এটি মুহ্তারাম আশ্শাইখ সালিহ্ আলফাওযান (c) কর্তৃক আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের প্রখ্যাত ইমাম- ইমাম আল বারবাহারী (o) এর অনবদ্য গ্রন্থ “শারহুছ্ ছুন্নাহ” এর অতি চমৎকার ও মূল্যবান ব্যাখ্যাগ্রন্থের অডিও ভাষান্তর। বাংলা ভাষায় গ্রন্থটি ধারাবাহিকভাবে অডিও ভাষান্তর করছেন উছতায আবূ ছা`আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c)। অদ্যকার আলোচনায় উছতায- মৃতরা জীবিতদের কথা শুনতে পায় কি-না সে সম্পর্কে এবং মৃত্যুর পর রূহের কিছু অবস্থা সম্পর্কে মূল্যবান আলোচনা করেছেন। এছাড়াও তাতে নিম্নোক্ত বিষয়াদী সম্পর্কে অত্যন্ত চমৎকার আলোচনা করা হয়েছে:-
১) মৃতরা জীবিতদের কথা শুনতে পায় কি-না? এই পর্বে এ বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে দলীলসহ আলোচনা করা হয়েছে।
বদরের যুদ্ধে নিহত মুশরিকদেরকে একটি কুয়াতে ফেলে দেয়া হয়। তিন দিন রাছূলুল্লাহ 1 উক্ত কুয়ার নিকট গিয়ে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন- তোমরা কি আল্লাহ্র দেওয়া ওয়া‘দাকে সত্য পেয়েছ? তখন ‘উমার 3 রাছূলুল্লাহ্কে (1) বললেন- হে আল্লাহ্র রাছূল (1)! তারা তো মরে পচে গেছে, তাহলে তারা কি করে শুনবে?
রাছূলুল্লাহ 1 বললেন, তারা তোমাদের চেয়েও বেশি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। মৃতরা জীবিতদের কথা শুনতে পায় কি পায় না? এই ব্যাপারে দুইটি অভিমত রয়েছে, তবে উভয় পক্ষই উপরোক্ত এই হাদীছকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
এক পক্ষের মতে, যেহেতু রাছূলুল্লাহ 1 স্বয়ং বলেছেন যে, মৃতরা শুনতে পায়, তবে তাদের জবাব দেয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। তাই মৃতরা যে শুনতে পায় এই ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
তবে জমহুরের মতে, মৃতরা জীবিতদের কথা শুনতে পায় না। কারন, প্রথমতঃ ক্বোরআনে কারীমের দু’টি আয়াত দ্বারা প্রমাণ হয় যে, ক্বাবারবাসীরা শুনতে পায় না।
দ্বিতীয়তঃ উপরোক্ত হাদীছে বর্ণিত, বদরের যুদ্ধে নিহত মুশরিকদের রাছূলুল্লাহ 1 এর কথা শুনার ব্যাপারটি ছিল একটি বিশেষ ঘটনা। আল্লাহ 0 বিশেষভাবে ঐ মূহুর্তে রাছূলুল্লাহ 1 এর কথাগুলো তাদেরকে শুনিয়েছিলেন।
তৃতীয়তঃ সাহাবীরাও জানতেন যে, মৃতরা জীবিতদের কথা শুনতে পায় না। তাইতো ‘উমার 3 রাছূলুল্লাহ্কে (1) উক্ত প্রশ্নটি করেছিলেন।
২) জীবিতরা যখন মৃতদের ক্বাবার যিয়ারাত করতে যান, তখন মৃতরা তাদেরকে চিনতে পারেন কি? তাদের ছালামের জবাব কি দিতে পারেন? এই ব্যাপারেও দুইটি অভিমত রয়েছে। কিতাবুর রূহের বর্ণনা মোতাবিক্ব, ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ ও ইমাম ইবনুল ক্বায়্যিম o এর মতে, মৃতরা জীবিতদেরকে চিনতে পারেন এবং তাদের ছালামের জবাব দিতে পারেন। তবে অধিকাংশ ‘উলামায়ে আহলুছ্ ছুন্নাহ্র মত এর বিপরীত। কারণ, ভিজিটর হওয়ার জন্য চিনতে পারা জরুরী নয়। ঠিক যেমন- হাজ্জের সময় কা‘বা হাজিদেরকে চিনতে না পারলেও হাজিদেরকে ঠিকই কা‘বার ভিজিটর বলা হয়। তেমনিভাবে, তাশাহহুদে আমরা রাছূলুল্লাহ-কে (1) ছালাম দিলে তিনি তাৎক্ষণিক শুনতেও পারেননা এবং জবাবও দেননা। তবুও আমরা তাকে ছালাম দেই।
৩) মাইয়্যেতের রূহ কবজ করার পর, সেই রুহকে আসমানে নিয়ে যাওয়ার সময় তার সাথে অন্যান্য মাইয়্যেতের রূহ এর সাক্ষাত হয়। বিশেষ করে তার নিকটাত্মীয় ও পরিচিতদের সাথে সাক্ষাত হয়। তখন সেসব মাইয়্যিতরা সদ্য মৃত মাইয়্যিতের নিকট পৃথিবীতে অবস্থানরত তাদের পরিচিতদের সম্পর্কে জানতে চান।
৪) ক্বাব্রের কাছে গিয়ে যিয়ারাহ করা উত্তম নাকি দূর থেকে? কাব্রের কাছে গিয়ে যিয়ারাহ করা উত্তম।
৫) জীবিতদের নেক ‘আমাল সম্পর্কে তার মৃত নিকটাত্মীয়রা কি অবগত হন? জীবিতদের নেক ‘আমাল জুমু‘আর দিন তার মৃত অভিভাবকের কাছে পেশ করা হয়। রাছূলুল্লাহ্কেও (1) তাঁর জীবিত উম্মাতের নেক ‘আমাল সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-
১) মৃতরা যে জীবিতদের কথা শুনতে পায়না, একথা কি নাবীগণের (5) ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ?
২) ক্বাব্রের দিকে মুখ করে দু‘আ করতে হবে, নাকি অন্য দিকে ?
৩) জীবিতরা মৃতের জন্য কান্না করলে এতে মৃত ব্যক্তির কষ্ট হয়। এর দ্বারা কি বোঝায়?
৪) ঈমান বৃদ্ধি করার উপায় সমুহ কি কি?