আল ‘আল্লামা আশ্ শাইখ রাবী ইবনুল হাদী আল মাদখালী (c) বলেছেনঃ- এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে ওসিয়্যাত করছি, তোমরা তোমাদের পারস্পরিক আচরণে হিকমাহ বা প্রজ্ঞা অবলম্বন করো আর এমনসব প্রশ্ন করা বর্জন করো যেগুলো বিদ্ধেষ তৈরি করে এবং পরচর্চা বা পরনিন্দার পথে নিয়ে যায়।
আল্লাহ্র শপথ, এ বিষয়টি ক্ষতি করেছে। আমি এখন আমার ফোন বন্ধ করে রেখেছি। আমি কোন প্রশ্ন নিচ্ছি না। কারণ আমি দেখেছি যে, এসব প্রশ্নই আগা-গোড়াহীন (আদি-অন্তহীন) অনেক সমস্যার কারণ হয়েছে।
অমুক-তমুক সম্পর্কে প্রশ্ন! তুমি (কারো সম্পর্কে) ভালো বলো বা মন্দ যাই বলো না কেন, এসব প্রশ্নের দ্বারা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে ফিতনাহ তৈরি করা। তুমি ভালো বা মন্দ যাই বলো, এসব প্রশ্নের মাধ্যমে প্রশ্নকারী ফিতনাহ্ তৈরি করতে চায়।
ভাইয়েরা! বর্তমান সময়কার এই ঘোলাটে পরিবেশে এসব বাদ দাও- বারাকাল্লাহু ফীকুম (بارك الله فيكم)। পরচর্চা বা অমুক-তমুককে নিয়ে সমালোচনা বর্জন করো। তুমি কেউ একজনের প্রশংসা করবে এবং তার পক্ষপাতিত্বে গোঁড়ামী করবে, আরেকজন আসবে এবং সে তুমি যার গোঁড়া পক্ষপাতিত্ব করছো তার প্রতিপক্ষ বা তার বিরোধী একজনের পক্ষপাতিত্বে গোঁড়ামী করবে এভাবে একের পর এক!!!!
আমরা তোমাদেরকে একাধিকবার বলেছি যে হ্যাঁ, শাইখ আল আলবানী এবং আহলুছ্ ছুন্নাহ্র অন্যান্য ‘উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে, কিন্তু আল্লাহ্র শপথ, তাদের এই মতবিরোধ বিশ্বব্যাপী ছালাফীগণের মধ্যে বিন্দুমাত্র কোন প্রভাব ফেলেনি।
অথচ বর্তমানে কি দেখা যাচ্ছে! ফিতনাবাজ কোন কোন নগণ্য ছাত্র, সে আহলুছ্ ছুন্নাহ বা ছুন্নাহ অনুসারীদের পরস্পরের মধ্যে ফিতনাহ উস্কে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। আর এতে করে সকাল–সন্ধ্যার মধ্যেই সে ইমাম হয়ে যাচ্ছে। দুইদিন পাঠদান করতে বসেই খালাস, সে উছতায হয়ে যাচ্ছে। তার ঘনিষ্ঠ অনুসারী একদল লোক থাকে, যারা তার পক্ষে দল পাকায়। তারা তার সম্পর্কে কোন সমালোচনা- তা যতই দালীল-প্রমাণ সহকারে করা হোক না কেন, তা সহ্য করতে পারে না। যখনই কোন ব্যক্তি দালীল-প্রমাণসহ তার সমালোচনা করে, তখন যেন দুন্ইয়া তোলপাড় হয়ে যায়। আর ঐসব লোক তার পক্ষে দলাদলি করে এবং কট্টরভাবে তার পক্ষাবলম্বন করে।
কখনো এরকম উছতায ছোটখাঁটো কোন ত্বালিবুল ‘ইলম হতে পারে, তার মধ্যে কল্যাণ থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলে কি তার প্রতি এরকম গোঁড়া ও কট্টর পক্ষপাতিত্ব করতে হবে।
এসবের মানে কি! কট্টর দলীয় অনুসারীদের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য কি তাহলে কিছু সংখ্যক ছালাফিদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে!
আল্লাহ্র শপথ! এরকম চরিত্র-বৈশিষ্ট্য আমাদের মধ্যে ছিল না।
আল্লাহ্র শপথ! আমাদের চোঁখের সামনেই আল জামি‘আহ আল ইছলামিয়্যাহ্তে (মাদীনাহ ইছলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে) আশ্শাইখ ইবনু বায (o) ও আশ্শাইখ আল-আলবানী (o) পরস্পর (কোন কোন ফিক্বহী বিষয়ে) মতবিরোধ ও তর্ক-বিতর্ক করেছেন, কিন্তু আল্লাহ্র শপথ! তাদের এরূপ মতবিরোধ ও বিতর্কের বিন্দুমাত্র বিরূপ কোন প্রভাব-প্রতিক্রিয়া (ছালাফীগণের মধ্যে) দেখা যায়নি।
আশ্শাইখ আল-আলবানী (o) রুকূ‘ থেকে দাঁড়িয়ে হাত বাঁধার বিষয়ে লিখলেন যে, এটি বিদ‘আহ, কিন্ত আল্লাহ্র শপথ! এর বিরূপ কোন প্রভাব-প্রতিক্রিয়া আদৌ দেখা যায়নি।
মিথ্যাচারী সূফীরা আশ্শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)ও আশ্শাইখ আল-আলবানী-কে (o) কেন্দ্র করে যুবকদের মধ্যে মারামারি ও সংঘাত সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, আল্লাহ্র শপথ! তারা এর কোন সুযোগ পায়নি।
অতএব ভাইয়েরা! এসব বিষয়ে সাবধান হও। এরূপ বিষয়গুলো বর্জন করো। গোঁড়ামীমূলক অমুক-তমুকের পক্ষাবলম্বন করো না। যে কারো পক্ষপাতিত্বে গোঁড়ামী করো না। নতুবা ছালাফী দা‘ওয়াহ–কে বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
আমরা তোমাদের জন্য এগুলো কখনো পছন্দ করব না। তোমরা একে অপরকে সহ্য করবে এবং একে অপরকে প্রজ্ঞার সাথে নাসীহাহ দেবে।
দলাদলি ও অমুক-তমুকের গোঁড়ামীপূর্ণ পক্ষপাতিত্বের গোলকধাঁধায় নিপতিত হয়ো না।
কারণ এসবের মাধ্যমেই (দা‘ওয়াহ) ছালাফিয়্যাহ খন্ড-বিখন্ড হয়েছে। কট্টর দলীয় অনুসারী লোকজন এসব বিষয় অত্যন্ত চাতুরতার সাথে তোমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে, এবং তোমাদের অনেককেই এ বিষয়গুলো গ্রহণকারী হিসেবে তারা পেয়েছে। তোমরা এসব পরিত্যাগ করো- বারাকাল্লাহু ফীকুম (بارك الله فيكم)।
আমি আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি যেন তোমাদের অন্তরে প্রীতি সঞ্চার করে দেন এবং তোমাদের থেকে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল প্রকার ফিতনাহ দূরিভূত করে দেন।
হে ভাইয়েরা! ফিরে এসো সেসব বিষয়ের দিকে, যুগে যুগে যেসব বিষয়ের উপরে ছিলেন তোমাদের ছালাফগণ; প্রজ্ঞার সাথে পরস্পর নাসীহাহ করা, সুন্দর সদুপদেশ প্রদান ও মহৎ চরিত্র অবলম্বন।
সূত্রঃ- আশ্ শাইখ রাবী‘ ইবনুল হাদী আল মাদখালী (c) সংকলিত “আল বায়ান ওয়াল ঈযাহ লি ‘আক্বীদাতি আহলিছ্ ছুন্নাহ্ ওয়াল জামা‘আহ ফী রুইয়াতিল্লাহি ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ” গ্রন্থ।