ক্বোরআনের তাফছীর (১০তম পর্ব)

এটি উছতায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c প্রদত্ত একটি ধারাবাহিক অডিও বক্তব্য। উক্ত ধারাবাহিক বক্তব্যে উছতায পবিত্র ক্বোরআনের ছূরা সমূহের তাফছীর প্রদান করবেন, إِن شَاء اَللّٰه। বক্তব্যের এই পর্বে উছতায তাফছীরের নিয়ম-নীতি ও ‘উলূমুল ক্বোরআন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। নিম্নোক্ত বইসমূহ উৎস হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে-

ক) আল ‘আল্লামা ‘আব্দুল্লাহ আছ্‌ছা‘দী o রচিত এবং শাইখ সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন o কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত আত্‌তা‘লীক্ব ‘আলাল ক্বাওয়া‘ঈদ আল হিছান।
খ) আল ‘আল্লামা মুহাম্মাদ ‘আলী আস্‌ সাবূনী o রচিত আত্‌ তিবইয়ান ফী ‘উলূমিল ক্বোরআন।
গ) আল ‘আল্লামা ছুয়ূত্বী oه রচিত আল ইতক্বান।
এছাড়াও ছালাফদের রচিত আরো কিছু বই থেকে সারাংশ উপস্থাপন করা হবে, إِن شَاء اَللّٰه।

১) তাফছীরের আরেকটি সমার্থক শব্দ হচ্ছে- আত্‌তা’ওয়ীল। তাফছীর ও তা’ওয়ীলের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরুপঃ
(ক) তাফছীর শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো- কোনো বিষয়কে খুলে দেওয়া, উন্মুক্ত করা বা পরিষ্কার করা।
এ প্রসঙ্গে ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-

وَ لَا یَاۡتُوۡنَکَ بِمَثَلٍ اِلَّا جِئۡنٰکَ بِالۡحَقِّ وَ اَحۡسَنَ تَفۡسِیۡرًا

অর্থাৎ- আপনার কাছে তারা এমন কোন সমস্যাই নিয়ে আসে না যার সঠিক সমাধান ও অধিক সুন্দর ব্যাখ্যা আমি আপনাকে দান করিনি।ছূরা আল ফুরক্বান- ৩৩
শারী‘আতের পরিভাষায় তাফছীর হলো ঐ জ্ঞান যার দ্বারা ক্বোরআনে কারীমের (আয়াতগুলোর) অবস্থান সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়।
তা’ওয়ীল শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো- প্রত্যাবর্তন করা বা ফিরে যাওয়া। আরেকটি অর্থ হলো- কোনো বিষয়কে পরিপাটি বা সুবিন্যস্ত করা।
ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-

فَاَمَّا الَّذِیۡنَ فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ زَیۡغٌ فَیَتَّبِعُوۡنَ مَا تَشَابَہَ مِنۡہُ ابۡتِغَآءَ الۡفِتۡنَۃِ وَ ابۡتِغَآءَ تَاۡوِیۡلِہٖ

অর্থাৎ- যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে, তারাই গোলযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে ক্বোরআনের “মুতাশাবিহ” (যেসমস্ত আয়াত পুরোপুরি স্পষ্ট নয়) এর পিছনে লেগে থাকে। (ছূরা আলি ‘ইমরান- ৭))
শারী‘আতের পরিভাষায় তা’ওয়ীল হলো- ক্বোরআনে কারীমের আয়াতের ঐ অর্থ বর্ণনা করা, যে অর্থটি শুরুতেই বুঝা যায় না। অর্থাৎ তা’ওয়ীল আরেকটি ভিন্ন অর্থ প্রদান করে।
(খ) ক্বোরআনে কারীমের (আয়াতের) ব্যাখ্যা যদি ক্বোরআন ও ছুন্নাহ দ্বারা দেওয়া হয়, তবে তা হলো তাফছীর। আর এই ব্যাখ্যা যদি ইজতিহাদ দ্বারা করা হয়, তবে তা হলো তা’ওয়ীল।
(গ) কোনো বাক্য বলার সাথে সাথে যে অর্থটি বুঝা যায়, সেই অর্থটিই হচ্ছে তাফছীর। আর আয়াতটি যে (বিশেষ) বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করছে, তা-ই হচ্ছে তা’ওয়ীল।
(ঘ) তাফছীর শব্দটি শুধুমাত্র ক্বোরআনে কারীমের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
২) ক্বোরআনে কারীমের তাফছীর শুনার প্রয়োজনীয়তা কি?
ক্বোরআনে কারীম হলো মানবজাতির জীবনবিধান। যেমন- ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ অর্থাৎ- (ক্বোরআন) মুত্তাক্বীদের জন্য পথ নির্দেশ।ছূরা আল বাক্বারাহ- ২
ক্বোরআনের অন্যত্র আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-

قَدۡ جَآءَکُمۡ مِّنَ اللّٰہِ نُوۡرٌ وَّ کِتٰبٌ مُّبِیۡنٌ

অর্থাৎ- তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে।ছূরা আল মা-ইদাহ- ১৫
ক্বোরআনের অন্যত্র আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- اَفَلَا یَتَدَبَّرُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ
অর্থাৎ- তারা কেন ক্বোরআন সম্বন্ধে গবেষণা করে না?ছূরা আন্‌নিছা- ৮২
উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, ক্বোরআনে কারীমের তাফছীরের জ্ঞান অর্জন করার ব্যাপারে আমরা আদিষ্ট।
৪) এই তাফছীরের জ্ঞান অবশ্যই কোনো মুফাছ্‌ছিরের নিকট থেকে অর্জন করতে হবে। সেই মুফাছ্‌ছিরের মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। সেই জ্ঞানগুলো না থাকলে সেই ব্যক্তি মুফাছ্‌ছির বলে গণ্য হবে না। এই বিষয়ে ‘উলামায়ে কিরাম কিছু মাপকাঠি দিয়েছেন। সেগুলো হলো-
(ক) সেই মুফাছ্‌ছিরকে অবশ্যই পরিপূর্ণরূপে ‘আরবী ভাষায় দক্ষ হতে হবে।
(খ) ‘আরবী ভাষার অলংকারশাস্ত্র সম্পর্কে তার সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে।
(গ) তার মধ্যে উসূলে ফিক্বহের জ্ঞান থাকতে হবে।
(ঘ) ক্বোরআনে কারীমের আয়াতগুলোর শানে নুযূল সম্পর্কে তার জ্ঞান থাকতে হবে।
(ঙ) ক্বোরআনে কারীমের আয়াতগুলোর নাছিখ-মানছূখ সম্পর্কে তার জ্ঞান থাকতে হবে।
(চ) ইল্‌মুল ক্বিরাত সম্পর্কে তার জ্ঞান থাকতে হবে।

 

ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-
১) ফুলতলী পীর এবং তার অনুসারীদের ‘আকীদাহ এবং মানহাজ কি?
২) কিছু তথাকথিত মুছলিম দা‘ঈরা বলেন- “রাছূল মুহাম্মাদের (1) সাহাবীরা (4) ‘আকীদাহ নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন” এবং “ইছলামী ‘আকীদাহ হচ্ছে ইছলামী ফিক্বহের মতো, যে কোন একটি অনুসরণ করলে চলবে”। এই দাবিগুলো কি সঠিক?
৩) একজন বোন প্রশ্ন করেছেন- গত রাতে আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি। তখন রাত তিনটা অথবা চারটা বাজে। স্বপ্নটি দেখার পর আমার খুব ভয় হচ্ছে যে, এটি একটি খারাপ স্বপ্ন কি-না।
কিছু দিন হলো করোনা ভাইরাস এর জন্য আমি সারাক্ষণ বাসায়ই অবস্থান করছি, দেরিতে ঘুমাতে যাচ্ছি, মন খারাপ থাকে, কিছুই ভালো লাগে না। মনে হয় কোন সমস্যা হয়েছে। আমি স্বপ্ন দেখেছি যে, আমি একটি অজানা জায়গায় হারিয়ে গিয়েছি। স্বপ্ন দেখার পর থেকে আমি শঙ্কিত হয়ে পড়েছি যে, স্বপ্নটি কোন খারাপ ইঙ্গিত বহন করছে কি-না। শাইখ! স্বপ্নটি কিসের ইঙ্গিত হতে পারে, এখন আমার করণীয় কি, এ ব্যাপারে আমাকে কিছু নাসীহাহ প্রদান করুন, যাতে করে আমার দুশ্চিন্তা লাঘব হয়।

৪) আমার পরিচিত একজন ব্যক্তি হাফিয, কিন্তু সে জামা‘আতে সালাত আদায় করা এবং দাড়ি বড় করার মতো আবশ্যকীয় ইছলামী বিষয়াদী এবং দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসীন। এমন লোকের সাথে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
৫) হাটহাজারীর আহমদ শফির মৃত্যুতে আমাদের অবস্থান এবং তাঁর সম্পর্কে আমাদের ধারণা কিরূপ হওয়া উচিত?
৬) শাইখ! কোন সাধারণ মুছলিম যিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দ্বীনী পড়ালেখা করেননি, এমন ব্যক্তি কি নিজে নিজে ক্বোরআনের তাফছীর পড়তে পারবেন? আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। আপনার মধ্যে বারাকাহ দান করুন।
৭) এক ছালামে তিন রাকা‘আত ওয়িতর (বিতির) সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা কি দ্বিতীয় রাক‘আতের ছাজদাহ শেষে দাঁড়ানোর সময় রাফ্‌‘উল ইয়াদাইন করবো?
৮) নাছিখ এবং মানছূখের জ্ঞান অর্জন করার জন্য কি কি বই পড়তে হবে?


১. ছূরা আল ফুরক্বান- ৩৩ 
২. ছূরা আল বাক্বারাহ- ২ 
৩. ছূরা আল মা-ইদাহ- ১৫ 
৪. ছূরা আন্‌নিছা- ৮২ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close