ড.আশ্‌ শাইখ সালিহ্‌ আল ফাওযান রচিত “তাওহীদের গুরুত্ব” (২য় পর্ব)

এই অডিওটি হলো আহামিয়্যাতুত্ তাওহীদ বা তাওহীদের গুরুত্ব শিরোনামে শাইখ ফাওযান c প্রদত্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভাষণের বাংলা অনুবাদ। অনুবাদ করেছেন উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c। যুগে যুগে সত্যিকার সকল ‘উলামায়ে কিরামের আলোচনার প্রধান ও মূল বিষয়বস্তু “তাওহীদ” হওয়ার প্রকৃত কারণ কী, অত্র ভাষণে সে বিষয়টি অত্যন্ত চমৎকারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
সত্যিকার ‘উলামায়ে কিরামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটাই যে, তারা সবসময় তাওহীদ ও তার প্রকার সমূহের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন। তারা প্রতিটি বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে তাওহীদকে রাখেন এবং তাওহীদের ভিত্তিতেই সকল কিছুর সমাধান দিয়ে থাকেন। তারা মানুষকে ইছলামের মৌলিক বিষয়ের প্রতি তথা তাওহীদের প্রতি দিক-নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে চান। কেননা তাওহীদই হলো ইহ-পরকালের সফলতা লাভের মূল চাবিকাঠি এবং এর উপরই গোঁটা দ্বীন নির্ভরশীল। এই পর্বে নিম্নোক্ত বিষয়াদী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে:-
১) তাওহীদের গুরুত্ব বিষয়ে ১ম পর্বের সংক্ষিপ্ত পূণঃআলোচনা।
২) রাছূলুল্লাহ্‌র (1) নাবুওয়্যাত লাভের পূর্বে ‘আরাবজাতিগুলো নিজেদের মধ্যে দ্বন্ধ-সংঘাতে লিপ্ত ছিল, তাদের মধ্যে কোন ঐক্য ছিল না। তারা ছিল পারস্য ও রোম শাসিত এক জাতি। রাছূলুল্লাহ 1 এসে তাদেরকে তাওহীদের দিকে আহবান করলেন। তারা যখন রাছূলুল্লাহ্‌র (1) আহবানে সাড়া দিল তখন তারা ঐক্যবদ্ধ-সুসংগঠিত শক্তিশালী এক জাতিতে পরিণত হলো এবং নিজেরাই সফলতার সাথে নেতৃত্ব দিতে লাগলো। যেমন, ছূরা আ-লে ‘ইমরানের ১০৩ ও ১৬৪ নং আয়াতে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন।
৩) বর্তমান সময়েও যদি মুছলিম উম্মাহ একতাবদ্ধ হতে চায় এবং সফলতা লাভ করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাদেরকে পূর্ববর্তী যুগের হিদায়াত ও কল্যাণপ্রাপ্ত মুছলমানদের পথ অনুসরণ করতে হবে।
৪) তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় ছৌদী ‘আরাবের দৃষ্টান্ত দেখা ও অনুসরণ করা আমাদের উচিত।
৫) প্রকৃত অর্থে তাওহীদ এবং ‘ইবাদাতের সাথে এই তাওহীদের সম্পর্ক হলো যে, একমাত্র আল্লাহ্‌রই (8) ‘ইবাদাত করা হবে এবং আল্লাহ্‌র সাথে কোন কিছুকে অংশীদার সাব্যস্ত করা যাবে না। যারা দাবি করে যে, তাওহীদ হলো- কেবল আল্লাহ্‌কে জীবন দানকারী, জীবিকা প্রদানকারী——ইত্যাদি রুবূবিয়্যাহ সংশ্লিষ্ট গুণাবলীর একক অধিকারী বলে স্বীকার করা, তারা নিশ্চয় চরম ভুলের মধ্যে আছে। শুধুমাত্র প্রতিপালকত্বে আল্লাহ্‌র একত্বকে অক্ষুন্ন রাখাই যদি প্রকৃত তাওহীদ হতো তাহলে তো বিধর্মীরাও মুছলিম বলে গণ্য হতো। কেননা তারাও তো তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ্‌-তে বিশ্বাসী ছিল, তবে কেন তাদেরকে মুছলিম বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি?
মূল কথা হলো, তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ যদিও তাওহীদেরই একটি অংশ কিন্তু প্রকৃত অর্থে আল্লাহ b আমাদেরকে যে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা ও অক্ষুন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সেটি হলো তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ বা তাওহীদুল ‘ইবাদাহ অর্থাৎ ‘ইবাদাতে আল্লাহ্‌র একত্ব অক্ষুন্ন রাখা। যেমন ক্বোরআনে কারীমের ছূরা লুক্বমানের ২৫ নং আয়াতে, ছূরা নাম্‌লের ৬৪নং আয়াতে ও ছূরা মু’মিনূনের ৮৪-৮৫নং আয়াতে ইরশাদ রয়েছে।
৬) মুছলিম হতে হলে শুধু তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ্‌-তে বিশ্বাসী হওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং এরই সাথে তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ্‌-তে অবশ্যই বিশ্বাসী হতে হবে। যেমন ক্বোরআনে কারীমে ছূরা আন্‌ নাহ্‌লের ৩৬নং আয়াতে, ছূরা আন্‌ নিছা-র ৩৬ নং আয়াতে, ছূরা সোয়াদের ৫-৭ নং আয়াতে এবং ছূরা আস্‌ সাফ্‌ফাতের ৩৫-৩৭ নং আয়াতে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন।
৭) প্রত্যেক নাবী-রাছূলই (m) প্রেরিত হয়েছিলেন মানব ও জিন জাতিকে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” তথা তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ্‌র দিকে আহবান জানাতে। যেমন আল্লাহ b ছূরা বাক্বারাহ্‌র ২১-২২নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন।
৮) আল্লাহ্‌র (7) বান্দাহ্‌দের সফলতা লাভের চাবিকাঠি হলো তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ। তাই যারা শির্‌কে লিপ্ত তাদেরকে তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ্‌র দিকে আহবান করা আমাদের কর্তব্য।
৯) যদি কোন ব্যক্তি মুখে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে কিন্তু সে যদি মৃতব্যক্তির দিকে আহবান জানায়, ক্ববরস্থ মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করে, ক্ববরপূজা, পাথরপূজা বা গাছের পূজা করে অথবা জিন-ফিরিশতাদের নৈকট্য কামনা করে, তাহলে ঐ সকল লোকেরা হলো মুশরিক (আল্লাহ্‌র সাথে অংশী স্থাপনকারী)। এসব লোকদেরকে তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ্‌র দিকে আমাদের অবশ্যই আহবান জানাতে হবে যদিও তারা রুবূবিয়্যাহ্‌ বা পালনকর্তৃত্বে আল্লাহ্‌র এককত্বকে বিশ্বাস ও স্বীকার করে। যেমন ছূরা আল আনফালের ৩৯-৪০নং আয়াতে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন।
১০) যারা মুখে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে অথচ তারা এমনসব কুফ্‌রী ও শির্‌কী কাজে লিপ্ত; যা তাদেরকে মুরতাদে (মুরতাদ হলো- যারা ইছলাম গ্রহণ করার পর তা ত্যাগ করে) পরিণত করে ফেলে, এসকল লোকেরা অপরাপর লোকদেরকে ক্ববরপূজা করার এবং মৃতদের নিকট প্রার্থনা করার আহবান জানায়। ইয়াহুদী ও খৃস্টানদেরকে যেভাবে যে তাওহীদের দিকে আহবান করা হয়, এসব মুরতাদদেরকেও সেভাবে সেই তাওহীদের দিকে আহবান করতে হবে। এসব মুরতাদদের উপর অত্যাবশ্যক হলো তাওবাহ করে যথাযথভাবে তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ্‌ বাস্তবায়ন করা। যেমন ছূরা আত্‌ তাওবাহ্‌র ৫ এবং ১১নং আয়াতে আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন।
১১) আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে যে, ‘ইবাদাতের অর্থ কী, ‘ইবাদাত বলতে কি বুঝায়? আরো জানতে হবে যে, বান্দাহ্‌র ‘আমাল বা ‘ইবাদাত আল্লাহ্‌র নিকট ক্ববূল হওয়ার জন্য শর্ত কি?

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close