ক্বোরআনের তাফছীর (১৩তম পর্ব)

এটি উছতায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c প্রদত্ত একটি ধারাবাহিক অডিও বক্তব্য। উক্ত ধারাবাহিক বক্তব্যে উছতায পবিত্র ক্বোরআনের ছূরা সমূহের তাফছীর প্রদান করবেন, إِن شَاء اَللّٰه। বক্তব্যের এই পর্বে উছতায তাফছীরের নিয়ম-নীতি ও ‘উলূমুল ক্বোরআন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। নিম্নোক্ত বইসমূহ উৎস হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে-

ক) আল ‘আল্লামা ‘আব্দুল্লাহ আছ্‌ ছা‘দী o রচিত এবং শাইখ সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন o কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত আত-তা‘লীক্ব ‘আলাল ক্বাওা‘য়ীদ আল-হিছান।
খ) আল ‘আল্লামা মুহাম্মাদ ‘আলী আস্‌ সাবূনী o রচিত আত্‌ তিবয়ান ফী ‘ঊলূমিল ক্বোরআন।
গ) আল-‘আল্লামা ছুয়ূতী o রচিত আল-ইতক্বান।

এছাড়াও ছালাফদের রচিত আরো কিছু বই থেকে সারাংশ উপস্থাপন করা হবে, إِن شَاء اَللّٰه।

এই পর্বের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে “ইছতি‘আযাহ” বা أعوذ بالله من الشيطان الرجيم
১) “ইছতি‘আযাহ” বা أعوذ بالله من الشيطان الرجيم দিয়ে ক্বোরআনে কারীমের তাফছীর শুরু করার কারণ কি?
যদিও أعوذ بالله من الشيطان الرجيم ক্বোরআনের আয়াত নয়, তথাপি আল্লাহ 7 ক্বোরআনে কারীমে নির্দেশ দিয়েছেন- فَاِذَا قَرَاۡتَ الۡقُرۡاٰنَ فَاسۡتَعِذۡ بِاللّٰہِ مِنَ الشَّیۡطٰنِ الرَّجِیۡمِ
অর্থাৎ- আপনি যখন ক্বোরআন পাঠ করবেন, তখন বিতাড়িত শাইত্বান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করুন।ছূরা আন্‌নাহ্‌ল- ৯৮
এখানে قَرَاۡتَ শব্দটি যদিও অতীতকালকে বুঝায়, কিন্তু ক্বোরআন পাঠের পূর্বেই আমাদেরকে শাইত্বান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। কারণ এখানে قَرَاۡتَ শব্দটি দ্বারা ক্বোরআনে কারীম তিলাওয়াতের শুরুতেই “ইছতি‘আযাহ” করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ক্বোরআনে কারীমের বহু জায়গায় এমন নিয়মের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
২) রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- প্রত্যেক ভালো কাজ বিছমিল্লাহ বলে শুরু করা না হলে তা লেজ কাটা হয় এবং তাতে বারাকাহ থাকে না।সাহীহুল বুখারী
ক্বোরআনে কারীমের তিলাওয়াত অবশ্যই ভালো কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কাজ।
তাহলে উক্ত হাদীছ ও ক্বোরআনে কারীমের ছূরা আন্‌নাহ্‌লের ৯৮নং আয়াত পরস্পর সাংঘর্ষিক হয়ে গেল কি-না?
ক্বোরআনে কারীমে শুধুমাত্র ক্বোরআন পাঠের পূর্বেই ইছতি‘আযাহ পড়তে বলা হয়েছে। আর উক্ত হাদীছে সকল ভালো কাজের পূর্বে তাছমিয়াহ পাঠ করতে বলা হয়েছে। সুতরাং, উভয়টির মধ্যে কোনো বৈপরীত্য নেই।
৩) কোনো ব্যক্তি যদি তা‘আওউয পাঠ করার পরে বিছমিল্লাহ বলা ছাড়াই ক্বোরআনে কারীম তিলাওয়াত শুরু করে, তবে কি তা বারাকাতহীন হয়ে যাবে?
ছূরার শুরুতে তাছমিয়াহ পড়তে হবে, তবে এছাড়া কোনো আয়াত তিলাওয়াতের প্রাক্কালে তা‘আওউয পড়ে নিলেই হবে, এবং এতে করেই তিলাওয়াতের বারাকাহ আল্লাহ্‌র (0) ইচ্ছায় লাভ করা যাবে।
৪) আল্লাহ 0 ক্বোরআনে কারীম তিলাওয়াতের প্রাক্কালে তাছমিয়াহ পাঠ না করে ইছতি‘আযাহ পাঠ করার নির্দেশ দিলেন কেন?
কারণ, এর মধ্যে অসংখ্য উপকার রয়েছে। যার বেশিরভাগই হয়তো জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে মানবজাতি বুঝতে অক্ষম। তারপরও কিছু কারণ ‘উলামা ও মুফাছ্‌ছিরীনে ক্বিরাম বলেছেন। যেমন-
ক) ইছতি‘আযাহ পাঠের মাধ্যমে বান্দাহ আল্লাহ্‌র (0) কাছে শাইত্বান থেকে আশ্রয় লাভ করতে চায়।
খ) আল্লাহ্‌র (0) নিকট থেকে বারাকাহ লাভের জন্য তাছমিয়াহ পাঠ করা হয়। তাই একজন মানুষ স্বভাবতই প্রথমে (শাইত্বান থেকে) নিজেকে রক্ষা করতে চাইবে। এরপরে সে বারাকাহ লাভের জন্য প্রার্থনা করতে পারে।
৫) শুধুমাত্র ক্বোরআনে কারীম পাঠের ক্ষেত্রেই কেন এই নিয়মটি (প্রথমে ইছতি‘আযাহ অতঃপর তাছমিয়াহ পাঠ করা) প্রযোজ্য?
ক্বোরআনে কারীমের তিলাওয়াত করা অন্যান্য ইবাদাতের মতো নয়। এটি কালামুল্লাহ। তাই ক্বোরআনে কারীম তিলাওয়াতের প্রাক্কালে ইছতি‘আযাহ পাঠ করে না নিলে কালামুল্লাহ থেকে উপকৃত হতে পারবে না। কারণ, এক্ষেত্রে শাইত্বান অন্যতম বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।

যেমন- ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- یُضِلُّ بِہٖ کَثِیۡرًا وَّ یَہۡدِیۡ بِہٖ کَثِیۡرًا
অর্থাৎ- তিনি এর দ্বারা অনেককেই বিভ্রান্ত করেন, আবার অনেককেই সৎপথে পরিচালিত করেন।ছূরা আল বাক্বারাহ- ২৮
তাই এই ক্বোরআন থেকে হিদায়াত লাভ করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই সর্বাগ্রে আল্লাহ্‌র (سبحانه وتعالى) নিকট শাইত্বান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে।
৬) ক্বোরআনে কারীম পাঠের শুরুতে ইছতি‘আযা পাঠ করে নেওয়ার পরেও অনেক সময় বুঝা যায় যে, শাইত্বান ওয়াছওয়াছা (কুমন্ত্রণা) দিচ্ছে। এর কারণ কি?
এর কারণ হলো- তা’আওউয পাঠ করলেও আমরা অনেকেই এর মর্ম উপলব্ধি করি না। আমরা أعوذ بالله من الشيطان الرجيم কেন পড়ছি আর এর অর্থই বা কি, তা সঠিকভাবে জানি না।
৭) ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 আমাদেরকে শাইত্বান থেকে তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-

وَ قُلۡ رَّبِّ اَعُوۡذُ بِکَ مِنۡ ہَمَزٰتِ الشَّیٰطِیۡنِ وَ اَعُوۡذُ بِکَ رَبِّ اَنۡ یَّحۡضُرُوۡنِ

অর্থাৎ- আর বলুন! “হে আমার প্রতিপালক! আমি শাইত্বানের কুমন্ত্রণা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি হে আমার প্রতিপালক! যাতে তারা আমার কাছে আসতে না পারে”।ছূরা আল মু’মিনূন- ৯৭-৯৮

 

ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হয়:-
১) তাফছীরের কোন কিতাবটি পড়া যেতে পারে? আর এই কিতাবের কি বাংলা অনুবাদ রয়েছে?
২) শাইত্বান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আয়াতুল কুরছী রয়েছে। তেমনিভাবে দাজ্জাল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ছূরাতুল কাহফ রয়েছে। কিন্তু এই ইছতি‘আযা কি সকল ধরনের শাইত্বান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কার্যকরী?


১. ছূরা আন্‌নাহ্‌ল- ৯৮ 
২. সাহীহুল বুখারী 
৩. ছূরা আল বাক্বারাহ- ২৮ 
৪. ছূরা আল মু’মিনূন- ৯৭-৯৮ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close