আল ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত আল ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ আল মাক্বদিছী রচিত -‘আক্বীদাহ সংকলন- গ্রন্থ (৩২তম পর্ব)

এই অডিওটি হলো আশ্‌শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন o কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ আল মাক্বদিছী o এর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ “লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ” এর ধারাবাহিক অডিও ভাষান্তর। বাংলা ভাষায় অডিওরূপে এটি ভাষান্তর করেছেন উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c। এতে ছালাফে সালিহীনের (4) ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাসের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। আহলুছ্‌ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘উলামায়ে কিরামের চিরাচরিত স্বভাব–বৈশিষ্ট্যও হলো যে, তারা তাদের লিখনীর মাধ্যমে সর্বাগ্রে বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ্‌র সংরক্ষণ এবং তা প্রচার ও প্রসার করে থাকেন।
বক্তব্যের এ পর্বে উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c বিশেষ করে ক্বাযা ও ক্বাদ্‌র সহ নিম্নোক্ত বিষয়ে আলোচনা করেছেন:-
১) আল্লাহর (0) অন্যতম একটি গুণ হলো- তিনি যা চান তা-ই করে থাকেন। তার ইচ্ছা ব্যতীত কিছুই হতে পারে না এবং কোন কিছুই তার ইচ্ছাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। দুন্‌ইয়াতে এমন কিছু নেই যা আল্লাহ্‌র (7) পূর্ব নির্ধারণ (তাক্বদীর) ও ফায়সালা থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। এমন কেউ নেই যে তার জন্য আল্লাহ্‌র (8) নির্ধারিত ক্বাদার যেটি আগে থেকে তার জন্য লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে সেটির বাহিরে যেতে পারে। এমন কেউ নেই যে লাওহে মাহ্‌ফূযে তার জন্য লিখিতভাবে যা কিছু নির্ধারণ ও ফায়সালা করে রাখা হয়েছে সেটিকে অতিক্রম করতে পারে। সমগ্র সৃষ্টিজগত যা কিছু করে থাকে সবই তাঁর (আল্লাহ্‌র) ইচ্ছাধীন ও  ইচ্ছায় হয়ে থাকে। তিনি সৃষ্টিজগতকে যেমন সৃষ্টি করেছেন তেমনি তাদের কর্মকেও সৃষ্টি করেছেন। তিনি (আল্লাহ 0) পূর্ব থেকেই তাদের রিয্‌ক্ব ও হায়াত নির্ধারণ করে রেখেছেন। তিনি (আল্লাহ 7) যাকে ইচ্ছা স্বীয় অনুগ্রহে হিদায়াত দান করেন এবং যাকে চান স্বীয় প্রজ্ঞায় তাকে পথহারা করেন। আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-

لاَ يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْـَلُونَ.سورة الأنبياء- ٢٣

অর্থাৎ- তিনি যা করেন সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না। বরং তারাই জিজ্ঞাসিত হবে।ছূরা আল আম্বিয়া- ২৩
অন্য আয়াতে আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-

إِنَّا كُلَّ شَىْء خَلَقْنَـهُ بِقَدَرٍ.سورة القمر- ٤٩

অর্থাৎ- নিশ্চয় আমি প্রতিটি বস্তু সৃষ্টি করেছি পরিমিতরূপে।ছূরা আল ক্বামার- ৪৯
আল্লাহ 8 আরো ইরশাদ করেছেন:-

وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيراً.سورة الفرقان- ٢

অর্থাৎ- তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে।ছূরা আল ফুরক্বান- ২
অন্য আয়াতে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-

مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ.سورة الحديد- ٢٢

অর্থাৎ- পৃথিবীতে কিংবা তোমাদের নিজেদের প্রতি এমন কোন মুসীবাত পৌঁছায় না তবে আমি তাকে অস্তিত্বমান করার পূর্বেই তা কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। নিশ্চয় তা আল্লাহ্‌র নিকট খুবই সহজ।ছূরা আল হাদীদ- ২২
আল্লাহ 7 আরো ইরশাদ করেছেন:-

فَمَن يُرِدِ اللَّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلإِسْلَـمِ وَمَن يُرِدْ أَن يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقاً حَرَجاً كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِى السَّمَآءِ كَذَلِكَ يَجْعَلُ اللَّهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لاَ يُؤْمِنُونَ.سورة الأنعام- ١٢٥

অর্থাৎ- আল্লাহ যাকে হিদায়াত করতে চান, ইছলামের জন্য তার অন্তঃকরন উন্মুক্ত করে দেন। আর যাকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তিনি তার অন্তঃকরণ এমনভাবে সংকুচিত করে দেন মনে হয় যেন তা আকাশে উঠছে। এমনিভাবেই আল্লাহ তাদেরকে কলুষময় করেন যারা ঈমান আনে না্।ছূরা আল আন‘আম- ১২৫১০
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার 3 থেকে বর্ণিত, জিবরীল 5 রাছূলুল্লাহকে (1) জিজ্ঞেস করলেন- “ঈমান কী”? তদুত্তরে রাছূলুল্লাহ 1 বলেন:- ঈমান হলো- আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস, তাঁর ফিরিশতাহগণের প্রতি বিশ্বাস, তাঁর কিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাস, তাঁর রাছূলগণের প্রতি বিশ্বাস, ক্বিয়ামাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস এবং তাক্বদীরের ভালো-মন্দে বিশ্বাস পোষণ।
এই উত্তর শুনে জিবরীল 5 বলেন- আপনি সত্য বলেছেন।সাহীহ্‌ মুছলিম। সাহীহ্‌ বুখারীতে আবূ হুরাইরাহ 3 থেকে অনুরূপ হাদীছ বর্ণিত রয়েছে১১
অন্য হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- আমি ক্বাদরের ভালো ও মন্দে, মিষ্টি ও তিক্তে (আনন্দ ও কষ্টে, সুখে-দুঃখে) বিশ্বাস পোষণ করি।মা‘রিফাতু ‘উলূমিল হাদীছ লিল হাকিম। হাদীছটির বর্ণনাধারা দুর্বল, তবে তা একাধিক ছানাদে বর্ণিত১২
রাছূলুল্লাহ 1 হাছান ইবনু ‘আলীকে (h) যে দু‘আটি শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং তিনি নিজেও যে দু‘আটি ক্বূনূতে ওয়িতরে পাঠ করতেন তাতে ছিল- অর্থ- (হে আল্লাহ!) আমাকে আপনার ফায়সালাকৃত বিষয়ের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন।মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ, ছুনানু আবী দাঊদ১৩
২) ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ আল মাক্বদিছীর (o) উপরোক্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যায় ইমাম ‘উছাইমীন o বলেছেন:- আল্লাহ 0 যা চান তা-ই করেন, যেমন ক্বোরআনে ‘আযীমে আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-

إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيدُ.سورة هود- ١٠٧১৪

অর্থাৎ- নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা করেন তা-ই করতে পারেন।ছুরা হূদ- ১০৭১৫

৩) ক্বাদরে বিশ্বাস পোষণ ওয়াজিব এবং তা ঈমানের অন্যতম ভিত্তি।
তাক্বদীর বা আল্লাহ্‌র নির্ধারণ কর্মটি অবশ্যই ভালো, এটা কখনো মন্দ হতে পারে না। ক্বাদ্‌রকে আল্লাহ্‌র নির্ধারণ কর্ম হিসেবে কখনো মন্দ বলা যাবে না। তবে পরিণতি বিবেচনায় কিংবা যখন সেই নির্ধারণ বা ফায়সালাটি এসে পৌছায় সেই সময়ের জন্য অথবা যার জন্য সেটি নির্ধারিত হয়ে থাকে তার জন্যে  সেটি ক্বাদ্‌র তথা আল্লাহ্‌র নির্ধারিত বিষয়টি ভালো বা মন্দ, মিষ্টি বা তিক্ত, সুখকর বা দু:খজনক হয়ে থাকে।
৪) উছতায বিভিন্ন উদহারণ সহ বিষয়িটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে আলোচনা করেন।

 

ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-

ক) কিছু দিন আগে একই মাত্রার ভূমিকম্পে বাংলাদেশে প্রাণহানি হলো না অথচ দেখা গেল ইতালিতে অনেক লোকের প্রাণহানি হয়ে গেল। বিষয়টাকে কি বাংলাদেশিদের জন্য ভালো কিছুর ইঙ্গিত বলে ধরে নেব, না-কি আগামীতে আমাদের জন্য বড় ধরনের ‘আযাব অপেক্ষা করছে বলে মনে করব?
খ) السلام عليكم ورحمة الله। আল্লাহ 0 উছতাযকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। শাইখ! আমার প্রশ্ন হলো- ক্বাযা ও ক্বাদ্‌র এর মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?
গ) তাক্বদীরে যা আছে তা-ই যদি হয়, তাহলে তাক্বদীরের উপর ইছতিখারাহ কিভাবে প্রভাব ফেলবে? আল্লাহ 7 কি প্রতিটি বিষয় লাওহে মাহ্‌ফূযে লিখে রাখেন নি?
ঘ) শাইখ! আল্লাহ 0 আপনার মধ্যে বারাকাহ দান করুন! শাইখ! “ক্বাদার, মুক্বাদ্দার, মাক্বদূর ও তাক্বদীর” এ শব্দগুলোর মধ্যে পার্থক্য কি? দয়া করে যদি পুনরায় বলতেন।
ঙ) দারিদ্র কে অপেক্ষাকৃত খারাপ মনে করলে কি আল্লাহ্‌ অসন্তুষ্ট হবেন না? আমরা জানি রাছূলুল্লাহকে (1) যখন বান্দাহ নাবী ও বাদশাহ নাবী এই দু’টির যেকোনো একটি বেছে নিতে বলা হল, তখন তিনি বান্দাহ নাবী হতে চাইলেন, আর একারণেই তার জীবনে খুব বেশী সচ্ছলতা কখনো ছিল না, অধিকাংশ সাহাবীদের জীবনী পর্যালোচনা করলেও আমরা দেখতে পাই যে, তারা দারিদ্রের মধ্যে জীবন-যাপন করতেন, অধিকাংশ ছালাফরাও খুবই দরিদ্র ছিলেন। বলা যেতে পারে তারা দুন্‌ইয়ার ধন-সম্পদের আশা করতেন না, বা এর পিছনে সব সময় ও পরিশ্রম ব্যয় করতেন না। সমসাময়িক অনেক ‘আলিমদের জীবনী থেকেও এটা দেখা যায় যে, তারা দুন্‌ইয়ার ধন-সম্পদের থেকে দারিদ্রকে পছন্দ করেছেন। আবার আমরা এটাও জানি যে, দরিদ্ররা ধনীদের চেয়ে ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এত কিছুর পরেও কি দারিদ্রকে খারাপ মনে করা যায়?


১. سورة الأنبياء- ٢٣ 
২. ছূরা আল আম্বিয়া- ২৩ 
৩. سورة القمر- ٤٩ 
৪. ছূরা আল ক্বামার- ৪৯ 
৫. سورة الفرقان- ٢ 
৬. ছূরা আল ফুরক্বান- ২ 
৭. سورة الحديد- ٢٢ 
৮. ছূরা আল হাদীদ- ২২ 
৯. سورة الأنعام- ١٢٥ 
১০. ছূরা আল আন‘আম- ১২৫ 
১১. সাহীহ্‌ মুছলিম। সাহীহ্‌ বুখারীতে আবূ হুরাইরাহ 3 থেকে অনুরূপ হাদীছ বর্ণিত রয়েছে 
১২. মা‘রিফাতু ‘উলূমিল হাদীছ লিল হাকিম। হাদীছটির বর্ণনাধারা দুর্বল, তবে তা একাধিক ছানাদে বর্ণিত 
১৩. মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ, ছুনানু আবী দাঊদ 
১৪. سورة هود- ١٠٧ 
১৫. ছুরা হূদ- ১০৭ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close