ক্বোরআনের তাফছীর (৯ম পর্ব)

এটি উছতায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c প্রদত্ত একটি ধারাবাহিক অডিও বক্তব্য। উক্ত ধারাবাহিক বক্তব্যে উছতায পবিত্র ক্বোরআনের ছূরা সমূহের তাফছীর প্রদান করবেন, إن شاء الله।
ধারাবাহিক বক্তব্যে নিম্নোক্ত বইসমূহ উৎস হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে-

ক) আল ‘আল্লামা ‘আব্দুল্লাহ আছ্‌ ছা‘দী o রচিত এবং শাইখ সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন o কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত আত-তা‘লীক্ব ‘আলাল ক্বাওা‘য়ীদ আল-হিছান।
খ) আল ‘আল্লামা মুহাম্মাদ ‘আলী আস্‌ সাবূনী o রচিত আত্‌ তিবয়ান ফী ‘উলূমিল ক্বোরআন।
গ) আল-‘আল্লামা ছুয়ূতী o রচিত আল-ইতক্বান।
এছাড়াও ছালাফদের রচিত আরো কিছু কিতাব থেকে সারাংশ উপস্থাপন করা হবে, إن شاء الله।

বক্তব্যের এ পর্বে উছতায নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আলোচনা করেছেন-
১) بِسۡمِ اللہِ বা তাছমিয়াহ সম্পর্কে রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ যদি তাছমিয়াহ তথা বিছমিল্লাহ দ্বারা শুরু করা না হয়, তবে সেই কাজ হবে লেজকাটা ও বারাকাতহীন।
তাছমিয়ার গুরুত্ব বুঝার জন্য রাছূলুল্লাহ্র (1) এই হাদীছটিই যথেষ্ট। কিছু কিছু কাজ রয়েছে, যেগুলোর শুরুতে তাছমিয়াহ পাঠ করা শারী‘য়াত ওয়াজিব করে দিয়েছে। যেমন-

ক) পশু জবাইয়ের শুরুতে তাছমিয়াহ বলা ওয়াজিব।
খ) ওজুর শুরুতে তাছমিয়াহ বলা ওয়াজিব (জমহূরের মতে)। এছাড়াও অন্যান্য ভালো কাজের শুরুতে তাছমিয়াহ পাঠ করা মুছ্তাহাব।

২) কোনো কাজের শুরুতে কি শুধু بِسۡمِ اللہِ বলতে হবে, নাকি بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ পুরোটাই বলতে হবে?
এক্ষেত্রে বলা যায় যে, হাদীছে যে সকল কাজের শুরুতে بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ পুরোটাই উল্লেখ করা হয়েছে, সে সকল কাজের ক্ষেত্রে পুরো তাছমিয়াহ-ই পড়তে হবে। আর যে সকল কাজের শুরুতে শুধু بِسۡمِ اللہِ পড়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সকল কাজের ক্ষেত্রে শুধু بِسۡمِ اللہِ পড়তে হবে। পুরো তাছমিয়াহ বলার প্রয়োজন নেই।
৩) যেকোনো কাজের শুরুতেই শুধু بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ পড়লেই হয়ে যাবে। এর জন্য সেই কাজের কথা মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। নিয়্যাতের বিষয়টা বান্দার অন্তরে থাকবে। কারণ বান্দাহ কি কাজ করবে, এটা আল্লাহ 7 খুব ভালো করেই জানেন। যেমন আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- ءَاَنۡتُمۡ اَعۡلَمُ اَمِ اللّٰہُ অর্থাৎ- তোমরাই বেশি জানো নাকি আল্লাহ?ছূরা আল বাক্বারা- ১৪০
যদি কাজের নামটি মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন থাকতো, তবে রাছূলুল্লাহ 1 আমাদেরকে সেভাবেই শিক্ষা দিতেন।
৪) তাছমিয়াহ তথা বিছমিল্লাহ-র অর্থ হলো- আল্লাহ্র নাম দিয়ে শুরু করছি। এখানে “আল্লাহ্র নাম দিয়ে শুরু করছি” বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
এই মাছ’আলার ক্ষেত্রে মুছলমানরা তিন ভাগে বিভক্ত। যেমন-

ক) আশ’আরী, হাশাওয়িয়্যাহ ও কারিমীয়্যাহদের মতে, এখানে بِسۡمِ اللہِ দ্বারা আল্লাহকেই বুঝাচ্ছে। কোনো কাজের নাম নেওয়াকে বুঝানো হয়নি। (তাদের এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন)
খ) মু‘তাযীলিদের মতে, এখানে بِسۡمِ اللہِ দ্বারাআল্লাহ্কে বুঝানো হয়নি। বরং অন্য কোনো নামকে বুঝানো হচ্ছে। (তাদের এই দাবিটিও ঠিক নয়)
শাইখ তাদের দাবিগুলোকে উপযুক্ত প্রমাণ ও যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করেছেন।
গ) আহ্লুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামাতের ও জমহূর ‘উলামায়ে কিরামের মতে, এখানে بِسۡمِ اللہِ দ্বারা উপরোক্ত কোনোটিকেই বুঝানো হচ্ছে না। বরং এর দ্বারা আল্লাহ্র নামের সকল জাত ও সত্তাকে বুঝানো হচ্ছে।

৫) আমাদের এই “তাছমিয়াহ”-র উদ্দেশ্য বা নিয়্যাত কি হবে?
“বিছমিল্লাহ” বলার সময় আমাদের উদ্দেশ্য হবে- সকল সর্বসুন্দর নামসমূহের অধিকারীকে স্মরণ করে আমি আমার কাজটি শুরু করছি। এই নিয়্যাতে তাছমিয়াহ পড়া হলে কাজ ও কথা উভয়ই বরকতময় হবে।
৬) তাছমিয়াহতে এমন তিনটি শব্দ রয়েছে, যেগুলো ছূরাতুল ফাতিহাতেও বিদ্যমান। যেমন- بِسۡمِ اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ- এ তিনটি শব্দ পাওয়া যায়। সেগুলো হলো- اللہ- الرَّحۡمٰن- الرَّحِیۡم তেমনি ছূরাতুল ফাতিহাতেও এই তিনটি শব্দ পাওয়া যায়। তাই তাছমিয়াহ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারলে, ছূরা ফাতিহা সহ ক্বোরআনের যে সকল জায়গায় এই তিনটি শব্দ রয়েছে, সেগুলো বুঝতে সহজ হয়ে যাবে।

ক) اللہ শব্দের অর্থ কি?
মুফাছ্‌ছিরীনে কিরাম এর বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা করেছেন। তবে, অধিকাংশের মতামত হচ্ছে, اللہ শব্দের অর্থ হচ্ছে- মাবূদ, অর্থাৎ যিনি উপাস্য। اللہ শব্দের কোনো বিকল্প নেই। অনেকেই এই নামের পরিবর্তে GOD শব্দটি ব্যবহার করেন, যা মোটেই উচিত নয়। এটি একক শব্দ। এই নামটি শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র (0) জন্যই নির্দিষ্ট। এটি আল্লাহ্‌র মূল নাম। আল্লাহ্‌র অন্যান্য নামগুলো হলো এই নামেরই অধীন।
যেমন, আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন-

هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِى لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ عَٰلِمُ ٱلْغَيْبِ وَٱلشَّهَٰدَةِ هُوَ ٱلرَّحْمَٰنُ ٱلرَّحِيمُ هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِى لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْمَلِكُ ٱلْقُدُّوسُ ٱلسَّلَٰمُ ٱلْمُؤْمِنُ ٱلْمُهَيْمِنُ ٱلْعَزِيزُ ٱلْجَبَّارُ ٱلْمُتَكَبِّرُ سُبْحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ هُوَ ٱللَّهُ ٱلْخَٰلِقُ ٱلْبَارِئُ ٱلْمُصَوِّرُ لَهُ ٱلْأَسْمَآءُ ٱلْحُسْنَىٰ

অর্থাৎ- তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানের অধিকারী, তিনি অসীম দয়াময়, পরম দয়ালু। তিনিই আল্লাহ যিনি ব্যতীত সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তিনিই বাদশাহ, অতি পবিত্র, পূর্ণ শান্তিময়, নিরাপত্তা দানকারী, পর্যবেক্ষক, মহা পরাক্রমশালী, মহা প্রতাপশালী, প্রকৃত গর্বের অধিকারী। তারা যা কিছু (তাঁর) শরীক সাব্যস্ত করে তা থেকে আল্লাহ পবিত্র-মহান। তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবক, আকার-আকৃতি প্রদানকারী। সর্বোত্তম ও সর্বসুন্দর নামসমূহ তাঁরই।ছূরা আল-হাশ্‌র- ২২-২৪
ক্বোরআনে কারীমের অন্যত্র আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-
قُلِ ادۡعُوا اللّٰہَ اَوِ ادۡعُوا الرَّحۡمٰنَ اَیًّامَّا تَدۡعُوۡا فَلَہُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی
অর্থাৎ- বলুন! তোমরা আল্লাহ্‌কে ডাকো বা রাহ্‌মানকে ডাকো, যে নামেই ডাকো না কেন, সর্বোত্তম ও সর্বসুন্দর নামসমূহ তাঁরই।ছূরা আল ইছরা- ১১০

 

ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-
১) বিছমিল্লাহির রাহ্‌মানির রাহীম বলে কোনো মুছলিম দেশের গতানুগতিক সংবিধান (Constitution) শুরু করা- এ বিষয়টির দ্বীনী ব্যাখ্যা/অবস্থান কি?
২) করোনাভাইরাস (coronavirus) কেন্দ্রিক বৈশ্বিক যে সংকট তৈরী হয়েছে, তা থেকে উত্তোরণের দ্বীনী পদ্ধতি কি?
৩) নিম্নোক্ত আয়াত সমূহের তাফছীর কী হবে?

قُلۡ سِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ ثُمَّ انۡظُرُوۡا کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُکَذِّبِیۡن

অর্থাৎ- বলুন! পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতঃপর দেখো, মিথ্যা আখ্যায়িতকারীদের পরিণাম কিরূপ ছিল।ছূরা আল আন’আম- ১১

أَفَلَمۡ يَسِيرُواْ فِى ٱلۡأَرۡضِ فَتَكُونَ لَهُمۡ قُلُوبٌ۬ يَعۡقِلُونَ بِہَآ أَوۡ ءَاذَانٌ۬ يَسۡمَعُونَ بِہَا فَإِنَّہَا لَا تَعۡمَى ٱلۡأَبۡصَـٰرُ وَلَـٰكِن تَعۡمَى ٱلۡقُلُوبُ ٱلَّتِى فِى ٱلصُّدُورِ

অর্থাৎ- তারা কি যমীনে ভ্রমণ করেনি? তাহলে তো থাকতো তাদের এমন হৃদয় যা দিয়ে তারা অনুধাবন করতো, আর এমন কান যা দ্বারা তারা শ্রবণ করতো। প্রকৃতপক্ষে চোখ অন্ধ হয় না, বরং বুকের ভিতর যে হৃদয় আছে, তা-ই অন্ধ হয়।ছূরা আল হাজ্জ- ৪৬

قُلۡ سِيرُواْ فِى ٱلۡأَرۡضِ فَٱنظُرُواْ ڪَيۡفَ بَدَأَ ٱلۡخَلۡقَ‌ۚ ثُمَّ ٱللَّهُ يُنشِئُ ٱلنَّشۡأَةَ ٱلۡأَخِرَةَ‌ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ ڪُلِّ شَىۡءٍ۬ قَدِيرٌ۬

অর্থাৎ- বলুন! তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর, অতঃপর লক্ষ্য কর কীভাবে তিনি (আল্লাহ) সৃষ্টির সূচনা করেছেন, অতঃপর আল্লাহ সৃষ্টি করবেন চূড়ান্ত সৃষ্টি, নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান।ছূরা আল ‘আনকাবূত- ২০


১. ছূরা আল বাক্বারা- ১৪০ 
২. ছূরা আল-হাশ্‌র- ২২-২৪ 
৩. ছূরা আল ইছরা- ১১০ 
৪. ছূরা আল আন’আম- ১১ 
৫. ছূরা আল হাজ্জ- ৪৬ 
৬. ছূরা আল ‘আনকাবূত- ২০ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close