জামা‘আতে নামাযে দাঁড়ানোর পদ্ধতি, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

সালাত হলো দ্বীনে ইছলামের দ্বিতীয় রুক্‌ন। ইছলাম ও কুফ্‌রের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী যেসব বিষয় রয়েছে তন্মধ্যে অন্যতম হলো সালাত। আল্লাহ্‌র (7) আদেশকৃত প্রতিটি বিধি-বিধানের মধ্যেই নিহিত রয়েছে অসংখ্য হিকমাত। এসবের বেশিরভাগই মানবজাতি তার স্বল্প ও সীমিত জ্ঞান দ্বারা বুঝতে অক্ষম-অপারগ।

তবে সর্বাবস্থায় তা পালনের মধ্যেই রয়েছে মানুষের ইহ-পরকালের মুক্তি ও কল্যাণ। প্রত্যেক মুছলমান পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ব্‌ত ফার্‌য সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করা ইছলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। ইছলামের এই বিধানটির মূলেও অসংখ্য হিকমাত নিহিত রয়েছে। এর মধ্যে যেমন রয়েছে মুছলমানদের পারস্পরিক ভেদাভেদ, অনৈক্য ও হিংসা-বিদ্ধেষ দূর করার এবং তাদের মধ্যে সাম্য, মৈত্রী, ভালোবাসা, ঐক্য, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টির এক অনন্য প্রশিক্ষণ, তেমনি এটি হলো মুছলমানদের ঐক্যের প্রতীক। “মুছলমানদের মধ্যে সাদা-কালো, ধনী-গরীব, বাদশাহ-ফক্বীর, আশরাফ-আত্বরাফ বা জাত-বংশের কোন তারতম্য ও ভেদাভেদ নেই। তারা সকলেই আল্লাহ্‌র বান্দাহ এবং পরস্পর ভাই ভাই। আল্লাহ্‌র পথে তারা সকলেই ঐক্যবদ্ধ”। গোঁটা বিশ্বকে এই নিরব বার্তা পৌঁছে দেয়ার এবং এর বাস্তব চিত্র প্রদর্শনের অন্যতম মাধ্যম হলো পাঁচ ওয়াক্ব্‌ত জামা‘আতে সালাত। আর এই জামা‘আতে সালাত ক্বায়িমের অন্তর্ভুক্ত অন্যতম একটি বিষয় হলো সফ (ক্বাতার) ঠিক করা।

ক্বাতার (সফ) ঠিক করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা-

সফ সোজা-সঠিক করা হলো জামা‘আতে সালাতের প্রথম কাজ। মুছলমানদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্ধেষ ও পারস্পরিক মতানৈক্য দূর করা, তাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও ঐক্য সৃষ্টি করা এবং তা অটল ও অটুট রাখা, নামাযে বিনয় ও একাগ্রতা লাভ, শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে আত্মরক্ষা, নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র (7) রাহ্‌মাত ও নৈকট্য লাভ ইত্যাদির অনেকটাই নির্ভর করে নামাজে সঠিকভাবে সফবন্দি হওয়ার উপর। সঠিকভাবে সফবন্দি হওয়া ছাড়া নামায পরিপূর্ণ হয় না, এবং সেই নামায সঠিকভাবে ক্বায়িম হয়েছে বলেও গণ্য হয় না। এর প্রমাণ হলো-
আনাছ ইবনু মালিক e থেকে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে যে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-

سَوُّوا صُفُوفَكُمْ؛ فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ إِقَامَةِ الصَّلَاةِ.رواه البخاري

অর্থ- তোমরা তোমাদের সফগুলো সোজা করো, কেননা সফ সোজা করা নামায ক্বায়িমের অন্তর্ভুক্ত বিষয়।সাহীহ্‌ বুখারী
আনাছ ইবনু মালিক e হতে বর্ণিত অন্য বর্ণনায় রয়েছে রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-

سَوُّوا صُفُوفَكُمْ فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصَّفِّ مِنْ تَمَامِ الصَّلَاةِ.رواه مسلم

অর্থ- তোমরা তোমাদের সফগুলো সোজা; ঠিকঠাক করো, কেননা সফ সোজা করা নামাযের পরিপূর্ণতার অন্তর্ভুক্ত।সাহীহ্‌ মুছলিম
আর অসম্পূর্ণ সালাত কিংবা সঠিকভাবে ক্বায়িম করা হয়নি এমন সালাত আল্লাহ্‌র কাছে মাক্ববূল হওয়ার আশা করা যায় না। একারণেই রাছূলুল্লাহ 1 এবং সাহাবায়ে কিরাম 4 জামা‘আতে সালাত আদায়কালীন সফ ঠিক করার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখতেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সফ সোজা ও ঠিকঠাক না হতো ততক্ষণ তারা নামাযই শুরু করতেন না।
রাছূলুল্লাহ 1 জামা‘আতে নামায শুরু করার আগে একাধিকবার সাহাবায়ে কিরামকে (4) শীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করে একে অপরের সাথে মিলিত হয়ে ক্বাতার সোজা করে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিতেন। ক্বাতার সোজা করার জন্য প্রয়োজনে তিনি লাঠিও ব্যবহার করতেন।
নু‘মান ইবনু বাশীর e হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَوِّي صُفُوفَنَا إِذَا قُمْنَا إِلَى الصَّلَاةِ ، فَإِذَا اسَتْوَيْنَا كَبَّرَ.رواه أبو داؤود

অর্থ- আমরা যখন নামাযে (জামা‘আতে) দাঁড়াতাম তখন রাছূলুল্লাহ 1 আমাদের সফগুলো ঠিক করাতেন। আমরা যখন ঠিকঠাক হয়ে যেতাম (সফগুলো যখন সোজা ও ঠিকঠাক করে নিতাম) তখন তিনি তাকবীর (তাকবীরে তাহ্‌রীমাহ) বলতেন।ছুনানু আবী দাঊদ
এ সম্পর্কে আনাছ e হতে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, তিনি বলেছেন যে, রাছূলুল্লাহ 1 বলতেন:-

اسْتَوُوا، اسْتَوُوا، اسْتَوُوا، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنِّي لَأَرَاكُمْ مِنْ خَلْفِي كَمَا أَرَاكُمْ مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ.رواه النسائي

অর্থ- ঠিকভাবে সোজা সমান্তরাল হয়ে দাঁড়াও! ঠিকভাবে সোজা সমান্তরাল হয়ে দাঁড়াও! ঠিকভাবে সোজা সমান্তরাল হয়ে দাঁড়াও! কেননা যার হতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, অবশ্যই আমি তোমাদেরকে আমার পশ্চাৎ থেকে তেমনি দেখতে পাই যেমনি আমি তোমাদেরকে সম্মুখ থেকে দেখে থাকি।ছুনানুন্‌ নাছায়ী
নাফি‘ o হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে,

كَانَ عُمَرُ يَبْعَثُ رَجُلًا يُقَوِّمُ الصُّفُوفَ، ثُمَّ لَا يُكَبِّرُ حَتَّى يَأْتِيَهُ ، فَيُخْبِرَهُ أَنَّ الصُّفُوفَ قَدِ اعْتَدَلَتْ.رواه مالك في المؤطأ و عبد الرزاق و الترمذي و البيهقي

অর্থ- উমার e নামাযের সফ সোজা ও ঠিকঠাক করার জন্য একজন লোক পাঠাতেন। ঐ লোক এসে যে পর্যন্ত না তাকে অবগত করত যে, সারিগুলো (নামাযের সফগুলো) সোজা-সঠিক হয়ে গেছে ততক্ষণ তিনি তাকবীর (তাকবীরে তাহ্‌রীমা) বলতেন না।মুআত্তা ইমাম মালিক, মুসান্নাফু ‘আব্দির্‌ রায্‌যাক্ব, জামে‘ তিরমিযী, ছুনানুল বাইহাক্বী১০
তিরমিযীর অন্য বর্ণনায় ‘উমার e সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে,

أَنَّهُ كَانَ يُوَكِّلُ رِجَالًا بِإِقَامَةِ الصُّفُوفِ فَلَا يُكَبِّرُ حَتَّى يُخْبَرَ أَنَّ الصُّفُوفَ قَدْ اسْتَوَتْ.رواه الترمذي১১

তিনি (উমার e) নামাযের সফগুলো সোজা ও ঠিকঠাক করার জন্য কিছু লোককে দায়িত্ব দিয়ে রাখতেন, যতক্ষণ না তারা সফ পুরোপুরি সোজা-সঠিক হয়েছে বলে তাকে অবগত করতেন, ততক্ষণ তিনি তাকবীর বলতেন না।জামে‘ তিরমিযী১২
মুসান্নফু ‘আব্দির্‌ রায্‌যাক্ব গ্রন্থে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার h হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ عُمَرُ لَا يُكَبِّرُ حَتَّى تَعْتَدِلَ الصُّفُوفُ ، يُوَكِّلُ بِذَلِكَ رِجَالًا.مصنف عبد الرزاق১৩

অর্থ- ‘উমার e নামাযে সফ সোজা; ঠিকঠাক না হওয়া পর্যন্ত তাকবীর (তাকবীরে তাহ্‌রীমাহ) বলতেন না এবং সফ ঠিক করে দেয়ার জন্য কিছু লোককে তিনি দায়িত্ব দিয়ে রাখতেন।মুসান্নাফু ‘আব্দির্‌ রায্‌যাক্ব১৪

وَرُوِيَ عَنْ عَلِيٍّ، وَعُثْمَانَ، أَنَّهُمَا كَانَا يَتَعَاهَدَانِ ذَلِكَ، وَيَقُولاَنِ: اسْتَوُوا.رواه الترمذي و مالك في المؤطأ و إبن أبي شيبة১৫

অর্থ- ‘আলী এবং ‘উছমান h হতে বর্ণিত যে, তারা উভয়েও তদ্রুপ করতেন। তাঁরা উভয়েই মুসাল্লীদের উদ্দেশ্য করে বলতেন:- তোমরা সফ ঠিক করো।জামে‘ তিরমিযী, মুআত্তা ইমাম মালিক, মুসান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ১৬
কোন কোন সাহাবী কাতার সোজা-সঠিক করার জন্য প্রয়োজনে পায়ে বেত্রাঘাতও করতেন।
‘উমার e সফ সোজা করতে যেয়ে আবূ ‘উছমান আন নাহ্‌দী-র পায়ে বেত্রাঘাত করেছেন।আল মুহাল্লা লি ইবনে হায্‌ম১৭
ছুওয়াইদ ইবনু গাফালাহ e হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-

كَانَ بِلالٌ يَضْرِبُ أَقْدَامَنَا فِي الصَّلاةِ , وَيُسَوِّي مَنَاكِبَنَا.مصنف عبد الرزاق১৮

অর্থ- বিলাল e নামাযের সময় (সফ সোজা করার জন্য) আমাদের পায়ে বেত্রাঘাত করতেন এবং আমাদের কাঁধসমূহ সমান্তরাল করে দিতেন।মুসান্নাফু ‘আব্দির্‌ রায্‌যাক্ব১৯
উপরোক্ত বর্ণনা সমূহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, নামাযে ক্বাতার সোজা-সঠিক করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাছূলুল্লাহ 1 এবং সাহাবায়ে কিরাম 4 এ বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব প্রদান করতেন। একারণেই অনেক ‘উলামায়ে কিরাম নামাযে ক্বাতার সোজা করা ওয়াজিব বলে অভিমত দিয়েছেন।

কিন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে প্রায় সকল মাছজিদেই সম্মানিত ইমাম সাহেবগণও বেশি থেকে বেশি “কাতার সোজা করুন, মোবাইল ফোন বন্ধ করুন” বলেই নিজ দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করেন। ইমাম সাহেবগণ ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে থাকেন, ক্বাতার ঠিক হোক বা না হোক সময় হওয়ার সাথে সাথেই তারা তাকবীরে তাহ্‌রীমা বলে নামায শুরু করে দেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যে, মাছজিদের নির্দিষ্ট সময়ে কেবল নামায শুরু করে দেয়াটাই তাদের উপর ওয়াজিব। জুমু‘আর সালাত এবং ‘ঈদের সালাতেও সেই একই অবস্থা। ইমাম সাহেব দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রথমে বাংলা খুৎবা দিতে থাকেন, অন্যদিকে জুমু‘আ পূর্ববর্তী ছুন্নাত সালাতের জন্য এতই সংক্ষিপ্ত সময় দেয়া হয় যে, ধীরে-স্থিরে চার রাকা‘আত সালাত আদা করা কঠিন হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে ইমাম সাহেব ‘আরাবী খুতবা দিতে শুরু করে দেন। ‘ঈদের সালাতেও যেখানে খুতবা সালাতের পরে দেয়া ওয়াজিব, সেখানে দেখা যায় যে, ইমাম সাহেব সালাতের আগেই বাংলায় খুতবা (ভাষণ) দিতে থাকেন। সালাত শুরু হওয়ার এক মিনিট পূর্ব পর্যন্ত তার ভাষণ চলতে থাকে। হঠাৎ করে “নামায শুরু হচ্ছে, সফ সোজা করুন” বলে মানুষের বিরাট ক্বাফিলাহ্‌ (দল) কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকবীর বলে নামায শুরু করে দেন। এদিকে দেখা যায় যে, সফ সোজা হওয়া তো দূরের কথা অসংখ্য লোক সফের বাইরে এলোমেলোভাবে যে যেভাবে পারেন নামাযে অংশগ্রহণের চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে অনেকের হয়ত দু’তিনটি তাকবীরই বাদ পড়ে গেছে। ওদিকে ইমাম সাহেব যথাসময়ে সালাত শুরু করতে পেরে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন।
আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে সাধারণ মুক্বতাদী কিংবা মাছজিদ পরিচালনা কমিটির কথা না হয় বাদই দিলাম, ইমাম সাহেবগণ কি জানেন না যে, জামা‘আতের অর্থ ও তাৎপর্য কী? সফ সোজা করার অর্থ কী? জামা‘আতে সালাত আদায় করার পিছনে কী হিকমাত বা প্রজ্ঞা নিহিত রয়েছে? জামা‘আতে সালাত আদায়কালীন তাদের করণীয় কী? হাদীছে এসময় কী করার নির্দেশ রয়েছে? রাছূলুল্লাহ 1 ও তাঁর সাহাবায়ে কিরাম 4 তখন কী করতেন? তারা কি নির্দিষ্ট সময় হলেই আল্লাহু আকবার বলে নামায শুরু করে দিতেন, নাকি সর্বাগ্রে তারা সফ সোজা করতেন? যদি এসব মৌলিক বিষয় কারো জানা না থাকে, কিংবা জানা থাকলেও তা পালন ও বাস্তবায়নের মত সৎসাহস না থাকে, তাহলে আমরা নির্দ্ধিধায় বলতে পারি যে, সে লোক কোনভাবেই ইমাম হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
অজ্ঞতার কারণে আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মুক্ব্‌তাদীগণও উপরোক্ত বিষয়ে চরম উদাসীন। প্রায় প্রতিটি মাছজিদে জামা‘আতকালীন ক্বাতারের (সফ বা লাইনের) অবস্থা দেখলে সহজেই বুঝা যায় যে, তাদের মধ্যে পারস্পরিক হৃদ্যতা, আন্তরিকতা ও ঐক্যের কতো অভাব। তারা কতই না বিশৃঙ্খল। তাদের অনেকের দাঁড়ানোর অবস্থা দেখলে বুঝার উপায় নেই যে, তারা কি নামাযের জন্য দাঁড়িয়েছেন না অন্য কোন কাজের জন্য। পায়ের অবস্থান- সে তো এক পা আগে, আরেক পা পিছে। যেখানে নামাযে দাঁড়ানো কিংবা বসা সর্বাবস্থায় উভয় পায়ের অগ্রভাগ ক্বিবলামুখী থাকা আবশ্যক, সেখানে দেখা যায় যে, অধিকাংশেরই ডান পা উত্তরমুখী আর বাম পা দক্ষিণমুখী হয়ে আছে। এই যদি হয় প্রত্যেক মুক্ব্‌তাদীর দাঁড়ানোর অবস্থা, তাহলে সমবেত নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় তাদের সফ বা লাইনের চিত্র কেমন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
মুক্ব্‌তাদীগণের জানা উচিত যে, জামা‘আতে সালাত আদায়কালীন পরস্পর কাঁধ সমান্তরাল রেখে এবং একে অপরের পায়ের গোড়ালির সাথে গোড়ালি মিলিয়ে মধ্যবর্তী ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করে সোজা-সঠিকভাবে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো, এটা মূলত মুক্ব্‌তাদীগণেরই কাজ। ইমাম সাহেবের দায়িত্ব হলো- বিষয়টি নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে কঠোরতা আরোপ করা এবং সফ সোজা ও পুরোপুরি ঠিকঠাক না হওয়া পর্যন্ত সালাত শুরু না করা। শুধু তাই নয় বরং সালাত শুরুর পূর্বে, জুমু‘আর খুতবায় কিংবা ধর্মীয় বিভিন্ন আলোচনা সভায় এতদ্বিষয়ের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে ক্বোরআন-ছুন্নাহ্‌র বিশুদ্ধ দালীল-প্রমাণসহ সাধারণ মুছলমানকে অবহিত করা।
সফ ঠিক বা সোজা করা বলতে কি বুঝায়? রাছূলুল্লাহ 1 ও সাহাবাবায়ে কিরাম g কিভাবে সফ ঠিক করতেন?
বিশুদ্ধ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত যে, সফ ঠিক করার অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো নিম্নরূপ; রাছূলুল্লাহ 1 এবং সাহাবায়ে কিরাম g “সফ সোজা করো” বলতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে বুঝতেন এবং বুঝাতেন-
(এক) সমান্তরাল হওয়া। আর এই সমান্তরাল দুই দিক থেকে হতে হবে। (ক) উপরের দিকে- কাঁধে কাঁধে। (খ) নিচের দিকে- পায়ে পায়ে। এর প্রমাণ হলো-

(১) আবূ মাছ‘উদ e হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-

كَانَ رَسُولُ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَمْسَحُ مَنَاكِبَنَا فِي الصَّلَاةِ، وَيَقُولُ اسْتَوُوا، وَلَا تَخْتَلِفُوا؛ فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ .——-رواه مسلم وابن حبان২০

অর্থ- রাছূলুল্লাহ 1 সালাতের সময় আমাদের কাঁধ ছুঁয়ে দেখতেন আর বলতেন: সমান্তরাল হও, পরস্পর ভিন্নতা অবলম্বন করো না, নতুবা তোমাদের অন্তরও পরস্পর বিভক্ত-বিভেদপূর্ণ হয়ে যাবে ————–।সাহীহ্‌ মুছলিম, সাহীহ্‌ ইবনু হিব্বান২১
(২) নু‘মান ইবনু বাশীর e হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-

كَانَ رَسُولُ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَوِّي صُفُوفَنَا، حَتَّى كَأَنَّمَا يُسَوِّي بِهَا الْقِدَاحَ، حَتَّى رَأَى أَنَّا قَدْ عَقَلْنَا عَنْهُ ، ثُمَّ خَرَجَ يَوْمًا فَقَامَ حَتَّى كَادَ يُكَبِّرُ، فَرَأَى رَجُلًا بَادِيًا صَدْرُهُ مِنْ الصَّفِّ ؛ فَقَالَ : عِبَادَ الله ! لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ، أَوْ لَيُخَالِفَنَّ الله بَيْنَ وُجُوهِكُمْ.رواه البخاري و مسلم২২

অর্থ- রাছূলুল্লাহ 1 (সালাতে) আমাদের সফগুলো এমনভাবে সোজা করাতেন যেন তিনি এর দ্বারা কামানের কাঠ সোজা করছেন, যতক্ষণ না তিনি উপলব্ধি করলেন যে, আমরা তার থেকে (বিষয়টি) পুরোপুরি বুঝে গেছি। অতঃপর একদিন তিনি বেরিয়ে এসে সালাতে দাঁড়িয়ে তাকবীর দিতে যাবেন (তাকবীরে তাহ্‌রীমাহ বলে নামায শুরু করতে যাবেন) এমন সময় দেখলেন যে, এক ব্যক্তির বক্ষ সফ থেকে এগিয়ে আছে। তখন তিনি বললেন:- “আল্লাহ্‌র বান্দাহগণ! অবশ্যই তোমরা তোমাদের সফগুলো সোজা-সঠিক করে নেবে, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের পরস্পরের চেহারায় (পরস্পরের দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তাধারার মধ্যে) বিভেদ-মতানৈক্য সৃষ্টি করে দেবেন”।সাহীহ্‌ বুখারী, সাহীহ্‌ মুছলিম২৩
(৩) বারা ইবনু ‘আযিব e থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَخَلَّلُ الصَّفَّ مِنْ نَاحِيَةٍ إِلَى نَاحِيَةٍ يَمْسَحُ صُدُورَنَا وَمَنَاكِبَنَا ، وَيَقُولُ : لَا تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ ، وَكَانَ يَقُولُ : إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الصُّفُوفِ الْأُوَلِ.رواه أبو داؤود২৪

অর্থ- রাছূলুল্লাহ 1 আমাদের বক্ষ ও কাঁধ ছুঁয়ে ছুঁয়ে সফের একপ্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত অতিক্রম করতেন আর বলতেন:- পরস্পর ভিন্নতা অবলম্বন করো না, নতুবা তোমাদের অন্তরও পরস্পর বিভক্ত-বিরোধপূর্ণ হয়ে যাবে। তিনি (রাছূলুল্লাহ) আরও বলতেন:- নিশ্চয় আল্লাহ প্রথম ক্বাতার সমূহের (মুসাল্লীদের) উপর রাহ্‌মাত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশতাগণ তাদের জন্য রাহ্‌মাত প্রার্থনা করেন।আবূ দাঊদ২৫
মুছলিম উম্মাহ আজ শতধা বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন। তাদের পরস্পরের মধ্যে মতভেদ আর মতানৈক্যের কোন ইয়ত্তা নেই। এমনকি নামাযের রূপরেখা আর পদ্ধতি নিয়েও রয়েছে তাদের মধ্যে অনেক মতবিরোধ। মুছলিম উম্মাহ্‌র এই বিভক্তি, ‍বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্যের পিছনে যেসব কারণ রয়েছে, তন্মধ্যে উপরোক্ত হাদীছে বর্ণিত কারণটি হলো অন্যতম। তারা যদি রাছূলুল্লাহ 1 এর নির্দেশমত একে অন্যের কাঁধে কাঁধ সমান্তরাল রেখে পায়ের গোড়ালির সাথে গোড়ালি মিলিয়ে ক্বাতারগুলো সোজা-সঠিক করে ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করে শীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় মিলিত হয়ে দাঁড়াত, তাহলে তাদের মধ্যে এতো অনৈক্য, বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হত না এবং তারা আল্লাহ্‌র (7) রাহ্‌মত থেকেও বিচ্ছিন্ন হত না।
(৪) ‘আব্দুল্লাহ্‌ ইবনু ‘উমার h হতে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, তিনি বলেন-

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَقِيمُوا الصُّفُوفَ، وَحَاذُوا بَيْنَ الْمنَاكِبِ، وَسُدُّوا الْخلَلَ، وَلِينُوا بِأَيْدِي إِخْوَانِكُمْ، وَلا تَذَرُوا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ، وَمَنْ وَصلَ صَفّاً وَصَلَهُ الله، وَمَنْ قَطَعَ صَفّاً قَطَعَهُ الله.رواه أحمد وأبو داؤود و النسائي২৬

অর্থ- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- তোমরা সফগুলো সোজা-সঠিক করো, পরস্পরের কাঁধ সমান্তরাল রেখো, ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করো, তোমাদের ভাইদের জন্য হাত নরম করো (কেউ যদি ক্বাতারে প্রবেশ করতে চায় তাহলে হাত শক্ত করে রেখোনা যাতে সে ঢুকতে না পারে বরং হাত নরম করে তাকে সফের ফাঁকে প্রবেশের সুযোগ দাও) এবং শয়তানের জন্য ছোট ছোট ফাঁকা জায়গা ছেড়ে দিও না। যে ব্যক্তি (নামাযে) ক্বাতার মিলিয়ে রাখে (ক্বাতারের ফাঁকা জায়গায় প্রবেশ করে ফাঁক বন্ধ করে ক্বাতার মিলিয়ে রাখে) আল্লাহ 0 তাকে তাঁর (রাহ্‌মাতের) সাথে মিলিয়ে রাখেন, আর যে ব্যক্তি ক্বাতার বিচ্ছিন্ন করে (সফের মধ্যে ফাঁকা জায়গা রেখে দেয়, যদ্দরুন দু’জন মুসাল্লী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং তদ্বারা সফও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়) আল্লাহ 7 তাকে তাঁর (রাহ্‌মাত) থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন।মুছনাদে ইমাম ইমাম আহমাদ, ছুনানু আবী দাঊদ, ছুনানুন্‌ নাছায়ী২৭
(৫) ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব e হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-

اسْتَوَوْا تَسْتَوِي قُلُوبُكُمْ ، وَتَمَاسُّوا تَرَاحَمُوا.رواه الطبراني في الأوسط২৮

অর্থ- তোমরা (সালাতে) ঠিকভাবে সোজা-সমান্তরাল হয়ে দাঁড়াও তাহলে তোমাদের অন্তরও সোজা-সঠিক থাকবে এবং তোমরা গাদাগাদি করে মিলিত হয়ে দাঁড়াও তাহলে তোমাদের প্রতি রাহম করা হবে।তাবারানী-আওছাত্ব২৯
এখানে আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার, তা হলো- প্রত্যেক মুসাল্লীকে সালাতে (একাকী হোক বা জামা‘আতে) নিজের দু’পায়ের মাঝখানে এই পরিমাণ ফাঁক রেখে দাঁড়ানো উচিত, যাতে বসতে গিয়ে তাকে অতিরিক্ত জায়গা দখল করতে না হয় কিংবা অতিরিক্ত সংকুচিত হয়ে বসতে না হয়। প্রত্যেকে নিজ নিজ শরীরের মাপ অনুযায়ী দু’পায়ের মাঝখানে স্বাভাবিক ফাঁক রেখে দাঁড়াবেন, যাতে বসার সময় ঐ জায়গাটুকুতে স্বাচ্ছন্দে বসতে পারেন। আমাদের দেশের মাছজিদগুলোতে দেখা যায়- কোন কোন মুসাল্লী নিজের দু’পায়ের মাঝখানে মাত্র আট-দশ আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রেখে খুব এঁটে সেঁটে নামাযে দাঁড়ান, আবার কেউ কেউ নিজের ডান ও বাম পার্শ্বের মুসাল্লীর পায়ের সাথে পা মিলানোর জন্য তথা ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করার জন্য কিংবা এমনিতেই (এমনকি একাকী সালাতেও) নিজের পা দুটিকে অস্বাভাবিকভাবে (অনেক বেশি) প্রশস্থ করে দাঁড়ান। প্রকৃতপক্ষে দাঁড়ানোর এই উভয় পদ্ধতিই ছুন্নাহ্‌সম্মত নয়। এভাবে দাঁড়ালে ছাজদাহ করার সময় এবং বসার সময় অন্যের জায়গা হয় দখল করতে হয়, নতুবা দু’জনের মাঝখানে অনেক জায়গা খালি পড়ে থাকে। অথচ এর কোনটাই কাম্য নয়।

(দুই) একজনের পায়ের গোড়ালির সাথে অপরজনের পায়ের গোড়ালি লাগিয়ে দুইজনের মধ্যকার ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করে শীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ক্বাতারবন্দি হওয়া। এর প্রমাণ হলো-

(১) আবূ হুরাইরাহ e হতে বর্ণিত-

قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:.سُدُّوا الْخلَلَ.رواه أبو داؤود৩০

অর্থ- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- তোমরা (সালাতে) ফাক-ফোঁকর বন্ধ করো।ছুনানু আবী দাঊদ৩১

(২) সাহীহ্‌ বুখারীতে আনাছ ইবনু মালিক e হতে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে যে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-

أَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ فَإِنِّي أَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِي وَكَانَ أَحَدُنَا يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَقَدَمَهُ بِقَدَمِهِ.رواه البخاري৩২

অর্থ- তোমরা তোমাদের সফগুলো ঠিকঠাক ও সোজা করে নাও, কেননা আমি তোমাদেরকে আমার পিছন দিক থেকেও দেখতে পাই। আনাছ e বলেন- (একথা শুনার সাথে সাথে) আমাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ পার্শ্ববর্তী লোকের কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা খুব ভালো করে লাগিয়ে নিতাম।সাহীহ্‌ বুখারী৩৩
(৩) আনাছ e হতে অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেছেন-

أُقِيمَتْ الصَّلَاةُ ، فَأَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِوَجْهِهِ ، فَقَالَ : أَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ ، وَتَرَاصُّوا ، فَإِنِّي أَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِي.رواه البخاري৩৪

অর্থ- একদা নামাযের ইক্বামাত হয়ে যাওয়ার পর রাছূলুল্লাহ 1 আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন:- তোমরা তোমাদের সফগুলো ঠিক করো এবং শীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করো। আমি তোমাদেরকে আমার পিছন থেকেও দেখতে পাই।সাহীহ্‌ বুখারী৩৫
(৪) নু‘মান ইবনু বাশীর e হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-

أَقْبَلَ رَسُولُ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى النَّاسِ بِوَجْهِهِ ، فَقَال: أَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ، أَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ، أَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ، وَالله لَتُقِيمُنَّ صُفُوفَكُمْ، أَوْ لَيُخَالِفَنَّ الله بَيْنَ قُلُوبِكُمْ.رواه أبو داؤود و ابن حبان و إبن خزيمة৩৬

অর্থ- একদা রাছূলুল্লাহ 1 মানুষের (নামাযের জন্য উপস্থিত লোকদের) প্রতি মুখ ফিরিয়ে (তাকিয়ে) বললেন:- তোমরা সফ ঠিক করো, তোমরা সফ ঠিক করো, তোমরা সফ ঠিক করো। আল্লাহ্‌র শপথ! তোমরা অবশ্যই সফ ঠিক করবে অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের পরস্পরের অন্তরকে বিভক্ত করে দিবেন।ছুনানু আবী দাঊদ, সাহীহ্‌ ইবনে হিব্বান, সাহীহ্‌ ইবনে ‍খুযাইমাহ৩৭
(৫) আবূ ছা‘ঈদ আল খুদরী e হতে বর্ণিত-

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رضي الله عنه، أَنَّ رَسُولَ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ –: فإِذَا قُمْتُمْ إِلى الصَّلَاةِ، فَاعْدِلُوا صُفُوفَكُمْ، وَأَقِيمُوهَا، وَسُدُّوا الْفُرَجَ ؛ فَإِنِّي أَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِي.رواه أحمد وإبن خزيمة وإبن حبان৩৮

অর্থ- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-  — অতঃপর যখন তোমরা সালাতে দাঁড়াবে, তখন তোমরা তোমাদের সফগুলো সোজা-সুদৃঢ় করো এবং ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করো, কেননা আমি তোমাদেরকে আমার পিছন থেকেও দেখতে পাই।মুছনাদে ইমাম আহ্‌মাদ, সাহীহ্‌ ইবনে খুযাইমাহ, সাহীহ্‌ ইবনে হিব্বান৩৯

এই ছিল সাহাবায়ে কিরামের (4) সালাতে দাড়ানোর নমূনা। আর আমাদের মাছজিদগুলোতে দেখা যায় এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। মুসাল্লীগণ তাদের পরস্পরের মধ্যে এত বিস্তর ফাঁক রেখে দাঁড়ান, দেখে মনে হয় যেন কেউ তাদের নির্দেশ দিচ্ছে যে, তোমরা পরস্পর নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখো, একজনের ছোঁয়া যেন অপরজনের গায়ে না লাগে কিংবা শয়তান তাদেরকে বলছে যে, আমি আসছি আমার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রেখো। তাছাড়া এই ফাঁকা জায়গায় কেউ প্রবশ করতে চাইলে তারা প্রচন্ড বিরক্তি বোধ করেন এবং হাত শক্ত করে যথাসম্ভব তাকে বাঁধা দানের চেষ্টা করেন। নামাযে পায়ের সাথে পা এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোকে তারা রীতিমত দৃষ্টতা ও বে-আদবী বলে মনে করেন।

(তিন) একের পর এক সামনের সফগুলো পূরণ করে পর্যায়ক্রমে পিছনের সফগুলোতে আসা। এর প্রমাণ হলো-

(১) জাবির ইবনু ছামুরাহ h হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَ : أَلَا تَصُفُّونَ كَمَا تَصُفُّ الْملَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا ؟ فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ الله، وَكَيْفَ تَصُفُّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا ؟ قَالَ: يُتِمُّونَ الصُّفُوفَ الْأُوَلَ، ويَتَرَاصّونَ في الصَّفِّ.رواه مسلم وابن حبان৪০

অর্থ- একদিন রাছূলুল্লাহ 1 বেরিয়ে এসে আমাদেরকে বললেন:- ফিরিশতারা যেভাবে তাদের পালনকর্তার সামনে সারিবদ্ধ (সফবন্দি) হন তোমরা কেন সেভাবে সারিবদ্ধ (সফবদ্ধ) হও না? আমরা বললাম- হে আল্লাহ্‌র রাছূল! ফিরিশতারা কিভাবে তাদের পালনকর্তার সামনে সফবদ্ধ হন? রাছূলুল্লাহ 1 বললেন:- তারা (প্রথমে) সামনের সফগুলো পূরণ করেন এবং শীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করে ক্বাতারে দাঁড়ান।সাহীহ্‌ মুছলিম, সাহীহ্‌ ইবনে হিব্বান৪১

(২) আনাছ ইবনু মালিক e হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

أَنَّ رَسُولَ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ: أَتِمُّوا الصَّفَّ الْمُقَدَّمَ، ثُمَّ الَّذِي يَلِيهِ، فَمَا كَانَ مِنْ نَقْصٍ فَلْيَكُنْ فِي الصَّفِّ الْمؤَخَّرِ.رواه أبو داؤود والنسائي৪২

অর্থ- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- তোমরা সামনের সফ আগে সম্পূর্ণরূপে পূরণ করো, তারপর এর পিছনের সফ (এভাবে পর্যায়ক্রমে সফগুলো) পূরণ করো। যাতে করে অপূর্ণতা যদি থাকে, সেটা যেন সর্বশেষ সফেই থাকে।ছুনানু আবী দাঊদ, ছুনানুন্‌ নাছায়ী৪৩
সামনের সফের জায়গা খালি রেখে কেউ যদি পিছনের সফে দাঁড়ায়, তাহলে প্রয়োজনে তার ঘাড় ডিঙ্গিয়ে হলেও সামনের খালি জায়গা পূরণের অনুমতি হাদীছে রয়েছে।
(৩) ইবনু ‘আব্বাছ e হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-

مَنْ نَظَرَ إِلَى فُرْجَةٍ فِي صَفٍّ فَلْيَسُدَّها بِنَفْسِهِ، فَإِنْ لَمْ يَفْعَلْ فَمَرَّ مَارٌّ فَلْيَتَخَطَّ عَلَى رَقَبَتِهِ، فَإِنَّهُ لَا حُرْمَةَ لَهُ.رواه الطبراني في الكبير৪৪

অর্থ- যদি কেউ ক্বাতারে কোন খালি জায়গা দেখে তাহলে সে নিজে থেকেই যেন তা পূরণ করে নেয়। যদি সে ব্যক্তি তা না করে, তাহলে (প্রয়োজনে) তার ঘাড়ে পা দিয়ে (হলেও) কেউ যেন ঐ খালি জায়গাটুকু পূরণ করতে যায়। কেননা তার কোন সম্মান নেই।মু‘জামুল কাবীর লিত্‌ ত্বাবারানী৪৫
(৪) আবূ হুরাইরাহ e হতে বর্ণিত অন্য হাদীছে রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-

وْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوا.متفق عليه৪৬

অর্থ- মানুষ যদি জানত আযানে এবং প্রথম ক্বাতারে কী ফাযীলাত রয়েছে, অতঃপর তা অর্জনের জন্য যদি লটারীর প্রয়োজন হত তাহলে তারা তা-ই করত।সাহীহ্‌ বুখারী, সাহীহ্‌ মুছলিম৪৭
কিন্ত আফছোছ! আমাদের সমাজে মুসাল্লীগণ; নামায শেষে যাতে দ্রুত মাছজিদ থেকে বেরিয়ে আসা যায় তজ্জন্য তারা শেষ ক্বাতারে দাঁড়াতে এতই সচেষ্ট থাকেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেন প্রয়োজনে তারা এজন্য লটারী করতেও প্রস্তুত আছেন।

(চার) দুই সফের মধ্যে অযথা বেশি দূরত্ব না রাখা বরং এক সফ থেকে অন্য সফকে যতটুকু সম্ভব কাছাকাছি রাখা। এর প্রমাণ হলো-

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضي الله عنه، عَنْ رَسُولِ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : رُصُّوا صُفُوفَكُمْ، وَقَارِبُوا بَيْنَهَا، وَحَاذُوا بِالْأَعْنَاقِ، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنِّي لأَرَى الشَّيَاطِينَ يدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ ،كَأَنَّهَا الْحذَفُ.أخرجه أبو داؤود وابن حبان والنسائي৪৮

অর্থ- আনাছ ইবনু মালিক e হতে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- তোমরা তোমাদের সফগুলোর ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করো এবং সফগুলো কাছাকাছি রেখো, কাঁধগুলো সমান্তরাল রেখো (এক বরাবর রেখো, কেউ আগে কেউ পিছে এমন হয়ো না)। যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! নিশ্চয়ই আমি কালো রংয়ের লেজ ও কানবিহীন ছোট মেষ শাবকের ন্যায় শয়তানকে ক্বাতারের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে প্রবেশ করতে দেখি।ছুনানু আবী দাঊদ, সাহীহ্‌ ইবনে হিব্বান, ছুনানুন্‌ নাছায়ী৪৯

মূলত ইমাম ও মুক্ব্‌তাদী মিলে যে সালাত আদায় করা হয়, সেটাকে বলা হয় জামা‘আত। ইজতিমা‘ শব্দ থেকে জামা‘আত শব্দের অর্থ হলো- সমবেত, একত্রিত, সম্মিলিত, ঐক্যবদ্ধ ইত্যাদি। সুতরাং জামা‘আতে নামাযের দাবি হলো- ইমাম-মুক্ব্‌তাদী পরস্পর কাছাকাছি থাকা, মিলেমিশে থাকা, সম্মিলিত থাকা এবং বিচ্ছিন্ন না হওয়া। এ কারণে রাছূলুল্লাহ 1 জামা‘আতে সালাতের সফগুলো একদম কাছাকাছি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। অকারণে-অপ্রয়োজনে জামা‘আতে পরস্পর বিচ্ছিন্ন থাকা বা দূরত্ব বজায় রাখা- এটা জামা‘আতের অর্থ, তাৎপর্য ও উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থি কাজ। তাই ইমাম থেকে প্রথম ক্বাতার এবং পরবর্তী এক ক্বাতার থেকে অন্য ক্বাতারকে যতটুকু সম্ভব কাছাকাছি রাখা এবং দুই ক্বাতারের মধ্যখানে অনর্থক দূরত্ব বর্জন করা, এটাই হলো রাছূলুল্লাহ 1 এর ছুন্নাহ।

(পাঁচ) প্রাপ্ত বয়স্ক, ‘আলিম ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিগণ যথাসম্ভব ইমামের কাছা্কাছি অবস্থান করা। এর প্রমাণ হলো-

عَنْ عَبْدِ الله بْنِ مَسْعُودٍ الْهُذَلِي رضي الله عنه، قَالَ :قال صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لِيَلِنِي مِنْكُمْ أُولُو الْأَحْلَامِ، وَالنُّهَى، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ (ثَلَاثاً)، وَإِيَّاكُمْ وَهَيْشَاتِ الْأَسْوَاقِ.رواه مسلم৫০

 অর্থ- ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাছ‘ঊদ আল হুযালী e হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- তোমাদের মধ্য হতে জ্ঞানী-প্রাজ্ঞ, বিচক্ষণ-বুদ্ধিমান লোকেরা আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। অতঃপর যারা (জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার দিক দিয়ে যত বেশি) এদের কাছাকাছি তারা দাঁড়াবে, (“অতঃপর যারা এদের কাছাকাছি তারা দাঁড়াবে” এভাবে এ কথাটি রাছূলুল্লাহ 1 তিনবার বললেন)। এবং তোমরা সাবধান! (মাছজিদে) বাজারের মত শোরগোল করবে না।সাহীহ্‌ মুছলিম৫১

কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে প্রায় মাছজিদেই দেখা যায় এমন সব লোকেরা ইমামের কাছাকাছি স্থানে অবস্থান করেন, যারা ইমামের কোন সমস্যা হলে সে সমস্যা মোক্বাবিলা করার জ্ঞান রাখা তো দূরের কথা,‍ অযূ বা সালাতের ফার্‌য-ওয়াজিব বিষয়েরও জ্ঞান রাখেন না, কিংবা যারা সাহীহ-শুদ্ধভাবে ছূরায়ে ফাতিহাও তিলাওয়াত করতে পারেন না। মাছজিদ পরিচালনার দায়ভারও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এধরনের লোকের উপরই ন্যস্ত থাকে। অবশ্য এটা তাদের দোষ নয় বরং এজন্য অনেক ক্ষেত্রেই তারা প্রশংসার দাবিদার। কেননা সমাজের ‘উলামায়ে কিরাম- যারা এই মহান দায়িত্ব পালনের কথা, তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসীন হয়ে যাওয়ার কারণেই অন্যরা এ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে বাধ্য হন।
অধিকাংশ ‘আলিম ও ইমামগণ নিজেদের আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদা বেমালুম ভুলে যাওয়ার কারণে এবং ইমামতির ন্যায় একটি সুমহান ব্রতের মর্যাদা, গুরুত্ব ও তাৎপর্য সঠিকভাবে উপলব্ধি না করার কারণেই সমাজে তারা আজ উপেক্ষিত, যথাযথ মূল্যায়ন ও মর্যাদা প্রাপ্তি থেকে চরমভাবে বঞ্চিত। দুঃখজনক হলেও সত্য, বেশিরভাগ মাছজিদেই দেখা যায় যে, ইমাম সাহেব চাকরী হারানোর ভয়ে মাছজিদ পরিচালনা কমিটির কিংবা মুতাওয়াল্লী সাহেবের হুক্‌ম আর মর্জিমত ইমামতির দায়িত্ব পালন করছেন। এতে করে অনেক সময় জেনে-শুনে বিদ‘আতী কাজ-কর্ম করতেও তারা দ্বিধাবোধ করেন না। এতদসত্ত্বেও তাদের অধিকাংশের ভাগ্যে একজন সাধারণ পিয়ন বা চৌকিদারের সমান বেতন জোটে না।
‘আলিমগণ যদি সত্যিকার অর্থেই ‘আলিম হতেন, তারা যদি কেবল আল্লাহ্‌কে (0) ভয় করে এবং একমাত্র তাঁর উপরই পূর্ণ আশা ও ভরসা রেখে চলতেন, তারা যদি নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতেন, তাহলে অবশ্যই তাদের এ করুণ দশা হত না। অপরদিকে সাধারণ মুছলমান এবং বিশেষ করে মাছজিদ পরিচালনার সাথে জড়িত লোকেরা যদি এই সত্যটুকু উপলব্ধি করতেন যে, হাক্ব্যানী ‘আলিমগণ হলেন নাবীগণের (m) উত্তরসূরী, তারা হলেন জাতির পরিচালক-কর্ণধার এবং মুক্তির দিশারী, তাহলে সমাজে ‘উলামায়ে কিরাম বিদ্যমান থাকাবস্থায় দ্বীনী বিষয়ে অন্য কেউ নেতৃত্ব বা কর্তৃত্ব দেখাতে যেত না। ইমামের নিকটবর্তী স্থানটুকু জ্ঞানী-গুণী আহ্‌লে ‘ইল্‌মদের জন্যই বরাদ্দ থাকত। সাধারণ মানুষ যদি একথা জানত যে, ইমামতি- এটা সাধারণ কোন দায়িত্ব বা পেশা নয়, এটা হলো নাবাওয়ী পেশা, এটা হলো এমন এক সুমহান ব্রত, যে ব্রতে রাছূলুল্লাহ 1 দুন্‌ইয়া থেকে বিদায় নেয়ার আগ পর্যন্ত নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন, তাহলে তারা ইমামের পরামর্শ অনুযায়ী মাছজিদ পরিচালনা করত। তারা ‘আলিম ও ইমামগণকে সমাজে সবচেয়ে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করত।
(ছয়) প্রথমে ডান দিক হতে সফ পূর্ণ করা। এর প্রমাণ হলো-

(১) বারা ইবনু ‘আযিব e হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-

كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – أَحْبَبْنَا أَنْ نَكُونَ عَنْ يَمِينِهِ ، فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ حِينَ انْصَرَفَ: “رَبِّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ”.رواه أبو داؤود و النسائي৫২

অর্থ- আমরা যখন রাছূলুল্লাহ 1 এর পিছনে সালাত আদায় করতাম, তখন আমরা তাঁর ডানদিকে দাঁড়াতে পছন্দ করতাম। ছালাম ফিরানোর পর আমি তাঁকে বলতে শুনেছি “রাব্বী ক্বীনী ‘আযাবাকা ইয়াওমা তাব‘আছু ‘ইবাদাকা” (অর্থ- হে আমার প্রতিপালক! যে দিন তুমি তোমার বান্দাহ্‌দেরকে বিচারের জন্য উঠাবে, সেদিন আমাকে তোমার ‘আযাব হতে রক্ষা করো)।ছুনানু আবী দাঊদ, ছুনানুন্‌ নাছায়ী৫৩

(২) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাছ h হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-

بِتُّ عِنْدَ خَالَتِي، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ ، فَقُمْتُ أُصَلِّي مَعَهُ ، فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ ، فَأَخَذَ بِرَأْسِي فَأَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ.رواه البخاري و مسلم৫৪

অর্থ- একদা আমি আমার খালার (উম্মুল মু’মিনীন মাইমূনাহ f এর) নিকট রাত্রি যাপন করি। রাছূলুল্লাহ 1 উঠে রাতের সালাত পড়তে লাগলেন, আমিও উঠে গেলাম তাঁর সাথে নামায পড়তে এবং গিয়ে তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথায় ধরে (আমাকে তাঁর পিছন দিকে ঘুরিয়ে) ডান পাশে এনে দাঁড় করালেন।সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম৫৫

এতে প্রমাণিত হয় যে, ইমামের সাথে দাঁড়ানো মুক্ব্‌তাদীর জন্য উত্তম স্থান হলো ইমামের ডান পার্শ্ব। নতুবা রাছূলুল্লাহ 1 ইবনু ‘আব্বাছ-কে (h) তাঁর বাম পার্শ্ব হতে ডান পার্শ্বে নিয়ে আসতেন না।

(৩) ‘আয়িশাহ f হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ وَمَلائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى مَيَامِنِ الصُّفُوفِ.رواه أبو داؤود৫৬

অর্থ- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- নিশ্চয়ই আল্লাহ (নামাযে) সফসমূহের ডান দিকে অবস্থানকারীদের উপর রাহ্‌মাত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশতাগণও তাদের জন্য (আল্লাহ্‌র কাছে) মাগফিরাত (ক্ষমা) প্রার্থনা করেন।ছুনানু আবী দাঊদ৫৭
ডান দিক হতে সফ পূর্ণ করার অর্থ এই নয় যে, ইমামের ঠিক পিছনের জায়গাটুকু সহ ইমামের ডান-বাম খালি রেখে মাছজিদের একদম ডান প্রান্ত থেকে সফ শুরু করা। বরং এর অর্থ হলো ইমামকে মধ্যখানে রেখে প্রথমে তাঁর ডানপার্শ্বে তারপর বামপার্শ্বে দাঁড়াতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ- যদি ইমামের ডানে ও বামে পাঁচজন পাঁচজন করে মোট ১০ জন মোক্ব্‌তাদী হয়ে যান, তাহলে ১১ নং মোক্ব্‌তাদীর জন্য উচিত হলো ইমামের ডান পার্শ্বে দন্ডায়মান পূর্ববর্তী ৫ জনের ডান পার্শ্বে গিয়ে দাঁড়ানো। আর মোক্ব্‌তাদী যদি মাত্র ১জন হন তাহলে অবশ্যই তাকে ইমামের ডান পার্শ্বে ইমামের সাথে একই বরাবরে দাঁড়াতে হবে।
(সাত) মহিলাদেরকে পুরুষদের একদম পিছনে পৃথকভাবে পৃথক সারিতে রাখা। কোনভাবেই যেন সালাতে পুরুষ ও মহিলার সংমিশ্রণ না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা। এর প্রমাণ হলো-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا وَشَرُّهَا آخِرُهَا وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا.رواه مسلم و أحمد৫৮

অর্থ- আবূ হুরাইরাহ e হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- পুরুষদের জন্য (সালাতে) উত্তম সফ হলো প্রথম সফ (সারি), আর তাদের জন্য মন্দ সফ হলো একদম পিছনের সফ। আর মহিলাদের জন্য উত্তম সফ হলো সর্বশেষ সফ (সারি), আর তাদের জন্য মন্দ সফ হলো প্রথম সফ।সাহীহ্‌ মুছলিম, মুছনাদে ইমাম আহ্‌মাদ৫৯
মহিলা যদি মাত্র একজনও হয় তবুও তাকে পুরুষের সারিতে নিয়ে আসা যাবে না বরং তাকে পিছনে এবং পৃথক সারিতে দাঁড়াতে হবে।
আমাদের দেশের বর্তমান যে সমাজ ব্যবস্থা এবং আমাদের সামাজের যে বেহাল দশা, এতে মহিলাদের মাছজিদে না যেয়ে বরং নিজ নিজ গৃহে সালাত আদায় করা আবশ্যক। তাছাড়া এমনিতেই তো মহিলাদের জন্য মাছজিদের পরিবর্তে নিজ নিজ ঘরে সালাত আদায় করা উত্তম। যেমন-

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: خَيْرُ مَسَاجِدِ النِّسَاءِ قَعْرُ بُيُوتِهِنَّ.رواه أحمد و الحاكم৬০

অর্থ- উম্মু ছালামাহ f হতে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে যে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- মহিলাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম মাছজিদ হলো তাদের গৃহাভ্যন্তর।মুছনাদে ইমাম আহ্‌মাদ, মুছতাদরাকে হাকিম৬১
তবে হ্যাঁ, যদি পূর্ণ পর্দার সাথে মহিলাদের মাছজিদে আসা-যাওয়া, তাদের নিরাপত্তা এবং পুরুষ-মহিলার সংমিশ্রণ না হওয়া নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, তাহলে মহিলাদেরকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য মাছজিদে আসা থেকে বারণ করা যাবে না।
যাই হোক, সালাতে সফ ঠিক বা সোজা করা বলতে উপরোক্ত ৭টি বিষয়কে একত্রে-একসাথে নিশ্চিত করা বুঝায়। যদি এ সাতটি বিষয়ের মধ্য হতে কোন একটি বিষয়ও নামাযের জামা‘আতে বাদ পড়ে, তাহলে সেই সালাত তথা নামায সঠিকভাবে ও পরিপূর্ণরূপে আদায় হয়েছে বলে গণ্য হবে না এবং এর দ্বারা জামা‘আতে সালাতের কাঙ্ক্ষিত ফাযীলাত লাভেরও আশা করা যাবে না। তাই ইমাম এবং মুক্ব্‌তাদী; প্রত্যেকেরই সালাতে সফ তথা ক্বাতারবন্দী হওয়ার বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক ও যত্নবান হওয়া একান্ত আবশ্যক।

সংকলক: আবূ ছা‘আদা মুহাম্মাদ হাম্‌মাদ বিল্লাহ c

সূত্রাবলী:
১) আর্‌ রিছালাতুছ্‌ ছানিইয়্যা ফিস্‌ সালাত ওয়ামা ইয়ালযামু ফীহা- লিল ইমাম আহ্‌মাদ ইবনু হাম্বাল o
২) ইহ্‌কামুল আহ্‌কাম শারহু ‘উমদাতিল আহ্‌কাম- লিল ‘আল্লামা ইবনু দাক্বীক্বিল ‘ঈদ o
৩) মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়াল মুক্বালাত আল মুতানাওয়ি‘আহ- লিশ্‌শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু বায o
৩) আশ্‌শারহুল মুমতি‘ ‘আলা যাদিল মুছতাক্বনি‘- লিশ্‌শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন o
৪) তাছওয়িয়াতুস্‌ সুফূফ – লিশ্‌শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ‘আব্দিল ওয়াহ্‌হাব আল ওসাবী o


১. رواه البخاري 
২. সাহীহ্‌ বুখারী 
৩. رواه مسلم 
৪. সাহীহ্‌ মুছলিম 
৫. رواه أبو داؤود 
৬. ছুনানু আবী দাঊদ 
৭. رواه النسائي 
৮. ছুনানুন্‌ নাছায়ী 
৯. رواه مالك في المؤطأ و عبد الرزاق و الترمذي و البيهقي 
১০. মুআত্তা ইমাম মালিক, মুসান্নাফু ‘আব্দির্‌ রায্‌যাক্ব, জামে‘ তিরমিযী, ছুনানুল বাইহাক্বী 
১১. رواه الترمذي 
১২. জামে‘ তিরমিযী 
১৩. مصنف عبد الرزاق 
১৪. মুসান্নাফু ‘আব্দির্‌ রায্‌যাক্ব 
১৫. رواه الترمذي و مالك في المؤطأ و إبن أبي شيبة 
১৬. জামে‘ তিরমিযী, মুআত্তা ইমাম মালিক, মুসান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ 
১৭. আল মুহাল্লা লি ইবনে হায্‌ম 
১৮. مصنف عبد الرزاق 
১৯. মুসান্নাফু ‘আব্দির্‌ রায্‌যাক্ব 
২০. رواه مسلم وابن حبان 
২১. সাহীহ্‌ মুছলিম, সাহীহ্‌ ইবনু হিব্বান 
২২. رواه البخاري و مسلم 
২৩. সাহীহ্‌ বুখারী, সাহীহ্‌ মুছলিম 
২৪. رواه أبو داؤود 
২৫. আবূ দাঊদ 
২৬. رواه أحمد وأبو داؤود و النسائي 
২৭. মুছনাদে ইমাম ইমাম আহমাদ, ছুনানু আবী দাঊদ, ছুনানুন্‌ নাছায়ী 
২৮. رواه الطبراني في الأوسط 
২৯. তাবারানী-আওছাত্ব 
৩০. رواه أبو داؤود 
৩১. ছুনানু আবী দাঊদ 
৩২. رواه البخاري 
৩৩. সাহীহ্‌ বুখারী 
৩৪. رواه البخاري 
৩৫. সাহীহ্‌ বুখারী 
৩৬. رواه أبو داؤود و ابن حبان و إبن خزيمة 
৩৭. ছুনানু আবী দাঊদ, সাহীহ্‌ ইবনে হিব্বান, সাহীহ্‌ ইবনে ‍খুযাইমাহ 
৩৮. رواه أحمد وإبن خزيمة وإبن حبان 
৩৯. মুছনাদে ইমাম আহ্‌মাদ, সাহীহ্‌ ইবনে খুযাইমাহ, সাহীহ্‌ ইবনে হিব্বান 
৪০. رواه مسلم وابن حبان 
৪১. সাহীহ্‌ মুছলিম, সাহীহ্‌ ইবনে হিব্বান 
৪২. رواه أبو داؤود والنسائي 
৪৩. ছুনানু আবী দাঊদ, ছুনানুন্‌ নাছায়ী 
৪৪. رواه الطبراني في الكبير 
৪৫. মু‘জামুল কাবীর লিত্‌ ত্বাবারানী 
৪৬. متفق عليه 
৪৭. সাহীহ্‌ বুখারী, সাহীহ্‌ মুছলিম 
৪৮. أخرجه أبو داؤود وابن حبان والنسائي 
৪৯. ছুনানু আবী দাঊদ, সাহীহ্‌ ইবনে হিব্বান, ছুনানুন্‌ নাছায়ী 
৫০. رواه مسلم 
৫১. সাহীহ্‌ মুছলিম 
৫২. رواه أبو داؤود و النسائي 
৫৩. ছুনানু আবী দাঊদ, ছুনানুন্‌ নাছায়ী 
৫৪. رواه البخاري و مسلم 
৫৫. সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম 
৫৬. رواه أبو داؤود 
৫৭. ছুনানু আবী দাঊদ 
৫৮. رواه مسلم و أحمد 
৫৯. সাহীহ্‌ মুছলিম, মুছনাদে ইমাম আহ্‌মাদ 
৬০. رواه أحمد و الحاكم 
৬১. মুছনাদে ইমাম আহ্‌মাদ, মুছতাদরাকে হাকিম 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close