ক্বোরআনের তাফছীর (৬ষ্ঠ পর্ব)

এটি উছতায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c প্রদত্ত একটি ধারাবাহিক অডিও বক্তব্য। উক্ত ধারাবাহিক বক্তব্যে উছতায পবিত্র ক্বোরআনের ছূরা সমূহের তাফছীর প্রদান করবেন, إن شاء الله। বক্তব্যের এই পর্বে উছতায তাফছীরের নিয়ম-নীতি ও ‘উলূমুল ক্বোরআন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।

নিম্নোক্ত বইসমূহ উৎস হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে-

ক) আল ‘আল্লামা ‘আব্দুল্লাহ আছ্‌ ছা‘দী o রচিত এবং শাইখ সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন o কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত আত-তা‘লীক্ব ‘আলাল ক্বাওা‘য়ীদ আল-হিছান।
খ) আল ‘আল্লামা মুহাম্মাদ ‘আলী আস্‌ সাবূনী o রচিত আত্‌ তিবয়ান ফী ‘ঊলূমিল ক্বোরআন।
গ) আল-‘আল্লামা ছুয়ূতী o রচিত আল-ইতক্বান।
এছাড়াও ছালাফদের রচিত আরো কিছু বই থেকে সারাংশ উপস্থাপন করা হবে, إن شاء الله।

১) সাহাবায়ে কিরামের (g) মধ্যে মুফাছ্‌ছিরে ক্বোরআন হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ ছিলেন ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাছ h । তিনি কিবারুস্‌ সাহাবাদের মধ্যে থেকে ছিলেন না, তারপরেও তিনি মুফাছ্‌ছিরে ক্বোরআন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি বয়সেও অনেক ছোট ছিলেন। হিজরাতের তিন বছর পূর্বে তার জন্ম হয়। রাছূলুল্লাহ 1 এর ইন্তিক্বালের সময় তার বয়স ছিল ১৩ বছর, অন্য বর্ণনামতে ১৫ বছর। তিনি ৭০ বছর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ‘আব্বাছ 3 ও তাঁর দাদার নাম ‘আব্দুল মুত্ত্বালিব। তার মায়ের নাম ছিল লুবাবা আল কুবরা বিনতুল হারিছ। তিনি সম্পর্কের দিক থেকে রাছূলুল্লাহ 1 এর চাচাতো ভাই। তার খালা মায়মূনা f ছিলেন রাছূলুল্লাহ 1 এর স্ত্রী। একারণেই তিনি ছেলেবেলা এবং শৈশবে রাছূলুল্লাহ 1এর অধিক সাহচর্য লাভ করেছিলেন। তাকে মুছলিম উম্মাহের মধ্যে অন্যতম বিজ্ঞ লোক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তাকে ‘ইলমের সাগরও বলা হতো।
২) ‘উমার 3 এর উক্তি থেকে ইবনু ‘আব্বাছ 3 এর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। তার সম্পর্কে ‘উমার 3 বলেন- এই ছেলেটি অত্যন্ত ভদ্র এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি আল্লাহ 0 এর কিতাব সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন।
‘উমার 3 এর কাছে যখনই কোনো জটিল মাছআলা আসত, তখনই তিনি ইবনু ‘আব্বাছকে (h) ডেকে পাঠাতেন। এবং বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কিবারুস্‌ সাহাবাদের (g) সাথে তাকে বসাতেন। ইবনু ‘আব্বাছ h এর জ্ঞানের পরিচয় দিতে গিয়ে ইবনু মাছ‘উদ 3 বলেছেন- ক্বোরআনের খুব উত্তম একজন মুখপাত্র হলেন ইবনু আব্বাছ h
৩) ‘ইলমে দ্বীন অর্জনের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি অন্তরায় হচ্ছে- কিবারদের ছেড়ে সিগারদের থেকে ‘ইলমে দ্বীন অর্জন করা। এটা জানা থাকা সত্ত্বেও কেন কিবারুত তাবি‘ঈন- কিবারুস্‌ সাহাবাদের বাদ দিয়ে ইবনু ‘আব্বাছ h থেকে জ্ঞান নিয়েছিলেন?
‘উলামাদের এই অভিমতটা হচ্ছে সাধারণ অভিমত। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু ব্যতিক্রম থাকে। ইবনু ‘আব্বাছ h ঐ ব্যতিক্রমদেরই একজন।
ইবনু ‘আব্বাছ h কেন ব্যতিক্রম বলে গণ্য হলেন?
এর প্রধান কারণ হলো- তিনি অন্য দশজন সিগারদের মতো ছিলেন না। কারণ, তার জন্য স্বয়ং রাছূলুল্লাহ 1 দু‘আ করেছিলেন- হে আল্লাহ, আপনি তাকে ক্বোরআন ও ছুন্নাহ শিক্ষা দিন। অন্য আরেকটি বর্ণনা মতে, রাছূলুল্লাহ 1 এর করা দু‘আটি ছিল এরকম- হে আল্লাহ, আপনি তাকে দ্বীনের ফিক্বহ ও তাফছীরের জ্ঞান দান করুন। আর এ কারণেই ইবনু ‘আব্বাছ h ছিলেন ব্যতিক্রম।
দ্বিতীয় কারণ হলো- তার ছেলেবেলা এবং শৈশব রাছূলুল্লাহ 1 এর ঘরেই কেটেছে। এই কারণেই সমসাময়িক অন্য সবার থেকে তার জ্ঞানের পরিপক্বতা ছিল বেশি।
তৃতীয় কারণ হলো- ইবনু ‘আব্বাছ h খুব বেশি কিবারুস্‌ সাহাবাদের সংস্পর্শে ছিলেন। একারণে তাদের থেকে তিনি ‘ইল্‌ম অর্জনের সুযোগ লাভ করতে পেরেছিলেন।
চতুর্থ কারণ হলো- ‘আরাবী ভাষা ও সাহিত্যের উপর তার অগাধ জ্ঞান ছিল। তাই ক্বোরআনের কোন শব্দ কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, তা তিনি সহজেই বুঝতে পারতেন।
৪) ক্বোরআনে কারীমের আয়াতগুলো নাযিলের দিক থেকে ২ প্রকার। যেমন-

ক) যেসব আয়াত নাযিলের পিছনে বিশেষ কোনো কারণ নেই। এরকম আয়াতের সংখ্যাই ক্বোরআনে কারীমে বেশি। সাধারণতঃ এসকল আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ হুক্‌ম-আহ্‌কাম নাযিল করেছেন।
খ) দ্বিতীয় প্রকার হলো- সেইসব আয়াত, যেগুলো নাযিলের পিছনে বিশেষ কোনো প্রেক্ষাপট বা কারণ রয়েছে। নাযিলের এই প্রেক্ষাপটটাকেই বলা হয় শানে নুযূল।

৫) ছাবাবে নুযূল জানার মধ্যে কি ফায়দা রয়েছে?
ছাবাবে নুযূল জানার মাধ্যমে আমরা অনেকগুলো ফায়দা অর্জন করতে পারি। যেমন-

ক) নাযিলের পিছনে আল্লাহ 0 এর হিকমাহ সম্পর্কে জানা যায়।
খ) কোনো বিষয়ের কারণ সম্পর্কে যদি জানা যায়, তবে তার কার্য সম্পর্কেও জানা যাবে।
গ) শানে নুযূল সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে আয়াতটিকে সহজেই বুঝতে পারা যায়। এবং ভুল-ভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকা যায়।

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close