সৃষ্টির সূচনালগ্নে মানুষের ধর্ম কি ছিল?

সৃষ্টির শুরুতে মানুষের মধ্যে শির্‌কের (অংশীবাদের) প্রচলন বা শির্‌কী চিন্তা-ভাবনা ছিল না বরং তখন সর্বক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে তাওহীদের (আল্লাহ্‌র একত্ববাদের) প্রচলন এবং তাওহীদী চিন্তা-ভাবনা ও মতধারা বিরাজমান ছিল। যেমন আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-

فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ.سورة الروم- ٣٠

অর্থাৎ- আপনি নিজেকে দ্বীনের উপর একনিষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করুন। এটাই আল্লাহ্‌র সেই প্রকৃতি যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্‌র সৃষ্টি-কর্মের কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল সঠিক ধর্ম, কিন্তু অধিকাংশ লোকেরা তা জানে না।ছূরা আর রুম- ৩০

ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ b আরো ইরশাদ করেছেন:-

وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ.سورة الأعراف- ١٧٢

অর্থাৎ- আর স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা, যখন আপনার প্রতিপালক বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের উপর এই মর্মে সাক্ষী বানালেন যে, “আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই? তারা সকলেই বললো হ্যাঁ, আপনি আমাদের পালনকর্তা”। আমি তোমাদের এ স্বীকারোক্তির উপর সাক্ষ্য হলাম যাতে ক্বিয়ামাতের দিন তোমরা একথা বলতে না পার যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।ছূরা আল আ‘রাফ- ১৭২

হাদীছে ক্বোদছীতে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-

إِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ، وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ، وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ، وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا.رواه مسلم

অর্থাৎ- আমি আমার বান্দাহ্‌দের সকলকেই তাওহীদে একনিষ্ঠ বিশ্বাসী করেই সৃষ্টি করেছি। শাইত্বান এসে অতঃপর তাদেরকে তাদের ধর্ম থেকে বিচ্যুত করেছে। আমি তাদের জন্য যা হালাল করেছিলাম সে তাদের জন্য তা হারাম করেছে, আমি শিরকের ব্যাপারে কোন দালীল অবতীর্ণ করিনি অথচ শাইত্বান তাদেরকে আমার সাথে শির্‌ক করার নির্দেশ দিয়েছে।সাহীহ্‌ মুছলিম

এ সম্পর্কে রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:-

كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ، أَوْ يُنَصِّرَانِهِ، أَوْ يُمَجِّسَانِهِ.رواه البخاري

অর্থ- প্রতিটি নবজাতকই ফিত্বরাত তথা আল্লাহ্‌র একত্বে বিশ্বাসী হিসেবেই জন্মগ্রহণ করে থাকে, অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদী কিংবা খৃষ্টান কিংবা অগ্নিপূজকে পরিণত করে।সাহীহ্‌ বুখারী

উপরোক্ত ঐশী প্রমাণাদী দ্বারা একথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, সৃষ্টির সূচনাতে প্রতিটি মানুষ আল্লাহ্‌র এককত্বে (তাওহীদে) একনিষ্ঠ বিশ্বাসী ছিল, পরবর্তীতে তাদের মধ্যে শির্‌কী ধ্যান-ধারণার উদ্ভব ঘটে। কিন্তু মূলতঃ তাওহীদই (আল্লাহ্‌র একত্ববাদের বিশ্বাসই) হলো মানুষের স্বভাব ও সৃষ্টিজাত ধর্ম।

 


১. سورة الروم- ٣٠ 
২. ছূরা আর রুম- ৩০ 
৩. سورة الأعراف- ١٧٢ 
৪. ছূরা আল আ‘রাফ- ১৭২ 
৫. رواه مسلم 
৬. সাহীহ্‌ মুছলিম 
৭. رواه البخاري 
৮. সাহীহ্‌ বুখারী 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close