‘ইবাদাতের মূলনীতি ও ‘আমাল ক্ববূল হওয়ার শর্তাবলী কি?

এটা সর্বজনজ্ঞাত বিষয় যে, সকল প্রকার ‘ইবাদাত হলো তাওক্বীফিয়্যাহ অর্থাৎ ক্বোরআন ও ছুন্নাহ নির্ভর। শারী‘আতের (ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্‌র) মাধ্যম ব্যতীত ‘ইবাদাত সম্পর্কে জানা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি মানুষকে আল্লাহ্‌র ‘ইবাদাত করতে হবে ক্বোরআনে কারীম ও রাছূলের (1) ছুন্নাহ্‌তে প্রদত্ত বর্ণনা ও নির্দেশানুসারে এবং প্রতিটি ‘আমাল ও ‘ইবাদাত করতে হবে একমাত্র এক আল্লাহ্‌র জন্যে খাঁটি ও নিখাঁদভাবে।

আর এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে ‘ইবাদাতকারীকে অবশ্যই আল্লাহ্‌র একত্বে দৃঢ়বিশ্বাসী হতে হবে। অর্থাৎ, আল্লাহ্‌কে তাঁর সত্তা, নাম-গুণাবলী, কর্ম-কর্তৃত্ব ও অধিকারে একক ও অদ্বিতীয় বলে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে।

যে কোন ‘আমাল বা ‘ইবাদাত- যদ্দারা আমরা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করতে চাই, সেই ‘আমাল বা ‘ইবাদাত সঠিক এবং আল্লাহ্‌র নিকট গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্যে তিনটি মৌলিক শর্ত রয়েছে, যা একত্রে; একসাথে পূরণ করতে হবে। যদি তন্মধ্যে একটি শর্তও না পাওয়া যায় তাহলে সেই ‘ইবাদাত আল্লাহ্‌র (7) নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না এবং তা আল্লাহ্‌র (0) ‘ইবাদাত বলে গণ্য হবে না। শর্তগুলো হলো, যথাক্রমে:-
১। ঈমান। অর্থাৎ ‘ইবাদাতকারীকে আল্লাহ্‌র (0) একত্বে দৃঢ়বিশ্বাসী হতে হবে। ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-

وَمَن يَكْفُرْ بِالإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ.سورة المائدة- ٥

অর্থাৎ- যে ব্যক্তি ঈমানকে অস্বীকার করবে, নিঃসন্দেহে তার সমস্ত ‘আমাল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং পরকালে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত।ছূরা আল মায়িদাহ- ৫
২। ইখলাস তথা বিশুদ্ধ নিয়্যাত বা সংকল্প। অর্থাৎ ‘ইবাদাত করতে হবে একনিষ্ঠভাবে; একমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র (0) জন্যে। এছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে বা অন্য কারো জন্যে সামান্য পরিমাণ ‘ইবাদাতও করা যাবে না। 
মোটকথা, ‘ইবাদাতকে সম্পূর্ণরূপে সকল প্রকার শির্‌ক তথা অংশীদারিত্বমুক্ত রাখতে হবে এবং খাঁটি ও একনিষ্ঠভাবে এক আল্লাহ্‌র ‘ইবাদাত করতে হবে। আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-

ومَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ.سورة البينة- ٥

অর্থাৎ- তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্‌র ‘ইবাদাত করবে, সালাত ক্বায়িম করবে ও যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।ছূরা আল বায়্যিনাহ- ৫
৩। রাছূলের (1) ছুন্নাহ অনুসরণ। অর্থাৎ রাছূলুল্লাহ 1 যেভাবে ‘ইবাদাত করার নির্দেশ দিয়েছেন কিংবা যেভাবে ‘ইবাদাত করতে শিখিয়েছেন, ঠিক সেভাবেই আল্লাহ্‌র ‘ইবাদাত করতে হবে। কেননা ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي—سورة آل عمران- ٣١

অর্থাৎ- (হে নাবী) বলুন! যদি তোমরা আল্লাহ্‌কে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ করো —।ছূরা আ-লে ‘ইমরান- ৩১

আল্লাহ্‌ 0 আরো ইরশাদ করেছেন:- 

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا.سورة الأحزاب- ٢١

অর্থাৎ- তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ্‌ ও শেষ দিনের আশা রাখে এবং আল্লাহ্‌কে বেশি স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাছূলুল্লাহ্‌র মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।ছূরা আল আহ্‌যাব- ২১
কোন অবস্থাতেই রাছূলুল্লাহ 1 এর অনুসৃত ও প্রদর্শিত পথ-পন্থা ব্যতীত (রাছূলুল্লাহ 1 এর ছুন্নাহ বিরোধী কিংবা ছুন্নাহ বহির্ভূত পথ বা পন্থায়) কোন পথ বা পন্থায় আল্লাহ্‌র (b) ‘ইবাদাত করা যাবে না।
কেননা রাছূলুল্লাহ 1 অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় বলে গেছেন:- 

مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ.متفق عليه 

অর্থ- যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু নব-উদ্ভাবন করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তাহলে সেটা হবে প্রত্যাখ্যাত।সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম১০
অপর বর্ণনায় রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- 

مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ.رَوَاهُ مُسْلِمٌ ১১

অর্থ- যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল যা আমাদের দ্বীনের মধ্যে নেই, তাহলে সেটা হবে প্রত্যাখ্যাত।সাহীহ্‌ মুছলিম১২
যে কোন ‘আমাল তথা ‘ইবাদাত আল্লাহ্‌র নিকট গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য উপরোক্ত তিনটি শর্তের কথা (ঈমান থাকতে হবে, ইখলাস থাকতে হবে এবং রাছূল 1 এর ছুন্নাহ অনুযায়ী হতে হবে) ছূরা কাহ্‌ফ এর সর্বশেষ আয়াতে একত্রে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا.سورة الكهف- ١١٠১৩

অর্থাৎ- (হে নাবী) বলুন! আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি অহী নাযিল হয় এই মর্মে যে, তোমাদের উপাস্যই একমাত্র উপাস্য। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার পালনকর্তার ‘ইবাদাতে কাউকে অংশীদার না করে।ছূরা আল কাহ্‌ফ- ১১০১৪
এ আয়াতে আল্লাহ 0 তাঁকে এক ও অদ্বিতীয় মেনে নিয়ে (অর্থাৎ তাঁর একত্ববাদে পরিপূর্ণরূপে বিশ্বাসী হয়ে) নেক ‘আমাল করার (অর্থাৎ রাছূল 1 এর ছুন্নাহ অনুযায়ী ‘আমাল করার) এবং ‘ইবাদাতে তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার না করে একনিষ্ঠভাবে একমাত্র তাঁর (আল্লাহ্‌র) ‘ইবাদাত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আয়াতে বর্ণিত “فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا” (সে যেন সৎকর্ম করে) এই বাক্যটি দ্বারা রাছূলুল্লাহ 1 এর ছুন্নাহ অনুযায়ী ‘আমাল করার কথা বলা হয়েছে। কেননা ‘আমালে সালিহ্‌ বা নেক ‘আমাল বলতে রাছূলুল্লাহ 1 এর ছুন্নাহ অনুযায়ী ‘আমালকেই বুঝায়। 
আয়াতে বর্ণিত “وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا” (এবং তার পালনকর্তার ‘ইবাদাতে কাউকে অংশীদার না করে) এই বাক্যটি দ্বারা পরিপূর্ণ ঈমান ও ইখলাসের কথা বলা হয়েছে।
‘আল্লামা হাফিজ ইবনু কাছীর (o) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, “সমস্ত অহীর সারমর্ম হচ্ছে:- তোমরা একত্ববাদী (ঈমানদার) হয়ে যাও, শির্‌ক পরিত্যাগ করো, তোমাদের যে কেউ আল্লাহ্‌র সাথে সাক্ষাৎ করে বিনিময় ও পুরস্কার পেতে চায়, সে যেন শারী‘য়াত অনুযায়ী (আল্লাহ্‌র নির্দেশিত এবং রাছূলুল্লাহ 1 এর প্রদর্শিত পন্থানুযায়ী) ‘আমাল করে এবং শির্‌ক সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করে।
শির্‌ক সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা এবং নেক ‘আমাল করা তথা আল্লাহ্‌র নির্দেশিত ও রাছূলুল্লাহ 1 এর প্রদর্শিত পন্থানুযায়ী ‘আমাল করা, এ দু’টো মূল ভিত্তি ব্যতীত কোন ‘আমালই আল্লাহ্‌র নিকট আদৌ মাক্ববূল বা গৃহীত হবে না”। (তাফছীরুল ক্বোরআনিল ‘আযীম লি ইবনে কাছীর)
উপরোক্ত আয়াতের উল্লেখিত এ তাফছীর বিষয়ে সকল হাক্বক্বানী (সত্যিকার) ‘উলামায়ে কিরাম ও মোফাছ্‌ছিরীন একমত পোষণ করেছেন। এতদ্বিষয়ে তাদের কারো কোন দ্বীমত নেই।


১. سورة المائدة- ٥ 
২. ছূরা আল মায়িদাহ- ৫ 
৩. سورة البينة- ٥ 
৪. ছূরা আল বায়্যিনাহ- ৫ 
৫. سورة آل عمران- ٣١ 
৬. ছূরা আ-লে ‘ইমরান- ৩১ 
৭. سورة الأحزاب- ٢١ 
৮. ছূরা আল আহ্‌যাব- ২১ 
৯. متفق عليه 
১০. সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম 
১১. رَوَاهُ مُسْلِمٌ  
১২. সাহীহ্‌ মুছলিম 
১৩. سورة الكهف- ١١٠ 
১৪. ছূরা আল কাহ্‌ফ- ১১০ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close