এটি উছতায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c প্রদত্ত একটি ধারাবাহিক অডিও বক্তব্য। উক্ত ধারাবাহিক বক্তব্যে উছতায পবিত্র ক্বোরআনের ছূরা সমূহের তাফছীর প্রদান করবেন, إِن شَاء اَللّٰه। বক্তব্যের এই পর্বে উছতায তাফছীরের নিয়ম-নীতি ও ‘উলূমুল ক্বোরআন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। নিম্নোক্ত বইসমূহ উৎস হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে-
ক) আল ‘আল্লামা ‘আব্দুল্লাহ আছ্ ছা‘দী o রচিত এবং শাইখ সালিহ্ আল ‘উছাইমীন o কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত আত-তা‘লীক্ব ‘আলাল ক্বাওা‘য়ীদ আল-হিছান।
খ) আল ‘আল্লামা মুহাম্মাদ ‘আলী আস্ সাবূনী o রচিত আত্ তিবয়ান ফী ‘ঊলূমিল ক্বোরআন।
গ) আল-‘আল্লামা ছুয়ূতী o রচিত আল-ইতক্বান।
এছাড়াও ছালাফদের রচিত আরো কিছু বই থেকে সারাংশ উপস্থাপন করা হবে, إِن شَاء اَللّٰه।
১) তাফছীরুল ক্বোরআন সম্পর্কে জানতে হলে, এই ‘তাফছীরুল ক্বোরআন’ বলতে কি বুঝায় সে ব্যাপারে শুরুতেই আমাদের ধারণা থাকতে হবে। পাশাপাশি আরো কিছু মৌলিক বিষয় সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে হবে।
২) এই তাফছীরের বিষয়টাকে আমরা কিভাবে গ্রহণ করব?
তাফছীর সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করার মুল উদ্দেশ্যই হতে হবে যে, আমরা যেন ক্বোরআন সম্পর্কে সঠিকভাবে সবকিছু জেনে বুঝে এর জ্ঞান লাভ করতে পারি। তবেই আমরা কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারব। এ ব্যাপারে ‘আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী o বলেছেন, এই ক্বোরআনকে আল্লাহ 7 সমগ্র মানবজাতির হিদায়াতের জন্যে নাযিল করেছেন। এবং এটি মানবজাতির সর্বকালের জন্য পথ-প্রদর্শক। যেমন, আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-
إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ
অর্থাৎ- নিশ্চয় এ ক্বোরআন সেই পথ দেখায় যা সোজা ও সুপ্রতিষ্ঠিতছূরা আল ইছরা- ৯
তাফছীরুল ক্বোরআনের জ্ঞান আমরা এজন্যই অর্জন করব- যেন ক্বোরআনের সকল দিক-নির্দেশনা আমরা মেনে চলতে পারি, তবেই আমরা সরল পথের অনুসারী হতে পারব।
৩) ক্বোরআনের মর্মার্থ সাহাবায়ে কিরাম যেভাবে বুঝেছেন বা গ্রহণ করেছেন, আমাদেরকেও ঠিক সেভাবেই বুঝতে ও গ্রহণ করতে হবে। সাহাবায়ে কিরাম ক্বোরআনের ১০টি আয়াত পড়লে, প্রথমতঃ সেগুলোকে আত্মস্থ করতেন। অতঃপর, এগুলোর উপর আমল করতেন এবং নিজেদের জীবনে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতেন। যতক্ষণ পর্যন্ত এই দশ আয়াতের জ্ঞান পুরোপুরি অর্জন না হতো, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা সামনে অগ্রসর হতেন না। তারা জানতেন যে, এই ১০টি আয়াত শুধু তিলাওয়াতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
৪) সাহাবায়ে কিরামের (4) মধ্যে যারা ছূরা বাক্বারা ও ছূরা আ-লি ‘ইমরান পড়ে ফেলতেন, তাদেরকে সমাজে অনেক সম্মানিত বলে মনে করা হত।
আনাছ 3 থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে যখন কেউ ছূরা বাক্বারা ও ছূরা আ-লি ‘ইমরান পড়ে ফেলতেন, তখন আমাদের সমাজে তিনি সম্মানিত বলে পরিচিতি পেতেন।মুছনাদুল ইমাম আহ্মাদ
ইবনু জারীর o থেকে সাহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, ইবনু মাছ‘ঊদ 3 বলেন- আমাদের মধ্যে কেউ যখন ক্বোরআনের ১০টি আয়াত পড়ে ফেলত, তখন তারা ততক্ষণ পর্যন্ত এই ১০টি আয়াত অতিক্রম করত না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা এর অর্থ না বুঝত এবং এর উপর আমল না করত।
অথচ, আজকে আমাদের সমাজে হাজার হাজার হাফিযে ক্বোরআন বিদ্যমান কিন্তু তারাই আজকে সমাজে সবচেয়ে অবহেলিত। আসলে এর পিছনে তারা নিজেরাই দায়ী। কারণ তারা ছালাফদের অনুসরণ করছে না।
৫) আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিছু মুখরোচক কিচ্ছা-কাহিনীকে তাফছীর মনে করা হয়। অথচ, তাফছীরের মূল বিষয়বস্তু আদৌ এরকম নয়।
তবে, আমাদের উচিৎ হলো যে, পূর্বেকার উম্মাতের বর্ণিত ঘটনাগুলো দ্বারা কি উদ্দেশ্য রয়েছে এবং এর মধ্যে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়গুলো কি, তা জানা, অনুধাবন করা এবং তা থেকে শিক্ষা নেয়া।
যেমন, মহান আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-
لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِأُولِي الْأَلْبَابِ
অর্থাৎ- অবশ্যই তাদের কাহিনীসমূহে বোধশক্তিসম্পন্ন মানুষদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় আছে।ছূরা ইউছুফ- ১১১
৬) তাফছীরের মূল উদ্দেশ্যই হলো- ক্বোরআনে বর্ণিত আহ্কামের আয়াতগুলোর হুক্ম জানা ও মানা এবং জীবনে বাস্তবায়ন করা। শেখ ‘উছাইমীন o ব্যাপারটির ব্যাখ্যা এভাবে প্রদান করেছেন যে,
ক) ক্বোরআন মানুষের জন্য হিদায়াত ও সুস্পষ্ট পথ-নির্দেশ এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। কেউ যদি ব্যাপারটি অন্তরে স্বীকার করে কিন্তু এর পথ-নির্দেশ অনুসরণ না করে, তবে তাকে ক্বোরআনে বিশ্বাসী বলা যাবে না।
খ) পবিত্র ক্বোরআনে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-
كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ
অর্থাৎ- এটি একটি কল্যাণময় কিতাব যা আপনার কাছে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তারা এর আয়াতগুলোর প্রতি চিন্তা-ভাবনা করে।ছূরা সা-দ- ২৯
অর্থাৎ, সব দিক থেকেই এই ক্বোরআনের মধ্যে বারাকাহ আছে। ক্বোরআনকে সঠিকভাবে জানা, বুঝা ও উপলব্ধির মাধ্যমেই পূর্ববর্তী ছালাফদের জীবন হয়েছে বারাকাতময়। একারণেই এত ক্ষুদ্র জীবন পরিসরেও তারা উম্মাতের জন্য যে খিদমাহ করে গেছেন, তা এই সময়ে কল্পনাও করা যায় না। তাই, আমরাও যদি তাদেরকে অনুসরণ করি, তবে আমরাও সকল ক্ষেত্রে বারাকাহ লাভ করতে পারব।
৭) আমাদের দেশের অধিকাংশ তাফছীর মাহ্ফিলগুলোতে বক্তারা আজেবাজে নানা ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে আলোচনাকে মুখরোচক করার চেষ্টা করেন। এর দ্বারা শ্রোতারা সাময়িকভাবে কিছু আনন্দ উপভোগ করে থাকে মাত্র। তাফছীর মাহ্ফিলের নামে এধরনের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানই সমাজের বর্তমান বেহাল দশার জন্য অনেকাংশে দায়ী। অতএব, আমাদের মুল উদ্দেশ্য হলো- তাফছীরের মাধ্যমে আমরা ক্বোরআনের অর্থ বুঝব ও এটাকে আমাদের নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করব, ঠিক যেভাবে সাহাবায়ে কিরাম 4 করেছিলেন। ‘ইয্যাত ও বারাকাহ ক্বোরআনের মাধ্যমেই লাভ করতে হবে।
৮) ক্বোরআনের পরিচয় কি?
ক) এটি আল্লাহ্র (0) বাণী।
খ) যা জিবরীল k এর মাধ্যমে রাছূলুল্লাহ k এর উপরে নাযিলকৃত।
গ) মুসহাফের মধ্যে লিখিত, মুতাওয়াতির ছনদে যা আমাদের কাছে পৌঁছেছে।
ঘ) যার দ্বারা আল্লাহ 0 এর নৈকট্য কামনা করা যায়।
ঙ) যা ছূরা ফাতিহাহ দ্বারা শুরু এবং ছূরা না-ছ’র মাধ্যমে শেষ হয়েছে।
চ) আল্লাহ 0 এর মতনও চিরন্তন। এটি মাখলূক্ব বা সৃষ্ট নয়।
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো যে কিতাবে থাকবে না, তাকে কোনভাবেই ক্বোরআন বলা যাবে না।
৯) ক্বোরআন একটি মু‘জিযা। ক্বিয়ামাত পর্যন্ত এর একটি আয়াতের অনুরূপ আরেকটি আয়াত কেউ রচনা করতে পারবে না। ক্বোরআন ছাড়া অন্য কিছু তিলাওয়াতের দ্বারা ছাওয়াব কামনা করা যাবেনা। কেননা, শুধুমাত্র আল্লাহ 0 এর বাণী দ্বারাই ছাওয়াব লাভ করা যায়। ক্বোরআনের প্রত্যেকটি হার্ফ পাঠের বিনিময়ে ১০টি করে নেকী লাভ করা যায়। হাদীছ যদিও ওয়াহী কিন্তু, এটি পাঠ করার মাধ্যমে ছাওয়াব কামনা করা যাবে না। যদিও এর অর্থটা আল্লাহ 0 এর পক্ষ থেকেই, কিন্তু এর শব্দ চয়ন হয়েছে রাছূলুল্লাহ 1 এর দ্বারা। তাই হাদীছকে ওয়াহীয়ে গাইরে মাতলূ বলা হয়। আর ক্বোরআন হল ওয়াহীয়ে মাতলূ।