ক্বোরআনের তাফছীর (৪য় পর্ব)

এটি উছতায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c প্রদত্ত একটি ধারাবাহিক অডিও বক্তব্য। উক্ত ধারাবাহিক বক্তব্যে উছতায পবিত্র ক্বোরআনের ছূরা সমূহের তাফছীর প্রদান করবেন, إن شاء الله। বক্তব্যের এই পর্বে উছতায তাফছীরের নিয়ম-নীতি ও ‘উলূমুল ক্বোরআন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
নিম্নোক্ত বইসমূহ উৎস হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে-

ক) আল ‘আল্লামা ‘আব্দুল্লাহ আছ্‌ ছা‘দী o রচিত এবং শাইখ সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন o কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত আত-তা‘লীক্ব ‘আলাল ক্বাওা‘য়ীদ আল-হিছান।
খ) আল ‘আল্লামা মুহাম্মাদ ‘আলী আস্‌ সাবূনী o রচিত আত্‌ তিবয়ান ফী ‘ঊলূমিল ক্বোরআন।
গ) আল-‘আল্লামা ছুয়ূতী o রচিত আল-ইতক্বান।
এছাড়াও ছালাফদের রচিত আরো কিছু বই থেকে সারাংশ উপস্থাপন করা হবে, ইন-শা-আল্লাহ।

১) কখন থেকে ক্বোরআনে কারীম নাযিল হওয়া শুরু হয়েছে?
ক্বোরআনে কারীম ১৭ই রামাযান রাছূলুল্লাহ 1 এর নিকট নাযিল হওয়া শুরু হয়েছে, যখন রাছূলুল্লাহ 1 এর বয়স ৪০ বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। এই ক্বোরআন নাযিল হওয়ার পূর্ব থেকেই রাছূলুল্লাহ 1 হেরা পাহাড়ের গুহায় ‘ইবাদতে নিমজ্জিত থাকতেন। অতঃপর জিবরীল আমীন k তাঁর কাছে আগমন করলেন এবং বললেন- পড়ুন! রাছূলুল্লাহ 1 বললেন- আমিতো পড়তে পারি না। অতঃপর তিনি রাছূলুল্লাহ-কে (1) জড়িয়ে ধরে তাঁর বুকে চাপ দিয়ে ছেড়ে দিলেন। এরপর আবার বললেন যে, আপনি পড়ুন! রাছূলুল্লাহ 1 আবারো বললেন- আমিতো পড়তে পারি না। অতঃপর তিনি রাছূলুল্লাহ-কে (1) জড়িয়ে ধরে তার বুকে চাপ দিয়ে ছেড়ে দিলেন। এরপর আবার বললেন যে, আপনি পড়ুন! অতঃপর রাছূলুল্লাহ 1 সেই আয়াতগুলো পড়লেন। আর এটিই ছিল ওয়াহীর সূচনা।
২) ক্বোরআনে কারীম কত বছর যাবত রাছূলুল্লাহ 1 এর নিকট নাযিল হয়েছে?
এসম্পর্কে মতের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। কারণ, রিছালাত লাভের পর মাক্কাতে রাছূলুল্লাহ 1 কত বছর অতিবাহিত করেছেন, এই ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মতে দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন- রিছালাতের পরে তিনি মক্কায় ১০ বছর ছিলেন। আবার কারো মতে, ১৩ বছর বা ১৫ বছর ছিলেন। মাদীনাতে রাছূলুল্লাহ 1 ১০ বছর যাবত ছিলেন, এই ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। অনেকেই আরো নির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, মাদীনাতে তিনি ৯ বছর ৯ মাস ৯ দিন ছিলেন।
রাছূলুল্লাহ্‌র (1) মাক্কার অবস্থানের উপর ভিত্তি করেই এই দ্বিমতটি তৈরি হয়েছে। তাই কারো মতে, পবিত্র ক্বোরআন ২০ বছর যাবত, আবার কারো মতে, ২৩ বা ২৫ বছর যাবত নাযিল হয়েছে।
তবে আরেকটি নির্ভরযোগ্য সূত্রানুসারে বর্ণিত আছে যে, রিছালাত প্রাপ্তির পরে রাছূলুল্লাহ 1 মাক্কায় ১২ বছর ৫মাস ১৩ দিন অবস্থান করেছিলেন। তাই, অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের পর্যালোচনা হচ্ছে, পবিত্র ক্বোরআন মোট ২৩ বছর যাবত নাযিল হয়েছে।
৩) লাইলাতুল ক্বাদ্‌র কোন রাত্রি?
এই বিষয়ে অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরামের অভিমত হল, লাইলাতুল ক্বাদর হচ্ছে রামাযানের শেষ দশকে। কিন্তু আমরা জানতে পারি যে, পবিত্র ক্বোরআন ১৭ই রামাযান রাছূলুল্লাহ 1 এর নিকট নাযিল হওয়া শুরু হয়েছে। ছূরা ক্বাদরের প্রথম আয়াত إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ ও ছূরা দুখানের তৃতীয় আয়াতটি إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ দ্বারা মূলতঃ পবিত্র ক্বোরআনকে লাওহে মাহ্‌ফুয থেকে বাইতুল ‘ইয্‌যাতে নাযিল হওয়াকে বুঝানো হয়েছে।
৪) অন্যান্য রাছূলদের প্রতি নাযিলকৃত কিতাবের মতো ক্বোরআনে কারীমকেও কেন একসাথে আমাদের রাছূল মুহাম্মাদ 1 এর উপর নাযিল করা হলো না? এর পিছনে হিকমাহ কি?
এর প্রকৃত হিকমাহ একমাত্র আল্লাহ-ই (0) ভালো জানেন। তবে, কিছু কিছু হিকমাহ ‘উলামায়ে কিরাম বর্ণনা করেছেন। যেমন-
ক) রাছূলুল্লাহ 1 এর অন্তরকে দৃঢ় এবং মজবুত করা। যেমনটি আল্লাহ 0 ছূরা ফুরক্বানের ৩২নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন।
খ) রাছূলুল্লাহ 1 যেন নাযিলকৃত বিষয়গুলো ভালোভাবে রপ্ত করতে পারেন আর এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এবং তাঁর উম্মাহও যাতে নাযিলকৃত বিধানগুলোর সাথে ক্রমান্বয়ে খাপ খাওয়াতে পারে।
গ) ধাপে ধাপে এই ক্বোরআনে কারীম নাযীলের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার সময়োপযোগী সমাধান দিয়েছেন আল্লাহ 0
ঘ) বিভিন্ন প্রশ্নের তাৎক্ষণিক সমাধান প্রদান করা।
ঙ) ক্বোরআনের উৎস সম্পর্কে মানবজাতিকে ধারণা দেওয়া। উপরোক্ত প্রত্যেকটি হিকমাহ সম্পর্কে শাইখ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
৫) ক্বোরআনে কারীম হচ্ছে ওয়াহী। এই ওয়াহী বলতে কি বুঝায়?
আল্লাহ 0 এর পক্ষ থেকে তার নির্ধারিত বান্দার প্রতি অপ্রচলিত বা গোপনীয় পদ্ধতিতে কোনো জ্ঞান বা নির্দেশনা প্রদান করাকেই ওয়াহী বলে।
ওয়াহী বিভিন্নভাবে হতে পারে যেমন- আল্লাহ 0 তার নির্বাচিত বান্দার সাথে সরাসরি কথা বলবেন বা তাকে ইলহামের মাধ্যমে জ্ঞান দান করবেন বা তাকে স্বপ্নের মাধ্যমে জ্ঞান দান করবেন কিংবা তাকে জিবরীল k এর মাধ্যমে জ্ঞান দান করবেন।
যেমন আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেনঃ- نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ عَلَى قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنْذِرِينَ
অর্থাৎ- বিশ্বস্ত আত্মা (জিবরীল) তা নিয়ে অবতরণ করেছে আপনার হৃদয়ে, যাতে আপনি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হন। (ছূরা আশ্‌ শু‘আরা- ১৯৩-১৯৪))
৬) ওয়াহী নাযিলের বিষয়টিকে বর্তমান সময়ের তথাকথিত বুদ্ধিজিবীরা বড়ই বেমানান মনে করে। তাদেরকে এর কী জাওয়াব দেয়া যেতে পারে?
তাদেরকে এই বিষয়টি বুঝানো এখন খুবই সহজ হয়ে গিয়েছে। যেমন আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেনঃ- سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنْفُسِهِمْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ
অর্থাৎ- শীঘ্রই আমি তাদেরকে দেখাব আমার নিদর্শনাবলী দিগন্তসমূহে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে, শেষ পর্যন্ত তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, তা (ক্বোরআন) সত্য।ছূরা ফুস্‌সিলাত- ৫৩
বর্তমানের তারহীন প্রযুক্তির মুঠোফোনগুলো একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। ওয়াহীর ন্যায় এই মুঠোফোনগুলোও কোনো বাহ্যিক মাধ্যম ছাড়া তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।
হিপনোটাইয- বিষয়টি বর্তমান বিজ্ঞান কর্তৃক স্বীকৃত। এই পদ্ধতির দ্বারা একজন মানুষ যদি অন্য আরেকজন মানুষের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, তবে একজন মানুষ কেন তার সৃষ্টিকর্তার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারবে না?
৭) ক্বোরআনে কারীমের সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত কোনটি?
এ সম্পর্কে মতপার্থক্য রয়েছে। কারো মতে, ক্বোরআনের সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত হচ্ছে ছূরা আল মা-ইদাহ্‌র ৩নং আয়াত। আবার কারো মতে, ক্বোরআনের সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত হচ্ছে ছূরা আল বাক্বারাহ্‌র ২৮১নং আয়াত।

 

ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-
১) السلام عليكم ورحمة الله وبركاته।
শাইখ, চল্লিশ বছর বয়সকে কি আমরা প্রতিটি মানুষের জীবনের পরিপক্কতার একটা মানদণ্ড ও যৌবনের শেষ সীমা ধরে নিতে পারি? চল্লিশ পেরিয়ে একচল্লিশ বছর বয়সে আমাদের নাবীর (1) নাবুওয়্যাত প্রাপ্তিটা আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ চল্লিশ বছর বয়সের জন্য কিভাবে প্রস্তুত হতে শিক্ষা দেয়? এই সময় আমাদের দ্বীন ও দা‘ওয়ার পরিপক্কতা কেমন হওয়া উচিত?
২) “ক্বোরআনের প্রত্যেকটা আয়াতই একেকটা মু’জিযাহ” এই কথার প্রেক্ষিতে, মু’জিযাহ বলতে আমরা কি “বিশেষ অর্থে” বুঝবো যেমন- শুধু ‘আরবী ভাষা, সাহিত্য ও ব্যাকরণের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ, নাকি “ব্যাপক অর্থে” বুঝবো যেমন- জ্ঞান বিজ্ঞানের অন্য সব পরিসরেও সমানভাবে প্রযোজ্য?
আল্লাহ 0 আপনাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।
৩) السلام عليكم ورحمة الله وبركاته।
শাইখ, এখনকার সময়ে কেউ যদি বলে যে, সাহাবায়ে কিরাম এই এই ভুল করেছেন। আর উপস্থাপিত ভুলগুলোকে যদি নিজের জন্য ‘উয্‌র হিসেবে গ্রহণ করতে চায়, তাহলে তার সেই ‘উয্‌র কি শারী‘য়াতের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে?
৩) আমার ভাসুর খুবই অসুস্থ। আমি কি তার সুস্থতা কামনা করে রোজা রেখে আল্লাহর কাছে দু‘আ করতে পারবো? এই রোজাটা কি গ্রহণযোগ্য হবে? প্রশ্নটা এজন্যই করা- কারণ তিনি তো আমার জন্য মাহ্‌রাম নন। আর তা ছাড়া আমরা কি যেকোন ব্যক্তির মঙ্গলের জন্য রোজা রেখে দু‘আ করতে পারবো?
৪) السلام عليكم ورحمة الله وبركاته।
ওয়াহী যেভাবে মানুষকে প্রভাবিত করে, কোনো সৃষ্টি কি অপর সৃষ্টির উপর কখনো সেভাবে প্রভাব বিস্তার করার অধিকার রাখে?


১. ছূরা ফুস্‌সিলাত- ৫৩ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close