ক্বোরবানী বিষয়ক কতিপয় প্রশ্ন-উত্তর: শাইখ ‘উছাইমীন (رحمه الله)/শাইখ ইবনু বায (رحمه الله)

প্রশ্নঃ- কয়েকজন মিলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি পশু ক্বোরবানী করা কি জা-ইয?
উত্তরঃ- একটি উট অথবা একটি গরু সর্বোচ্চ সাতজন মুছলিম মিলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ক্বোরবানী করা জা-ইয। আর এটাই হলো অধিকাংশ আয়িম্মায়ে কিরাম ও ‘উলামায়ে কিরামের (o) অভিমত।
(তবে এক অংশের ভগ্নাংশ করা যাবে না। যে কারণে দুইজন মিলে এক অংশ কিংবা তিনজন মিলে দুই অংশ এরূপ করা যাবে না, অনুরূপ ছাগল, দুম্বা কিংবা ভেড়ি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ক্বোরবানী করা যাবে না, সেটা যত বড় কিংবা যত দামী হোক না কেন।)

প্রথমতঃ ক্বোরআনে কারীম থেকে এর প্রমাণ হলো- আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-

فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ.سورة البقرة- ١٩٦

অর্থাৎ- যে ব্যক্তি হাজ্জ ও ‘উমরাহ একত্রে পালন করবে সে ক্বোরবানীর পশু থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু ক্বোরবানী করবে।ছূরা আল বাক্বারাহ- ১৯৬
এখানে “ক্বোরবানীর পশু থেকে” বলা হয়েছে। একথাটি ক্বোরবানীর পশুর অংশবিশেষকেও বুঝায়।

দ্বিতীয়তঃ ছুন্নাহ থেকে এর প্রমাণ হলো- জাবির ইবনু ‘আব্দিল্লাহ (h) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:-

نَحَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ.صحيح مسلم

অর্থ- হুদায়বিয়ার দিন আমরা রাছূলুল্লাহ সাল্লাল্‌লাহু ‘আলাইহি ওয়া ছাল্লামের সাথে ক্বোরবানী করেছি একটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে, একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে।সাহীহ্‌ মুছলিম
জাবির ইবনু ‘আব্দিল্লাহ (h) থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেছেন:-

ثُمَّ انْصَرَفَ إلى المَنْحَرِ، فَنَحَرَ ثَلَاثًا وَسِتِّينَ بيَدِهِ، ثُمَّ أَعْطَى عَلِيًّا، فَنَحَرَ ما غَبَرَ، وَأَشْرَكَهُ في هَدْيِهِ.صحيح مسلم

অর্থ- অতঃপর (হাজ্জ সম্পাদনকালীন জামরায়ে ‘আক্বাবাহ্‌তে পাথর নিক্ষেপের পর) রাছূলুল্লাহ 1 মিনাতে যেখানে হাদ-য়ি তথা হাজিগণ পশু ক্বোরবানী করে থাকেন, সেখানে ফিরে এসে নিজ হাতে তেষট্টিটি (৬৩) পশু ক্বোরবানী করেন, অতঃপর ‘আলী রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুকে দেন, তিনি অবশিষ্টগুলো (৩০/৩৭টি পশু) ক্বোরবানী করেন এবং রাছূলুল্লাহ 1 স্বীয় হাদ-য়ি এর মধ্যে তাকেও (‘আলী রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুকেও) শরীক করেন।সাহীহ্‌ মুছলিম

আবূ জামরাহ 3থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- আমি ইবনু ‘আব্বাছ h-কে হাজ্জে তামাত্তু‘ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি আমাকে তা সম্পাদন করার নির্দেশ দেন, আমি তাঁকে হাদ-য়ি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলেছেন- হাদয়ি হলো একটি উট অথবা একটি গরু কিংবা একটি ছাগল অথবা একটি পশুতে অংশীদার হয়ে ক্বোরবানী করা।

তৃতীয়তঃ সাহাবায়ে কিরামের (g) একটি বড়দল উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন ‘আলী, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাছ‘ঊদ, আনাছ ইবনু মালিক g এবং ‘আয়িশাহ (f) প্রমুখ। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার h; তিনিও পরবর্তীতে উপরোক্ত অভিমতের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন।

চতুর্থতঃ ক্বিয়াছ। যেহেতু একটি পশুতে একই পরিবারের অনেক লোক অংশগ্রহণ করতে পারে, অর্থাৎ একটি পশু (গরু অথবা উট) দিয়ে একই পরিবারের অনেক সদস্যের পক্ষ থেকে ক্বোরবানী সম্পন্ন করা যায়, তাহলে একটি পশুতে ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং একটি পশু দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকের পক্ষ থেকে ক্বোরবানী সম্পন্ন করা যাবে, এটাই হলো ক্বিয়াছ বা যুক্তির দাবি।

আংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ক্বোরবানী দেয়ার বিধান সম্পর্কে সৌদী ‘আরবের স্থায়ী ফাতওয়া কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা প্রতিউত্তরে বলেনঃ- “একটি উট বা একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে ক্বোরবানী দেয়া যাবে। এই সাতজন ব্যক্তি একই ঘরের একই পরিবারের হোন বা ভিন্ন ভিন্ন ঘরের ভিন্ন পরিবারের এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক। কেননা রাছূলুল্লাহ 1 একটি উট বা একটি গরু ক্বোরবানীতে সাতজন করে সাহাবী-কে (g) অংশগ্রহন করার অর্থাৎ সাতজন মিলে একটি উট বা একটি গরু ক্বোরবানী দেয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি কোনরূপ ব্যাখ্যা দেননি বরং সাধারণভাবে অনুমতি দিয়েছেন।

এসম্পর্কে শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন (o) বলেছেন:-
একটি ছাগল একজন লোকের পক্ষ থেকে ক্বোরবানীর জন্য যথেষ্ট হবে। আর একটি ছাগল যেমন একজন লোকের পক্ষ থেকে ক্বোরবানীর জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে তেমনি, গরু বা উটের সাত ভাগের এক ভাগ একজন লোকের পক্ষ থেকে ক্বোরবানীর জন্য যথেষ্ট হবে।

সূত্রঃ- আহ্‌কামুল উযহিয়াহ লিশ্‌ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন (o)

—————————————–

প্রশ্নঃ- ক্বোরবানীর পশুর গোশত নিজে খাওয়া এবং পরবর্তী সময়ে খাওয়ার জন্য সংরক্ষণ করা কি শারী‘আত সম্মত?
উত্তরঃ- ক্বোরবানীর পশুর গোশত নিজে খাওয়া যাবে, অন্যকে খাওয়ানো যাবে এবং পরবর্তী সময়ে খাওয়ার জন্য সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। এটিই সকল আয়িম্মায়ে কিরামের অভিমত।
ক্বোরআনে কারীম থেকে এর প্রমাণ হলো- আল্লাহ ছুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ইরশাদ করেছেন:-

فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ.سورة الحج- ٢٧

অর্থাৎ- তোমরা তা থেকে আহার করো এবং দূর্দশাগ্রস্থ-অভাবগ্রস্থদের আহার করাও।ছূরা আল হাজ্জ- ২৭

ছুন্নাহ থেকে এর প্রমাণ হলো- (এক) আবূ হুরাইরাহ রাযিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ বলেছেন:-

إذا ضحَّى أحَدُكم فلْيَأْكُلْ مِنْ أُضْحِيَّتِه.أخرجه أحمد وصححه الألباني

অর্থ- যখন তোমাদের কেউ ক্বোরবানী করবে, সে যেন নিজের ক্বোরবানীর গোশত থেকে খায়।মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ। ইমাম আল আলবানী হাদীছটিকে সাহীহ বলেছেন।১০

(দুই) জাবির ইবনু ‘আব্দিল্লাহ 3 থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- রাছূলুল্লাহ 1 ক্বোরবানীর পশুর গোশত তিন দিনের পর খেতে (অর্থাৎ তিন দিনের বেশি সময় ধরে খেতে প্রথমতঃ) নিষেধ করেছিলেন। অতঃপর তিনি (1) বলেন:-

كُلُوا، وتَزَوَّدوا، وادَّخِروا.صحيح مسلم১১

সাহীহ্‌ মুছলিমের অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেনসাহীহ্‌ মুছলিম১২:-

 .فَكُلُوا وَادَّخِرُوا وَتَصَدَّقُوا

অর্থ- অতএব তোমরা (ক্বোরবানীর পশুর গোশত) খাও, সংরক্ষণ করো এবং সাদাক্বাহ করো।সাহীহ্‌ মুছলিম১৩
সাহীহ্‌ বুখারীর বর্ণনায় ক্বোরবানীর পশুর গোশত সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-

كُلُوا وَأَطْعِمُوا وَادَّخِرُوا.صحيح اليخاري১৪

অর্থ- তোমরা (ক্বোরবানীর পশুর গোশত) খাও, অপরকে খাওয়াও এবং সংরক্ষণ করো।সাহীহ্‌ বুখারী১৫
উপরোক্ত দালীল সমূহ দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, ক্বোরবানীর পশুর গোশত নিজে খাওয়া, অভাবগ্রস্থদের খাওয়ানো এবং সংরক্ষণ করা জা-ইয।

প্রশ্নঃ- কেউ যদি ক্বোরবানীর গোশ্‌ত একটুও সাদাক্বা না করে অর্থাৎ গরীব-মিছকীনকে না দিয়ে পুরোটা নিজে বা নিজের পরিবারকে নিয়ে খেয়ে ফেলে তাহলে এক্ষেত্রে ইছলামের বিধান কি?
উত্তরঃ- অবশ্যই তাকে বাজার থেকে কিনে এনে হলেও কমপক্ষে এই পরিমাণ গোশত সাদাক্বাহ করতে হবে যেটুকু কাউকে দিলে পরে সেই ব্যক্তি “গোশ্‌ত পেয়েছে” বা তাকে “গোশ্‌ত সাদাক্বাহ করা হয়েছে” বলা যাবে।
(কেননা, ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ ছুবহানাহু ওয়া তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন:-

فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ.سورة الحج- ٢٧১৬

অর্থাৎ- তোমরা তা থেকে খাও এবং দূর্দশাগ্রস্থ-অভাবগ্রস্থদের খাওয়াও।ছূরা আল হাজ্জ- ২৭১৭

সূত্রঃ- আশ্‌ শারহুল মুমতি‘ ‘আলা যাদিল মুছতাক্বনি‘ লিশ্‌শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ আল ‘উছাইমীন।

————————————————-

প্রশ্নঃ- ক্বোরবানী দাতা যদি ক্বোরবানী দেয়ার আগে (যিলহাজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পরে) নিজের নখ, চুল বা চামড়া কর্তন করেন, তাহলে তার ক্বোরবানী ক্ববূল হবে কি?
উত্তরঃ- হ্যাঁ, তার ক্বোরবানী ক্ববূল হবে, কেননা নখ, চুল বা চামড়া কাটার সাথে উযহিয়্যাহ তথা ক্বোরবানীর সঠিক-শুদ্ধতা বা অশুদ্ধতার কোন সম্পর্ক নেই। তবে এক্ষেত্রে ছুন্নাহ অনুসরণ না করার জন্য সে ব্যক্তি গোনাহগার হবে।
(তজ্জন্য তাকে তাওবাহ ও ইছতিগফার করতে হবে। তবে ভুলবশতঃ অথবা বিধান না জানার কারণে কিংবা বিশেষ প্রয়োজনে কর্তন করলে ব্যক্তি গোনাহগার হবে না।)

সূত্রঃ আশ্‌ শারহুল মুমতি‘ ‘আলা যাদিল মুছতাক্বনি‘ লিশ্‌শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ আল ‘উছাইমীন (o)।

————————————–

প্রশ্নঃ- কোন মুছলিম যদি অমুছলিম এমন কোন দেশে অবস্থান করে, যেখানে ক্বোরবানী দিলে পরে সে হয়ত অভাবগ্রস্থ এমন কাউকে পাবে না যাকে ক্বোরবানীর গোশত দেয়া যায় বা খাওয়ানো যায়, এমতাবস্থায় সে কি ক্বোরবানীর জন্য টাকা এমন কোথাও পাঠতে পারে যেখানে ক্বোরবানী দিলে অভাবগ্রস্থ মুছলিমরা গোশত খেতে পারবে, এটা কি তার জন্য জা-ইয?
উত্তরঃ- এতে কোন অসুবিধা নেই। সে তার ক্বোরবানীর পশু বা পশুর মূল্য অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিয়ে বিশ্বস্থ কারো মাধ্যমে ক্বোরবানী দিয়ে দিতে পারবে, যেখানে অভাবগ্রস্থ মুছলিমগণ গোশত খেতে পারবে এবং তদ্বারা উপকৃত হতে পারবে।

সূত্রঃ ফাতাওয়াশ্‌ শাইখ ইবনু বায o

—————————————-
প্রশ্নঃ- ক্বোরবানীর জন্য কি নিয়্যাত আবশ্যক?
উত্তরঃ- ক্বোরবানীর জন্য নিয়্যাত হলো শর্ত। ক্বোরবানী দাতাকে অবশ্যই ক্বোরবানীর নিয়্যাত করে নির্ধারিত পশু যবেহ করতে হবে। আর এই নিয়্যাত তিন ভাবে সম্পাদন হতে পারে- (এক) ক্বোরবানীর জন্য পশুটি ক্রয় কিংবা কথা দ্বারা ক্বোরবানীর জন্য পশুটি নির্ধারণের মাধ্যমে। (দুই) যবহের মুহূর্তে মনে মনে পশুটি কেবল আল্লাহ্‌র জন্যে ক্বোরবানী দেয়ার মনস্থ করার মাধ্যমে। (৩) বিশ্বস্থ কাউকে নিজের পক্ষ থেকে ক্বোরবানী দেয়ার দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে।

কেউ যদি পশুটি ক্রয় করার সময় আল্লাহ্‌র জন্যে ক্বোরবানী দেয়ার নিয়্যাতে ক্রয় করে থাকে এবং পরবর্তীতে যবেহ কার্য সম্পাদিত হওয়ার পূর্বে সে যদি তার এই নিয়্যাত ভঙ্গঁ না করে থাকে কিংবা ঐ নিয়্যাতের পরিপন্থি কোন নিয়্যাত না করে থাকে, তাহলে সে যদি যবহের সময় নিয়্যাত না-ও করে কিংবা সে যে ব্যক্তিকে ক্বোরবানী কার্য সম্পাদন করার দায়িত্ব দিয়েছে সেই ব্যক্তি যদি নিয়্যাত ছাড়াই কেবল “বিছমিল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার” বলে যবেহ করে নেয়, তাহলেও তার ক্বোরবানী বিশুদ্ধ হবে।

কিন্তু কেউ যদি উক্ত তিন প্রকার নিয়্যাতের কোন প্রকার নিয়্যাত ব্যতীত ক্বোরবানী করে তাহলে তার ক্বোরবানী সাহীহ-শুদ্ধ হবে না। আবার কেউ যদি উপরোক্ত কোন প্রকার নিয়্যাত না করে কেবল যবেহ করার সময় “বিছমিল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার” বলে “আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা ‘আন্নী, আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্নী” বলে যবেহ করে নেয়, তাহলেও তার ক্বোরবানী সাহীহ-শুদ্ধ বলে গণ্য হবে।
তবে সর্বাবস্থায় উত্তম হলো পূর্ব থেকেই নিয়্যাত করা এবং যব্‌হের সময় “বিছমিল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার” বলে “আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা ‘আন্নী” (যদি ক্বোরবানী নিজের হাতে নিজের পক্ষ থেকে হয়, আর যদি অন্যের পক্ষ থেকে হয় তাহলে ‘আন্নী-র পরিবর্তে -‘আন- বলে যার পক্ষ থেকে হবে তার নাম বলা)। অতঃপর “আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্নী” (যদি ক্বোরবানী নিজের পক্ষ থেকে হয়। আর যদি অন্যের পক্ষ থেকে হয় তাহলে মিন্নী-র পরিবর্তে “মিন” বলে সেই ব্যক্তির নাম বলা। কেননা রাছূলুল্লাহ 1 এভাবেই বলেছেন মর্মে একাধিক বিশুদ্ধ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।
সূত্রঃ- মূল- ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ্‌ দারব লিশ্‌ শাইখ মোহাম্মাদ ইবনু সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন o।(প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ সংযোজিত)

——————————————————

প্রশ্নঃ- রাতের বেলা ক্বোরবানী করা কি জা-ইয?
উত্তরঃ- হ্যাঁ, রাতের বেলা ক্বোরবানী করা জা-ইয। ক্বোরআনে কারীম থেকে এর প্রমাণ হলো- আল্লাহ bইরশাদ করেছেন:-

وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ.سورة الحج- ٢۸১৮

অর্থাৎ- এবং তারা সুনির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ করবে সেইসব চতুষ্পদ জন্তুর উপর যেগুলো তিনি তাদেরকে রিয্‌ক্ব হিসেবে দান করেছেন।ছূরা আল হাজ্জ- ২৮১৯
এই আয়াতে নির্দিষ্ট দিনের কথা বলা হয়েছে। আর আভিধানিক অর্থে রাত-ও “দিন” এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
ছুন্নাহ থেকে এর প্রমাণ হলো- (এক) জুবাইর ইবনু মুত‘য়িম (3) থেকে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-

وكلُّ أيَّامِ التَّشريقِ ذبْحٌ .أخرجه أحمد وصححه الألباني২০

অর্থ- এবং আইয়্যামে তাশরীক্বের সবগুলো দিনই হলো যবেহ (অর্থাৎ ক্বোরবানী) করার দিন।মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ। ইমাম আল আলবানী o হাদীছটিকে সাহীহ্‌ বলেছেন২১
এই হাদীছেও তাশরীক্বের আইয়্যাম বা দিনগুলোর কথা বলা হয়েছে। আর আইয়্যাম বা দিন বলতে রাতকেও বুঝায়। এছাড়া উক্ত হাদীছে ক্বোরবানীর সময়-সীমা বলা হয়েছে। এই সময়-সীমার মধ্যে রাত যদি অন্তর্ভুক্ত না হতো তাহলে কেবল “দিনের বেলা”-র কথা পৃথক ভাবে বলা হতো।

তাছাড়া দিনের বেলা বা রাত্রিবেলা যে কোন সময়ই পশু যবেহ করা আল্লাহ b বৈধ করে দিয়েছেন। “রাতের বেলা ক্বোরবানী করা মাকরূহ” সাব্যস্থ করতে হলে এর পক্ষে সুস্পষ্ট দালীল থাকতে হবে। অথচ এই মর্মে স্পষ্ট কোন দালীল নেই। অতএব দালীল ব্যতীত এরকম কোন বিষয়কে হারাম তো দূরের কথা মাকরূহও সাব্যস্থ করা যাবে না।

শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন o বলেছেন:- রাতের চেয়ে দিনের বেলা ক্বোরবানী করা উত্তম। ২য়, ৩য় ও ৪র্থ দিনের চেয়ে প্রথম দিন ক্বোরবানী করা উত্তম। ‘ঈদের সালাতের পরপরই ক্বোরবানী করা জা-ইয, তবে সালাত এবং খুতবাহ দু’টি শেষ হওয়ার পর দ্রুত ক্বোরবানী করা উত্তম।

(সূত্রঃ- আহ্‌কামুল উযহিয়্যাহ লিশ্‌ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনি সালিহ আল ‘উছাইমীন (o)

———————————–

প্রশ্নঃ- মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে ক্বোরবানী করা কি জা-ইয?
উত্তরঃ- হ্যাঁ, মৃত ব্যক্তি যদি যদি তার রেখে যাওয়া এক তৃতীয়াংশ সম্পদের মধ্যে ওসীয়্যাত করে থাকেন অথবা ক্বোরবানী করার জন্য তিনি যদি তার কোন সম্পদ ওয়াক্বফ বা নির্ধারণ করে যান, তাহলে সেই সম্পদ হতে তার পক্ষ থেকে ক্বোরবানী করা এবং তার ওসীয়্যাত বাস্তবায়ন করা ওয়াজিব। আর মৃত ব্যক্তি যদি এরূপ কিছু করে না যান, বরং কেউ যদি নিজে থেকে চায় তার মৃত বাবা, মা এর পক্ষ হতে অথবা এদু’জন ব্যতিত মৃত অন্য কোন আত্মীয় স্বজনের পক্ষ হতে ক্বোরবানী করতে, তাহলে সেটাও করা যাবে। এটি একটি উত্তম কাজ। কেননা তা মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে সাদাক্বাহ করার পর্যায়ভুক্ত। আর মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে সাদাক্বাহ করা বৈধ ও উত্তম কাজ। এটি আহলুছ্‌ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের সকলেরই কথা। তবে এক্ষেত্রে কেউ চাইলে মায়্যিতের পক্ষ হতে ক্বোরবানীর পরিবর্তে এর সমপরিমাণ মূল্যও সাদাক্বাহ করে দিতে পারবে।

সূত্রঃ- মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুশ্‌ শাইখ ইবনি বায। ভলিয়ম ১৮, পৃষ্ঠা নং ৪০।
ফাতওয়া নূরুন ‘আলাদ দার্‌ব- হুকমুল উযহিয়্যাহ ‘আনিল হায়্যি ওয়াল মায়্যিত।
(উল্লেখ্য যে, কেউ যদি সাধারণতঃ তার মৃত বাবা, মা বা অন্য কোন মায়্যিতের জন্য নগদ টাকা-পয়সা সাদাক্বাহ করে থাকেন, তাহলে ক্বোরবানীর সময় তার জন্য তাদের পক্ষ হতে ক্বোরবানী সাদাক্বাহ করা হবে উত্তম। কারণ, এক ধরনের সাদাক্বাহ করার চেয়ে শারী‘আত সম্মত পন্থায় বিভিন্ন ধরনের সাদাক্বাহ করা উত্তম।)

———————————–

প্রশ্নঃ- ক্বোরবানীর পশু যবেহ্‌ করার সময় মহিলারা কি পুরুষকে সাহায্য করতে পারে, যেমন মা তার ছেলেকে, মেয়ে তার বাবাকে কিংবা স্ত্রী তাঁর স্বামীকে যবেহ্‌ এর কাজে সাহায্য করতে পারে?
উত্তরঃ- হ্যাঁ, অবশ্যই করতে পারে। কেননা হতে বর্ণিত:-

أنَّ رَسولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ أَمَرَ بكَبْشٍ أَقْرَنَ يَطَأُ في سَوَادٍ، وَيَبْرُكُ في سَوَادٍ، وَيَنْظُرُ في سَوَادٍ، فَأُتِيَ به لِيُضَحِّيَ به، فَقالَ لَهَا: يا عَائِشَةُ، هَلُمِّي المُدْيَةَ، ثُمَّ قالَ: اشْحَذِيهَا بحَجَرٍ، فَفَعَلَتْ: ثُمَّ أَخَذَهَا، وَأَخَذَ الكَبْشَ فأضْجَعَهُ، ثُمَّ ذَبَحَهُ، ثُمَّ قالَ: باسْمِ اللهِ، اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِن مُحَمَّدٍ، وَآلِ مُحَمَّدٍ، وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ، ثُمَّ ضَحَّى بهِ.صحيح مسلم ২২

অর্থ- রাছূলুল্লাহ 1– শিংওয়ালা, কালো পা, কালো পেট ও কালো চক্ষু বিশিষ্ট একটি ভেড়া নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। তাই তা নিয়ে আসা হলো তাঁর ক্বোরবানীর জন্যে। অতঃপর রাছূলুল্লাহ 1 ‘আ-ইশাহ f-কে ছুরি নিয়ে আসতে বললেন, তারপর তাঁকে বললেন

সেটিকে পাথর দিয়ে ধার করে নিতে। তিনি (‘আ-ইশাহ f) তা করলেন, অতঃপর তিনি ভেড়াটিকে ধরলেন এবং রাছূলুল্লাহ সা্ল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া ছাল্লামও ভেড়াটিকে ধরে কাত করে শুইয়ে দিলেন। তারপর তিনি সেটিকে “বিছমিল্লাহ” বলে যবেহ্‌ করলেন, এবং বললেন “আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন মুহাম্মাদ ওয়া আ-লি মুহাম্মাদ ওয়া মিন উম্মাতি মুহাম্মাদ” আর এভাবেই তিনি (রাছূলুল্লাহ 1) তাঁর ক্বোরবানী সম্পাদন করেন।সাহীহ্‌ মুছলিম২৩

এই হাদীছ থেকে একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, মহিলারাও পুরুষকে ক্বোরবানীর কাজে সহযোগিতা করতে পারেন।

 

প্রশ্নঃ- কোন মুছলিমাহ নারী কি ক্বোরবানীর পশু যবেহ্‌ করতে পারেন, এটি কি শারী‘আতে জা-ইয তথা বৈধ?
উত্তরঃ- হ্যাঁ, অবশ্যই সুন্দরভাবে যবেহ করতে সক্ষম হলে মহিলা তার নিজের ক্বোরবানীর পশু নিজ হাতে যবেহ্‌ করতে পারেন।
এর প্রমাণ হলো- কা‘ব ইবনু মালিক3থেকে বর্ণিত, একদা একজন মহিলা একটি ছাগলকে (ধারালো) পাথর দ্বারা যবেহ করেন। অতঃপর এবিষয়ে (যবেহকৃত এ পশুটির গোশত খাওয়া যাবে কি-না) 1-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সেটি খাওয়ার নির্দেশ দেন।সাহীহ্‌ বুখারী২৪

এখানে রাছূলুল্লাহ 1 একথাও জানতে চাননি যে, যবেহ্‌ করার সময় মহিলা পবিত্র অবস্থায় ছিলেন কি-না।
তাই এই হাদীছ থেকে একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, মহিলারা যে অবস্থায় থাকুন না কেন (যদি যবেহ্‌ হালাল হওয়ার অন্যান্য শর্তগুলো বিদ্যমান থাকে), তারা উট, গরু, ছাগল, দুম্বা, ভেড়া সহ অন্যান্য হালাল যে কোন পশু-পাখি যবেহ্‌ করতে পারবেন- শারী‘আতের দৃষ্টিতে তা জা-ইয এবং পুরুষদের যবেহ্‌কৃত পশু যেমন বৈধ তেমনি নারীদেরও।

প্রশ্নঃ- মহিষ দ্বারা ক্বোরবানী করা জা-ইয কি-না?
উত্তরঃ- হ্যাঁ, জা-ইয। কেননা মহিষ হলো গরু গোত্রীয় জন্তু। তাই গরুর ক্ষেত্রে যে হুক্‌ম, মহিষের ক্ষেত্রেও সেই হুক্‌ম প্রযোজ্য। ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 গরুর কথা উল্রেখ করেছেন, মহিষের কথা উল্লেখ করেননি, এটা এ কারণে যে, তখনকার সময়ে ‘আরাবদের কাছে গরু ছিল বেশি পরিচিত জন্তু, মহিষ তারা খুব একটা চিনতেন না।

সূত্রঃ- মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাছাইলুশ্‌ শাইখ ‘উছাইমীন (o)।


১. سورة البقرة- ١٩٦ 
২. ছূরা আল বাক্বারাহ- ১৯৬ 
৩. صحيح مسلم 
৪. সাহীহ্‌ মুছলিম 
৫. صحيح مسلم 
৬. সাহীহ্‌ মুছলিম 
৭. سورة الحج- ٢٧ 
৮. ছূরা আল হাজ্জ- ২৭ 
৯. أخرجه أحمد وصححه الألباني 
১০. মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ। ইমাম আল আলবানী হাদীছটিকে সাহীহ বলেছেন। 
১১. صحيح مسلم 
১২. সাহীহ্‌ মুছলিম 
১৩. সাহীহ্‌ মুছলিম 
১৪. صحيح اليخاري 
১৫. সাহীহ্‌ বুখারী 
১৬. سورة الحج- ٢٧ 
১৭. ছূরা আল হাজ্জ- ২৭ 
১৮. سورة الحج- ٢۸ 
১৯. ছূরা আল হাজ্জ- ২৮ 
২০. أخرجه أحمد وصححه الألباني 
২১. মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ। ইমাম আল আলবানী o হাদীছটিকে সাহীহ্‌ বলেছেন 
২২. صحيح مسلم  
২৩. সাহীহ্‌ মুছলিম 
২৪. সাহীহ্‌ বুখারী 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close