ড. আশ্‌ শাইখ সালিহ্‌ আল ফাওযান কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত ইমাম আল বারবাহারী রচিত “শারহুছ্ ছুন্নাহ (ছুন্নাতের ব্যাখ্যা)” (৫০তম পর্ব)

এটি মুহ্তারাম আশ্শাইখ সালিহ্ আলফাওযান (c) কর্তৃক আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের প্রখ্যাত ইমাম- ইমাম আল বারবাহারী (o) এর অনবদ্য গ্রন্থ “শারহুছ্ ছুন্নাহ” এর অতি চমৎকার ও মূল্যবান ব্যাখ্যাগ্রন্থের অডিও ভাষান্তর। বাংলা ভাষায় গ্রন্থটি ধারাবাহিকভাবে অডিও ভাষান্তর করছেন উছতায আবূ ছা`আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c। অদ্যকার আলোচনায় উছতায- আম্বিয়া 5 ও মালাইকাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের বিষয়ে মূল্যবান আলোচনা করেছেন। এছাড়াও তাতে নিম্নোক্ত বিষয়াদী সম্পর্কে অত্যন্ত চমৎকার আলোচনা করা হয়েছে:-
১) ইমাম আল বারবাহারী o বলেন, আমরা নাবী-রাছূলগণের প্রতি বিশ্বাস রাখি।
এর ব্যাখ্যায় শাইখ সালিহ্ আল ফাওযান c বলেন- নাবী তিনিই, যার প্রতি কোন শারি‘য়াত অবতীর্ণ হয়েছে (বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে), কিন্তু তাকে এর প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
আর রাছূল তাকেই বলা হয়, যার প্রতি কোন শারি‘য়াত অবতীর্ণ হয়েছে এবং সাথে সাথে তাকে এর প্রচারেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যেমন আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-

اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنَا التَّوۡرٰةَ فِیۡهَا هُدًی وَّ نُوۡرٌ یَحۡکُمُ بِهَا النَّبِیُّوۡنَ الَّذِیۡنَ اَسۡلَمُوۡا لِلَّذِیۡنَ هَادُوۡا وَ الرَّبّٰنِیُّوۡنَ وَ الۡاَحۡبَارُ

অর্থাৎ- নিশ্চয় আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, তাতে ছিল সঠিক পথের দিশা ও আলো। এর দ্বারা নাবীগণ –যারা ছিলেন অনুগত- ইয়াহূদীদের বিচার-ফায়সালা করতেন, আর রাব্বানী ও পন্ডিতরাও।ছূরা আল-মা-ইদাহ- ৪৪
রাছূলের প্রতি শারি‘য়াহ নাযিল হয়, আর নাবীকে তাঁর পূর্ববর্তী রাছূলের শারি‘য়াহ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
যে ব্যক্তি একজন নাবীকে অস্বীকার করবে, সে সকল নাবীকে অস্বীকারকারী বলে গণ্য হবে। কারণ, নাবীগণ হলেন পরস্পর ভাই ভাই।
যেমন আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- کَذَّبَتۡ قَوۡمُ نُوۡحِ الۡمُرۡسَلِیۡنَ
অর্থাৎ- নূহের সম্প্রদায় রাছূলগণকে মিথ্যে আখ্যায়িত করেছিল।ছূরা শু‘য়ারা- ১০৫
নূহ্‌ 5 ছিলেন প্রথম রাছূল। তাই, যদিও তার ক্বাওম শুধুমাত্র নূহ্‌কেই প্রত্যাখ্যান করেছিল, তথাপি আল্লাহ 8 বলেছেন যে, নূহের ক্বাওম রাছূলগণকে মিথ্যে বলে প্রত্যাখান করেছিল।
এসম্পর্কে আল্লাহ 0 আরো ইরশাদ করেছেন-

اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡفُرُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ رُسُلِهٖ وَ یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یُّفَرِّقُوۡا بَیۡنَ اللّٰہِ وَ رُسُلِهٖ وَ یَقُوۡلُوۡنَ نُؤۡمِنُ بِبَعۡضٍ وَّ نَکۡفُرُ بِبَعۡضٍ وَّ یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یَّتَّخِذُوۡا بَیۡنَ ذٰلِکَ سَبِیۡلًا اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ حَقًّا

অর্থাৎ- নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাছূলদেরকে অস্বীকার করে, আর আল্লাহ ও তাঁর রাছূলদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়, আর বলে- আমরা (রাছূলদের) কিছু সংখ্যকের উপর ঈমান আনি আর কিছু সংখ্যককে অবিশ্বাস করি, আর তারা এর (কুফ্‌র ও ঈমানের) মাঝে (ভিন্ন) একটি পথ গ্রহণ করতে চায়। তারাই প্রকৃত কাফির।ছূরা আন্‌নিছা- ১৫০-১৫১
২) আদাম 5 কি নাবী না-কি রাছূল ছিলেন?
বিশুদ্ধ অভিমত হলো- আদাম 5 নাবী ছিলেন। আর অনেকের মতে, ইদরীছ 5 ছিলেন নূহ্‌ 5 এর দাদাদের মধ্যে থেকে একজন। কিন্তু এর পক্ষে কোনো সঠিক দালীল পাওয়া যায় না। বরং ইদরীছ 5 ছিলেন নূহ্‌ 5 এর পরবর্তী বংশধরের মধ্যে থেকে একজন। আর এটিই সঠিক অভিমত।
৩) দুন্‌ইয়াতে সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ রাছূল কে ছিলেন?
দুন্‌ইয়াতে সর্বপ্রথম রাছূল হলেন নূহ্‌ 5 আর সর্বশেষ রাছূল হলেন মুহাম্মাদ 1

ক) নূহ্‌ 5 সর্বপ্রথম রাছূল হওয়ার দালীলসমূহ নিম্নরূপ-
যেমন ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-

اِنَّاۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ کَمَاۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰی نُوۡحٍ وَّ النَّبِیّٖنَ مِنۡۢ بَعۡدِہٖ

অর্থাৎ- নিশ্চয় আমি আপনার কাছে ওয়াহী পাঠিয়েছি যেমন নূহ্‌ ও তার পরবর্তী নাবীগণের নিকট ওয়াহী পাঠিয়েছিলাম।ছূরা আন্‌নিছা- ১৬৩
ক্বোরআনে কারীমের অন্যত্র আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-

وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا نُوۡحًا وَّ اِبۡرٰہِیۡمَ وَ جَعَلۡنَا فِیۡ ذُرِّیَّتِہِمَا النُّبُوَّۃَ وَ الۡکِتٰبَ

অর্থাৎ- আর অবশ্যই আমি নূহ্‌ আর ইবরাহীমকে পাঠিয়েছিলাম, আর তাদের বংশধরদের মধ্যে নির্ধারণ করেছিলাম নুবুওয়্যাত ও কিতাব।ছূরা আল-হাদীদ- ২৬
ক্বোরআনে কারীমের অন্যত্র আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন- وَ قَوۡمَ نُوۡحٍ مِّنۡ قَبۡلُ اِنَّہُمۡ کَانُوۡا قَوۡمًا فٰسِقِیۡنَ
অর্থাৎ- ইতোপূর্বে আমি নূহের জাতিকে ধ্বংস করেছিলাম, তারা ছিল এক পাপাচারী জাতি।ছূরা আয্‌ যারিয়াত- ৪৬
মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহি হাদীছ থেকে জানা যায় যে, হাশ্‌রের ময়দানে সাধারণ মানুষ নূহ্‌কে (5) বলবেন যে, আপনি আল্লাহ্‌র (0) প্রেরিত প্রথম রাছূল। তাই আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করেন।
খ) মুহাম্মাদ 1 সর্বশেষ নাবী ও রাছূল- এই কথার প্রমাণ ক্বোরআনে কারীমেই আছে। যেমন আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- مَا کَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنۡ رِّجَالِکُمۡ وَ لٰکِنۡ رَّسُوۡلَ اللّٰہِ وَ خَاتَمَ النَّبِیّٖنَ
অর্থাৎ- মুহাম্মাদ তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নন; তবে আল্লাহর রাছূল ও সর্বশেষ নবী।ছূরা আল-আহ্‌যাব- ৪০
উপরোক্ত আয়াতে তো একথা বলা হয়নি যে, তিনিই হলেন সর্বশেষ রাছূল! তাহলে আমরা মুহাম্মাদকে (1) সর্বশেষ রাছূল বলি কিভাবে?

এর জাওয়াব হলো- নাবুওয়্যাত যখন খতম হয়ে যায়, তখন রিছালাতও যে শেষ হয়ে যায়, এটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।
আবার, ‘ঈছা 5 তো রাছূল ছিলেন। শেষ যামানায় ক্বিয়ামাতের পূর্বে তিনি পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। তাহলে, মুহাম্মাদ 1 কিভাবে সর্বশেষ রাছূল হলেন?
এর জাওয়াবে বলা যায়, ‘ঈছা 5 পৃথিবীতে নাবী বা রাছূল হিসেবে আগমন করবেন না। বরং তিনি মুহাম্মাদ 1 এর একজন উম্মাত হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করবেন।

৪) মুহাম্মাদ 1 এর পরে এই উম্মাতের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলেন আবূ বাক্‌র আস্‌সিদ্দীক্ব 3 । তাহলে ‘ঈছা 5 এর মর্যাদা কি আবূ বাক্‌র আস্‌সিদ্দীক্ব 3 থেকে কম হবে?
এর জাওয়াব তিন ভাবে দেওয়া যায়। যেমন-

ক) ‘ঈছা 5 হলেন উলুল ‘আয্‌মদের মধ্য থেকে একজন। তিনি মুহাম্মাদ 1 এর একজন উম্মাত হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করবেন, তথাপি তিনি আল্লাহ্‌র (0) একজন সম্মানিত নাবী ও রাছূল। তবে তিনি মুহাম্মাদ 1 এর শারি‘য়াতেরই অনুসরণ করবেন। অর্থাৎ ‘ঈছা 5 এই দিক বিবেচনায় আবূ বাক্‌র আস্‌সিদ্দীক্ব 3 থেকে অনেক বেশি মর্যাদার অধিকারী।
খ) মুহাম্মাদ 1 এর পরে এই উম্মাতের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলেন আবূ বাক্‌র আস্‌সিদ্দীক্ব 3 ঠিকই তবে ‘ঈছা 5 ব্যতীত।
গ) ‘ঈছা 5 তো আর এই উম্মাতের লোক নন। কারণ এই পৃথিবীতে তার আগমন হয়েছে মুহাম্মাদ 1 এর আগে। আর আবূ বাক্‌র আস্‌সিদ্দীক্ব 3 এই উম্মাতের মধ্যে সর্বোত্তম।

৫) একটি ইছলামী রাষ্ট্রে অমুছলিমরা জিযইয়া (কর)দিয়ে অবস্থান করতে পারে, মুছলিমরা তখন তাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। কিন্তু ‘ঈছা 5 এসে ইছলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্মকে বিলুপ্ত করে দিবেন। তাহলে তিনি কিভাবে মুহাম্মাদ 1 এর শারি‘য়াতের অনুসরণ করলেন?
মুহাম্মাদ 1 ‘ঈছা 5 এর ব্যাপারে এই কথাগুলো বলে পক্ষান্তরে তাকে এই কাজগুলো করার ব্যাপারে বৈধতা দিয়ে গেছেন।

৬) উলুল ‘আয্‌ম রাছূল হচ্ছেন ৫ জন। যথাঃ নূহ্‌ 5, ইবরাহীম 5, মূছা 5, ‘ঈছা 5 ও মুহাম্মাদ 1। আমাদের কাজ হলো- যেসকল রাছূলের নাম আমরা জানি তাদের প্রতি নাম সহ বিশ্বাস পোষণ করা এবং যেসকল রাছূলের নাম আমরা জানিনা তাঁদের প্রতিও বিশ্বাস পোষণ করা।
যেমন, ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন-

وَ رُسُلًا قَدۡ قَصَصۡنٰہُمۡ عَلَیۡکَ مِنۡ قَبۡلُ وَ رُسُلًا لَّمۡ نَقۡصُصۡہُمۡ عَلَیۡکَ وَ کَلَّمَ اللّٰہُ مُوۡسٰی تَکۡلِیۡمًا

অর্থাৎ- আর অনেক রাছূল যাদের ঘটনা আমি আপনার কাছে ইতঃপূর্বে বর্ণনা করেছি এবং অনেক রাছূল যাদের ঘটনা আমি আপনার কাছে বর্ণনা করিনি। আর আল্লাহ মূছার সাথে কথা বলেছেন সরাসরি।ছূরা আন্‌নিছা- ১৬৪
ক্বোরআনে কারীমে মাত্র ২৫ জন নাবী-রাছূলের নাম এসেছে।


১. ছূরা আল-মা-ইদাহ- ৪৪ 
২. ছূরা শু‘য়ারা- ১০৫ 
৩. ছূরা আন্‌নিছা- ১৫০-১৫১ 
৪. ছূরা আন্‌নিছা- ১৬৩ 
৫. ছূরা আল-হাদীদ- ২৬ 
৬. ছূরা আয্‌ যারিয়াত- ৪৬ 
৭. ছূরা আল-আহ্‌যাব- ৪০ 
৮. ছূরা আন্‌নিছা- ১৬৪ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close