গরু-ছাগল যবেহ্‌ করার ছুন্নাহসম্মত পদ্ধতি: শাইখ ইবনি বায (رحمه الله)

* ক্বোরবানীর পশু যবেহ্‌ করার আগে ছুরি বা চাকুটি খুব ভালো করে ধার করে নিতে হবে, যাতে সহজেই যবেহ্‌ করা যায়। ‘উলামায়ে কিরামের অনেকে একাজটিকে ওয়াজিব বা আবশ্যকীয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কেননা, আবূ ইয়া‘লা শাদ্দাদ ইবনু আউছ 3 থেকে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-

إنَّ اللَّهَ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذِّبْحَةَ، وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ، وَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ.رَوَاهُ مُسْلِمٌ

অর্থ- আল্লাহ 0 সকল বিষয়ে ইহ্‌ছান বা দয়া প্রদর্শন আবশ্যকীয় করে দিয়েছেন। তাই যখন তোমরা হত্যা করবে তখন উত্তমভাবে হত্যাকার্য সম্পাদন করো, যখন তোমরা যবেহ্‌ করবে তখন উত্তমভাবে যবেহ্‌কার্য সম্পাদন করো এবং তোমাদের প্রত্যেকে যেন নিজের ছুরি-চাকু ধার করে নেয় এবং নিজের ক্বোরবানীর পশুকে আরাম দেয়।সাহীহ্‌ মুছলিম

* ক্বোরবানীর পশু যদি গরু বা ছাগল হয় তাহলে এক্ষেত্রে পশুটিকে বামপার্শ্বে ক্বিবলাহমুখী করে শুয়াতে হবে। অর্থাৎ পশুটির মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা উত্তর দিকে রেখে তার মুখ ক্বিবলাহ্‌র দিকে করতে হবে। ক্বিবলাহ হলো সবচেয়ে উত্তম ও মর্যাদাসম্পন্ন দিক। রাছূলুল্লাহ 1 ও সাহাবায়ে কিরাম (g) ক্বোরবানীর পশুকে বাম পাশে শুইয়ে দিয়ে ক্বিবলাহমুখী করে যবেহ্‌ করতেন।

* যবেহ্‌কারী নিজের ডান পা পশুটির ঘাড়ে চেপে রাখবে।
আনাছ ইবনু মালিক 3 থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:-

ضحَّى النبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم بكَبشينِ أملحَينِ أقْرَنينِ، ذبَحَهما بيَدِه، وسَمَّى وكَبَّرَ، ووَضَعَ رِجْلَه على صِفاحِهما.متفق عليه

অর্থ- রাছূলুল্লাহ 1 সামান্য কালো মিশ্রিত সাদা রংয়ের শিংওয়ালা দু’টি দুম্বা ক্বোরবানী করেন। তিনি নিজ হাতে এদু’টিকে যবেহ্‌ করেন এবং তিনি (যবেহ্‌ করার সময়) বিছমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলেন এবং দুম্বা দু’টির ঘাড়ের উপর স্বীয় পা রাখেন।সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম

* যবেহ্‌ করার সময় সময় ছুরি, চাকু বা ধারালো অস্ত্র যা-ই হোক না কেন অত্যন্ত শক্তভাবে দ্রুততার সাথে পশুর গলায় চালাতে হবে। যাতে খুব কম সময়ের মধ্যে যব্‌হের কাজটি সম্পন্ন হয়ে যায় এবং পশুটির কষ্ট কম হয়।

* যব্‌হের সময় পশুর শ্বাসনালী, খাদ্যনালী ও শ্বাসনালীকে পরিবেষ্টন করে থাকা ঘাড়ের দুইপাশের বড় দু’টি রগ নিশ্চিতভাবে কাটতে হবে। তবে যদি শুধুমাত্র ঘাড়ের দুইপাশের বড় রগ দু’টি কাটা হয় তাহলেও যবেহ হালাল হয়ে যাবে। কারণ ঐ রগ দু’টি দিয়ে পশুর শরীরের রক্ত বেরিয়ে যায়, যদিও তাতে পশুটির প্রাণ বের হতে একটু বেশি সময় লাগে।

* “বিছমিল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার” বলে পশু যবেহ্‌ করতে হবে। পশুর যবেহ্‌ করার সময় অবশ্যই “বিছমিল্লাহ” বলতে হবে। কেননা “বিছমিল্লাহ” বলা ওয়াজিব। তবে “বিছমিল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার” বলা উত্তম। ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-

وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ.سورة الأنعام – ۱۲۱

অর্থাৎ- যেসব জন্তুর উপর আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারিত হয় না, সেগুলো থেকে খেয়ো না।ছূরা আল আন‘আম- ১২১
রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-

ما أنهر الدم وذُكر اسم الله عليه فكُل.متفق عليه

অর্থ- যে (হালাল) জন্তুর রক্ত প্রবাহিত করা হয়েছে এবং যেটির উপর আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারিত হয়েছে সেটি খাও।সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম
আনাছ (3) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:-

ضحى النبي صلى الله عليه وسلم بكبشين ذبحهما بيده وسمى وكبر .رواه البخاري ومسلم

অর্থ- রাছূলুল্লাহ 1 দু’টি দুম্বা ক্বোরবানী করেন, তিনি নিজ হাতে দুম্বা দু’টি “বিছমিল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার” বলে যবেহ্‌ করেন।সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম১০

* অতএব “বিছমিল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার” বলে পশুর গলায় ছুরি চালাতে হবে এবং সাথে সাথে বলতে হবে “আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা ‘আন্নী” (যদি ক্বোরবানী নিজের পক্ষ থেকে হয়। আর যদি অন্যের পক্ষ থেকে হয় তাহলে ‘আন্নী-র পরিবর্তে -‘আন- বলে যার পক্ষ থেকে হবে তার নাম বলতে হবে)। অতঃপর বলতে হবে “আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্নী” (যদি ক্বোরবানী নিজের পক্ষ থেকে হয়। আর যদি অন্যের পক্ষ থেকে হয় তাহলে মিন্নী-র পরিবর্তে বলতে হবে মিন —- । এখানে “মিন” বলে সেই ব্যক্তির নাম বলতে হবে।

উপরোক্ত দু‘আটির অর্থ হলো- হে আল্লাহ এই ক্বোরবানীটি আপনার পক্ষ থেকে (আমার জন্য নি‘মাত) এবং এটি আমার পক্ষ হতে আপনার জন্যেই উৎসর্গিত। হে আল্লাহ আপনি আমার পক্ষ থেকে ক্ববূল করুন। (এক্ষেত্রে ক্বোরবানী যদি অন্যের পক্ষ থেকে হয় তাহলে দু‘আটির অর্থ করতে হবে- হে আল্লাহ এই ক্বোরবানীটি আপনার পক্ষ থেকে নি‘মাহ এবং এটি অমুকের পক্ষ হতে আপনার জন্যেই উৎসর্গিত। হে আল্লাহ আপনি অমুকের পক্ষ থেকে ক্ববূল করুন।

‘আরাবীতে না বলতে পারলে “বিছমিল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার” বলার পর উপরোক্ত দু‘আর অর্থটি বাংলায় বলা যাবে।
তাছাড়া উপরোক্ত দু‘আটি মুখে উচ্চারণ না করে যদি মনে মনে করা হয় কিংবা দু‘আটির বিষয়-বস্তু কেবল অন্তরের মধ্যে থাকে, তাহলে তাতেও কোন অসুবিধা নেই। তবে মুখে উচ্চারণ করা উত্তম, কেননা রাছূলুল্লাহ 1 উক্ত দু‘আটি মুখে উচ্চারণ করেছেন।

তবে যিনি নিজে নিজ হাতে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে ক্বোরবানী দিচ্ছেন, অবশ্যই তার এই মর্মে সুস্পষ্ট নিয়্যাত থাকতে হবে যে, তিনি তার কিংবা তার ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে একমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য এই ক্বোরবানী করছেন।

জাবির ইবনু ‘আব্দিল্লাহ 3 থেকে বর্নিত একটি হাদীছ থেকে জানা যায়, তিনি বলেছেন যে, রাছূলুল্লাহ 1 ‘ঈদের দিন দু’টি দুম্বা ক্বোরবানী করেন। তিনি দুম্বা দু’টিকে যব্‌হের উদ্দেশ্যে যখন ক্বিবলামুখী করেন তখন তিনি বলেন:-

إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنْ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ اللَّهُمَّ إِنَّ هَذَا مِنْكَ وَلَكَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَأُمَّتِهِ.رواه أبو داؤود وصححه الألباني১১

অর্থ- “নিশ্চয় আমি আমার মুখমন্ডলকে একনিষ্ঠভাবে সেই স্বত্ত্বাভিমুখী করেছি যিনি আকাশসমূহ এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয় আমার সালাত, আমার ক্বোরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু কেবল বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহ্‌র জন্যে, তাঁর কোন অংশীদার নেই এবং আমি তা-ই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আত্মসমর্পণকারী। হে আল্লাহ এই ক্বোরবানী আপনার পক্ষ থেকে আমার জন্য নি‘মাত এবং এটি মোহাম্মাদ ও তাঁর উম্মাতের পক্ষ থেকে আপনার জন্যে উৎসর্গিত”। অতঃপর তিনি (রাছূলুল্লাহ 1) আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে ও তাকবীর বলে (“বিছমিল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার” বলে) যবেহ্‌ করেন।ছুনানু আবী দাঊদ o। ইমাম আল আলবানী হাদীছটিকে সাহীহ্‌ বলেছেন১২

উক্ত হাদীছ সহ কাছাকাছি মর্মার্থের আরো কিছু হাদীছের ভিত্তিতে ‘উলামায়ে কিরামের অভিমত হলো যে, ক্বোরবানী করার সময় উপরোক্ত দু‘আ ও বাক্যগুলোও পড়া যাবে তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে কেউ কেউ বলেছেন যে এক্ষেত্রে وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ (এবং আমি প্রথম আত্মসমর্পণকারী) এর স্থলে وَأَنَا من الْمُسْلِمِينَ (এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত) বলতে হবে।

সূত্রঃ- (প্রয়োজনীয় কিছু সংযোজন ও বিয়োজন সহ) মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুশ্‌ শাইখ ইবনি বায o


১. رَوَاهُ مُسْلِمٌ 
২. সাহীহ্‌ মুছলিম 
৩. متفق عليه 
৪. সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম 
৫. سورة الأنعام – ۱۲۱ 
৬. ছূরা আল আন‘আম- ১২১ 
৭. متفق عليه 
৮. সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম 
৯. رواه البخاري ومسلم 
১০. সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম 
১১. رواه أبو داؤود وصححه الألباني 
১২. ছুনানু আবী দাঊদ o। ইমাম আল আলবানী হাদীছটিকে সাহীহ্‌ বলেছেন 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close