ইমাম ইবনুল ক্বায়্যিম রচিত -‘উদ্দাতুস্‌ সাবিরীন ওয়া যাখীরাতুশ্‌ শাকিরীন- গ্রন্থ থেকে আলোচনা (৭ম পর্ব)

শাইখ হাম্মাদ বিল্লাহ c কর্তৃক এই অডিও বক্তৃতাটি হলো মূলত ইমাম ইবনুল ক্বায়্যিম o প্রণীত -‘উদ্দাতুস্‌ সাবিরীন ওয়া যাখীরাতুশ্‌ শাকিরীন- নামক কিতাবের ভাষান্তর। গ্রন্থকার ইছলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে -সাব্‌র বা ধৈর্য্য, অধৈর্য্য এবং শুক্‌র বা কৃতজ্ঞতা- এ ক‘টি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনী বিষয়ের অনুশীলনমূলক কাঠামো এবং এগুলোকে কিভাবে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে সংযুক্ত ও রপ্ত করা যায়, সেসব বিষয়ে অত্যন্ত চমৎকার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়েছেন। গ্রন্থখানি ছয় শতাব্দী পূর্বে লিখা হলেও এর বিষয়-বস্তু অত্যন্ত সময় উপযোগী এবং বর্তমান বাস্তবতার সাথে অতি প্রাসঙ্গিক। শাইখ হাম্মাদ c নিম্নোক্ত বিষয়াদী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন:-
১) পূর্ববর্তী ৬নং ক্লাসের সংক্ষিপ্ত পূণঃআলোচনা।
২) শারী‘য়াতের বিধান অনুসারে সাব্‌র হলো পাঁচপ্রকার। (এক) ওয়াজিব (দুই) মানদূব (তিন) মাহ্‌যূর বা হারাম (চার) মাকরূহ (পাঁচ) মুবাহ্‌।

ওয়াজিব সাব্‌র হলো তিন প্রকার :-

ক) হারাম কাজ-কর্ম ও বিষয়াদী থেকে বিরত থাকা তথা সাব্‌র করা ওয়াজিব।
খ) শারী‘য়াতে ইছলামিয়াহ্‌-তে যেসব কাজ করা আবশ্যকীয় বা ওয়াজিব, সেগুলো পালনে সাব্‌র বা ধৈর্যধারণ করা ওয়াজিব।
গ) যেসব বিপদ-মুসীবাতে মানুষের কোন হাত নেই, যেমন অসুস্থতা, দরিদ্রতা ইত্যাদি বিপদ-মুসীবতে সাব্‌র তথা ধৈর্যধারণ করা ওয়াজিব।

মানদূব বা পছন্দনীয় সাব্‌র হলো:-

ক) মাকরূহ ‍বিষয়াদী হতে বিরত থাকা বা সাব্‌র করা।
খ) মুছতাহাব্ব বা পছন্দনীয় ‘ইবাদাত পালনে সাব্‌র করা।
গ) প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা সাব্‌র করা।
মাহযূর বা নিষিদ্ধ সাব্‌র হলো যেমন:-
ক) মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত খানা-পিনা থেকে বিরত থাকা বা সাব্‌র করা হারাম।
খ) ক্ষুধা বা পিপাসায় কাতর হয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম, এমতাবস্থায়ও মৃত পশুর গোশত কিংবা শুকরের গোশত খাওয়া থেকে অথবা রক্ত পান করা থেকে সাব্‌র করা বা বিরত থাকা হারাম।
গ) মরে যাওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও মানুষের কাছে চাওয়া বা যাচঞ্চা থেকে সাব্‌র বা বিরত থাকা, ইমাম শাফি‘য়ী ও ইমাম আহ্‌মাদ ইবনু হাম্বাল q এর অনেক সাথীবর্গের দৃষ্টিতে হারাম।
সাব্‌র সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে শাইখ, যালিম শাসক কর্তৃক বিশিষ্ট তাবি‘য়ী আবূ মুছলিম আল খাওলানী (o) এর অগ্নিকুন্ডে নিপতিত হওয়ার ঘটনা এবং তাঁর (আবূ মুছলিম আল খাওলানী) সম্পর্কে ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (3) এর উক্তিটি উল্লেখ করেন।
ঘ) নিজেকে মেরে ফেলতে পারে জেনেও হিংস্র জীব-জন্তু, সাপ, আগুন, পানি ইত্যাদি বিপজ্জনক কোন বস্তুর কিংবা তাকে হত্যা করতে চায় এরকম কোন কাফিরের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা না করে বরং এসবের নিকট সাব্‌র করা। এরূপ সাব্‌র বা ধৈর্যধারণ হারাম।
সাব্‌র প্রসঙ্গে শাইখ এখানে আঠারো হাজার মুছলমানকে হত্যাকারী অত্যাচারী শাসক ইবনু ত্বোলূনের সাথে ইমাম আবুল হাছান (o) এর সংঘটিত ঘটনা উল্লেখ করেন।

মাকরূহ বা অপছন্দনীয় সাব্‌র হলো যেমন:-

ক) পানাহার, ইত্যাদি দেহের প্রয়োজনীয় হালাল চাহিদা পূরণ থেকে এমনভাবে বিরত থাকা বা সাব্‌র করা, যদ্বারা দেহের বা স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধিত হয়। এরূপ সাব্‌র বা ধৈর্যধারণ মাকরূহ।
খ) মাকরূহ বিষয় পালনে সাব্‌র করা (অর্থাৎ- কোন মাকরুহ কাজ সম্পাদনে কষ্ট সহ্য করা বা ধৈর্যের সাথে কোন মাকরূহ কাজ করা) মাকরূহ।
গ) মুছতাহাব্ব কাজ পালন থেকে সাব্‌র করা অর্থাৎ বিরত থাকা মাকরূহ।

মুবাহ্‌ বা জায়িয সাব্‌র:-

শারী‘য়াতের ইছলামিয়াহ্‌-তে মুবাহ্‌ হলো এমন সব কাজ, যা পালনেও কোন দোষ নেই বর্জনেও কোন দোষ নেই।
ক) মুবাহ্‌ কাজ থেকে বিরত থাকা অর্থাৎ সাব্‌র করা মুবাহ্‌। সাব্‌র প্রসঙ্গে এখানে শাইখ, ক্বোরআনে কারীমে বর্ণিত আদাম 5 ও তাঁর দুই ছেলের ঘটনা উল্লেখ করেছেন।

 

ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-
ক) একজন লোক পি. এইচ. ডি (Ph.D) করতে চায়। কলেজের বিভিন্ন বিভাগ এধরনের ডিগ্রীর জন্যে অর্থায়ন করে থাকে। পি. এইচ. ডি (Ph.D) করার জন্য এরূপ তহবিল থেকে টাকা নেয়া এটা কি মানুষ থেকে ভিক্ষা নেয়ার মত বলে গণ্য হবে?
খ) অনেক মুছলমান ভাই রামাযান মাসে রোযা রেখে ছাফারের উদ্দেশে বের হন, কিংবা অনেকে মুছাফির অবস্থায় রামাযান মাসের রোযা পালন করে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের সম্পর্কে কি বলা যাবে যে, তারা সাব্‌র করছেন?
গ) পশ্চিমা অনেক দেশে আবহাওয়া যখন খুবই খারাপ থাকে তখন সাধারণত মাছজিদগুলোতে দুই সালাত (যেমন মাগরিব এবং ‘ইশা সালাত) একসাথে পড়া হয়। এমতাবস্থায় কিছু লোক যদি মাছজিদে গিয়ে লোকজনকে সালাতরত পায় কিন্তু তারা জানে না যে, তারা কোন ওয়াক্বতের (মাগরিব না ‘ইশা-র) সালাত আদা করছে, তখন তারা কি করবে?

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close