এটি মুহ্তারাম আশ্শাইখ সালিহ্ আলফাওযান c কর্তৃক আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের প্রখ্যাত ইমাম- ইমাম আল বারবাহারী o এর অনবদ্য গ্রন্থ “শারহুছ্ ছুন্নাহ” এর অতি চমৎকার ও মূল্যবান ব্যাখ্যাগ্রন্থের অডিও ভাষান্তর। এতে ইছলামের মৌলিক বিষয়াদী, সঠিক ইছলামী ‘আক্বীদাহ ও মানহাজ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলা ভাষায় গ্রন্থটি ধারাবাহিকভাবে অডিও ভাষান্তর করছেন উছতায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c। এই পর্বে নিম্নোক্ত বিষয়াদী সম্পর্কে অত্যন্ত চমৎকার আলোচনা করা হয়েছে:-
১) পূর্ববর্তী ক্লাসের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আলোচনা। ইমাম বারবাহারী o বলেছেন- আল্লাহ্র (7) সর্বোচ্চ হওয়ার ব্যাপারে কেউ এই প্রশ্ন তুলে না যে, আল্লাহ 0 কিভাবে সর্বোচ্চ বা কেন সর্বোচ্চ। এ বিষয়ে কেবল ঐ ব্যক্তিই প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে, যে আল্লাহ্র (7) সর্বোচ্চ ও সুমহান হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে থাকে।
২) ইমাম বারবাহারীর (o) এই কথার ব্যাখ্যায় শাইখ সালিহ্ আল ফাওযান c বলেছেন- “আল্লাহ কেমন” এ প্রশ্ন করা যাবে না। এমনিভাবে “কেন তিনি এরকম বলেছেন” একথাও জিজ্ঞেস করা যাবে না। প্রত্যেকের কাজ হলো কেবল আল্লাহ্র (0) নিকট আত্মসমর্পণ করা। কারণ এ প্রশ্নগুলোর উত্তর একমাত্র আল্লাহ 7 ব্যতীত কেউ জানে না।
৩) ইমাম বারবাহারী o বলেছেন- ক্বোরআন হলো আল্লাহ্র (8) বাণী, তাঁর ওহী এবং তাঁর নূর বা আলো। ক্বোরআন সৃষ্ট কিছু নয়। এটি আল্লাহ্র (0) পক্ষ হতে নাযিলকৃত। আর যা কিছু আল্লাহ্র (7) সুমহান সত্তার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে তা কখনো সৃষ্ট হতে পারে না। মালিক ইবনু আনাছ এবং আহ্মাদ ইবনু হাম্বাল সহ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ‘উলামা ও ফুক্বাহায়ে কিরাম এরূপই বলেছেন। আর এ বিষয়ে কোনরূপ আপত্তি বা ভিন্নমত পোষণ করা হলো কুফ্র।
৪) ইমাম বারবাহারীর (o) উপরোক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে শাইখ ফাওযান c বলেছেন- আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাস হলো- ক্বোরআন আল্লাহ্র (0) বাণী এবং বাস্তবিকই তিনি ক্বোরআনে বর্ণিত কথাগুলো বলেছেন, জিবরাঈল 5 আল্লাহ্র (7) এই কথাগুলো শুনেছেন এবং তিনি এই কথাগুলো বহন করে মুহাম্মাদ 1 এর নিকট অবতরণ করেছেন। রাছূলুল্লাহ 1 এর ছুন্নাহ অনুসরণকারী কোন আহলে ‘ইল্ম এই ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাসের সাথে দ্বিমত পোষণ করেননি। জাহম ইবনু সাফওয়ানের অনুসারী প্রধানতঃ জাহমিয়াহ সম্প্রদায় এবং তাদের পরবর্তী অনুসারী মু‘তাযিলাহ, যায়দিয়্যাহ ও শী‘আহ সম্প্রদায় হলো উপরোক্ত ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাসের সাথে দ্বিমত পোষণকারী একমাত্র পথভ্রষ্ট দল।
তাদের মতোই আরেকটি পথভ্রষ্ট দল হলো ইবাযিয়্যাহ সম্প্রদায়। এরা প্রত্যেকেই উপরোক্ত বিষয়ে আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বিপরীত পথ অনুসরণ করে চলে। এদের দাবি- ক্বোরআন হলো সৃষ্ট বস্তু। তাদের দৃষ্টিতে আল্লাহকে কথোপকথনকারী, শ্রবণকারী, দর্শনকারী, পরিজ্ঞাত, ইচ্ছাপোষণকারী ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত করা যাবে না। এমনিভাবে তাদের দৃষ্টিতে আল্লাহ্র (8) চেহারা আছে, দুটি হাত আছে ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত করা যাবে না। আর এসব দাবির পেছনে তাদের উদ্দেশ্য হলো- মুছলমানদের সঠিক ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাসকে বিনষ্ট করে দেয়া। যদিও বাহ্যিকভাবে তারা বুঝাতে চায় যে, এরূপ দাবির দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টির গুণাবলির সাথে আল্লাহ্র গুণাবলির কোনরূপ সাদৃশ্য নির্ধারণ থেকে আল্লাহ্কে মুক্ত ও পবিত্র রাখা। প্রকৃতপক্ষে এটি হলো তাদের একটি মিথ্যা দাবি। কেননা আল্লাহ্র গুণাবলি হলো আল্লাহ্র সত্তার ন্যায় সর্বদিক থেকে পরিপূর্ণ ও সর্বোত্তম, সৃষ্ট বস্তুর সাথে যার কোন সাদৃশ্য হতে পারে না। মোটকথা, মহান সৃষ্টিকর্তা; আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলী হলো তাঁর সুমহান সত্তার উপযোগী। আর সৃষ্টির গুণাবলী হলো তাদের উপযোগী। তাই সৃষ্টির গুণাবলির সাথে মহান স্রষ্টার গুণাবলির সাদৃশ্য কখনো হতে পারে না এবং তা কল্পনাও করা যায় না।
৫) উছতায উপরোক্ত বিষয়ে ক্বোরআন ও ছুন্নাহ থেকে অনেকগুলো প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।
ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:
ক) যুক্তরাষ্ট্রে ইউছুফ ইস্টেইস নামে তথাকথিত এক দা‘য়ী দাবি করেন যে, মুসহাফ যেটি আমাদের হাতে থাকে সেটি অবশ্যই ক্বোরআন নয়।
তিনি তার এ কথার ব্যাখ্যায় আরো বলেন যে, মুসহাফে লিখিত শব্দগুলো কেবল ক্বোরআনের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে, যদিও এগুলো প্রকৃত অর্থে ক্বোরআন নয়। তিনি তার এ ধারণার ব্যাখ্যায় আরো বলেন-
১) যখন ক্বোরআনের তিলাওয়াত শেষ হয় তখন ক্বোরআন চলে যায়।
২) ক্বোরআন মুসহাফ নয়।
৩) ক্বোরআন কোন গ্রন্থ নয়।
৪) ক্বোরআন (যেটি আমাদের হাতে রয়েছে) হলো একটি নোটের মতো।
৫) ক্বোরআন (যেটি আমাদের হাতে রয়েছে) হলো ক্যাথলিকদের মিউজিক শীটের মতো।
খ) السلام عليكم ورحمة الله وبركاته। আল্লাহ 7 উত্তম জাযা দিন উছতাযকে এবং তাকে এরূপ উত্তম ও উপকারী কথাবার্তা দ্বারা আরো বেশি দ্বীনকে সাহায্য করার তাওফীক্ব দিন।
আমার প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশের তথাকথিত সেইসব দা‘য়ী যারা “আল্লাহ্র বাণী”, ‘আরশের উপর আল্লাহ্র অবস্থান ইত্যাদি বিষয়কে বেশি প্রাধান্য বা গুরুত্ব দেন না, তাদের ব্যাপারে আমাদের পরিচিতদেরকে আমাদের কিভাবে সতর্ক করা উচিত?
গ) আছমান ও জান্নাতের মধ্যে পার্থক্য কি? আল্লাহ যে শেষ রাতে দুন্ইয়ার আকাশে নেমে আসেন, এর ব্যাখ্যা কি? তিনি নেমে আসলে কি সৃষ্টির মধ্যে চলে আসেন না-কি সৃষ্টির ঊর্ধ্বে থাকেন?