এটি মুহ্তারাম আশ্শাইখ সালিহ্ আলফাওযান c কর্তৃক আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের প্রখ্যাত ইমাম- ইমাম আল বারবাহারী o এর অনবদ্য গ্রন্থ “শারহুছ্ ছুন্নাহ” এর অতি চমৎকার ও মূল্যবান ব্যাখ্যাগ্রন্থের অডিও ভাষান্তর। এতে ইছলামের মৌলিক বিষয়াদী, সঠিক ইছলামী ‘আক্বীদাহ ও মানহাজ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলা ভাষায় গ্রন্থটি ধারাবাহিকভাবে অডিও ভাষান্তর করছেন উছতায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c। এই পর্বে নিম্নোক্ত বিষয়াদী সম্পর্কে অত্যন্ত চমৎকার আলোচনা করা হয়েছে:-
১) পূর্বোক্ত ক্লাসের সংক্ষিপ্ত পূণঃআলোচনা।
২) ইমাম আল বারবাহারী o রচিত “শারহুছ্ ছুন্নাহ” গ্রন্থে বর্ণিত ৮নং পয়েন্ট (বিষয়) সম্পর্কে আলোচনা।
৩) ৮নং পয়েন্ট (বিষয়) সম্পর্কে শাইখ সালিহ্ আল ফাওযান c প্রদত্ত ব্যাখ্যার পূণঃআলোচনা।
৪) ইমাম আল বারবাহারী o রচিত “শারহুছ্ ছুন্নাহ” গ্রন্থে বর্ণিত ৮নং পয়েন্ট বা বিষয়টি হলো-
“আল্লাহ 0 আপনাকে রাহ্ম করুন! দ্বীনী বিষয়ে আপনার সমসাময়িক কারো থেকে কোন কথা শুনলে সেটাকে গ্রহণ বা বর্জন করার আগে কিংবা কারো আহবানে সাড়া দেয়ার আগে ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নিন। সে বিষয়ে প্রকৃত আহলে ‘ইল্মদের জিজ্ঞেস করে নিন। জেনে নিন! সাহাবায়ে কিরামের (4) কিংবা প্রকৃত ‘উলামায়ে কিরামের মধ্য হতে কেউ কি সে কথাটি কিংবা সে বিষয়ে বলেছেন। যদি তাদের থেকে সেই কথা বা বিষয়টি প্রমাণিত থাকে, তাহলে কোনভাবেই সেটিকে পিছনে ফেলে দেবেন না বরং একে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করুন এবং এই কথা বা বিষয়টির উপরে অন্য কিছুকে প্রাধান্য দেবেন না, নতুবা জাহান্নামে নিপতিত হতে হবে”। ইমাম আল বারবাহারী o এর উপরোক্ত কথাগুলোর ব্যাখ্যায় শাইখ সালিহ্ আল ফাওযান c বলেছেন যে, এ কথাগুলো ইমাম আল বারবাহারী o ইমাম আহ্মাদ ইবনু হাম্বাল o এর সময়ে বলেছেন। সুতরাং বর্তমান সময়ে যখন সাগরের ঢেউয়ের ন্যায় চতুর্দিক থেকে নানারকম ফিতনা আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে, এসময়ে একথাগুলো আমাদের জন্য আরো কত প্রবলভাবে যে প্রযোজ্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
৫) ইছলামের শত্রুরা মুছলমানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য, তাদেরকে ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্র অনুসরণ থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য এবং তাদেরকে নিজেদের অনুসারী বানানোর জন্য প্রাণপণ অবিশ্রান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইছলামের দুশমনরা এ সত্যটি যথার্থই উপলব্দি করতে পেরেছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত মুছলমানদের মধ্যে ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্র অনুসরণ অবশিষ্ট থাকবে ততক্ষণ তাদেরকে পরাজিত করা যাবে না। যদিও তাদের ভূখন্ড, দেশ, তেল, সম্পদ ইত্যাদি দখল করা সম্ভবপর হয় তবে এসবই হবে সাময়িক, কিন্তু স্থায়ীভাবে তাদেরকে পদানত করা যাবে না।
৬) ইছলামের শত্রুদের পরাজিত করতে হলে মুছলমানদেরকে অবশ্যই যথাযথভাবে ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্র অনুসরণ করতে হবে। ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্র অনুসরণই হলো দ্বীন ও ঈমান রক্ষার একমাত্র উপায়।
৭) শুধূ কাফিররাই ইছলামের শত্রু নয় বরং মুছলমান নামদারী যারা কুফ্র, শির্ক কিংবা বিদ‘আতে মুকাফ্ফিরাহ অনুশীলন ও চর্চা করে থাকে তারাও হলো ইছলামের শত্রু। শুধু তাই নয় বরং কখনো কখনো এরা সুষ্পষ্ট কাফির-মুশরিকদের চেয়েও ইছলামের জন্য অধিক ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক হয়ে থাকে।
৮) মুছলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক অনেক ফিতনাহ বিদ্যমান। তন্মধ্যে একটি হলো- “গণতন্ত্র”। এটি ছিল ইছলামের শত্রুদের আবিষ্কৃত একটি চিন্তাধারা। কিন্তু যারা এই চিন্তাধারা আবিষ্কার করেছিল তাদের থেকে অনেকগুণ বেশি বর্তমানে মুছলমানরা এর চর্চা ও অনুশীলন করছে। কান্ডজ্ঞানহীন বেওক্বূফ এমনও কিছু মুছলমান রয়েছে যারা যে কোন মূল্যে গণতন্ত্র রক্ষার দাবি জানায়।
৯) মুছলমানদের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও অনেক ফিতনাহ বিদ্যমান। তন্মধ্যে একটি হলো -সুদ। বলতে গেলে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সুদ ভিত্তিক কিংবা সুদের সাথে সম্পৃক্ত। অথচ ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 7 অত্যন্ত স্পষ্টভাবে সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন। মুছলমান অধ্যুষিত একটি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যদি সুদ নির্ভর হয়, তাহলে ঐ দেশের জন্য কল্যাণ ও বারাকাহ লাভের আশা আমরা কিভাবে করতে পারি?
১০) আমাদের দেশে সুদের লেন-দেনের পাশাপাশি ঘুষ লেন-দেনও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে। সিলেটের এক নামকরা তাবলিগী লোক (তাবলীগ জামা‘আতের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত) কথা প্রসঙ্গে বলে দিলেন যে, ঘুষ গ্রহণকারী ব্যক্তি নাকি যে ঘুষ গ্রহণ করে না তার থেকে উত্তম। তিনি তার দৃষ্টিতে এর পক্ষে কিছু যুক্তিও তুলে ধরেন!!!
১১) ইছলাম আমাদেরকে হালাল পন্থায় ব্যবসা করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘুষ দেয়া ছাড়া ব্যবসা করা যাচ্ছে না। এতদ্বিষয়ে উছতায কিছু উদাহরণ পেশ করেন।
১২) বাংলাদেশের তথাকথিত ইছলামী ব্যাংকগুলো কিভাবে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে এবং লাভ বা মুনাফার নামে তাদেরকে সুদের লেন-দেনে জড়িত করছে! তথাকথিত এসব ইছলামী ব্যাংকগুলো তাদের সুদী লেনদেনকে ইছলামের মোড়কে এমনভাবে উপস্থাপন করছে যে, সাধারণ লোকেরা বুঝতেও পারছে না যে, তারা সুদের লেনদেন করছে। তাই তারা এবিষয়ে তাওবাহ্র প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করছে না। উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c এসব বিষয় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। আল্লাহ 0 তাঁকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।
১৩) এমনিভাবে ‘‘লাইফ ইন্সুরেন্স” কিংবা “ইছলামী লাইফ ইন্সুরেন্স” নামে মুছলমানদের ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। এসব লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর সাথে জড়িত কিংবা তাদের ভাড়াটে অর্থভোগী অনেক মৌলভী রয়েছে, যারা তাদের লাইফ ইন্সুরেন্স ব্যবস্থাপনা ও পদ্ধতিকে বৈধ বলে ফাতওয়া দেয় এবং জনসাধারণকে লাইফ ইন্সুরেন্স করতে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে থাকে। তদ্রুপ “বাই‘য়ে মুআজ্জাল” বা বাকিতে বিক্রি, “ইছলামী গৃহক্রয় ঋণ” ইত্যাদি আরো বিভিন্ন নামে বিভিন্ন পন্থায় সুদকে হালাল বানানোর এবং সাধারণ মুছলমানদের ধোঁকা দেয়ার কতো যে অপচেষ্টা চলছে, তার কোন ইয়ত্তা নেই।
১৪) শাইখ সালিহ্ আল ফাওযান c বলেছেন- “ফিক্ব্হ (দ্বীনের সঠিক বুঝ-জ্ঞান) অর্জন করা হলো নিজেকে রক্ষার উপায়। উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c এ কথাটির বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।