ইছলামকে যথাযথভাবে অনুসরণ করাই হচ্ছে ‍দুন্‌ইয়াতে সফলতা এবং আখিরাতে মুক্তিলাভের উপায়

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্‌র (1)। সালাত ও ছালাম বর্ষিত হোক সেই নাবীর প্রতি, যার পরে আর কোন নাবী নেই এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবায়ে কিরামের (4) প্রতি।

অতঃপর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ইহজগত ও পরজগত; উভয় জগত সৃষ্টি করেছেন যাতে মানুষ তাঁর (আল্লাহ্‌র) সাথে অন্য কাউকে বা কোনকিছুকে অংশীদার না করে এবং একমাত্র তারই ‘ইবাদাত করে । এই কাজের নির্দেশ প্রদানের জন্য এবং এরই প্রতি মানবজাতিকে আহবান করার জন্য তিনি (আল্লাহ) তাঁর কিতাব সমূহ নাযিল করেছেন এবং নাবী-রাছূলগণকে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ.سورة الذاريات- ٥٦

অর্থাৎ- আমি জিন ও মানবজাতিকে শুধুমাত্র আমার ‘ইবাদাতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।ছূরা আয্‌ যা-রিয়াত- ৫৬
আল্লাহ 0 আরো ইরশাদ করেছেন:-

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ.سورة البقرة- ٢١

অর্থাৎ- হে মানবজাতি! যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তোমরা তাঁরই ‘ইবাদাত করো, তাতে আশা করা যায় তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারবে।ছূরা আল বাক্বারাহ- ২১

অন্য আয়াতে আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-

الر كِتَابٌ أُحْكِمَتْ آيَاتُهُ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَدُنْ حَكِيمٍ خَبِيرٍ. أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا اللَّهَ إِنَّنِي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ.سورة هود- ١-٢

অর্থাৎ- আলিফ লা-ম রা। এটি এমন এক কিতাব, যার আয়াত সমূহ সুপ্রতিষ্ঠিত, অতঃপর সবিস্তারে বর্ণিত এক মহাজ্ঞানী সর্বজ্ঞ সত্তার পক্ষ হতে। যেন তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ‘ইবাদাত না করো। নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি তাঁরই পক্ষ হতে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।ছূরা হুদ- ১-২
আল্লাহ 0 আরো ইরশাদ করেছেন:-

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ.سورة النحل- ٣٦

অর্থাৎ- নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে রাছূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদাত করো এবং ত্বাগুত (বাতিল উপাস্য) থেকে দূরে থাকো।ছূরা আন্‌ নাহ্‌ল- ৩৬

আল্লাহ 7 আরো ইরশাদ করেছেন:-

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ.سورة الأنبياء- ٢٥

অর্থাৎ- আপনার পূর্বে আমি যে রাছূলই প্রেরণ করেছি, তাঁর প্রতি এই প্রত্যাদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত আর কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ‘ইবাদাত করো।ছূরা আল আম্বিয়া- ২৫১০
সুতরাং উল্লেখিত আয়াত এবং এ ধরনের আরো যেসব আয়াত রয়েছে, সেগুলো একথাই প্রমাণ করে যে, আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর (আল্লাহর) সাথে কোন অংশীদার নির্ধারণ না করে একমাত্র তাঁর‘ইবাদাত করার জন্যে।
মানুষ ও জিন এ দু’ জাতিকে সৃষ্টির প্রজ্ঞাপূর্ণ উদ্দেশ্য এটাই এবং এই উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তাঁর কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন এবং নাবী-রাছূলগণকে পাঠিয়েছেন।
‘ইবাদাত হলো আল্লাহ্‌র (8) প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ এবং তার মহত্ত্বের প্রতি পূর্ণ বিনয় প্রদর্শন।

আর এ কাজগুলো করতে হবে আল্লাহ 7 ও তাঁর রাছূলের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে, পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে, শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র (0) সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তিনি (আল্লাহ ) যা কিছু আদেশ করেছেন তা পালনের মাধ্যমে আর যা কিছু থেকে নিষেধ করেছেন সেসব কিছু বর্জনের মাধ্যমে, এরই সাথে সাথে রাছূল আমাদেরকে যে বার্তা পৌঁছিয়ে দিয়েছেন সেসব বার্তাকে সার্বিকভাবে তথা কথা, কাজ ও অন্তর দ্বারা সত্যায়নের মাধ্যমে।
এটাই হলো দ্বীনে ইছলামের মূল এবং মিল্লাতে ইছলামিয়্যাহ্‌র ভিত্তি। আর এটাই হলো কালিমাহ “لا إله إلا الله” (আল্লাহ ছাড়া আর কোন মা‘বূদ নেই) এর অর্থ। কেননা “لا إله إلا الله” এর অর্থ হলো:- আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য বা সত্যিকার মা‘বূদ (উপাস্য) নেই।
এ কারণেই দু‘আ, ভয়, আশা, নামায, রোযা, হাজ্জ, ক্বোরবানী, নযর-মানত ইত্যাদি সকল প্রকার ‘ইবাদাত একমাত্র এক আল্লাহ্‌র (7) উদ্দেশ্যেই নিবেদিত হতে হবে।

এসব ‘ইবাদাতের বিন্দু পরিমাণও আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে নিবেদন করা যাবে না। পূর্বোল্লেখিত আয়াত সমূহে একথাই বলা হয়েছে।
আল্লাহ 8 আরো ইরশাদ করেছেন:-

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ.سورة البينة- ٥১১

অর্থাৎ- তাদেরকে এছাড়া আর কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে দ্বীনকে আল্লাহ্‌র জন্যে খাঁটি করে।ছূরা আল বায়্যিনাহ- ৫১২
আল্লাহ 0 আরো ইরশাদ করেছেন:-

وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا.سورة الجن- ١٨১৩

অর্থাৎ- এবং নিশ্চয়ই নামাযের স্থানসমূহ একমাত্র আল্লাহ্‌র। অতএব তোমরা আল্লাহ্‌র সাথে আর কাউকে ডাকো না।ছূরা আল জিন- ১৮১৪
আল্লাহ 7 আরো ইরশাদ করেছেন:-

ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِنْ قِطْمِيرٍ. إِنْ تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيرٍ. سورة الفاطر- ١٣-١٤১৫

অর্থাৎ- তিনিই আল্লাহ, তোমাদের পালনকর্তা, সাম্রাজ্য তাঁরই। তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাকো, তারা তুচ্ছ খেজুর আঁটিরও অধিকার রাখে না। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনে না, আর যদি শুনেও থাকে তথাপি তোমাদের প্রতি সাড়া দেয় না, এবং ক্বিয়ামাতের দিন তারা তোমাদের শির্‌ক (অর্থাৎ তোমরা যে তাদেরকে আল্লাহ্‌র সাথে অংশীদার বানিয়েছ সে কথা) অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ বার্তা প্রদানকারীর (আল্লাহর) ন্যায় কেউ আপনাকে অবহিত করতে পারবে না।ছূরা আল ফাত্বির- ১৩-১৪১৬

আল্লাহ 8 আরো ইরশাদ করেছেন:-

وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ. وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِينَ.سورة الأحقاف- ٥-٦১৭

অর্থাৎ- ঐ ব্যক্তির চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে, যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর পূজা করে, যে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দেবে না, তারা তো তাদেরকে যে ডাকা হচ্ছে (পূজা করা হচ্ছে) সে সম্পর্কেও বে-খবর। আর যখন মানুষকে একত্রিত করা হবে তখন তারা (আল্লাহ ছাড়া যাদের ‘ইবাদাত করা হচ্ছে তারা) তাদের (‘ইবাদাতকারীদের) শত্রু হবে এবং তাদের ‘ইবাদাতকে অস্বীকার করবে।ছূরা আল আহক্বাফ- ৫-৬১৮
আল্লাহ 0 আরো ইরশাদ করেছেন:-

وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ.سورة المؤمنون- ١١٧১৯

অর্থাৎ- যে কেউ আল্লাহ্‌র সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, যার কোন প্রমাণ তার কাছে নেই, তার হিসাব অবশ্যই তার পালনকর্তার নিকট রয়েছে। নিশ্চয়ই কাফিররা সফলকাম হবে না।ছূরা আল মু’মিনূন- ১১৭২০
উল্লেখিত আয়াত সমূহে আল্লাহ 7 সুস্পষ্টরূপে একথা বলে দিয়েছেন যে, সকল বস্তুর মালিক, কর্তা ও অধিপতি একমাত্র তিনি এবং ‘ইবাদাত একমাত্র তাঁরই অধিকার ও প্রাপ্য। তিনি ব্যতীত নাবী, অলী, মূর্তি, গাছ, পাথর ইত্যাদি যা কিছুর ‘ইবাদাত মানুষ করে থাকে, মূলতঃ তারা জগতের সামান্য কিছুরও মালিক বা অধিকারী নয় এবং কোন কিছুর উপর তাদের কোন ক্ষমতা নেই। তাদরকে যারা ডাকে, তারা তাদের ডাকও শুনে না। আর যদি শুনেও থাকে তথাপি তাদের ডাকে সাড়া দেয়না।
আল্লাহ সুস্পষ্টরূপে জানিয়ে দিয়েছেন যে, এসব কাজ হলো আল্লাহ্‌র সাথে শির্‌কের নামান্তর। আর যারা এসব কাজ করে তারা কখনও সফলকাম হতে পারবে না। এমনিভাবে আল্লাহ 8 একথাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁকে (আল্লাহ্‌কে) ছাড়া অন্য যাকে কেউ ডাকবে, সে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত তার (আহবানকারীর) ডাকে সাড়া দিবে না। এমনকি কেউ যে তাকে (আল্লাহ ব্যতীত অন্য যে উপাস্যকে) ডাকছে বা তার উপাসনা করছে, সে বিষয়েও সে বে-খবর। ক্বিয়ামাতের দিন সে তার ‘ইবাদাত (মানুষ যে তার উপাসনা করেছে কিংবা তাকে আহবান করেছে, সে বিষয়টি) প্রত্যাখ্যান করবে এবং এ বিষয়ের সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা বা সম্পর্ক ছিল না বলে দাবি করবে। সে নিজেকে এ ব্যাপারে নির্দোষ বলে দাবি করবে এবং যারা তার উপাসনা করেছে তাদের অপকর্মের তথা শির্‌কের দায়ভার তাদের উপরই অর্পণ করবে।
অতএব মুশরিকদের ধ্বংস ও সর্বনাশ এবং তাদের ভয়ানক পরিণতি সম্পর্কে এবং শির্‌ক-কে (অংশীবাদ-কে) ঘৃণা করা এবং তা থেকে সাবধান ও বেঁচে থাকার জন্য উপরোক্ত বক্তব্যই যথেষ্ট। উপরোল্লেখিত সবকটি আয়াতই একথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছে যে, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত অন্য সব কিছুর ‘ইবাদাতই হলো বাত্বিল ‘ইবাদাত। কেননা ‘ইবাদাত হলো আল্লাহ্‌র (0) একক অধিকার ও প্রাপ্য। এ কথাটিই ক্বোরআনে কারীমের নিম্নোক্ত আয়াতে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে, আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ.سورة الحج- ٦٢২১

অর্থাৎ- এটা এ কারণেই যে আল্লাহই সত্য, আর তাঁর পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে, তা-ই অসত্য।ছূরা আল হাজ্জ- ৬২২২
ক্বোরআনে কারীমের আরো অনেক আয়াতে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন যে, তাঁর এই জগত সৃষ্টির বিশেষ করে মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টির অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হচ্ছে, যাতে তারা তাঁর (আল্লাহ্‌র) অশেষ ও পরিপূর্ণ ‘ইলম এবং তাঁর পূর্ণাঙ্গ ক্বোদরাত বা শক্তি সম্পর্কে জানতে পারে। তারা যেন একথা জানতে ও বুঝতে পারে যে, আল্লাহ 7 পরকালে তাঁর বান্দাহ্‌দেরকে তাদের কর্মানুযায়ী প্রতিফল দান করবেন।
আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا.سورة الطلاق- ١٢২৩

অর্থাৎ- আল্লাহ যিনি সাত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং সেই পরিমাণ পৃথিবীও, এগুলোর মধ্যে (তাঁর) আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পারো যে, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।ছূরা আত্‌ ত্বালাক- ১২২৪

আল্লাহ b আরো ইরশাদ করেছেন:-

أَمْ حَسِبَ الَّذِينَ اجْتَرَحُوا السَّيِّئَاتِ أَنْ نَجْعَلَهُمْ كَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَوَاءً مَحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ. وَخَلَقَ اللَّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ وَلِتُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ.سورة الجاثية- ٢١-٢٢২৫

অর্থাৎ- যারা দুষ্কর্ম করেছে তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের জীবন ও মৃত্যু সে লোকদের মতো করে দেব, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, কতই না মন্দ তাদের বিচার। আল্লাহ সমগ্র আকাশ ও যমীন যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপার্জনের ফল পায়। তাদের প্রতি ‍যুল্‌ম করা হবে না।ছূরা আল জাছিয়াহ- ২১-২২২৬
অতএব প্রত্যেক বিবেকবান মানুষের কর্তব্য হলো, সে যেন আল্লাহ্‌র (7) সৃষ্ট জগত সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে। সে যেন নিজের কাজ-কর্মের হিসাব-নিকাশ করে। সে যেন আল্লাহ্‌র (0) এবং তাঁর বান্দাহ্‌দের হক্ব বা প্রাপ্য আদায়ের সর্বাত্মক চেষ্টা করে এবং আল্লাহ যে সকল বিষয়-বস্তু থেকে সতর্ক ও সাবধান করে দিয়েছেন সেগুলো থেকে পুরোপুরি বেঁচে থাকে, যাতে সে দুন্‌ইয়া ও আখিরাতে সফলতা এবং উত্তম প্রতিদান লাভ করতে পারে।
এই জ্ঞানই হচ্ছে সর্বাধিক উপকারী, সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বমহান জ্ঞান। এটা হচ্ছে ইছলামের মূল ভিত্তি। এই অপরিহার্য জ্ঞানের বার্তা নিয়েই নাবী-রাছূলগণ এসেছিলেন এবং এটাই ছিল তাদের দা‘ওয়াতের মূল বিষয়-বস্তু । এই জ্ঞান ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ হবে না এবং এর দ্বারা ততক্ষণ পর্যন্ত দুন্‌ইয়া ও আখিরাতের সফলতা ও মুক্তি লাভ করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত এইজ্ঞান অনুশীলনের সাথে সাথে নাবী-রাছূলগণের উপর এবং বিশেষ করে নাবী-রাছূলগণের (m) ইমাম, ছায়্যিদুল মুরছালীন খা-তামুন্নাবিয়্যীন মুহাম্মাদ 1 এর উপর দৃঢ়ভাবে ঈমান পোষণ করা না হবে।

রাছূলুল্লাহ 1 এর উপর ঈমানের চাহিদা বা দাবি হচ্ছে, তিনি আমাদেরকে যা কিছু জানিয়ে দিয়েছেন তথা যেসব বিষয়ে খবর দিয়েছেন, সে সব বিষয়কে সত্য বলে দৃঢ়ভাবে স্বীকার করা, তিনি যা কিছু আদেশ দিয়েছেন সেগুলো যথাযথভাবে পালন করা এবং যা কিছু থেকে নিষেধ করেছেন সেসব কিছু সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা এবং আল্লাহ্‌র (b) নির্দেশিত ও রাছূলের অনুসৃত ও প্রদর্শিত পথ, পন্থা ও পদ্ধতি ব্যতীত অন্য কোন পন্থা বা পদ্ধতিতে আল্লাহর (0) ‘ইবাদাত না করা।

এ কথাগুলো শুধু উম্মাতে মুহাম্মাদীর ক্ষেত্রেই নয়, বরং অন্যান্য এমন প্রতিটি জাতি, যাদের প্রতি আল্লাহ নাবী-রাছূল প্রেরণ করেছিলেন, তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাদের ইছলামও ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক, পরিপূর্ণ ও আল্লাহ্‌র কাছে গৃহীত হবে না এবং তারা ততক্ষণ পর্যন্ত দুন্‌ইয়া ও আখিরাতের সফলতা ও মুক্তিলাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আল্লাহ্‌র এককত্বে পরিপূর্ণরূপে বিশ্বাসী না হবে, পরিপূর্ণরূপে একমাত্র আল্লাহ্‌র (8) সমীপে আত্মসমর্পণ না করবে, সর্বশেষ নাবী মুহাম্মাদুর্‌ রাছূলুল্লাহ 1 এর যথাযথ আনুগত্য ও অনুসরণ না করবে এবং শারী‘য়াতে ইছলামিয়াহ্‌কে লঙ্ঘন করবে।
মোটকথা, যে কোন জাতির ক্ষেত্রেই ঈমান ও ইছলামের পূর্ণতা লাভ এবং তা আল্লাহ্‌র নিকট গৃহীত হওয়ার জন্য তাওহীদুল্লাহ প্রতিষ্ঠা তথা সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র (0) এককত্ব অক্ষুন্ন রাখা, রাছূলুল্লাহ 1 এর যথাযথ অনুসরণ করা এবং শারী‘য়াত বহির্ভূত কোন কাজ না করা হচ্ছে প্রধান শর্ত। আর এটাই হলো সেই কাঙ্ক্ষিত ইছলাম, যেটাকে আল্লাহ তাঁর বান্দাহ্‌দের জন্য পছন্দ ও মনোনীত করে দিয়েছেন এবং যেটাকে তিনি তাঁর দ্বীন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا.سورة المائدة- ٣২৭

অর্থাৎ- আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নি‘মাত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইছলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৩২৮
অন্য আয়াতে আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-

إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ.سورة آل عمران- ١٩২৯

অর্থাৎ- নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হলো ইছলাম।ছূরা আ-লে ‘ইমরান- ১৯৩০

উপরোক্ত বক্তব্য এবং দলীল-প্রমাণাদী থেকে প্রত্যেক বিবেকবান মানুষের নিকট এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, দ্বীনে ইছলামের মূল ও প্রধান ভিত্তি হচ্ছে দু’টি বিষয়।
(১) একমাত্র আল্লাহ্‌র ‘ইবাদাত করা এবং তাঁর সাথে কোন অংশীদার সাব্যস্ত না করা। আর এটাই শাহাদাহ “لا إله إلا الله” এর অর্থ।
(২) আল্লাহ্‌র নাবী মুহাম্মাদ এর শারী‘আহ অনুযায়ী অর্থাৎ তাঁর অনুসৃত ও প্রদর্শিত নিয়ম ও পন্থানুযায়ী আল্লাহ্‌র ‘ইবাদাত করা। আর এটাই হলো শাহাদাহ
“محمد رسول الله” এর অর্থ।
উল্লেখিত দু’টি ভিত্তির প্রথম ভিত্তিটি অর্থাৎ “لا إله إلا الله” এটি আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল উপাস্যকে বাত্বিল সাব্যস্ত করে দেয় এবং সাথে সাথে তা থেকে এ কথাটি জানা যায় যে, সত্যিকার মা‘বূদ হলেন একমাত্র আল্লাহ b
আর দ্বিতীয় ভিত্তি অর্থাৎ “محمد رسول الله” (মুহাম্মাদুর্‌ রাছূলুল্লাহ) এটি মনগড়া তথা মানবীয় চিন্তা-ধারার ভিত্তিতে আবিষ্কৃত বা প্রবর্তিত ‘ইবাদাত সমূহ এবং ‘ইবাদাতের বানোয়াট পন্থা ও পদ্ধতি যেগুলোর সপক্ষে আল্লাহ 7 কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি, যে গুলোর পক্ষে সঠিক বা বিশুদ্ধ কোন প্রমাণ নেই, সে সবকে বাত্বিল করে দেয়।

অনুরূপভাবে এই দ্বিতীয় ভিত্তিটি মানব রচিত বিধান বাস্তবায়ন করা কিংবা তা দিয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করাকে প্রত্যাখ্যাত ও বাত্বিল বলে ঘোষণা করে। এরই সাথে সাথে এই দ্বিতীয় ভিত্তিটি থেকে এ বিষয়টিও জানা যায় যে, সর্বক্ষেত্রে সকল বিষয়ে আল্লাহ্‌র বিধান বাস্তবায়ন করা এবং তা দিয়ে শাসন ও বিচার-ফায়সালা করা ওয়াজিব।
অতএব কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুছলমান বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ না তাঁর মধ্যে উল্লেখিত দু’টি বিষয় একই সাথে পাওয়া যাবে। এ সম্পর্কে ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-

ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلَى شَرِيعَةٍ مِنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ. إِنَّهُمْ لَنْ يُغْنُوا عَنْكَ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا.سورة الجاثية- ١٨-١٩৩১

অর্থাৎ- এরপর আমি আপনাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শারী‘য়াতের উপর। অতএব আপনি এর অনুসরণ করুন এবং অজ্ঞদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না। নিশ্চয়ই তারা আপনাকে আল্লাহ্‌র হাত থেকে আদৌ রক্ষা করতে পারবে না।ছূরা আল জাছিয়াহ- ১৮-১৯৩২
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:-

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا.سورة النساء- ٦٥৩৩

অর্থাৎ- আপনার পালনকর্তার শপথ! তারা ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজেদের মনে কোন সংকীর্ণতাবোধ করবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে ক্ববুল করে নেবে।ছূরা আন্‌নিছা- ৬৫৩৪
ক্বোরআনে কারীমে এ সম্পর্কে আল্লাহ b আরো ইরশাদ করেছেন:-

أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ.سورة المائدة- ٥٠৩৫

অর্থাৎ- তারা কি জাহিলিয়্যাত যুগের ফায়সালা কামনা করে। আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্য উত্তম ফায়সালাকারী আর কে?ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৫০৩৬
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:-

وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ.سورة المائدة- ٤٤৩৭

অর্থাৎ- যে সব লোক, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তা দিয়ে বিচার-ফায়সালা করে না তারাই কাফির।ছূরা আল- মা-য়িদাহ- ৪৪৩৮
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:-

وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ.سورة المائدة- ٤٥৩৯

অর্থাৎ- যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তা দিয়ে বিচার-ফায়সালা করে না, তারাই যালিম।ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৪৫৪০
ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 8 আরো ইরশাদ করেছেন:-

وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ.سورة المائدة- ٤٧৪১

অর্থাৎ- যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তা দিয়ে বিচার-ফায়সালা করে না, তারাই পাপাচারী-ফাছিক্ব।ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৪৭৪২
এ সকল আয়াতে আল্লাহ্‌র (0) নাযিলকৃত বিধান ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে বিচার-ফায়সালা করার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে এবং তা থেকে সতর্ক ও সাবধান করা হয়েছে। এছাড়া উল্লেখিত আয়াতগুলো শাসক-শাসিত নির্বিশেষে গোঁটা জাতিকে এই নির্দেশনাই প্রদান করছে যে, আল্লাহ b যা নাযিল করেছেন তা দিয়ে বিচার-ফায়সালা করা এবংআল্লাহ্‌র নাযিলকৃত বিধি-বিধানের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করা এবং এর বিরোধী কার্য-কলাপ থেকে সাবধান ও দূরে থাকা প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব।

আয়াতে এ কথাও অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ্‌র ফায়সালা এবং তাঁর হুক্‌মই হচ্ছে সঠিক ও সর্বোত্তম।
আল্লাহ b যা নাযিল করেছেন তা দিয়ে বিচার-ফায়সালা না করে অন্য কিছু দিয়ে বিচার-ফায়সালা করা হলো কুফ্‌র (আল্লাহ্‌কে অস্বীকার করা), যুল্‌ম (আল্লাহ্‌র নির্ধারিত সীমা লংঘন করা) এবং ফিছ্‌ক্ব (আল্লাহ্‌র নাফরমানী)।
একমাত্র আল্লাহ্‌র (8) বিধান ও তাঁর ফায়সালা ব্যতীত অন্য সব বিধান ও ফায়সালা হচ্ছে জাহিলিয়্যাত যুগের ফায়সালা, যেটাকে বাত্বিল করার জন্য এবং যা থেকে মানব জাতিকে বারণ করার জন্য ইছলামী শারী‘য়াত প্রবর্তিত হয়েছে।
পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র পরিচালনাকারী কর্তা ব্যক্তিরা যদি আল্লাহ্‌র বিধান ও হুক্‌ম-আহকাম অনুযায়ী সমাজ পরিচালনা না করেন, তারা যদি আল্লাহ্‌র বান্দাহ্‌দের উপর আল্লাহ্‌র বিধান বাস্তবায়ন না করেন, তাদের কথা-বার্তা ও কাজ-কর্ম যদি শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্ত না হয় বরং তা যদি শারী‘য়াতের সীমালঙ্ঘন করে, তাহলে পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রে কখনো শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, সুখ, শান্তি, উন্নতি, কল্যাণ ও সফলতা আসবে না।

দুন্‌ইয়া ও আখিরাতে মুক্তি, সুখ-শান্তি, সফলতা ও কল্যাণ অর্জন করতে হলে, আল্লাহ্‌র (0) সাহায্য পেতে হলে, বিজয় অর্জন করতে হলে, ইছলামের দুশমনদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত থেকে নিরাপদ থাকতে হলে এবং মুছলমানদের হারানো ‘ইয্‌যাত, সম্মান ও গৌরব ফিরে পেতে হলে একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত বিধান ও ফায়সালার প্রতি পূর্ণ অনুগত ও সন্তুষ্ট থাকতে হবে। সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র হুক্‌ম-আহকাম মেনে চলতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রকে আল্লাহ্‌র বিধান তথা শারী‘য়াত অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে। কথায় ও কাজে মুখলিস তথা আল্লাহ্‌র জন্য একনিষ্ঠ হতে হবে এবং সর্বদা শারী‘য়াতের সীমার ভিতরে থাকতে হবে। আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ.سورة محمد- ٧৪৩

অর্থাৎ- হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখবেন।ছূরা মুহাম্মাদ- ৪৪
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ.سورة الأنفال- ٢٩৪৫

অর্থাৎ- হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তিনি তোমাদের ফায়সালা করে দেবেন এবং তোমাদের থেকে তোমাদের পাপসমূহকে সরিয়ে দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন।ছূরা আল আনফাল- ২৯৪৬
আল্লাহ 7 আরো ইরশাদ করেছেন:-

وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ. الَّذِينَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ.سورة الحج- ٤٠-٤١৪৭

অর্থাৎ- আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন যারা আল্লাহ্‌কে সাহায্য করে, নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী। তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে সামর্থ্য দান করলে তারা নামায ক্বায়িম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে।ছূরা আল হাজ্জ- ৪০-৪১৪৮
আল্লাহ b মুছলমানদেরকে আরো সাবধান করে দিয়েছেন- তারা যেন মু’মিনগণকে বাদ দিয়ে কাফিরদের সাথে সখ্যতা না গড়ে (কাফিরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে)। তিনি (আল্লাহ) আরো জানিয়ে দিয়েছেন যে, কাফিররা মুছলমানদেরকে দুর্বল ও পরাজিত করার জন্য সব সময় সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট থাকে। তারা প্রতিনিয়ত মুছলমানদের দুর্দশা ও সর্বনাশ কামনা করে।
আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-

وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ.سورة آلعمران- ١٢٠৪৯

অর্থাৎ- আর যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং তাক্বওয়া অবলম্বন কর তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের সামান্যতম কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। তারা যা করছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সে সম্পর্কে খুবই অবগত।ছূরা আ-লে ‘ইমরান- ১২০৫০
উল্লেখিত কথাগুলোই হলো ইছলামের সারাংশ ও মূলনীতি এবং এটাই হচ্ছে ইছলামের সবচেয়ে বড় জ্ঞান। লিখকরা যা লিখেছেন, তন্মধ্যে এটাই হচ্ছে সর্বোত্তম বিষয়।
হিদায়াতের দিকে আহবানকারী এবং সত্যের সাহায্যকারীরাও এ বিষয়টিকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এ জ্ঞানকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে থাকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। মানুষ যাতে ইছলামী জ্ঞানের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য জানতে ও বুঝতে পারে এবং এর বিপরীত জ্ঞান থেকে দূরে থাকে, তজ্জন্য এ জ্ঞানকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে প্রচার ও প্রসার করা একান্ত প্রয়োজন।
আমরা মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি যেন মুছলমানদেরকে ইছলামের দিকে সুন্দর ও প্রশংসনীয় ভাবে ফিরিয়ে আনেন। তিনি যেন মুছলমান নেতা-কর্তা ও শাসকদের অবস্থা সংশোধন করে দেন। তিনি যেন সকল মানুষকে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র দ্বীন তথা শারী‘য়াতকে দৃঢ়ভাবে অনুসরণ ও অবলম্বন করার, আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করার, এর প্রতি সন্তুষ্ট থাকার এবং এর বিরোধিতা থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করেন। তিনিই সর্বশক্তিমান, তাওফীক্ব দাতা।
সালাত ও ছালাম বর্ষিত হোক আল্লাহ্‌র বান্দাহ ও রাছূল মুহাম্মাদ এর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবায়ে কিরামের প্রতি এবং ক্বিয়ামাত পর্যন্ত আগত তাঁর সকল সত্যিকার অনুসারীদের প্রতি।


১. سورة الذاريات- ٥٦ 
২. ছূরা আয্‌ যা-রিয়াত- ৫৬ 
৩. سورة البقرة- ٢١ 
৪. ছূরা আল বাক্বারাহ- ২১ 
৫. سورة هود- ١-٢ 
৬. ছূরা হুদ- ১-২ 
৭. سورة النحل- ٣٦ 
৮. ছূরা আন্‌ নাহ্‌ল- ৩৬ 
৯. سورة الأنبياء- ٢٥ 
১০. ছূরা আল আম্বিয়া- ২৫ 
১১. سورة البينة- ٥ 
১২. ছূরা আল বায়্যিনাহ- ৫ 
১৩. سورة الجن- ١٨ 
১৪. ছূরা আল জিন- ১৮ 
১৫. سورة الفاطر- ١٣-١٤ 
১৬. ছূরা আল ফাত্বির- ১৩-১৪ 
১৭. سورة الأحقاف- ٥-٦ 
১৮. ছূরা আল আহক্বাফ- ৫-৬ 
১৯. سورة المؤمنون- ١١٧ 
২০. ছূরা আল মু’মিনূন- ১১৭ 
২১. سورة الحج- ٦٢ 
২২. ছূরা আল হাজ্জ- ৬২ 
২৩. سورة الطلاق- ١٢ 
২৪. ছূরা আত্‌ ত্বালাক- ১২ 
২৫. سورة الجاثية- ٢١-٢٢ 
২৬. ছূরা আল জাছিয়াহ- ২১-২২ 
২৭. سورة المائدة- ٣ 
২৮. ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৩ 
২৯. سورة آل عمران- ١٩ 
৩০. ছূরা আ-লে ‘ইমরান- ১৯ 
৩১. سورة الجاثية- ١٨-١٩ 
৩২. ছূরা আল জাছিয়াহ- ১৮-১৯ 
৩৩. سورة النساء- ٦٥ 
৩৪. ছূরা আন্‌নিছা- ৬৫ 
৩৫. سورة المائدة- ٥٠ 
৩৬. ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৫০ 
৩৭. سورة المائدة- ٤٤ 
৩৮. ছূরা আল- মা-য়িদাহ- ৪৪ 
৩৯. سورة المائدة- ٤٥ 
৪০. ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৪৫ 
৪১. سورة المائدة- ٤٧ 
৪২. ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৪৭ 
৪৩. سورة محمد- ٧ 
৪৪. ছূরা মুহাম্মাদ-  
৪৫. سورة الأنفال- ٢٩ 
৪৬. ছূরা আল আনফাল- ২৯ 
৪৭. سورة الحج- ٤٠-٤١ 
৪৮. ছূরা আল হাজ্জ- ৪০-৪১ 
৪৯. سورة آلعمران- ١٢٠ 
৫০. ছূরা আ-লে ‘ইমরান- ১২০ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close