আল ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত আল ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ আল মাক্বদিছী রচিত -‘আক্বীদাহ সংকলন- গ্রন্থ (৫১তম পর্ব)

এই অডিওটি আশ্‌শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্ আল ‘উছাইমীন o কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ আল মাক্বদিছী o এর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ “লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ”এর ধারাবাহিক অডিও ভাষান্তর। বাংলা ভাষায় অডিওরূপে এটি ভাষান্তর করেছেন উছ্‌তায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c। এতে ছালাফে সালিহীনের (3) আক্বীদাহ-বিশ্বাসের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘উলামায়ে কিরামের চিরাচরিত স্বভাব–বৈশিষ্ট্যও হলো যে, তারা তাদের লিখনীর মাধ্যমে সর্বাগ্রে বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ সংরক্ষণ এবং তা প্রচার ও প্রসার করে থাকেন। বক্তব্যের এ পর্বেও উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c “হিছাব”সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আলোচনার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপঃ
১) ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ 0 স্বীয় বান্দাহদের থেকে তাদের প্রত্যেকটি কৃতকর্মের হিসাব নিবেন। একজন মূমিন-মুছলিমের আপন জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য এই “হিছাবের” উপরে বিশ্বাস থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরকালের হিসাবের বিষয়কে অস্বীকার করলে ব্যক্তি মূমীন বলে গণ্য হবে না। যেমন, ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- اِنَّ اِلَیۡنَاۤ اِیَابَہُمۡ ثُمَّ اِنَّ عَلَیۡنَا حِسَابَہُمۡ
অর্থাৎ- তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে। অতঃপর তাদের হিসাব নেয়া তো আমারই কাজ।ছূরা আল গা-শিয়াহ- ২৫-২৬
ক্বোরআনে কারীমের অন্যত্র আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-

فَاَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ کِتٰبَہٗ بِیَمِیۡنِہٖ فَسَوۡفَ یُحَاسَبُ حِسَابًا یَّسِیۡرًا وَّ یَنۡقَلِبُ اِلٰۤی اَہۡلِہٖ مَسۡرُوۡرًا وَ اَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ کِتٰبَہٗ وَرَآءَ ظَہۡرِہٖ فَسَوۡفَ یَدۡعُوۡا ثُبُوۡرًا وَّ یَصۡلٰی سَعِیۡرًا

অর্থাৎ- অতঃপর যার ‘আমালনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব সহজভাবেই নেয়া হবে, সে তার স্বজনদের কাছে সানন্দে ফিরে যাবে। আর যাকে ‘আমালনামা তার পিঠের পিছন দিক থেকে দেয়া হবে, সে অচিরেই মৃত্যুকে ডাকবে এবং জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।ছূরা আল-ইনশিক্বাক্ব- ৭-১২
তেমনিভাবে অনেকগুলো হাদীছ দ্বারাও “হিছাবের” বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত। শাইখ হাদীছ থেকেও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
২) মানুষের চালিকা শক্তির একটা মাধ্যম হচ্ছে ক্বালব। যা আল্লাহ্‌র (7) ইচ্ছায় মানুষকে পরিচালিত করে। মানুষের ঈমান সম্পর্কিত যে সকল বিশ্বাসসমূহ আছে, সেগুলোর সম্পর্ক হচ্ছে এই ক্বালবের সাথে। তাই মানুষের ঈমান ঠিক থাকলে ক্বালবও ঠিক থাকবে, ক্বালব ঠিক থাকলে তার দেহও ঠিক থাকবে। এর ফলে ইছলামের যে আরকান রয়েছে, সেগুলো পালন করা মানুষের জন্য সহজসাধ্য হয়ে যাবে।
৩) রাছূলুল্লাহ্‌র (1) উম্মাতের মধ্যে থেকে মোট ৭০ হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অবশিষ্ট সকলকেই হিসাবের মুখোমুখি হতে হবে। ক্বিয়ামাতের দিন কাফিরদের থেকেও হিসাব নেওয়া হবে কি-না, এই ব্যাপারে ‘উলামায়ে কিরামের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। কারো কারো মতে, কাফিরদের থেকেও হিসাব নেয়া হবে। আবার কারো কারো মতে, কাফিরদের থেকে হিসাব নেয়া হবে না, কারণ তাদের থেকে হিসাব নেওয়ার মতো কিছু নেই, তাদের সকল ‘আমলই তো বাত্বিল।
৪) ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ o বলেছেন- কাফিরদের ক্ষেত্রে হিসাব বলতে দুইটি বিষয়কে বুঝায়-

ক) ব্যক্তির নিকট তার ‘আমলনামা পেশ করা এবং এর দ্বারা তাকে ভর্ৎসনা করা।
খ) পেশকৃত ‘আমলনামার ভালো এবং মন্দ বিষয়গুলো পরিমাপ করা এবং এর ভিত্তিতে শাস্তি কমানো বা বাড়ানো।

৫) কুফ্‌ফারদের ক্ষেত্রে যদি ভালো এবং মন্দের পরিমাপ করা না হয়, তবে কিসের ভিত্তিতে তাদের শাস্তির মাত্রা কম বা বেশি হবে?
জান্নাত বা জাহান্নামে যাওয়ার জন্য তাদের কৃতকর্মের পরিমাপ করা হবে না, বরং জাহান্নামে তাদের কে কি পরিমাণ শাস্তি ভোগ করবে, সেটার জন্যই তাদের কৃতকর্মগুলোকে পরিমাপ করা হবে।
আল্লাহ 0 চাইলে তাদের প্রত্যেককে বিনা হিসাবে জাহান্নামে দিয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি একারণেই তাদের ‘আমলনামা তাদের সম্মুখে পেশ করবেন, যাতে পরবর্তীতে তারা কোনো প্রশ্ন উথাপন করতে না পারে যে, কিসের ভিত্তিতে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করলো?
৬) কাফিরদেরকে ক্বিয়ামাতের দিন তাদের প্রাপ্ত শাস্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তারা এর জবাব দেবে। এ প্রসঙ্গে ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-

مَا سَلَکَکُمۡ فِیۡ سَقَرَ قَالُوۡا لَمۡ نَکُ مِنَ الۡمُصَلِّیۡنَ وَ لَمۡ نَکُ نُطۡعِمُ الۡمِسۡکِیۡنَ وَ کُنَّا نَخُوۡضُ مَعَ الۡخَآئِضِیۡنَ وَ کُنَّا نُکَذِّبُ بِیَوۡمِ الدِّیۡنِ حَتّٰۤی اَتٰىنَا الۡیَقِیۡنُ

অর্থাৎ- কিসে তোমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে গেছে? তারা বলবে- আমরা নামাযীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না, মিছকীনদেরকে খাবার খাওয়াতাম না, আমরা অনর্থক সমালোচনাকারীদের সাথে থেকে (সত্য পথের পথিকদের) সমালোচনা করতাম, আর আমরা ক্বিয়ামাত দিবসকে মিথ্যা অভিহিত করতাম, অবশেষে আমাদের নিকট ইয়াক্বীন (মৃত্যু) এলো।ছূরা আল মুদ্দাছ্‌ছির- ৪২-৪৭
৭) মানুষদের পাশাপাশি জিনজাতির হিসাবও নেওয়া হবে। কারণ তারাও মানুষের মতোই একমাত্র আল্লাহ্‌র (7) ‘ইবাদাতের জন্য আদিষ্ট হয়েছে। এ বিষয়ে ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-

وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ

অর্থাৎ- আমি জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি যেন তারা কেবল আমার ‘ইবাদাত করে।ছূরা আয্‌ যারিয়াত- ৫৬
মানবজাতির ন্যায় জিনজাতিও জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এ প্রসঙ্গে ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- وَ لَقَدۡ ذَرَاۡنَا لِجَہَنَّمَ کَثِیۡرًا مِّنَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ
অর্থাৎ- অবশ্যই আমি বহুসংখ্যক জিন আর মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি।ছূরা আল-আ‘রাফ- ১৭৯
নেককার জিনগণও জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেমন আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- فِیۡہِنَّ قٰصِرٰتُ الطَّرۡفِ لَمۡ یَطۡمِثۡہُنَّ اِنۡسٌ قَبۡلَہُمۡ وَ لَا جَآنٌّ
অর্থাৎ- সেসবের মধ্যে থাকবে আনতনয়নারা, যাদেরকে স্পর্শ করেনি তাদের পূর্বে কোন মানুষ আর না কোন জিন।ছূরা আর-রাহ্‌মান- ৫৬
৮) জিন ও মানবজাতির পাশাপাশি অন্যান্য মাখলূক্বাতেরও হিসাব-নিকাশ হবে কি?
এবিষয়ে জামহূর ‘উলামাদের মতামত হলো- তাদেরকে কোনো বিচারের সম্মুখীন করা হবে না। কারণ শারী‘আতের আদেশ-নিষেধগুলোর প্রতি তারা আদিষ্ট নয়। তবে আল্লাহ 0 তাদের পারস্পরিক ‘আদল-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। যেমন রাছূলুল্লাহ 1 বলছেন- যদি কোনো শিং ওয়ালা জন্তু তার চেয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোনো জন্তুকে আক্রমণ করে থাকে, তাহলে ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ 0 সেই মাযলূম জন্তুকে বলবেন যে, তুমি তার থেকে বদলা নাও। এর দ্বারা তাদের মধ্যে সমতা বিধান করা হবে। অতঃপর তাদেরকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হবে।
৯) উম্মাতে মুহাম্মাদির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ক্বিয়ামাতের দিন সবার আগে তারা ক্বাব্‌র থেকে উথিত হবে। সবার আগে তাদের হিসাব গ্রহণ করা হবে। সেই হিসেবে এই উম্মাতই সবার আগে পুলসিরাত্ব পার হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবার রাছূলুল্লাহ 1 এর উম্মাতের মধ্যে মুহাজিরগণ সর্বপ্রথম পুলসিরাত্ব অতিক্রম করবে। মুহাজিরগণ জান্নাতে প্রবেশ করার ৪০ বছর পর অন্যান্যরা জান্নাতে প্রবেশ করার অনুমতি লাভ করবে।
১০) ক্বিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। যদি সালাত ঠিক থাকে, তাহলে অন্য সকল ‘আমাল-‘ইবাদাত ঠিক থাকবে। যদি সালাত বিনষ্ট হয়ে যায়, তবে অন্যান্য সকল ‘আমাল-‘ইবাদাত বিনষ্ট হয়ে যাবে।
সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে কেন?
কারণ এই সালাতের দ্বারাই সবচেয়ে বেশি ‘উবূদিয়্যাহ এবং ইছলামের বহিঃপ্রকাশ হয়। তাওহীদের পরে সালাতই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদাত।

 

ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-
১) যদি কেউ পরকালে বিশ্বাস করে, কিন্তু হিছাবে বিশ্বাস না করে, তাহলে সেই ব্যক্তি কি কাফির? না-কি সে কেবল ঈমানের পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি?
২) কাফিরদের ‘আমালের পরিমাপ কি মীযানে করা হবে?
৩) যাদের কাছে ইছলাম পৌঁছায়নি, হাশ্‌রের দিনে তাদের অবস্থা কী হবে?
৪) কোনো বিদ‘আতীর যদি সালাত ঠিক থাকে, তাহলে তার অন্যান্য ‘আমালের হিসাব কিভাবে হবে? আল্লাহ 0 আপনার মধ্যে বারাকাহ দান করুন!
৫) “হিছাবে ইয়াছীর” প্রাপ্তরা কি ক্বাব্‌রের ‘আযাব কম-বেশি ভোগ করবে?
৬) যারা হিসাব ও শাস্তি ব্যতিরেকে জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের ‘আমালসমূহ কি মীযানে পরিমাপ করা হবে? যদি করা না হয়, তাহলে তাদের হুছ্‌নুল খুলূক্বের ভার মীযানে কিভাবে ভারী হবে?
৭) যার হিসাব সহজ হবে, তার ‘আমাল কি মীযানে পরিমাপ করা হবে এটা নির্ধারণের জন্য যে, সে জান্নাতে যাবে না-কি জাহান্নামে?
৮) আমরা জানি যে, জান্নাতে সবার স্তর ও মর্যাদা সমান হবে না। কে জান্নাতের কোন স্তরে থাকবে, তা নির্ধারণের জন্য কি মীযানে ‘আমালসমূহ পরিমাপ করা হবে?
৯) কেউ যদি শুধুমাত্র ফার্‌য সালাত আদায় করে, আর এতে যদি তার ঘাটতি থাকে, তাহলে এর জন্য কি সে শাস্তি পাবে?


১. ছূরা আল গা-শিয়াহ- ২৫-২৬ 
২. ছূরা আল-ইনশিক্বাক্ব- ৭-১২ 
৩. ছূরা আল মুদ্দাছ্‌ছির- ৪২-৪৭ 
৪. ছূরা আয্‌ যারিয়াত- ৫৬ 
৫. ছূরা আল-আ‘রাফ- ১৭৯ 
৬. ছূরা আর-রাহ্‌মান- ৫৬ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close