এটি মুহ্তারাম আশ্ শাইখ সালিহ্ আল ফাওযান c কর্তৃক আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের প্রখ্যাত ইমাম- ইমাম আল বারবাহারী o এর অনবদ্য গ্রন্থ “শারহুছ্ ছুন্নাহ” এর অতি চমৎকার ও মূল্যবান ব্যাখ্যাগ্রন্থের অডিও ভাষান্তর। এতে ইছলামের মৌলিক বিষয়াদী, সঠিক ইছলামী ‘আক্বীদাহ ও মানহাজ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলা ভাষায় গ্রন্থটি ধারাবাহিকভাবে অডিও ভাষান্তর করছেন উছতায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c। এই পর্বে উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c বর্তমান বিশ্বে বিরাজমান সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসহ নিম্নোক্ত বিষয়াদী আলোচনা করেছেন:-
মুছলমান সরকার বা শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, ইছলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে কিংবা বৈধ সরকার প্রতিষ্ঠার নামে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, মুছলমান রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষগুলোর সামান্য কারণে পরস্পরের জান-মালের ধ্বংস সাধনকে বৈধ মনে করা কিংবা্ অহেতুক নিরপরাধ অমুছলিমদেরকে হত্যা করা ইত্যাদি বর্তমানে মুছলিম বিশ্বে একটি নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুছলিম জাতি, রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি কমবেশি প্রায় সকলকেই কোন না কোনভাবে এসব মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এই অডিওটি এসব সমস্যার সমাধান সম্বলিত একটি চমৎকার ভাষণ। এতে ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্র আলোকে ছালাফে সালিহীনের (4) জ্ঞান ও উপলব্দি মতে এসব সমস্যার যথার্থ ও বাস্তবসম্মত সমাধান দেয়া হয়েছে।
১) “ইমাম বারবাহারী o বলেছেন:- “…প্রতিটি নব-আবিষ্কৃত বিষয়ই হচ্ছে বিদ‘আত, আর প্রতিটি বিদ‘আতই হলো ভ্রষ্টতা…”। ইমাম বারবাহারীর (o) এ কথাটির ব্যাখ্যায় শাইখ সালিহ্ আল ফাওযান c বলেছেন যে, এই কথাটি ‘ইরবায ইবনু ছারিয়াহ 3 বর্ণিত সুপ্রসিদ্ধ একটি হাদীছেরই অংশ। যাতে বর্ণিত রয়েছে যে, একদা রাছূলুল্লাহ 1 আমাদেরকে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও চমৎকার এমন কিছু নাসীহাত প্রদান করছিলেন যা শুনে অন্তর কেঁপে উঠল এবং চোঁখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল। আমরা বললাম- হে আল্লাহ্র রাছূল (1)! এ যেন কোন অভিযাত্রির বিদায়ী নাসীহাত, অতএব আমাদেরকে কিছু ওসিয়্যাত করুন! তখন রাছূলুল্লাহ 1 বললেন:- আমি তোমাদেরকে ওসিয়্যাত করছি আল্লাহ্কে ভয় করার এবং (শাসনকর্তার নির্দেশ) শুনার ও মান্য করার, এমনকি যদি কোন গোলাম (কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে- যদি আবসিনিয়ার কোন গোলামও) তোমাদের শাসনকর্তা হয়ে যায়। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে তারা অচিরেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। এমতাবস্থায় তোমাদের করণীয় হলো আমার ছুন্নাহ্কে এবং আমার পরে খুলাফায়ে রাশিদাহ্র ছুন্নাহ্কে অবলম্বন করা। তোমরা একে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং মাড়ি দাত দিয়ে কামড়ে ধরো, আর তোমরা দ্বীনের মধ্যে নব-আবিষ্কৃত বিষয়াদী থেকে বেঁচে থাকো কেননা প্রতিটি বিদ‘আতই (নব-আবিষ্কৃত বিষয়ই) হলো পথভ্রষ্টতা।
“তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো” কথাটির তাৎপর্য সম্পর্কে আরো কিছু আলোচনা।
২) দা‘য়ীদের বৈশিষ্ট্য। দা‘ওয়াতের কাজ করতে হবে একনিষ্ঠভাবে, তাহলে শ্রোতারা আল্লাহ চাহেতো প্রভাবিত হবে।
৩) তাক্বওয়ার পরিচয়। তাক্বওয়া অর্জনের জন্য আল্লাহ 0 এবং রাছূলুল্লাহ 1 এর ওসিয়্যাত বা জোর নির্দেশ।
৪) “আমি তোমাদেরকে ওসিয়্যাত করছি (শাসনকর্তার নির্দেশ) শুনার ও মান্য করার, এমনকি যদি আবসিনিয়ার কোন গোলামও তোমাদের শাসনকর্তা হয়ে যায়। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে তারা অচিরেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। এমতাবস্থায় তোমাদের করণীয় হলো আমার ছুন্নাহ্কে এবং আমার পরে খুলাফায়ে রাশিদাহ্র ছুন্নাহ্কে অবলম্বন করা——–”।
রাছূলুল্লাহ 1 এর উপরোক্ত কথাগুলোর ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য।
৫) মুছলমানরা পারস্পরিক যুদ্ধ, মারামারি, খুন-খারাবিতে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার কারণে আল্লাহ প্রদত্ত খনিজ সম্পদে ভরপুর হওয়া সত্ত্বেও মুছলিম দেশগুলোর অবস্থান পৃথিবীতে আজ খুবই দুর্বল।
৬) রাজনীতির নামে পরস্পর যুদ্ধ-সংঘাতে যেসকল মুছলমান লিপ্ত, তারা প্রধানত দু’টি দলে বিভক্ত-
(ক) যারা জাগতিক স্বার্থের জন্য যুদ্ধ-সংঘাতে লিপ্ত; তাদের আন্দোলন-সংগ্রামের পিছনে দ্বীনী কোন উদ্দেশ্য নেই। এরা আবার দু’টিভাগে বিভক্ত- (এক) শাসকবৃন্দ, যারা মরিয়া হলেও ক্ষমতায় থাকতে চায়। (দুই) বিরোধী দল, যারা যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় যেতে চায়।এদের উভয়েরই উদ্দেশ্য হলো জাগতিক লোভ-লালসা ও স্বার্থসিদ্ধি। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা কিংবা ক্ষমতা দখলের পিছনে তাদের দ্বীনী কোন উদ্দেশ্য নেই। এ বিষয়ে আলোচনা করতে যেয়ে শাইখ হাম্মাদ বাংলাদেশ পরিস্থিতির উদাহরণ দিয়েছেন।
(খ) যারা “শাসনকর্তাগণ ইছলামী বিধান বাস্তবায়ন করছে না” বাহ্যত এই অজুহাতে তাদেরকে উৎখাতের নানাবিধ প্রচেষ্টায় রত।
৭) শাসকের প্রতি আনুগত্যের বিধান কী? কতকক্ষণ পর্যন্ত একজন শাসকের অনুগত্য করা যাবে এবং কখন তার আনুগত্য করা যাবে না?
৮) শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের হুক্ম কী?
৯) শাসকের কাজ-কর্ম পছন্দ না হলে করণীয় কী?
১০) শাসকগণ ইছলামী মনোভাব সম্পন্ন নয়, এই অজুহাতে যারা শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে চায় তাদের প্রতি উপদেশ।
১১) শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বা সংগ্রামের জন্য শর্তাবলী কী?
১২) ইছলামী রাষ্ট্র ক্বায়িমের নামে যারা আন্দোলন-সংগ্রামে লিপ্ত, তাদের অধিকাংশের হাল-অবস্থা।
১৩) জনসমক্ষে শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলার বিধান কী?
১৪) শাসককে কিভাবে সদুপদেশ দিতে হয়? এ বিষয়ে ‘উলামায়ে কিরামের নির্দেশনা।
আলোচনা শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-
ক) নিজেদের প্রাপ্ত কিছু প্রমাণকে যথাযথ মনে করে কিছু কিছু লোক শাসককে কাফির আখ্যায়িত করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে শাসককে কাফির বলার বা কুফ্রের ফাতাওয়া দেয়ার অধিকারী বা কর্তৃপক্ষ কারা? দয়া করে বিষয়টি আমাদেরকে ব্যাখ্যা করুন।
খ) একটি সাহীহ হাদীছ যার মর্মকথা- “যে ব্যক্তি ক্ষমতা চেয়ে নেয় সে জিজ্ঞাসিত হবে, আর যাকে ক্ষমতা দান করা হয় তাকে সাহায্য করা হবে” এ কথাটির অর্থ কি?
গ) কিছু ভাইদের প্রশ্ন: শাসক যদি কাফির হয়,তাহলেও কি তার আনুগত্য করা ওয়াজিব?
ঘ) কাফির শাসকের বিরুদ্ধে খুরূজ (বিদ্রোহ) করার হুক্ম কি?
ঙ) যারা মুছলমানদের ঐক্যে ফাটল ধরাতে চায় তাদেরকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ্র রাছূল 1। এই নির্দেশ কি সাধারণ মানুষ বাস্তবায়ন করবে,নাকি শাসকবৃন্দ?
চ) যারা জিহাদের নামে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে থাকে, তাদের মধ্য হতে কেউ যখন মারা যায় তখন তারা ঘোষণা দেয় যে, তাদের অমুক ভাই শহীদ হয়ে গেছে। আর এই আবেগ নিয়ে তাদের অনেকে মৃত্যুবরণ করেও থাকে এমনকি তাদের পিতা-মাতাও এই আশা (শহীদের পিতা-মাতা হওয়ার আশা) পোষণ করে থাকেন। প্রশ্ন হলো- প্রকৃত অর্থে শহীদ কাকে বলে? সত্যিকার অর্থে কারা শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবেন?