১) তা’উন শব্দের অর্থ কি?
আরবীতে দুইটি বিষয় আছে। একটি হচ্ছে আল-ওয়াবা এবং, আরেকটি হচ্ছে আত-তা’উন। এখানে ওয়াবা থেকে তা’উন হচ্ছে অনেকবেশী মারাত্মক ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। তা’উনে মানুষের মৃত্যুহারও অনেক বেশী থাকে। এটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে। আল-ওয়াবাও একধরনের সংক্রামক ও মহামারী। কিন্তু, এতে মৃত্যুহার থাকে অনেক কম। এবং, এটি নিয়ন্ত্রনে থাকে। আবূ হুরাইরাহ 3 বর্ণিত, রাছূল 1 বলেন, সংক্রামক ব্যধি বলতে কিছু নেই।মুত্তাফাকুন আলাইহি
তাহলে, এই তা’উনকে কিভাবে মহামারী বা, সংক্রামক ব্যধি হিসেবে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হল?
হাদীছে পাওয়া যায় যে, রাছূল 1 বলেছেন, কুষ্ঠ রোগী থেকে তোমরা সেভাবে পলায়ন করো। ঠিক যেভাবে তোমরা বাঘ দেখলে পলায়ন করো।
অপর আরেকটি হাদিছ থেকে জানা যায় যে, আবূ সালামা ইবনে 3 আউফ থেকে বর্ণিত, রাছূল1 বলেছেন, অসুস্থ ব্যক্তি যেনও সুস্থ ব্যক্তির কাছে না যায়।মুছলিম
তাহলে, সংক্রামক ব্যধি বলে কিছু না থাকলে রাছূল 1 এই কথাটি কেনও বলেছেন? এই হাদিছগুলোর মধ্যে তাহলে কিভাবে সমন্বয় করা যায়?
ক) ‘সংক্রামক ব্যধি বলতে কিছু নেই’ কথাটি তিনি পূর্বেকার জাহেলী আক্বিদাকে বাতিল ও নিবৃত্ত করার জন্য বলেছিলেন। কারণ, পূর্বেকার কুফফারদের এই বিশ্বাস ছিল যে, কিছু কিছু ব্যধি নিজে নিজেই সংক্রামক হয়ে থাকে।
খ) ‘সংক্রামক ব্যধি বলতে কিছু নেই’ কথাটি দ্বারা রাছূল 1 এই কথাটিই বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, কোনও কোনও ব্যধির নিজে থেকে সংক্রামক হবার ক্ষমতা নেই।
২) হাদিছটির মধ্যে দুইটি মৌলিক বিষয় পরিলক্ষিত হয়। যেমন,
ক) যা কিছুই সংঘটিত হয়, সেগুলো আল্লাহ 0 এর নির্দেশ ও ইচ্ছায় সংঘটিত হয়। যেমন, আগুনের কোনও শক্তি নেই যে সে মানুষকে পোড়াবে। কারণ, ইব্রাহীম কে আগুনে ফেলার মাধ্যমে। এই সম্পর্কে আল্লাহ 0 কুরআনে কারীমে বলেন, قُلۡنَا یٰنَارُ کُوۡنِیۡ بَرۡدًا وَّ سَلٰمًا عَلٰۤی اِبۡرٰہِیۡمَ অর্থঃ আমি বললাম, ‘হে অগ্নি! তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও শান্তিময় হয়ে যাও।’আম্বিয়াঃ৬৯
খ) মানুষের কাজ হচ্ছে উপায় অবলম্বন করা। উক্ত হাদীছে রাছূল 1 আমাদেরকে সংক্রামক ব্যধি থেকে রক্ষার উপায় বলে দিয়েছেন।
৩) বাদুড় থেকে যদি এই রোগের সংক্রমণ ঘটে থাকে, তবে বাদুড়ের মধ্যে এই রোগ কিভাবে আসলো? এবং, এই রোগ এতদিন কোথায় ছিল? এটার অস্তিত্ব যদি পূর্বে থেকেই বিদ্যমান থেকে থাকে, তাহলে এটা এতদিন কাজ করলনা কেন? আর যদি এটা নবসৃষ্ট হয়, তাহলে এটাকে কে সৃষ্টি করলো?
এতগুলো প্রশ্নের সঠিক ও নির্ভেজাল একটাই উত্তর যে, সংক্রামক ব্যধি বলতে কিছু নেই। এই ভাইরাসকে আল্লাহ 0 সৃষ্টি করেছেন। এই ভাইরাস আল্লাহ 0 এর ইচ্ছাতেই মহামারী আকার ধারণ করেছে এবং, মানুষকে আক্রমণ করেছে। যেমন, আল্লাহ 0 কুরআনে কারীমে বলেন, قُلۡ کُلٌّ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ অর্থঃ বল, ‘সবকিছুই আল্লাহর তরফ হতে।’নিসাঃ৭৮
৪) অমুছলীম সমাজ তো বটেই, এমনকি মুছলীম সমাজের সবাই এখন ভয় করছে এই করোনা ভাইরাসকে। অথচ, আল্লাহ 0 কুরআনে কারীমে বলেন, فَلَا تَخَافُوۡہُمۡ وَ خَافُوۡنِ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ
অর্থঃ তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর, যদি তোমরা মু’মিন হও।আলি ইমরানঃ১৭৫
পৃথিবীতে যত ভাইরাসই আসুক না কেনও, শারিয়াতের পরিভাষায় তাদের একটিই নাম রয়েছে। আর টা হচ্ছে, আত-তা’উন(যদি এটা মারাত্মক আকার ধারণ করে)। আমাদের করোনাকে নিয়ে কোনও ভয় পাওয়া উচিৎ নয়। এই তা’উনকেই আমাদের ভয় করা উচিৎ। কারণ, এটা আল্লাহ 0 এর বিভিন্ন আযাব সমূহের মধ্যে একটি আযাব। তাই, করোনা আতঙ্ক নামের কোনও ভয় মুমিনদের উপর থাকা উচিৎ না। এটা আমাদের আক্বিদার সাথে সাঙ্ঘরসিক। বরং, আমাদের উচিৎ হবে যে এই আযাব আমাদের উপর আসার কারণ অন্বেষণ করা।
৫) কুরআনে কারীমে আল্লাহ 0 বলেন, وَ مَا کَانَ اللّٰہُ مُعَذِّبَہُمۡ وَ ہُمۡ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ অর্থঃ যখন তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে এরূপ অবস্থায়ও আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না।আনফালঃ৩৩
কুরআনে কারীমের অপর আরেকটি আয়াতে আল্লাহ 0 বলেন, ظَہَرَ الۡفَسَادُ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ بِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِی النَّاسِ لِیُذِیۡقَہُمۡ بَعۡضَ الَّذِیۡ عَمِلُوۡا لَعَلَّہُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ
অর্থঃ মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা (অসৎ পথ হতে) ফিরে আসে।রূমঃ৪১
এই আয়াতগুলো থেকে সহজেই এই তা’উন থেকে বাঁচার উপায় পাওয়া যায়। সেগুলো হল, প্রচুর পরিমানে ইস্তিগফার ও আল্লাহ 0 এর কাছে ফিরে যাওয়া।
৬)তাওবা ও ইস্তিগফার করার পূর্বে আমাদের আক্বিদাকে ঠিক করতে হবে। যেমন, করোনাকে ভয় করে আল্লাহ 0 এর নিকট ইস্তিগফার করে কোনও লাভ হবেনা। ভয় একমাত্র আল্লাহ 0 কেই করতে হবে। কারণ, এই করোনা আল্লাহ 0 এর সেনাবাহিনীর মধ্যে থেকে একটি। এই সম্পর্কে আল্লাহ 0 কুরআনে কারীমে বলেন, وَ مَا یَعۡلَمُ جُنُوۡدَ رَبِّکَ اِلَّا ہُوَ
অর্থঃ তোমার প্রতিপালকের বাহিনী (কারা এবং এর স্যখ্যা কত সে) সম্পর্কে তিনি ছাড়া কেউ জানে না।মুদ্দাচ্ছিরঃ৩১
কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ 0 বলেন, وَ لِلّٰہِ جُنُوۡدُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا অর্থঃ আসমান ও যমীনের যাবতীয় বাহিনী আল্লাহর কর্তৃত্বের অধীন। আল্লাহ আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।।ফাতহঃ৪
৭) আল্লাহ 0 এর তরফ থেকে বালা-মুসিবাত নাযিল হয় কেনও?
এই সম্পর্কে আলী 3 এর অত্যন্ত চমৎকার একটি কথা আছে। তিনি বলেন, গুনাহের কারনে বালা নাযিল হয়। এবং, ইস্তিগফারের মাধ্যমে তা দূরীভুত হয়।
আল্লাহ কুরআনে কারীমে এই ব্যাপারে বলেন, وَ مَاۤ اَصَابَکُمۡ مِّنۡ مُّصِیۡبَۃٍ فَبِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِیۡکُمۡ وَ یَعۡفُوۡا عَنۡ کَثِیۡرٍ অর্থঃ তোমাদের উপর যে বিপদই উপনীত হয় তা তোমাদের হাতের উপার্জনের কারণেই, তিনি অনেক অপরাধই ক্ষমা করে দেন।আশ-শুরাঃ৩০
কুরআনে কারীমের অন্যত্র আল্লাহ 7 বলেন, وَ مَاۤ اَصَابَکَ مِنۡ سَیِّئَۃٍ فَمِنۡ نَّفۡسِکَ অর্থঃ তোমার যে কোন অকল্যাণ হলে তা হয় তোমার নিজের কারণে।নিছাঃ৭৯
এছাড়াও, অশ্লীলতা, বেহায়াপনাতে কুফফার দেশগুলো পশুদের চেয়েও অধম অবস্থানে রয়েছে। আর মুছলীম দেশগুলোও যেনো এই অশ্লীলতা, বেহায়াপনাতে কুফফার দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিচ্ছে। এগুলো থেকে যদি তারা নিজেদের সংশোধন না করে, তবে ভবিষ্যতে এরকম আরো তা’উন দেখা দিবে।
কুরআনে কারীমে আল্লাহ 7 আরো বলেন, مَاۤ اَصَابَ مِنۡ مُّصِیۡبَۃٍ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَا فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ اِلَّا فِیۡ کِتٰبٍ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ نَّبۡرَاَہَا অর্থঃ পৃথিবীতে অথবা তোমাদের নিজেদের উপর এমন কোন মুসীবত আসে না যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না।হাদীদঃ২২
৮) কিছুক্ষন পর পর হাতমুখ ধোওয়া, মুখে মাস্ক পরিধান করলেই যে এগুলো আমাদেরকে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করবে, মুমিনদের এরকম কোনও বিশ্বাস রাখা মোটেই উচিৎ নয়। এটা আক্বিদা পরিপন্থি বিষয়। আবার কিছু লোক অতি অভয় বাণী শোনায়। যেমন, এই করোনা কিছুই না। এর থেকে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। এতে মুমিনদের কিছুই হবেনা। অর্থাৎ, ব্যাপারটিকে তারা খুবই হালকাভাবে দেখছেন। কিন্তু, আমাদের অবস্থানটা হবে ভয় এবং, আশার মাঝামাঝি। তাই, আমরা এই করোনাকে নিয়ে খুব বাড়াবাড়িও করবোনা, আবার একে একবারে অবজ্ঞাও করবোনা।
৯) এই তা’উনের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী রয়েছে?
ক)আমাদেরকে এই বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, এগুলো আল্লাহ এর পক্ষ থেকে মুসিবাহ ও আযাব।
খ) আমাদের এই মুসিবাহ ও আযাবের প্রতি ভয় থাকতে হবে।
গ) আমাদেরকে এই তা’উন নাযিল হবার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
ঘ) মুছলীমদেরকে যাবতীয় অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।