আল ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত আল ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ আল মাক্বদিছী রচিত -‘আক্বীদাহ সংকলন- গ্রন্থ (৪৬নং পর্ব)

এই অডিওটি আশ্‌শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্ আল ‘উছাইমীন o কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ আল মাক্বদিছী o এর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ “লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ”এর ধারাবাহিক অডিও ভাষান্তর। বাংলা ভাষায় অডিওরূপে এটি ভাষান্তর করেছেন উছ্‌তায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c। এতে ছালাফে সালিহীনের (4) আক্বীদাহ-বিশ্বাসের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘উলামায়ে কিরামের চিরাচরিত স্বভাব–বৈশিষ্ট্যও হলো যে, তারা তাদের লিখনীর মাধ্যমে সর্বাগ্রে বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ সংরক্ষণ এবং তা প্রচার ও প্রসার করে থাকেন। বক্তব্যের এ পর্বে উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c সিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়ার বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আলোচনার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপঃ
১) ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ o বলেছেন, মৃত্যুর পরে পুনরুথানের বিষয়টি সত্য। এটি তখনই ঘটবে যখন ইছরাফিল m সিঙ্গায় ফুঁৎকার দেবেন। ছূরা ইয়াছীনের ৫১ নং আয়াতে আল্লাহ 0 বলেন-

وَنُفِخَ فِى ٱلصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ ٱلْأَجْدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمْ يَنسِلُونَ

অর্থাৎ- আর যখন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তখনই তারা ক্বাবর থেকে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে আসবে।
এর ব্যাখ্যায় উছাইমীন o বলেন, ফুঁৎকার দেওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। এখানে ٱلصُّورِ বলতে- শিঙ্গা বুঝানো হয়েছে।
যেমন- ‘আম্‌র ইবনুল ‘আস 3 বলেন, রাছূলুল্লাহ-কে (1) একজন গ্রাম্য লোক এসে জিজ্ঞেস করল যে, ٱلصُّورِ কি? জবাবে তিনি (1) বললেন- এটি হচ্ছে সেই শিঙ্গা, যার মধ্যে ফুঁৎকার দেওয়া হবে।মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ
শারি‘য়াতের পরিভাষায় শিঙ্গা বলা হয় সেই বস্তুকে যা ইছরাফিল عليه السلام তার মূখের মধ্যে দিয়ে রেখেছেন। এবং তিনি অপেক্ষা করছেন যে, কখন তাকে নির্দেশ দেওয়া হবে, সেই শিঙ্গে ফুঁৎকার দেওয়ার জন্য। ইছরাফিল m সেই সব ফিরিশতাদের একজন, যারা ‘আরশ বহন করেন।
২) শিঙ্গায় ফুঁৎকারের সংখ্যা হবে দুইটি।
প্রথমটি হবে ভীত-সন্ত্রস্তকারী ফুঁৎকার। এর দ্বারা সকল মানুষ মৃত্যু বরণ করবে। তবে, আল্লাহ 0 তবে আল্লাহ যাদের জন্য ইচ্ছে করবেন তারা ব্যতীত। আল্লাহ 0 ছূরা আন্‌ নামলের ৮৭ নং আয়াতে বলেন-

وَيَوْمَ يُنفَخُ فِى ٱلصُّورِ فَفَزِعَ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِى ٱلْأَرْضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُ

অর্থাৎ- আর যে দিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে সেদিন যারা আকাশে আছে আর যারা যমীনে আছে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে, তবে আল্লাহ যাদের জন্য ইচ্ছে করবেন তারা ব্যতীত। দ্বিতীয়টি হবে পুণর্জীবিত করার ফুঁৎকার। এর ফলে মৃতরা ক্বাব্‌র থেকে উঠে দাঁড়াবে। যেমন, পবিত্র ক্বোরআনের ছূরা আয্‌ যুমারের ৬৮ নং আয়াতে আল্লাহ 0 বলেন-

وَنُفِخَ فِى ٱلصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِى ٱلْأَرْضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَىٰ فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنظُرُونَ

অর্থাৎ- আর যখন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে তখন মুর্ছিত হয়ে পড়বে যারা আছে আকাশে আর যারা আছে যমীনে, তবে আল্লাহ যাদের জন্য ইচ্ছে করবেন তারা ব্যতীত। অতঃপর শিঙ্গায় আবার ফুঁক দেয়া হবে, তখন তারা উঠে দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে।
হাদীছে এসেছে, ইবনু ‘উমার 3 থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- যখন সিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়া হবে, তখন এটা যারাই শুনবে, প্রত্যেকেই প্রথমে তার কাঁধকে একটু নিচে করবে। এরপর আবার কাঁধ উঠাবে। এরপরে সকলেই মৃত্যুবরণ করবে। কেউ বাকি থাকবে না। কেবলমাত্র তারা ছাড়া, আল্লাহ 0 যাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে চান। অতঃপর আল্লাহ 0 বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। এর ফলে মানুষের দেহ গঠন হতে শুরু করবে। এবং তারা উঠে দাঁড়াবে।
আল্লাহ 0 ছূরা আল হা-ক্কক্কাহ এর ১৩ নং আয়াতে বলেন- فَإِذَا نُفِخَ فِى ٱلصُّورِ نَفْخَةٌ وَٰحِدَةٌ অর্থাৎ- অতঃপর যখন সিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে- মাত্র একটি ফুঁৎকার।
এছাড়াও ছূরা আল মুদ্দাছ্‌ছির এর ৮ নং আয়াতে আল্লাগ 0 বলেন- فَإِذَا نُقِرَ فِى ٱلنَّاقُورِ
অর্থাৎ- যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে…।
৩) ইমাম আহ্‌মাদ o বলেন, ছূরা আন্‌ নামলের ৮৭ নং আয়াতে إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّه দ্বারা শুহাদাগণকে বুঝানো হয়েছে। ওই ফুঁৎকারে তারা মৃত্যু বরণ করবেন না। ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ o এর মতে, এর দ্বারা জান্নাতের ধিবাসীগণকে বুঝানো হয়েছে। যেমন, হূরগণ। কারণ, জান্নাত এমন এক জায়গা যেখানে মৃত্যু নেই। কারো মতে, ‘আরশ বহনকারী ফিরিশতাগণ। কারো মতে, ওই ফুঁৎকারে জিবরীল, মালাকুল মাউত, ইছ্‌রাফীল ও মীকাইল m ফিরিশতাবৃন্দ মৃত্যু বরণ করবেন না। তবে, এগুলোর কোনো সুস্পষ্ট দালীল হাদীছে পাওয়া যায় না।
৪) সিঙ্গায় ফুঁৎকারের দিনটি হবে শুক্রবার।
যেমন- হাদীছে এসেছে, আম্‌র ইবনুল আস 3 থেকে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- তোমাদের জন্য শুক্রবার দিন হল সবচেয়ে উত্তম দিন। এইদিন আদমকে (—-) সৃষ্টি করা হয়েছে ও মৃত্যু দান করা হয়েছে। এবং এই দিনই শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। এই দিনেই সবাই মৃত্যুবরণ করবে। তোমরা এই দিনে আমার প্রতি দুরূদ পড়। কারন, এই দিনে তোমাদের সালাতগুলো (দুরুদ) আমার কাছে পেশ করা হয়।আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ
শিঙ্গায় প্রথম ফুঁৎকারটি অনেক দীর্ঘ হবে। এর ফলে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে। এটি ক্বিয়ামাহ ক্বায়িম হওয়ার একদম পূর্ব মুহূর্তে হবে। প্রথম ফুঁৎকারের সময় পৃথিবীতে কোনও ইমানদার বেঁচে থাকবে না। আবূ হুরাইরাহ 3 থেকে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন, সিঙ্গায় ফুঁৎকার দানকারীর দৃষ্টি ‘আরশের দিকে চেয়ে আছে। তখন থেকেই, যখন থেকে তাকে এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি এমনভাবে তাকিয়ে আছেন, যেন তার চোখ দুইটি মূর্তির মতো।সাহীহ্‌ মুছলিম
৫) সিঙ্গায় ফুঁৎকারের সংখ্যা নিয়ে কিছুটা দ্বিমত রয়েছে। যেমন, ইমাম ইবনু হাযম o এর মতে, ফুঁৎকারের সংখ্যা হবে ৪টি। যেমন-

ক) ১ম ফুঁৎকারে মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়বে।
খ) ২য় ফুঁৎকারে মানুষ বেহুঁশ হয়ে পরবে।
গ) ৩য় ফুঁৎকারে মানুষ মৃত্যুবরণ করবে।
ঘ) ৪র্থ ফুঁৎকারে মানুষ পুণর্জীবিত হবে।

ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ o এর মতে, ফুঁৎকারের সংখ্যা হবে ৩টি। তিনি শুধু বেহুঁশ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বাদ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে এই ইখতিলাফের কারণ হলো- ক্বোরআনের বিভিন্ন আয়াতে এরুপ বিভিন্ন ভাবে বলা আছে। কিন্তু, ইমাম ইবনু হাজ্‌র আল ‘আছক্বালানী o বলেন- ফুঁৎকার হবে মূলতঃ ২টি। ক্বোরআনে বিভিন্ন ভাবে বলে মানুষের অবস্থা বুঝানো হয়েছে।
৬) ২টি ফুঁৎকারই অধিক গ্রহণযোগ্য মতামত। কারণ, ছূরা নাযিয়াতের ৬-৭ নং আয়াতে আল্লাহ 0 বলেন, يَوْمَ تَرْجُفُ ٱلرَّاجِفَةُ تَتْبَعُهَا ٱلرَّادِفَةُ
অর্থাৎ- সেদিন প্রকম্পনকারী প্রকম্পিত করবে, তাকে অনুসরণ করবে পরবর্তী প্রকম্পনটি।
এর ব্যাখ্যায় ‘উলামায়ে কিরাম বলেন- এখানে প্রথম ফুঁৎকারের নাম বলা হয়েছে ٱلرَّاجِفَةُ এবং দ্বিতীয় ফুঁৎকারের নাম বলা হয়েছে ٱلرَّادِفَةُ ।
৭) আবূ হুরাইরাহ 3 থেকে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- ২টি ফুঁৎকারের মাঝে বিরতি হবে ৪০। আবূ হুরাইরাহ 3 এই ৪০ এর কোনো ব্যাখ্যা বলেননি যে, এটা কি ৪০ দিন, বছর নাকি মাস। এর দুইটি কারণ হতে পারে, প্রথমতঃ হয়তো তাকে এটি প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। নতুবা হয়তো তিনি এর ব্যাখ্যা রাছূলুল্লাহকে জিজ্ঞেস করেননি।

 

ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-
১) শেষ ফুঁৎকারটা কি আল্লাহ 0 এর সমস্ত গ্রহের সব সৃষ্টিকে (মানবজাতি, জীন, ফিরিশতা, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, সকল প্রাণ) একসাথে এক সাদা মাঠে মিলিত করবে?
২) লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ এর শর্তগুলো প্রথম কখন বিরচিত হয়ে ছিল, কোথায় এবং কোন বইয়ে আলোচনা হয়েছিল?
আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে, তাওহীদের তিনটি বা চারটি শ্রেণী-বিভাগ, এইসব বিষয়ে কখন প্রথম লেখালেখি হয়েছিল (‘উলামাদের মধ্যে)?
৩) বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশে এলাকার চেয়ারম্যান পদে কি দাঁড়ানো ঠিক? এক লোক নামাযী, সৎ এবং ভালো। উনি চেয়ারম্যান হয়ে লোকদের সেবা করতে চান, গরিবকে সাহায্য করতে চান। তিনি আল্লাহ্‌কে ভয় করেন এবং সঠিক বিচার করেন, কিন্তু ছালাফি নয়। কারণ, ক্বোরআন-ছুন্নাহ তেমন জানেন না। উনার কি আওয়ামী লীগ এর পক্ষ হয়ে চেয়ারম্যান হওয়া ঠিক হবে?


১. মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ 
২. আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ 
৩. সাহীহ্‌ মুছলিম 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close