্পর্কে কিংবা ইছলামের মৌলিক বিষয়াদী সম্পর্কে জানার জন্য কোনরূপ প্রচেষ্টা না করা, কিংবা ধর্মীয় মৌলিক শিক্ষা অর্জন করার প্রতি কোনরূপ প্রয়োজন ও আগ্রহবোধ না করা। বরং শারী‘য়াতে ইছলামিয়্যাহ্র চর্চা ও অনুশীলন থেকে দূরে থাকা এবং দ্বীন তথা ইছলাম সম্পর্কে অজ্ঞ বা জাহিল হয়ে থাকাতে খুশি ও সন্তুষ্টি বোধ করা। আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধ লঙ্ঘন বা অমান্য করাকে কোনরূপ তোয়াক্কা বা পরওয়া না করা এবং আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধ মেনে চলাকে আদৌ গুরুত্ব না দেয়া”।
এসব কার্যকলাপ স্পষ্টতো এটাই প্রমাণ করে যে, এ রকম লোক মুখে “লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, মুহাম্মাদুর্ রাছূলুল্লাহ” বললেও মনে-প্রাণে সে এ শাহাদাতাইনকে (কালিমাহ্কে) স্বীকার করছে না, বরং সে আল্লাহ্র দ্বীনকে উপেক্ষা ও বর্জন করছে এবং কার্যতঃ আল্লাহ্র দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আর যারা আল্লাহ্র দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় বা ধর্ম বিমুখতা অবলম্বন করে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ مُنْتَقِمُونَ.سورة السجدة- ٢٢
অর্থাৎ- এবং সেই ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক অনাচারী কে, যাকে তার পালনকর্তার আয়াত সমূহ স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, অতঃপর সে উহা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়? আমি এরূপ অপরাধীদের হতে প্রতিশোধ নিব”।ছূরা আছ্ ছাজদাহ- ২২
আল্লাহ 0 আরো ইরশাদ করেছেন:-
وَالَّذِينَ كَفَرُوا عَمَّا أُنْذِرُوا مُعْرِضُونَ.سورة الأحقاف- ٣
অর্থাৎ- এবং যারা কাফির, তাদেরকে যেই বিষয়ে ভীতি প্রদর্শন করা হয়, তারা উহা হতে বিমুখ হয়ে থাকে (তারা সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করে না)।ছূরা আল আহ্ক্বাফ- ৩
অন্য আয়াতে আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ.سورة ال عمران- ٣٢
অর্থাৎ- বলুন, আল্লাহ ও রাছূলের আনুগত্য করো। বস্তুতঃ যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে আল্লাহ কাফিরদিগকে ভালোবাসেন না।ছূরা আ-লে ‘ইমরান- ৩২
যারা মুখে ঈমানের কথা বলে কিন্তু কাজে তা প্রতিফলিত করে না, অর্থাৎ ইছলামী শারী‘য়াত অনুযায়ী ‘আমাল করে না, তাদের সস্পর্কে আল্লাহ 8 বলেছেন যে, তারা ঈমানদার নয়। আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
وَيَقُولُونَ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالرَّسُولِ وَأَطَعْنَا ثُمَّ يَتَوَلَّى فَرِيقٌ مِنْهُمْ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَمَا أُولَئِكَ بِالْمُؤْمِنِينَ.سورة النور- ٤٧
অর্থাৎ- তারা বলে, আমরা আল্লাহ ও রাছূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং আমরা আনুগত্য করি, কিন্তু অতঃপর তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তারা ঈমানদার নয়।ছূরা আন্নূর- ৪৭
অতএব যে ব্যক্তি শারী‘য়াতের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য কোন ‘উয্র (কারণ) ব্যতীত দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদীর জ্ঞান অর্জন থেকে এবং তদনুযায়ী ‘আমল করা থেকে বিরত থাকবে, তার ঈমান ও ইছলাম বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে কাফির বলে গণ্য হবে।
গ্রন্থসূত্র:-
১) আশ্ শাইখ আল ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ছুলা্ইমান আত্ তামীমী রচিত “কিতাবুত্ তাওহীদ”।
২) আশ্ শাইখ আল ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ছুলা্ইমান আত্ তামীমী প্রণীত “কাশফুশ্ শুবুহাত”।
৩) আশ্ শাইখ আল ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ছুলা্ইমান আত্ তামীমী রচিত “উসূলুদ্ দ্বীন আল ইছলামী মা‘আ ক্বাওআ‘য়িদিহিল আরবা‘আ”।
৪) আশ্ শাইখ ‘আব্দুল্লাহ ইবনু জারুল্লাহ বিন ইবরাহীম আল জারুল্লাহ্ রচিত “আল ইছলাম ওয়াল ঈমান ওয়াল ইহছান”।
৫) আশ্ শাইখ ‘আব্দুল আযীয ইবনু ‘আব্দিল্লাহ ইবনু বায সংকলিত “আল ‘আক্বীদাতুস্ সাহীহাহ ওয়ামা ইয়ুযা-দ্দোহা”।
৬) আশ্ শাইখ জামীল যাইনু রচিত “আরকানুল ইছলাম ওয়াল ঈমান ওয়াল ‘আক্বীদাহ আল ইছলামিয়্যাহ।
৭) আশ্ শা্ইখ ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আহ্মাদ আল হুয়াইল সংকলিত “আত তাওহীদুল মুইয়াছ্ছার”।
৮) আশ্ শাইখ ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্দির্ রাহমান আছ্ ছা‘আদ রচিত “শরহু নাওয়াক্বিযিল ইছলাম”।
৯) আশ্ শা্ইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্ আল ‘উছাইমীন রচিত “শারহু ছালাছাতিল ঊসূল”।