তাক্বদীরের প্রতি ঈমান বলতে বুঝায় নিন্মোক্ত চারটি বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা:-
(১) এই বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে যে, অতীতে যা কিছু ছিল এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতে যা কিছু হচ্ছে কিংবা হবে তার সবকিছুই আল্লাহ্র (0) জানা আছে। আল্লাহ b তাঁর বান্দাহ্দের যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে অবহিত। তাদের রিয্ক্ব, মৃত্যুর নির্ধারিত সময়, দৈনন্দিন কার্যাবলীসহ অন্যান্য সব বিষয়াদি সম্পর্কে তিনিই সম্যক অবগত, কোন কিছুই তাঁর অজানা নেই। তিনি পূতঃপবিত্র, সুমহান।
ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-
اللَّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ.سورة العنكبوت- ٦٢
অর্থাৎ- আল্লাহ্ তাঁর বান্দাহ্দের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার রিয্ক্ব বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা তার জন্যে সীমিত করেন। আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত।ছূরা আল ‘আনকাবূত- ৬২
আল্লাহ 0 আরো ইরশাদ করেছেন:-
لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا.سورة الطلاق- ١٢
অর্থাৎ- যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞান দ্বারা আল্লাহ্ সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।ছূরা আত তালাক্ব- ১২
(২) দৃঢ়ভাবে এই বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, আল্লাহ্ যা কিছু নির্ধারণ ও সম্পাদন করেন সে সব কিছু পূর্ব থেকেই তাঁর জানা রয়েছে এবং সেসব আগে থেকেই তাঁর কাছে লিখা রয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন:-
قَدْ عَلِمْنَا مَا تَنقُصُ الْأَرْضُ مِنْهُمْ وَعِندَنَا كِتَابٌ حَفِيظٌ.سورة ق- ٤
অর্থাৎ- পৃথিবী ওদের দেহ থেকে যা কিছু গ্রহণ করে তা আমার জানা আছে এবং আমার নিকট সংরক্ষক কিতাব রয়েছে।ছূরা ক্বাফ- ৪
আল্লাহ 8 আরো ইরশাদ করেছেন:-
وَكُلَّ شَيْءٍ أحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُبِينٍ.سورة يس- ١٢
অর্থাৎ- আমি প্রতিটি বস্তুকে একটি স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।ছূরা ইয়া-ছীন- ১২
অন্য আয়াতে আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاء وَالْأَرْضِ إِنَّ ذَلِكَ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ.سورة الحج- ٧٠
অর্থাৎ- তোমাদের কি জানা নেই যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে সবকিছুই আল্লাহ্ অবগত আছেন? নিশ্চয় এ সবই লিপিবদ্ধ রয়েছে এক কিতাবে; এটা আল্লাহ্র নিকট অতি সহজ।ছূরা আল হাজ্জ- ৭০
(৩) আল্লাহ্র (7) কার্যকরী ইচ্ছার প্রতি এই বিশ্বাস স্থাপন করা যে, তিনি যা চান তাই হয় এবং যা তিনি চান না তা হয় না।
এ সম্পর্কে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاء.سورة الحج- ١٨
অর্থাৎ- আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করেন।ছূরা আল হাজ্জ- ১৮
অন্য আয়াতে আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:–
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ.سورة يس- ٨٢
অর্থাৎ- বস্তুতঃ তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, যখন তিনি কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন বলেন- “হও”, ফলে তা হয়ে যায়।ছূরা ইয়া-ছীন- ৮২
আল্লাহ 8 আরো ইরশাদ করেছেন:-
وَمَا تَشَاؤُونَ إِلَّا أَن يَشَاء اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ.سورة التكوبر- ٢٩
অর্থাৎ- তোমাদের চাওয়ায় কিছুই হয় না, যতক্ষণ না আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন চান।ছূরা আত তাকওয়ীর- ২৯
(৪) দৃঢ়ভাবে এই বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, সমগ্র বস্তুজগত আল্লাহ্র সৃষ্টি। তিনি ব্যতীত না আছে কোন স্রষ্টা, আর না আছে কোন প্রতিপালক (রাব্)।
এ সম্পর্কে আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-
اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ.سورة الزمر- ٦٢
অর্থাৎ- আল্লাহ প্রতিটি বস্তুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই সব কিছুর কর্মবিধায়ক।ছূরা আয্ যুমার- ৬২
অন্য আয়াতে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللَّهِ يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاء وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَأَنَّى تُؤْفَكُونَ.سورة الفاطر- ٣
অর্থাৎ- হে মানবজাতি! তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ করো। আল্লাহ ছাড়া কি কোন স্রষ্টা আছে, যে তোমাদেরকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী হতে রিয্ক্ব দান করে? তিনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। সুতরাং, কোথায় তোমরা চালিত হচ্ছো?ছূরা ফাত্বির- ৩
মূলকথা:- তাক্বদীরের প্রতি ঈমান পোষণ বলতে আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতে উপরোক্ত চারটি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকেই বুঝায়। পক্ষান্তরে, বিদ‘আতপন্থীরা উহার কোন কোনটাকে অস্বীকার করে থাকে।
যারা তাক্বদীরকে অস্বীকার করে তাদের সম্পর্কে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার আল্লাহ্র শপথ করে বলেছেন:-
لَوْ أَنَّ لِأَحَدِهِمْ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا، فَأَنْفَقَهُ مَا قَبِلَ اللهُ مِنْهُ حَتَّى يُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ.صحيح المسلم, سنن أبي داؤد, جامع للترمذي, سنن إبن ماجه و سنن البيهقي
অর্থাৎ- যদি ওদের কারো ওহুদ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণ থাকে এবং সে তা (আল্লাহ্র পথে) খরচ করে, তথাপি আল্লাহ তার থেকে তা গ্রহণ করবেন না, যতক্ষণ না সে ক্বাদ্র তথা তাক্বদীরে বিশ্বাসী হবে।সাহীহ্ মুছলিম, ছুনানে আবী দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী