ড. আশ্‌ শাইখ সালিহ্‌ আল ফাওযান কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত ইমাম আল বারবাহারী রচিত “শারহুছ্ ছুন্নাহ (ছুন্নাতের ব্যাখ্যা)” (৫১তম পর্ব)

এটি মুহ্তারাম আশ্শাইখ সালিহ্ আলফাওযান (c) কর্তৃক আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের প্রখ্যাত ইমাম- ইমাম আল বারবাহারী (o) এর অনবদ্য গ্রন্থ “শারহুছ্ ছুন্নাহ” এর অতি চমৎকার ও মূল্যবান ব্যাখ্যাগ্রন্থের অডিও ভাষান্তর। বাংলা ভাষায় গ্রন্থটি ধারাবাহিকভাবে অডিও ভাষান্তর করছেন উছতায আবূ ছা`আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c। অদ্যকার আলোচনায় উছতায- জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন সম্পর্কে মূল্যবান আলোচনা করেছেন। এছাড়াও তাতে নিম্নোক্ত বিষয়াদী সম্পর্কে অত্যন্ত চমৎকার আলোচনা করা হয়েছে:-
১) ইমাম বারবাহারী (o) বলেছেন- জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য। জান্নাতের অবস্থান হচ্ছে সপ্ত আকাশের উপরে। জান্নাতের ছাদ হচ্ছে আল্লাহ্‌র (0) ‘আর্‌শ। আর জাহান্নামের অবস্থান হচ্ছে সপ্ত যমীনের নিচে, আর এর উভয়টি হলো মহান আল্লাহ্‌র (8) সৃষ্টি। জান্নাতে কারা প্রবেশ করবে এবং কতজন প্রবেশ করবে- এই জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ 8 । আবার জাহান্নামে কারা প্রবেশ করবে এবং কতজন প্রবেশ করবে- এই জ্ঞানও একমাত্র আল্লাহ্‌রই রয়েছে। জান্নাত ও জাহান্নাম কখনোই নিঃশেষ বা ধ্বংস হবে না। আদাম 5 এই জান্নাতেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু আল্লাহ্‌র (7) নির্দেশের ব্যত্যয় হওয়ার কারণে তাকে সেখান থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়। এর ব্যাখ্যায় শাইখ সালিহ্ আলফাওযান c বলেন- ঈমানের অন্যতম রুক্‌ন হচ্ছে পরকালের প্রতি বিশ্বাস। এই পরকালেরই একটি অংশ হচ্ছে জান্নাত ও জাহান্নাম। মুত্তাক্বীনরা তাদের কর্মের প্রতিদান স্বরূপ জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর কাফিররা তাদের কৃতকর্মের জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ জান্নাত বা জাহান্নাম হচ্ছে কর্মের প্রতিফলে প্রাপ্ত ঘর।
২) আল্লাহ 0 জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করে রেখেছেন। এগুলো বিদ্যমান আছে ও থাকবে। তাই যে ব্যক্তি জান্নাত ও জাহান্নামে বিশ্বাস করবে না, বা এর অপব্যাখ্যা করবে, সে কাফির বলে গণ্য হবে। জান্নাতের প্রসঙ্গে ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন- اُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِیۡنَ অর্থাৎ- মুত্তাক্বীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।ছূরা আ-লি-‘ইমরান- ১৩৩
আবার জাহান্নামের প্রসঙ্গে ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- اُعِدَّتۡ لِلۡکٰفِرِیۡنَ অর্থাৎ- প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য।ছূরা আল বাক্বারাহ- ২৪
উপরোক্ত আয়াতদ্বয় থেকে একথাটি স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়টিই প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উছতায হাদীছ থেকেও এবিষয়ে কিছু দালীল পেশ করেছেন।
৩) জান্নাত ও জাহান্নাম কখনোই নিঃশেষ বা ধ্বংস হবে না। অর্থাৎ এগুলো চিরস্থায়ী। তবে আল্লাহ্‌র চিরন্তন হওয়া আর জান্নাত ও জাহান্নামের চিরন্তন হওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আল্লাহ্‌র চিরস্থায়ী হওয়াটা তাঁর একটি গুণ। আর জান্নাত ও জাহান্নামের চিরস্থায়ী হওয়াটা আল্লাহ্‌রই ইচ্ছার অন্তর্ভুক্ত। তার ইচ্ছা হয়েছে, তাই তিনি এগুলোকে চিরন্তন রাখবেন। জান্নাত ও জাহান্নামের চিরস্থায়ী হওয়ার বিষয়টিকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ কি?
কারণ হলো, ক্বাদরিয়্যাহ ও মু‘তাযিলী সম্প্রদায় এই কথাটিকে অস্বীকার করে। তাদের মতে, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ 8 এগুলোকে সৃষ্টি করবেন। এক্ষেত্রে তারা যুক্তি ও ক্বিয়াছের আশ্রয় নেয়।
উছতায তাদের প্রত্যেকটি যুক্তি ও ক্বিয়াছকে উপযুক্ত দলীল দ্বারা খন্ডন করেছেন।
৪) জাহমিয়্যাহ ও বাত্বিনী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস হলো- জান্নাত বা জাহান্নাম বলতে আসলে কিছু নেই। তারা বলে যে, “জান্নাত বলতে এখানে শান্তি বা নি‘মাতকে বুঝানো হয়েছে। আর জাহান্নাম বলতে এখানে দুঃখ-কষ্টকে বুঝানো হয়েছে”।
তাদের এই দাবিও সম্পূর্ণ বাত্বিল ও প্রত্যাথ্যাত। মূলতঃ তারা সত্য থেকে দূরে রয়েছে।


১. ছূরা আ-লি-‘ইমরান- ১৩৩ 
২. ছূরা আল বাক্বারাহ- ২৪ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close