এটি উছতায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c প্রদত্ত একটি ধারাবাহিক অডিও বক্তব্য। উক্ত ধারাবাহিক বক্তব্যে উছতায ক্বোরআনে কারীমের ছূরা সমূহের তাফছীর প্রদান করবেন, إن شاء الله। বক্তব্যের এই পর্বে উছতায তাফছীরের নিয়ম-নীতি ও ‘উলূমুল ক্বোরআন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
নিম্নোক্ত কিতাবসমূহ উৎস হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে-
ক) আল ‘আল্লামা ‘আব্দুল্লাহ আছ্ ছা‘দী o রচিত এবং শাইখ সালিহ্ আল ‘উছাইমীন رحمه الله কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত আত-তা‘লীক্ব ‘আলাল ক্বাওা‘য়ীদ আল-হিছান।
খ) আল ‘আল্লামা মুহাম্মাদ ‘আলী আস্ সাবূনী o রচিত আত্ তিবয়ান ফী ‘ঊলূমিল ক্বোরআন।
গ) আল-‘আল্লামা ছুয়ূতী o রচিত আল-ইতক্বান।
এছাড়াও ছালাফদের রচিত আরো কিছু কিতাব থেকে সারাংশ উপস্থাপন করা হবে, إن شاء الله।
১) ক্বোরআনে কারীমের সর্বপ্রথম নাযিল হওয়া আয়াত কোনটি?
ছূরা ‘আলাক্বের প্রথম তিনটি আয়াতই হচ্ছে ক্বোরআনে কারীমের নাযিল হওয়া সর্বপ্রথম আয়াত। এ তিনটি আয়াত হলো-
اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ عَلَقٍ اِقۡرَاۡ وَ رَبُّکَ الۡاَکۡرَمُ
অর্থাৎ- পাঠ করুন আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাটবাঁধা রক্তপিন্ড হতে। পাঠ করুন, আর আপনার রাব বড়ই অনুগ্রহশীল।ছূরা ‘আলাক্ব- ১-৩
আর সর্বপ্রথম নাযিলকৃত পূর্ণাঙ্গ ছূরা হচ্ছে- ছূরা আল-মুদ্দাছ্ছির।
২) ক্বোরআনে কারীমের সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত কোনটি?
এই ব্যাপারে কিছুটা দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। যেমন- কারো মতে, ছূরা বাক্বারার ২৮১ নং আয়াতই হচ্ছে ক্বোরআনে কারীমের সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত। আয়াতটি হলো-
وَاتَّقُوۡا یَوۡمًا تُرۡجَعُوۡنَ فِیۡہِ اِلَی اللّٰہِ ٭ ثُمَّ تُوَفّٰی کُلُّ نَفۡسٍ مَّا کَسَبَتۡ وَ هُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ
অর্থাৎ- তোমরা সেদিনের ভয় কর, যেদিন তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণ প্রতিফল প্রদান করা হবে এবং তাদের প্রতি যুল্ম করা হবে না।
আবার কারো মতে, ছূরা মা-য়িদার ৩নং আয়াতই হচ্ছে ক্বোরআনে কারীমের সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত। আয়াতটি হলো- اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا
অর্থাৎ- আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নি‘মাত পূর্ণ করলাম এবং ইছলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।
তবে অধিকতর গ্রহণযোগ্য মত হলো- ছূরা বাক্বারার ২৮১ নং আয়াতই সর্বশেষ আয়াত। কারণ, এ আয়াতটি রাছূলুল্লাহ 1 এর ইন্তিক্বালের মাত্র নয় রাত আগে নাযিল হয়। আর ছূরা মা-য়িদার ৩নং আয়াতটি নাযিল হয় রাছূলুল্লাহ 1 এর ইন্তিক্বালের ৮১দিন আগে।
৩) আয়াত বলতে আমরা কি বুঝি?
স্বাভাবিকভাবে আমরা আয়াত বলতে বুঝি যে, এটি কতগুলো শব্দের সমষ্টি। যার একটি শুরু ও শেষ আছে। কিন্তু, আয়াত শব্দটি ক্বোরআনে কারীমে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-
ক) মু‘জিযাহ অর্থে আয়াত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
খ) চিহ্ন বা নিদর্শন অর্থে আয়াত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
গ) আশ্চর্যজনক বিষয় বুঝাতেও আয়াত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
ঘ) দালীল অর্থেও আয়াত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আবার, ক্বোরআনে কারীমের আয়াত বলতে শাব্দিকভাবে একত্রে এই প্রত্যেকটা অর্থকেই বুঝায়। ক্বোরআনে কারীমের আয়াত আল্লাহ 0 কর্তৃক নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট।
৪) ক্বোরআনে কারীমের মধ্যে কোন্ আয়াতের পরে কোন্ আয়াত আসবে, এটি কিভাবে নির্ধারিত হয়েছে?
এই বিষয়টি রাছূলুল্লাহ 1 কর্তৃক নির্ধারিত। এই ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামের কোনো হস্তক্ষেপ ছিলো না। কোন্ আয়াত কোন্ ছূরার অন্তর্ভুক্ত হবে, এটিও রাছূলুল্লাহ 1 কর্তৃক নির্ধারিত। আবার, কখনো কখনো জিবরীল 5 আল্লাহ 0 কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে রাছূলুল্লাহ্কে (1) বলে দিতেন যে, নাযিলকৃত আয়াতটি কোন ছূরার অন্তর্ভুক্ত হবে।
তাই, এরকম ভাবার কোনো অবকাশ নেই যে, ‘উছমান 3 সংকলন করার সময় তার নিজের মতো করে ক্বোরআনকে সাজিয়েছেন। কারণ, এই বিষয়টি শারীয়াহ কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত।
৫) ছূরাহ শব্দের শাব্দিক অর্থ কি?
ছূরাকে আমরা একটি মানযীলের সাথে তুলনা করতে পারি। ‘আলামাত বুঝাতেও ছূরা শব্দটি ব্যবহৃত হতে পারে। দেয়ালের ইটগুলোকেও ছূরাহ বলা হয়।
আভিধানিক অর্থে, ছূরাহ বলা হয় ক্বোরআনে কারীমের কিছু আয়াতের সমষ্টিকে। যে আয়াতগুলোর একটি শুরু ও শেষ আছে। ছূরাসমূহের তারতীব আয়াতের মতো নির্ধারিত হয়নি। তবে, এই ব্যাপারে মতভেদ বিদ্যমান। যেমন-
ক) জামহূরের মতে, এটি আল্লাহ 7 বা তাঁর রাছূল 1 কর্তৃক নির্ধারিত হয়নি। কোন্ ছূরার পরে কোন্ ছূরার অবস্থান হবে, এটি সাহাবায়ে কিরাম ইজতিহাদ করে নির্ধারণ করেছেন।
খ) আবার কারো মতে, আয়াতের মতো ছূরাগুলোর তারতীবও আল্লাহ 0 বা তাঁর রাছূল কর্তৃক নির্ধারিত।
গ) অনেকের মতে, কিছু ছূরার তারতীব রাছূলুল্লাহ 1 করে দিয়ে গেছেন। আর কিছু ছূরার তারতীব সাহাবায়ে কিরাম ইজতিহাদ করে নির্ধারণ করেছেন।
৬) ছূরাহ কত প্রকার ও কি কি?
ক্বোরআনে কারীমের ছূরাগুলো মোট চার প্রকার। যেমন-
ক) আত-ত্বিওয়ালঃ মোট ৭টি ছূরা এই প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। সেগুলো হলো- ছূরাহ আল-বাক্বারাহ, ছূরাহ আলি-‘ইমরান, ছূরাহ আন্নিছা, ছূরাহ আল-মায়িদাহ, ছূরা আল-আন‘আম, ছূরাহ আল-আ‘রাফ। সপ্তম ছূরাটির ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে, কারো মতে, ছূরাহ আল-আনফাল ও ছূরাহ তাওবাহ্র সমষ্টি। আবার কারো মতে, ছূরাহ ইউনূছ।
খ) আল- মি-ঊনঃ যে ছূরাগুলোর আয়াত সংখ্যা ১০০ বা ১০০ এর চেয়ে কিছু বেশি, সে ছূরাগুলোই এই প্রকারের অন্তর্ভুক্ত।
গ) আল-মাছানীঃ যে ছূরাগুলোর আয়াত সংখ্যা ১০০ এর কাছাকাছি তবে ১০০ নয়, সে ছূরাগুলোই এই প্রকারের অন্তর্ভুক্ত।
ঘ) আল-মুফাস্সালঃ ক্বোরআনে কারীমের শেষ ভাগের ছূরাগুলোকে মুফাস্সাল বলা হয়। ছূরাহ আল হুজুরাত বা ছূরাহ ক্বাফ থেকে ছূরা নাছ পর্যন্ত ছূরাগুলো এই প্রকারের অন্তর্ভুক্ত।
৭) মাক্কী ছূরাহ ও মাদানি ছূরাহ বলতে কি বুঝায়?
এই ব্যাপারে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। কারো মতে, যে ছূরাগুলো মাক্কায় নাযিল হয়েছে, সেগুলোকে মাক্কী ছূরাহ বলা হয়। আর যে ছূরাগুলো মাদীনায় নাযিল হয়েছে, সেগুলোকে মাদানী ছূরা বলা হয়। তবে, এই মতটি গ্রহণযোগ্য না। কারণ, মাক্কা বা মাদীনা ছাড়াও আরও অনেক জায়গায় ক্বোরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে। তাহলে আমরা সেই ছূরাগুলোকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করব?
আবার কারো মতে, মাক্কাবাসীকে সম্বোধিত আয়াতবিশিষ্ট ছূরাসমূহ মাক্কী ছূরা আর মাদীনাবাসীকে সম্বোধিত আয়াতবিশিষ্ট ছূরাসমূহ মা্দানী ছূরা। এর পরিপ্রেক্ষিতেই তারা বলেছেন, কোরআনের যে আয়াতগুলোতে یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ বলে সম্বোধন করা হয়েছে, সেই আয়াতগুলো হলো মাক্কী। কোরআনের যে আয়াতগুলোতে یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا বলে সম্বোধন করা হয়েছে, সেই আয়াতগুলো হলো মাদানী। তাদের এই মতটিও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, ক্বোরআনে আরো বিভিন্ন ধরনের সম্বোধনসূচক শব্দ রয়েছে। সেগুলোকে তাহলে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে?
প্রকৃত সংজ্ঞা হলো, যেসকল ছূরাহ হিজরাতের পূর্বে নাযিল হয়েছে সেগুলোকে মাক্কী ছূরাহ বলা হয়, আর যেসকল ছূরাহ হিজরাতের পরে নাযিল হয়েছে সেগুলোকে মাদানী ছূরাহ বলা হয়।
৮) মাক্কী বা মাদানী ছূরাহ চেনার উপায় কি?
মাক্কী ছূরাগুলোর বৈশিষ্ট্য-
ক) সাধারণতঃ یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ বলে সম্বোধন করা হয়েছে যে সকল ছূরায়, সেই ছূরাগুলো হলো মাক্কী।
খ) کَلَّاۤ শব্দ রয়েছে যেসকল ছূরায়, সেই ছূরাগুলো মাক্কী।
গ) ছাজদার আয়াতযুক্ত ছূরাগুলো মাক্কী।
ঘ) যে ছূরাগুলোর শুরুতে হারফুত-তাহাজ্জী (যেমন- عسق- طسم-حم- الم রয়েছে, সেই ছূরাগুলো মাক্কী, তবে ছূরাহ আল-বাক্বারাহ এবং ছূরা আলি-‘ইমরান এর ব্যতিক্রম।
ঙ) যে ছূরাগুলোতে আদম 5 ও ইবলীছের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, সেই ছূরাগুলো মাক্কী, তবে ছূরাহ আল-বাক্বারাহ এর ব্যতিক্রম।
চ) মুফাস্সাল শ্রেণীর ছূরাগুলো মাক্কী।
মাদানী ছূরা সমূহের বৈশিষ্ঠ্য-
ক) یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا বলে সম্বোধন করা হয়েছে যে ছূরাসমূহে, সেই ছূরাগুলো হলো মাদানী, ছূরা আল-হাজ্জ এর ব্যতিক্রম।
খ) যে ছূরাসমূহে আল্লাহ্র (سبحانه وتعالى) আদেশ-নিষেধ, হালাল-হারামের বিষয় বিবৃত হয়েছে, সে ছূরাগুলো হলো মাদানী।
গ) যেসকল ছূরায় জিহাদ সম্পর্কিত বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে, সেই ছূরাগুলো হলো মাদানী।
ঘ) যেসকল ছূরায় মুনাফিক্ব সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে, সেই ছূরাগুলো হলো মাদানী, ছূরা আল-‘আনকাবূত ব্যতীত।
৯) মাক্কী ও মাদানীর উপর ভিত্তি করে এগুলোকে আবার চার ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
ক) সম্পূর্ণ ছূরাটি মাক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
খ) সম্পূর্ণ ছূরাটি মাদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে।
গ) ছূরার কিছু অংশ মাদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে।
ঘ) ছূরার কিছু অংশ মাক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হয়:-
১) যদি মৌলিক বিষয়গুলো রাছূলুল্লাহ্র (1) ইন্তিক্বালের ৮১ দিন আগেই নাযিল হয়ে থাকে, তাহলে রাছূলুল্লাহ (1) ইন্তিক্বালের মাত্র কয়েকদিন আগে- তাঁর ক্বাব্রকে ‘ঈদ না বানানোর জন্য যে নিষেধ করে গেলেন, এ বিষয়টিকে আমরা কিভাবে ব্যাখ্যা করব?