হাজ্জ ফার্য হওয়ার জন্য পুরুষদের ক্ষেত্রে পাচটি এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আরো একটি অর্থাৎ ৬টি শর্ত রয়েছে। এই শর্তগুলো একত্রে একসাথে যখনই যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সাথে সাথে তার উপর হাজ্ব সম্পাদন করা ফার্য হয়ে যাবে।
এ কথার প্রমাণ হলোঃ- ইবনে ‘আব্বাছ e থেকে বর্ণিত হাদীছ- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেনঃ-
تعجلوا إلى الحج فإن أحكم لايدرى مايعرض له.رواه الإمام أحمد
অর্থাৎ:- তোমরা হাজ্ব আদায়ে দ্রুত এগিয়ে যাও, কেননা তোমাদের কেউই জানে না যে তার সামনে কি আসবে। (অর্থাৎ, সে কি অবস্থার সম্মুখিন হবে, আগামীতে তার হাজ্ব আদায়ের সামর্থ থাকবে কি – না।)মুছনাদে ইমাম আহমাদ
সারা জীবনে একবার মাত্র হাজ্জ আদা করা ফার্য। এ কথার প্রমাণ হলো-ইবনু ‘আব্বাছ e থেকে বর্ণিত, আক্বরা‘ বিন হাবিছ e রাছূলুল্লাহ্কে (1) জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ-
يا رسول الله الحج في كل سنة أو مرة واحدة؟ قال بل مرة واحدة فمن زاد فهو تطوع.أخرجه أبو داود
অর্থাৎ:- হে আল্লাহ্র রাছূল ! হাজ্ব কি প্রতি বছর, না একবার? রাছূলুল্লাহ 1 বললেনঃ- (প্রতি বছর নয়) বরং একবার, সুতরাং যে একাধিকবার করবে সেটা হবে নাফল।আবূ দাঊদ
মোট কথা সামর্থ থাকলে জিবনে একবার মাত্র হাজ্বব্রত পালন করা ফার্য। যদি কেউ একাধিকবার হাজ্জ সম্পাদন করে, তাহলে তার প্রথম হাজ্জটি ফার্য হিসেবে আদা হবে এবং অন্যান্যগুলো নাফল হিসেবে গণ্য হবে।
তবে হ্যাঁ, কেউ যদি হাজ্জ পালন করবে বলে মানত করে থাকে, তাহলে তা আদা করা তার উপর ওয়াজিব। কেননা রাছূলুল্লাহ (1) বলেছেনঃ-
من نذر أن يطيع الله فليطعه.رواه البخارى
অর্থাৎ:- যে কেউ আল্লাহ্র আনুগত্যমূলক কোন কাজ করবে বলে মানত করবে, সে যেন অবশ্যই তা পালন করে।সহীহ বুখারী
হাজ্জ ফার্য হওয়ার শর্তাবলীঃ-
১) মুছলমান হতে হবে। কেননা ইছলাম গ্রহণ ব্যতীত কোন নেক ‘আমালই আল্লাহ্র (0) নিকট গ্রহণ যোগ্য নয়।
ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেনঃ-
ومن يبتغ غير الإسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الآخرة من الخاسرين.آل عمران-٨٥
অর্থাৎ:- যে ব্যক্তি ইছলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে তাহলে তা কখনই তার নিকট হতে গ্রহণ করা হবে না এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।আলে ‘ইমরান- ৮৫
অন্য আয়াতে আল্লাহ b ইরশাদ করেছেনঃ-
لئن أشركت ليحبطن عملك ولتكونن من الخاسرين.الزمر- ٦٥
অর্থাৎ:- যদি আপনি শির্ক করেন তাহলে অবশ্যই আপনার ‘আমাল অনর্থক হয়ে যাবে এবং অবশ্যই আপনি ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবেন।ছূরা আয্ যুমার-৬৫
তাই যে কোন নেক ‘আমাল আল্লাহ্র (0) নিকট গৃহীত হতে হলে অবশ্যই ‘আমালকারীকে সর্বাগ্রে মুছলিম হতে হবে।
এছাড়া অপবিত্রদেরকে আল্লাহ 0 মাছজিদুল হারামের নিকটে যেতে নিষেধ করেছেন। ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ b ইরশাদ করেছেনঃ-
إنما المشركون نجس فلا يقربوا المسجد الحرام بعد عامهم هذا.سورة التوبة-۲٨
অর্থাৎ:- মুশরিকরা হলো অপিবত্র, সুতরাং তারা যেন তাদের এ বছর পর আর মাছজিদুল হারামের কাছে না যায়।ছূরা আত্ তাওবাহ-২৮
২) প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। ছেলে অথবা মেয়ে যতক্ষণ না প্রাপ্ত বয়স্ক হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের উপর ইছলামের কোন বিধান পালন আবশ্যকীয় নয়। তাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন ছেলে মেয়ে যদি হাজ্জ সম্পাদন করে থাকে তাহলে এটা তার উপর ইছলামের ফার্য হাজ্জ সম্পাদন হয়েছে বলে গণ্য হবে না বরং তা নফল হাজ্ব বলে গণ্য হবে। তাই প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর যদি তার সামর্থ থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে ফার্য হাজ্জ আদা করতে হবে।
এ কথার প্রমাণ হলো রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেনঃ-
أيما صبى حج عشر حجج ثم بلغ فعليه حجة الإسلام.أخرجه أبو داود والترمذى
অর্থাৎ:- কোন ছেলে (অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে বা মেয়ে) যদি দশবারও হাজ্জ করে থাকে অতঃপর সে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়, তাহলে তার উপর ইছলামের (ফার্য) হাজ্জ আদা করা ওয়াজিব।আবূ দাঊদ, তিরমিযী
৩) জ্ঞানবান তথা সুস্থ বুদ্ধি ও সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী হতে হবে। অজ্ঞান বা পাগলের উপর ইছলামের কোন বিধান প্রযোজ্য নয়।
এ সম্পর্কে রাছুলুল্লাহ 1 বলেছেনঃ-
رفع القلم عن ثلاثة عن النائم حتى يستيقظ وعن الصبى حتى يحتلم وعن المجنون حتى يعقل.رواه أبو داود
অর্থাৎ:- তিন প্রকার লোকের বিষয়ে ক্বলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। (অর্থাৎ তাদের ‘আমল লিপিবদ্ধ করা হয় না) ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না ঘুম থেকে জেগে উঠে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক, যতক্ষণ না প্রাপ্ত বয়স্ক হয় এবং পাগল, যতক্ষণ না তার জ্ঞান ফিরে আসে, সে বুঝতে পারে।আবূ দাঊদ
৪) স্বাধীন হতে হবে। গোলাম বা দাস-দাসীর উপর হাজ্জ ফার্য নয়। কেননা হাজ্জ্ব সম্পাদনের জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন হয়ে থাকে, আর দাস-দাসীর সেই সময়টুকু নেই। কেননা তারা প্রায় সর্বক্ষণই তাদের কর্তার দেয়া কাজ-কর্ম, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনেই ব্যস্ত থাকে। তাই তারা হাজ্ব পালনে অসামর্থ-অক্ষম বলেই গণ্য ও বিবেচিত হয়ে থাকে। আর যদি কোন দাস বা দাসীকে নিয়ে তার কর্তা হাজ্ব সম্পাদন করে থাকেন, অতঃপর তাকে আযাদ বা মুক্ত করে দেন, তাহলে এই হাজ্ব সেই দাস বা দাসীর জন্যে যথেষ্ট হবে না বরং তাকে স্বাধীন হওয়ার পর যদি তার সাধ্য ও সামর্থ থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে ইছলামের ফার্য হাজ্ব আদা করতে হবে। এ কথার প্রমান হলো ইবনু ‘আব্বাছ e থেকে বর্ণিত হাদীছ, তিনি বলেছেনঃ-
إحفظوا عنى ولا تقولوا قال إبن عباس: أيما عبد حج به أهله ثم أعتق فعليه الحج وأيما صبى حج به أهله صبيا ثم أدرك فعليه حجة الرجل.السنن للبيهقى و مصنف إبن أبى شيبة
অর্থাৎ:- তোমরা আমার থেকে (এ হাদীছটি) সংরক্ষণ করো, তবে একথা বলো না যে ইবনু ‘আব্বাছ বলেছেন। (এ কথা দ্বারা তিনি এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, এটি তাঁর কথা নয় বরং রাছূলুল্লাহ 1 এর কথা) “যে গোলামকে নিয়ে তার কর্তা-পরিবার হাজ্জ সম্পাদন করবে অতঃপর তাকে মুক্ত করে দিবে, তাহলে (মুক্ত হওয়ার পর) তার উপর হাজ্ব সম্পাদন করা ফার্য। এমনিভাবে যে ছোট বাচ্চাকে নিয়ে তার পরিবার হাজ্জ আদা করবে অতঃপর সে প্রাপ্ত বয়সে উপনীত হবে, তাহলে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের উপর (সামর্থ থাকলে) ইছলামের যে হাজ্জ আদা করা ফার্য, তাকে সেই ফার্য হাজ্ব আদা করতে হবে।ছুনানে বাইহাক্বী, মুসান্নাফে ইবনু আবী শাইবাহ। হাদীছ সহীহ
৫) সক্ষম ও সামর্থবান হতে হবে। এর প্রমাণ হলো ক্বোরআনে কারীমের এই আয়াতঃ-
ولله على الناس حج البيت من استطاع إليه سبيلا.آل عمران -٩٧
অর্থাৎ:- মানুষের উপর অত্যাবশ্যকীয় হলো আল্লাহ্র জন্যে বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ করা যে, এর সামর্থ রাখে।ছূরা আলে ‘ইমরান-৯৭
এই সামর্থ ও সক্ষমতার মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ নিম্নোক্ত বিষয়াদীর সক্ষমতা ও সামর্থ থাকতে হবে।
(ক) শারীরিক সক্ষমতা। তাই বয়সের ভারে তথা বয়োঃবৃদ্ধতার কারণে কিংবা মারাত্মক অসুস্থতার দরুন হাজ্জ ভ্রমণে অথবা হাজ্জ কর্ম সম্পাদনে অক্ষম ব্যক্তির উপর হাজ্জ ফর্য নয়। তবে যদি তিনি অর্থের দিক দিয়ে পূর্ণ সামর্থবান হয়ে থাকেন এবং এমনভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন যা থেকে সাধারণত সুস্থ হওয়ার আশা করা যায় না, তাহলে এমতাবস্থায় অন্য কাউকে দিয়ে তার হাজ্জ করিয়ে নেয়া অত্যাবশ্যক। এর প্রমাণ হলো আবূ রাযীন আল ‘উক্বাইলী e থেকে বর্ণিত হাদীছ, একদা তিনি রাছূলুল্লাহ্কে (2) এসে বললেনঃ-
يارسول الله إن أبي شيخ كبير لا يستطيع الحج ولا العمرة ولا الظعن قال: حج عن أبيك واعتمر.أخرجه الترمذى
অর্থাৎ:- হে আল্লাহর রাছূল! আমার বাবা একজন বয়োঃবৃদ্ধ লোক। হাজ্জ, ‘উমরাহ কিংবা ছফর করার ক্ষমতা তার নেই। রাছূলুল্লাহ 1 তাকে বললেনঃ- তুমি তোমার বাবার পক্ষ হতে হাজ্জ ও ‘উমরাহ সম্পাদন করো।জামে‘ তিরমিযী, হাদীছটি হাছান-সাহীহ
(খ) শুধুমাত্র মক্কাবাসী ব্যতীত অন্যদের ক্ষেত্রে মাক্কাহ আল মুকার্রামা-য় তথা বাইতুল্লায় আগমনের রাস্থা নিরাপদ হতে হবে। অর্থাৎ হাজ্ব সম্পাদনে ইচ্ছুক ব্যক্তি যে পথ দিয়ে মাক্কাহ গমন করবে সে পথে তার নিজের জান ও মালের নিরাপত্তা থাকতে হবে যাতে সে আল্লাহ্র 0 ইচ্ছায় তার জান ও মাল নিয়ে নিরাপদে বাইতুল্লাহ্তে পৌছতে পারে, অন্যথায় তার উপর হাজ্জব্রত সম্পাদন করা ফার্য নয়। কেননা আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেনঃ-
ولله على الناس حج البيت من استطاع إليه سبيلا
অর্থাৎ:- মানুষের উপর অত্যাবশ্যকীয় হলো আল্লাহ্র জন্যে বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ করা যে, এর সামর্থ রাখে।ছূরা আলে ‘ইমরান-৯৭
তবে বিচ্ছিন্নভাবে মাক্কাহ্র পথে সংঘটিত ছোট-খাটো দু’ একটি ঘটনার জন্য ঐ পথটিকে অনিরাপদ বা বিপজ্জনক বলা যাবে না এবং এই অজুহাতে হাজ্জ কর্ম সম্পাদন থেকে বিরত থাকা যাবে না।
(গ) অর্থের দিক দিয়ে সামর্থবান হতে হবে। আর তা হলো, নিজ পরিবারের প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান) পূরণ করার পর এবং ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করার পর যদি এই পরিমাণ অর্থ উদ্ধৃত থাকে যা হাজ্জে যাওয়া- আসা ও হাজ্জ কালীন সময়ে নিজের প্রয়োজনীয় খরছের জন্য যথেষ্ট বলে মনে হয়,তাহলে এমন লোকের উপর হাজ্জ কর্ম সম্পাদন করা অত্যাবশ্যক।
(ঘ) শুধুমাত্র মাক্কাহবাসী ব্যতীত অন্যদের ক্ষেত্রে হাজ্জে যাওয়া-আসার জন্য স্থল পথে, কিংবা নৌপথে কিংবা আকাশ পথে বাহনের নিশ্চিত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
রাষ্ট্রের পক্ষ হতে কারো উপর যদি বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকে কিংবা মাক্কাহ মুকার্রামাহ্ গমনের জন্য ভিসা না পাওয়া যায়, তাহলে এক্ষেত্রে তার উপর হাজ্জ ফার্য বলে গণ্য হবে না। এসব বিষয়ে প্রমাণ হলো আনাছ বিন মালিক e থেকে বর্ণিত হাদীছ, তিনি বলেছেন যে,
ولله على الناس حج البيت من استطاع إليه سبيلا.
ক্বোরআনে কারীমের এ আয়াতে বর্ণিত سبيل শব্দ সম্পর্কে রাছূলুল্লাহ্-কে (1) জিজ্ঞেস করা হয়েছিল
يارسول الله ما السبيل؟
অর্থাৎ:- হে আল্লাহর রাছূল ! ছাবীল বা পথ পলতে কী বুঝায়? উত্তরে রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেনঃ- الزاد والراحلة অর্থাৎঃ- রসদ ও বাহন। (দারু ক্বোতনী)
এ বিষয়ে আলী e থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেছেনঃ-
من ملك زادا وراحلة تبلغه إلى بيت الله ولم يحج فلا عليه أن يموت إن شاء يهوديا وإن شاء نصرانيا وذلك أن الله يقول: ولله على الناس حج البيت من استطاع إليه سبيلا.أخرجه الترمذى
অর্থাৎ:- যে ব্যক্তি এই পরিমাণ রসদ ও বাহনের মালিক হবে যা তাকে বাইতুল্লাহ পর্যন্ত পৌছে দিতে পারে, এতদসত্তেও সে যদি হাজ্জ কর্ম সম্পাদন না করে, তাহলে সে চাইলে ইয়াহুদী অথবা খৃষ্টান হয়ে মৃত্যূবরণ করুক এটা তার জন্যে কোন বিষয় নয়। কেননা আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেনঃ-
ولله على الناس حج البيت من استطاع إليه سبيلا.জামে‘ তিরমিযী
ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ b আরো ইরশাদ করেছেনঃ-
ليس على الضعفاء ولا على المرضى ولا على الذين لا يجدون ماينفقون حرج………..التوبة -٩١
অর্থাৎ:- দুর্বল, রুগ্ন, ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ লোকদের উপর কোন পাপ নেই……………ছূরা আত্ তাওবাহ-৯১
অন্য আয়াতে আল্লাহ (b) ইরশাদ করেছেনঃ-
ولا على الذين إذا ما أتوك لتحملهم قلت لا أجد ما أحملكم عليه.التوبة -٩٢
অর্থাৎ:- এবং না ঐসব লোকদের উপরও, যারা তখন আপনার নিকট এ উদ্দেশ্যে আসে যে, আপনি তাদেরকে বাহন দান করবেন, আর আপনি তাদেরকে বলেছেন- আমি তো এমন কিছু পাচ্ছি না যার উপর তোমাদের সওয়ার করাব।ছূরা আত্ তাওবাহ-৯২
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছসমূহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে একথা প্রমাণিত হয় যে, যারা শারীরিক কিংবা আর্থিক দিক দিয়ে অক্ষম ও অসামর্থ, তাদের উপর হাজ্ব ফার্য নয়।
শারীরিক কিংবা আর্থিক দিক দিয়ে অসামর্থ-অক্ষম কোন লোক যদি হাজ্ব কর্ম সম্পাদন করে নেয় তাহলে তার হাজ্ব আদা হয়ে যাবে এবং এই হাজ্ব তার ইছলামের ফার্য হাজ্ব হিসেবে যথেষ্ট হবে।
৬) শুধুমাত্র মাক্কাহ্র বাহির থেকে আগত মহিলাদের উপর হাজ্জ ফার্য হওয়ার জন্য উপরোক্ত শর্তগুলোর সাথে আরেকটি শর্ত রয়েছে। আর সেটি হলো হাজ্জ ভ্রমনের জন্য অবশ্যই সেই মহিলার সাথে কোন স্থায়ী মাহরাম (বংশগত কারণে কিংবা অন্য কোন বৈধ কারণে যাদের সাথে চিরকাল বিয়ে হারাম এমন কেউ) থাকতে হবে। বংশগত কারণে স্থায়ী মাহরাম হলেন যেমনঃ- পিতা, ছেলে, ভাই, আপন চাচা, আপন মামা।
আর বৈধ কারণে স্থায়ী মাহরাম হলেন যেমনঃ- দুগ্ধ (দুধ) পিতা, দুগ্ধ ভাই দুগ্ধ পুত্র, দুগ্ধ চাচা-দুগ্ধ মামা, শশুর, সৎ পুত্র, সৎ পিতা তথা বৈধভাবে মিলামিশাকারী মায়ের পূর্বেকার স্বামী, এবং মেয়ের জামাই।
অবৈধ কারণে যেমন,স্বামী-স্ত্রীর উপর অপবাদ আরোপের দরুন পারস্পরিক অভিসম্পাত বা লা‘নত করার কারনে যদিও স্থায়ীভাবে তারা একে অপরের জন্যে হারাম হয়ে যায়, তথাপি হাজ্বের ক্ষেত্রে এই লোক সেই মহিলার জন্যে মাহরাম বলে গণ্য হবে না, এবং তার সাথে ঐ মহিলার হাজ্বে যাওয়া বৈধ হবে না।
এমনিভাবে যাদের সাথে সাময়িকভাবে বিয়ে-শাদী হারাম, তারাও মাহরাম হিসেবে গণ্য নয় এবং তাদের সাথে হাজ্জে গমন বৈধ নয়। যেমনঃ ভগ্নিপতি, ভাইঝি জামাই, ভাগ্নি জামাই, ভাতিজি জামাই, বোনঝি জামাই, ফুফা, খালু, এরা মাহরাম বলে গণ্য নয় এবং তাদের সাথে হাজ্বে গমন বৈধ নয়। কেননা এদের সাথে সাময়িকভাবে বিয়ে-শাদী হারাম হলেও স্থায়ীভাবে হারাম নয়। আর মাহরাম হওয়ার জন্যে বৈধ কারণে স্থায়ীভাবে বিয়ে-শাদী হারাম তথা নিষিদ্ধ হওয়া বাঞ্চনীয়।
মহিলাদের হাজ্বে যাওয়ার জন্য সাথে কোন মাহরাম পুরুষ থাকা শর্ত। একথার প্রমাণ হলো ইবনে ‘আব্বাছ e থেকে বর্ণিত হাদীছ, রাছূলুল্লাহ 1) ইরশাদ করেছেনঃ-
لا تسا فر المرأة إلا مع ذى محرم ولايدخل عليها رجل إلا ومعها محرم فقال رجل: يارسول الله إنى أريد أن أخرج فى جيش كذا وكذا وامرأتى تريد الحج؟ فقال أخرج معها.رواه البخارى و مسلم
অর্থাৎ:- মাহরাম ছাড়া কোন মহিলা যেন ছাফারে না যায় এবং মাহরাম ব্যতীত কোন মহিলার ঘরে যেন কোন পুরুষ প্রবেশ না করে। তখন এক ব্যক্তি বললেনঃ হে আল্লাহর রাছূল 1 আমি যুদ্ধের জন্য অমুক দলের সাথে বের হতে চাই, ওদিকে আমার স্ত্রী হাজ্বে যেতে চাইছেন। (এমতাবস্থায় আমি কি করব ?) রাছূলুল্লাহ 1 তাকে বললেনঃ- তুমি তার সাথে (তোমার স্ত্রীর সাথে) যাও। (সাহীহ বুখারী ও সাহীহ মুছলিম)
এই হাদীছে দেখা যায় যে, রাছূলুল্লাহ 1 মাহরাম ছাড়া ছাফার করতে নিষেধ করেছেন এবং প্রশ্নকারী ঐ ব্যক্তিকে জিহাদ বাদ দিয়ে হাজ্বে গমনেচ্ছু নিজ স্ত্রীর সাথে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ থেকে সহজেই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
তবে যদি কোন মহিলা মাহরাম সঙ্গে না নিয়ে হাজ্ব সম্পাদন করে নেন তাহলে তার হাজ্ব আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মাহরাম সঙ্গে না নেয়ার জন্য অবশ্যই গুনাহগার হবেন।
মক্কায় অবস্থানকারী মহিলার হাজ্ব সম্পাদনের জন্য সাথে মাহরাম পুরুষ থাকা শর্ত নয়। বরং বিশ্বস্ত ও নিরাপদ যে কোন সাথীর সাথেই তিনি হাজ্ব সম্পাদন করতে পারেন। কেননা মক্কায় অবস্থানকারীকে হাজ্বের জন্য ছাফার করতে হয় না। তাই তার সাথে মাহরাম থাকা আবশ্যক নয়।
সূত্রাবলীঃ-
১। আল ‘আল্লামা আশ্শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায o সংকলিত “আত্তাহক্বীক্ব ওয়াল ঈযাহ—–”।
২। আল ‘আল্লামা আল মুহাদ্দিছ আশ্শাইখ নাসিরুদ্দীন আল আলবানী o সংকলিত মানছিকুল হাজ্ব ওয়াল ‘উমরাহ ফিল কিতাব ওয়াছ্ ছুন্নাহ ওয়া আ-ছারিছ ছালাফ”।
৩। আল ‘আল্লামা আশ্শাইখ ‘আব্দুল মুহছিন হামদ আল ‘আব্বাদ c সংকলিত “তাবসীরুন নাছিক বি আহকামিল মানাছিক”।
৪। আল ‘আল্লামা আশ্শাইখ মোহাম্মাদ বিন সালেহ আল ‘উছাইমীন o সংকলিত “আশ্শারহুল মুমতি”।
৫। আশ্শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্দুর রহমান আল জিবরীন c ও আশ শাইখ ‘আব্দুল মুহছিন বিন নাসির আল ‘উবাইকান c সংকলিত “আল মিনহাজ ফী ইয়াওমিয়া-তিল হা-জ্ব”।
৬। আশ্শাইখ জামীল যাইনু o রচিত ও সংকলিত “ আরকানুল ইছলাম ওয়াল ঈমান”।
৭। আল ‘আল্লামা আশ্শাইখ মোহাম্মদ বিন সালেহ আল ‘উছাইমীন o রচিত ও সংকলিত “কাইফা ইয়ুআদ্দিল মুছলিমু মানাছিকাল হাজ্ব ওয়াল ‘উমরাহ ওয়া আখতা ইয়াক্বা‘উ ফীহাল হুজ্জাজ”।
৮। “বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুক্বতাসিদ” লিল ইমাম মোহাম্মদ বিন আহমদ আল ক্বোরতুবী (o)।
৯। “ফিক্বহুছ ছুন্নাহ” লিল ‘আল্লামা আছ ছায়্যিদ আছ ছাবিক্ব (o)।
১০। “আল ফিক্বহু ‘আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আ” লিশ্শাইখ ‘আব্দুর রহমান আল জাযীরী (o)।