সালাত সঠিক হওয়ার জন্য সালাত পূর্ববর্তী তথা সালাতের বাইরে ৬টি শর্ত রয়েছে। এগুলো যথাযথভাবে পূরণ না করলে নামায সঠিক হবে না, এমনকি এই শর্তগুলোর মধ্য হতে একটি শর্তও যদি না পাওয়া যায়, তাহলে সালাত বাত্বিল বলে গণ্য হবে।
শর্তগুলো হলো যথা:-
(এক) সালাতের সময় হয়েছে বলে অবগত হওয়া। কেননা সালাত হলো এমন একটি ফার্য কর্ম যা সময়ের সাথে সম্পর্কিত এবং সময় নির্ভর। এর প্রমাণ হলো-
আল্লাহ্র (0) এ বাণী:-
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا.سورة النساء- ١٠٣
অর্থাৎ- নিশ্চয়ই সালাত ঈমানদারদের উপর সময় সুনির্ধারিত একটি ফার্য কর্ম।ছূরা আন্নিছা- ১০৩
(দুই) পবিত্রতা অর্জন।
আর তা হলো- নির্দিষ্ট বিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ছোট নাপাকী থেকে অযূ দ্বারা এবং বড় নাপাকী থেকে গোছলের দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা।
এর প্রমাণ হলো- আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا.سورة المائدة- ٦
অর্থাৎ- হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন সালাত আদায়ের ইচ্ছা করো, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও তোমাদের হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধৌত করো, তোমাদের মাথা মাছ্হ্ করো এবং তোমাদের পা-গুলো টাখনু পর্যন্ত ধৌত করো। আর যদি তোমরা অপবিত্র হও তাহলে পবিত্রতা অর্জন করো।ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৬
(তিন) বাহ্যিক নাপাকী থেকে শরীর, জামা ও স্থান পবিত্র হওয়া। নামাযের জন্য এ তিনটি বস্তু অবশ্যই পাক-পবিত্র হতে হবে। যদি এগুলো পাক না থাকে তাহলে অবশ্যই সালাতের পূর্বে নাপাকী দূর করে এগুলোকে পাক-পবিত্র করে নিতে হবে।
(ক) বাহ্যিক নাপাকী থেকে শরীর পাক-পবিত্র হতে হবে। এর প্রমাণ হলো- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
تَنَزَّهُوا مِنَ الْبَوْلِ فَإِنَّ عَامَّةَ عَذَابِ الْقَبْرِ مِنْهُ.رواه الدار قطني
অর্থ- প্রস্রাবের নাপাকী থেকে বেঁচে থাকো, কেননা অধিকাংশ ক্বাব্র ‘আযাব এ কারণেই (প্রস্রাবের নাপাকী থেকে বেঁচে না থাকার কারণেই) হয়ে থাকে।দারু ক্বোত্বনী
‘আয়িশাহ f থেকে বর্ণিত একটি হাদীছে রয়েছে যে, রাছূল 1 জনৈক মুছতাহাযাকে (মাসিকের নির্ধারিত দিনগুলোর পরেও যে মহিলার রক্তস্রাব হচ্ছিল) বলেছেন:-
اغْسِلِي عَنْكِ الدَّمَ ثُمَّ صَلِّي.رواه البخاري
অর্থ- তুমি রক্ত ধুয়ে ফেলো এবং সালাত আদায় করো।সাহীহ্ বুখারী
(খ) জামা (পরিধেয় বস্ত্র ) পবিত্র হতে হবে। যদি তা অপবিত্র হয়ে থাকে, তাহলে শারী‘য়াত নির্দেশিত নিয়ম-পদ্ধতি অনুযায়ী তা পাক-পবিত্র করে নিতে হবে।
এর প্রমাণ হলো ক্বোরআনে ‘আযীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ.سورة المدثر- ٤
অর্থাৎ- এবং আপনার কাপড় পবিত্র করুন।ছূরা আল মুদ্দাছ্ছির- ৪
(গ) সালাতের স্থান পবিত্র হতে হবে। যদি তা অপবিত্র হয়ে থাকে, তাহলে শারী‘য়াত নির্দেশিত পন্থা ও পদ্ধতিতে তা পাক-পবিত্র করে নিতে হবে।
এর প্রমাণ হলো- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-
إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ، وَلَا الْقَذَرِ.رواه مسلم
অর্থ- নিশ্চয় এসব মাছজিদে প্রস্রাব কিংবা নাপাক ময়লা-আবর্জনার কোন স্থান নেই (অর্থাৎ এখানে প্রস্রাব কিংবা নাপাক ময়লা-আবর্জনা কোন কিছু ফেলা আদৌ উচিত নয়)।সাহীহ্ মুছলিম
(চার) ছতর ঢাকা।
শারী‘য়াতের নির্দেশানুযায়ী শরীরের যে অংশ ঢেকে রাখা আবশ্যক বা ছতর বলে গণ্য, নামাযের সময় তা অবশ্যই আচ্ছাদিত (ঢেকে) রাখতে হবে। এর প্রমাণ হলো- ক্বোরআনে ‘আযীমে আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-
يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ.سورة الأعراف- ٣١
অর্থাৎ- হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ গ্রহণ করো।ছূরা আল আ‘রাফ- ৩১
পুরুষের জন্য ছতর তথা শরীরের যে অংশ ঢেকে রাখা আবশ্যক, তা হলো নাভি হতে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে শুধু চেহারা ও দু’হাতের কব্জি ব্যতীত সমস্ত শরীরই হলো ছতর। একথার প্রমাণ হলো- ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ (0) ইরশাদ করেছেন:-
وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا.سورة النور- ٣١
অর্থাৎ- এবং তারা যেন তাদের সৌন্দর্যের শুধুমাত্র যেটুকু প্রকাশমান তা ব্যতীত নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে।ছূরা আন্নূর- ৩১
তবে যাদের সাথে বিয়ে বৈধ (গায়রে মুহ্রাম) এমন কারো সামনে নামায পড়লে মহিলাদেরকে তাদের চেহারা এবং হাতের কব্জিও ঢেকে রাখেতে হবে।
(পাঁচ) ক্বিবলামুখী (কা‘বা অভিমুখী) হওয়া।
এর প্রমাণ হলো- ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ.سورة البقرة- ١٤٤
অর্থাৎ- অতএব আপনি আপনার চেহারা মাছজিদে হারামের দিকে (কা‘বার দিকে) ফিরিয়ে নিন এবং তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের মুখ সে দিকে (মাছজিদে হারামের দিকে) ফিরিয়ে নাও।ছূরা আল বাক্বারাহ- ১৪৪
তাই মাছজিদে হারাম (কা‘বা) অভিমুখী হয়ে সালাত আদায়ের যথাসাধ্য চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসাল্লির (সালাত আদায়কারীর) অবশ্য কর্তব্য। ক্বিবলাহ্র তথা কা‘বা’র দিক জানা থাকলে অবশ্যই কা‘বা অভিমুখী হয়ে সালাত আদায় করতে হবে। আর যদি জানা না থাকে তাহলে যারা অবগত আছেন তাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করতে হবে। যদি এমন কাউকে না পাওয়া যায়, যে উহার সঠিক সন্ধান দিতে পারে, তাহলে নিজের বিবেক-বুদ্ধিকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে কোন দিকে ক্বিবলাহ তথা কা‘বা, তা ঠিক করার জন্য ইজতিহাদ বা সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। তারপর যে দিকটাকে ক্বিবলাহ বলে মন দৃঢ়ভাবে সায় দেবে, সেদিকে মুখ করেই নামায পড়তে হবে।
(ছয়) নিয়্যাত করা, অর্থাৎ দৃঢ় সংকল্প করা।
এর প্রমাণ হলো- রাছূল 1 বলেছেন:-
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى.رواه البخاري
অর্থাৎ- নিয়্যাতের উপর কর্ম (‘আমালের প্রতিফল) নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক মানুষ তার নিয়্যাত অনুসারেই ফল পাবে।সাহীহ্ বুখারী
নিয়্যাত হলো- কোন কাজ করার উদ্দেশ্যে মনে-প্রাণে দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়া। নিয়্যাতের সম্পর্ক হলো অন্তরের সাথে। মুখের সাথে নিয়্যাতের কোন সম্পর্ক নেই। তাই নামাযের নিয়্যাত মুখে উচ্চারণ করা অনর্থক। এটি ইছলামে নব-আবিষ্কৃত একটি বিদ‘আত, যা অবশ্যই বর্জনীয়।