“লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” এই শাহাদাহ তথা সাক্ষ্য প্রদানের অর্থ ও তাৎপর্য কি?

“لا إله إلا الله” (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ) এই বাক্যটির প্রকৃত ও যথার্থ অর্থ হলো:-

لا إله حق إلا الله / لا معبود بحق إلا الله

অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য বা সত্যিকার মা‘বূদ নেই।

আল্লাহ 0 ব্যতীত অন্য যা কিছুর উপাসনা করা হয়, তা তিনি কোন নাবী হোন বা অলী হোন, অথবা অন্য যে কোন মানব সন্তান হোন কিংবা ফিরিশতা বা জিন অথবা অন্য যা কিছুই হোক না কেন, সে সবই হলো বাত্বিল উপাস্য।

সত্যিকারের মা‘বূদ হলেন একমাত্র আল্লাহ 0

“لا إله إلا الله” (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ) এই মহান কালিমাহ্‌টি আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো সত্যিকার বা সত্য মা‘বূদ (উপাস্য) হওয়ার বিষয়টিকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে। এই কালিমাহ্‌টি গায়রুল্লাহ্‌র (আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো) ‘ইবাদাতকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল ঘোষণা করে এবং একই সাথে একমাত্র আল্লাহকে (b) সত্যিকার ও প্রকৃত মা‘বূদ বলে ঘোষণা ও স্বীকৃতি প্রদান করে। এই মহান কালিমাহ আল্লাহকে (0) ‘ইবাদাতের একক অধিকারী ও হক্বদার বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রদান করে।

এ সম্পর্কে ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ.سورة الحج- ٦٢

অর্থাৎ- এটা এ জন্য যে, আল্লাহ্‌ই সত্য এবং তাঁর পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে তা অসত্য।ছূরা আল হাজ্জ- ৬২

তাই “আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মা‘বূদ নেই” (لا إله إلا الله) এই ঘোষণা ও সাক্ষ্যের তাৎপর্য এবং এর অপরিহার্য দাবি হলো:-

প্রথমতঃ- মনে-প্রাণে (‘আক্বীদাহ-বিশ্বাসে) এবং কথা ও কাজে একমাত্র আল্লাহ 0 ব্যতীত অন্য সকল উপাস্যকে অস্বীকার ও বর্জন করা, সেগুলোর উপাসনা ও উপাসনাকারীদেরকে প্রত্যাখ্যান করা এবং তাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও দূরে থাকা।

এ কথার প্রমাণ হলো আল্লাহ্‌র (0) এ বাণী:-

قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ.سورة الممتحنة- ٤

অর্থাৎ- তোমাদের জন্যে ইবরাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে যার ‘ইবাদাত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই, আমরা তোমাদের মানিনা। তোমরা এক আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করা পর্যন্ত তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে।ছূরা আল মুমতাহিনা-৪

দ্বিতীয়তঃ- সার্বিকভাবে ‘ইবাদাতকে একমাত্র রাব্বুল ‘আলামীন আল্লাহ্‌র জন্যে খাঁটি ও খালিস করা। অর্থাৎ খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে এক আল্লাহ্‌র ‘ইবাদাত করা। এটাই হলো কালিমায়ে ত্বায়্যিবাহ (তাওহীদের বাক্য) “লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” এর হাক্বীক্বাত বা প্রকৃত তাৎপর্য।

এ সম্পর্কে ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-

وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ.سورة الإسراء- ٢٣

অর্থাৎ- তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তোমরা একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারও ‘ইবাদাত করো না।ছূরা আল ইছরা- ২৩

অন্য আয়াতে আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-

وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ.سورة المؤمنون-١١٧

অর্থাৎ- যে কেউ আল্লাহ্‌র সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, তার কাছে যার কোন দালীল-প্রমাণ নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফিররা সফলকাম হবে না।ছূরা আল মু’মিনূন- ১১৭

তাই শুধুমাত্র মুখে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হ” বললেই মুছলমান হওয়া যাবে না। মুছলমান হতে হলে মুখে এই কালিমাহ স্বীকার করার সাথে সাথে মনে-প্রাণে ও কাজে-কর্মে একমাত্র আল্লাহ 0 ব্যতীত অন্য সকল উপাস্যকে অস্বীকার ও বর্জন করতে হবে এবং এসব বাত্বিল উপাস্যের উপাসনা থেকে এবং যারা এগুলোর উপাসনা করে তাদের থেকেও সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও দূরে থাকতে হবে। সাথে সাথে সার্বিকভাবে ‘ইবাদাতকে শুধুমাত্র রাব্বুল ‘আলামীন আল্লাহ্‌র জন্যে খাঁটি ও বিশুদ্ধ করতে হবে, তথা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে এক আল্লাহ্‌র ‘ইবাদাত করতে হবে।


১. سورة الحج- ٦٢ 
২. ছূরা আল হাজ্জ- ৬২ 
৩. سورة الممتحنة- ٤ 
৪. ছূরা আল মুমতাহিনা-৪ 
৫. سورة الإسراء- ٢٣ 
৬. ছূরা আল ইছরা- ২৩ 
৭. سورة المؤمنون-١١٧ 
৮. ছূরা আল মু’মিনূন- ১১৭ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close