নামাযের ভিতরে মোট ১১টি রুক্ন বা ফার্য কর্ম রয়েছে। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় এগুলোর কোন একটি বাদ পড়ে গেলে নামায বাত্বিল হয়ে যাবে।
রুক্নগুলো হলো যথা:-
(১) তাকবীরে তাহ্রীমাহ বলা। এর প্রমাণ হলো- রাছূল 1 বলেছেন:-
مِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ، وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ، وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ.مسند أحمد, أبو داؤد, ترمذى, إبن ماجة
অর্থ- সালাতের চাবি হলো পবিত্রতা এবং তাকবীরের মাধ্যমে (“আল্লাহ আকবার” বলার মাধ্যমে) নামাযে প্রবেশ করা হয় এবং নামায বহির্ভূত সকল কাজ হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়। আর তাছলীমের (“আছ্ছালামু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলার) মাধ্যমে সালাত থেকে বের হওয়া যায় তথা সালাত শেষ করা হয় এবং তখন নামায বহির্ভূত অন্যান্য কাজ হালাল বা সিদ্ধ হয়।মুছনাদে ইমাম আহ্মাদ, ছুনানু আবী দাঊদ, জামে‘ তিরমিযী, ছুনানু ইবনে মাজাহ
অন্য হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, রাছূল 1 বলেছেন:-
ثُمَّ اسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ فَكَبِّرْ.رواه البخاري
অর্থ- অতঃপর ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহু আকবার বলো।সাহীহ্ বুখারী
(২) সামর্থ্য থাকলে ফার্য নামাযের প্রত্যেক রাক‘আতে দাঁড়ানো। এর প্রমাণ হলো- ক্বোরআনে ‘আযীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ.سورة البقرة- ٢٣٨
অর্থাৎ- সমস্ত নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর আল্লাহ্র সামনে একান্ত বিনয়ের সাথে দাঁড়াও।ছূরা আল বাক্বারাহ- ২৩৮
এ সম্পর্কে হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, রাছূল 1 ‘ইমরান ইবনু হুছাইনকে (e) বলেছেন:-
صَلِّ قَائِمًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ.صحيح البخاري
অর্থ- তুমি দাঁড়িয়ে নামায পড়ো, তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে বসে, আর তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে হেলান দিয়ে নামায পড়ো।সাহীহ্ বুখারী
(৩) ছূরা ফাতিহা পাঠ করা। এর প্রমাণ হলো নিম্নোক্ত হাদীছ-
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ.رواه البخاري ومسلم
অর্থ- ‘উবাদাহ ইবনুস্ সামিত 3 থেকে বর্ণিত, রাছূল 1 বলেছেন:- ঐ ব্যক্তির নামাযই হলো না যে ছূরায়ে ফাতিহা পাঠ করল না।সাহীহ্ বুখারী ও সাহীহ্ মুছলিম
(৪) রুকূ‘ করা। এর প্রমাণ হলো- ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا.سورة الحج- ٧٧
অর্থাৎ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকূ‘ করো।ছূরা আল হাজ্জ- ৭৭
হাদীছে এর প্রমাণ হলো- বাজে ভাবে নামায আদায়কারী এক লোককে তার নামায হয়নি বলে তাকে নামায শিক্ষা দিতে যেয়ে রাছূল 1 বলেছেন:-
ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا.رواه البخارى ومسلم
অর্থ- অতঃপর তুমি রুকূ‘ করো এমনভাবে যে রুকূ‘তে তুমি প্রশান্তি লাভ করতে পারো।সাহীহ্ বুখারী ও সাহীহ্ মুছলিম
(৫) রুকূ‘ হতে উঠে সোজা শান্ত হয়ে দাঁড়ানো। এর প্রমাণ হলো- বাজেভাবে নামায আদায়কারী জনৈক ব্যক্তিকে নামায শিক্ষা দিতে যেয়ে রাছূল 1 বলেছেন:-
ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَعْدِلَ قَائِمًا.رواه البخاري ومسلم
অর্থ- অতঃপর তুমি রুকু‘ হতে উঠে সোজা-শান্ত হয়ে দাঁড়াও।সাহীহ্ বুখারী ও সাহীহ্ মুছলিম
(৬) প্রতি রাক‘আতে দুইবার সাত অঙ্গের উপর ভর করে ধীর-স্থিরভাবে ছাজদাহ্ করা।
এর প্রমাণ হলো- আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ.سورة الحج- ٧٧
অর্থাৎ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকূ‘ করো, ছাজদাহ করো এবং তোমাদের পালনকর্তার ‘ইবাদাত করো।ছূরা আল হাজ্জ- ৭৭
হাদীছে এর প্রমাণ হলো- (পূর্বোক্ত ঐ লোককে সালাত শিক্ষা দিতে যেয়ে) রাছূল 1 বলেছেন:-
ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا.رواه البخاري
অর্থ- অতঃপর তুমি ছাজদাহ করো এমনভাবে যে, ছাজদাহ্তে তুমি প্রশান্তি লাভ করতে পরো। অতঃপর (ছাজদাহ থেকে) উঠে শান্ত হয়ে বসো, তারপর ছাজদাহ করো এমনভাবে যে ছাজদাহ্তে তুমি প্রশান্তি লাভ করতে পারো।সাহীহ্ বুখারী
সাত অঙ্গের উপর ছাজদাহ্ করা সম্পর্কে রাছূল 1 ইরশাদ করেছেন:-
أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ.متفق عليه
অর্থ- আমাকে সাতটি অঙ্গের উপর (ভর দিয়ে) ছাজদাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।সাহীহ্ বুখারী ও সাহীহ্ মুছলিম
(৭) প্রতি রাক‘আতে প্রথম ছাজদাহ হতে উঠে সোজা হয়ে প্রশান্তিতে বসা। এর প্রমাণ হলো- (পূর্বোক্ত ঐ লোককে সালাত শিক্ষা দিতে যেয়ে) রাছূল 1 বলেছেন:-
ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا.رواه البخاري
অর্থ- অতঃপর তুমি ছাজদাহ থেকে উঠে প্রশান্ত হয়ে বসো তারপর ছাজদাহ করো এমনভাবে যে, ছাজদাহ্তে তুমি প্রশান্তি লাভ করতে পারো।সাহীহ্ বুখারী
(৮) শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পাঠ সমপরিমাণ সময় সোজা হয়ে প্রশান্তিতে বসা। এর প্রমাণ হলো- রাছূল 1 বলেছেন:-
فَإِذَا رَفَعْتَ رَأْسَك مِنْ آخِرِ سَجْدَةٍ وَقَعَدْتَ قَدْرَ التَّشَهُّدِ فَقَدْ تَمَّتْ صَلَاتُك.
অর্থ- যখন তুমি শেষ ছাজদাহ থেকে মাথা উঠাবে এবং তাশাহ্হুদ পাঠ সমপরিমাণ সময় বসে যাবে, তাহলে তোমার সালাত পূর্ণ হয়ে যাবে।
(৯) শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পাঠ করা। এর প্রমাণ হলো- ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাছ‘ঊদ e থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:-
كُنَّا نَقُولُ قَبْلَ أَنْ يُفْرَضَ التَّشَهُّدُ: السَّلَامُ عَلَى اللَّهِ السَّلَامُ عَلَى جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيلَ , فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” لَا تَقُولُوا هَكَذَا فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ السَّلَامُ , وَلَكِنْ قُولُوا: التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.رواه الدار قطني و البيهقي
অর্থ- তাশাহ্হুদ ফার্য হওয়ার পূর্বে আমরা বলতাম:- আল্লাহ্র প্রতি ছালাম বর্ষিত হোক, জিবরাঈল ও মীকাঈলের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর রাছূলুল্লাহ 1 আমাদেরকে বললেন, “আল্লাহ্র প্রতি ছালাম বর্ষিত হোক” একথা তোমরা বলো না, কেননা আল্লাহ নিজেই তো শান্তি (শান্তির উৎস এবং শান্তি দাতা)। তোমরা বরং বলো- “আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লাহি ওয়াস্সালাওয়া-তু ওয়াত্তাইয়্যিবা-তু আছ্ছালামু ‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবীইয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আছ্ছালা-মু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন, আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রাছূলুহু”।ছুনানুদ্ দারু ক্বোত্বনী, ছুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী
(১০) ছালাম ফিরানো। এর প্রমাণ হলো- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
تَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ، وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ.مسند أحمد, أبو داؤد, ترمذى, إبن ماجة
অর্থ- সালাতে তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলার মাধ্যমে সবকিছু নিষিদ্ধ হয় এবং ছালাম (আছ্ছালামু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ) বলার মাধ্যমে সালাতে নিষিদ্ধ কাজগুলো হালাল বা বৈধ হয়।মুছনাদে ইমাম আহমাদ, ছুনানু আবী দাঊদ, জামে‘‘ তিরমিযী, ছুনানু ইবনে মাজাহ
এ সম্পর্কে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাছ‘ঊদ e বর্ণিত হাদীছে রয়েছে যে-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُسَلِّمُ عَنْ يَمِينِهِ، وَعَنْ شِمَالِهِ.رواه أحمد و أبو داؤود
অর্থ- রাছূল 1 তাঁর ডানে বামে ছালাম ফিরাতেন।ছুনানু আবী দাঊদ, মুছনাদে ইমাম আহ্মাদ
(১১) উপরোক্ত রুক্নগুলো ধারাবাহিকভাবে ধীরে-স্থিরে আদায় করা। এর প্রমাণ হলো- সাহীহ্ বুখারী ও সাহীহ্ মুছলিমে বর্ণিত সেই হাদীছ, যাতে বাজেভাবে সালাত আদায়কারী একজন সাহাবীকে রাছূল কর্তৃক সালাত শিক্ষা দেয়ার বর্ণনা ও বিবরণ রয়েছে। তাতে রাছূল 1 নামাযের রুকনগুলো ধীরে-স্থিরে, সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে আদায় করার পাশাপাশি সেগুলো ধারাবাহিকভাবে আদায়ের শিক্ষা দিয়েছেন।
গ্রন্থসূত্র:-
(১) শাইখুল ইছলাম মুহাম্মাদ ইবনু ‘আব্দিল ওয়াহ্হাব o সংকলিত “মাতনূ শুরুতিস্ সালাত ওয়া আরকানিহা ওয়া ওয়াজিবা-তিহা”।
(২) “ফিক্বহুছ্ ছুন্নাহ” লি আছ্ছায়্যিদ ছাবিক্ব o।
(৩) “আল ফিক্বহু ‘আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আ” লিশ্ শাইখ ‘আব্দুর রহমান আলজাযীরী o।
(৪) ‘আল্লামা আশ্শাইখ ইবনু বায o সংকলিত “কাইফিয়াতু সালাতিন্ নাবী 1”
(৫) ‘আল্লামা নাসিরুদ্দ্বীন আল আলবানী o সংকলিত “সিফাতু সালাতিন্ নাবী 1”
(৬) আশ্শাইখ আল ‘আল্লামা আমান আল জামী o সংকলিত “শারহু মাতনু শুরুতিস্ সালাত ওয়া আরকানিহা ওয়া ওয়াজিবা-তিহা”।
(৭) ‘আল্লামা আশ্ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্ আল ‘উছামীন o রচিত ও সংকলিত “ফিক্বহুল ‘ইবাদাত”।
(৮) ‘আল্লামা আশ্ শাইখ সালিহ্ আল ফাওযান c রচিত ও সংকলিত “আল মুলাখ্খাসুল ফিক্বহী”
(৯) ‘আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনু জামীল যাইনূ o সংকলিত “আরকানুল ইছলাম ওয়াল ঈমান”।