আল ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত আল ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ আল মাক্বদিছী রচিত -‘আক্বীদাহ সংকলন- গ্রন্থ (৫০তম পর্ব)

এই অডিওটি আশ্‌শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্ আল ‘উছাইমীন o কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ আল মাক্বদিছী o এর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ “লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ”এর ধারাবাহিক অডিও ভাষান্তর। বাংলা ভাষায় অডিওরূপে এটি ভাষান্তর করেছেন উছ্‌তায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c। এতে ছালাফে সালিহীনের (g) আক্বীদাহ-বিশ্বাসের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘উলামায়ে কিরামের চিরাচরিত স্বভাব–বৈশিষ্ট্যও হলো যে, তারা তাদের লিখনীর মাধ্যমে সর্বাগ্রে বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ সংরক্ষণ এবং তা প্রচার ও প্রসার করে থাকেন। বক্তব্যের এ পর্বে উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c “হিছাব” সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আলোচনার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপঃ 

১) “হিছাব” বিষয়ে ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ o বলেছেন- আল্লাহ 0 মানুষের হিসাব নিবেন, মীযান ক্বায়িম করা হবে, মানুষের নামায়ে ‘আমালগুলো খুলে দেওয়া হবে। যেমন- ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-

فَاَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ کِتٰبَہٗ بِیَمِیۡنِہٖ فَسَوۡفَ یُحَاسَبُ حِسَابًا یَّسِیۡرًا وَّ یَنۡقَلِبُ اِلٰۤی اَہۡلِہٖ مَسۡرُوۡرًا وَ اَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ کِتٰبَہٗ وَرَآءَ ظَہۡرِہٖ فَسَوۡفَ یَدۡعُوۡا ثُبُوۡرًا وَّ یَصۡلٰی سَعِیۡرًا

অর্থাৎ- অতঃপর যার ‘আমালনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে, অচিরেই তার হিসাব সহজভাবে নেয়া হবে। আর সে তার স্বজনদের কাছে সানন্দে ফিরে যাবে। আর যাকে তার আমালনামা তার পিঠের পিছন দিক থেকে দেয়া হবে, অচিরেই সে মৃত্যুকে ডাকবে এবং জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।ছূরা আল ইনশিক্বাক্ব- ৭-১২
শারী‘য়াতের পরিভাষায় “হিছাব” হলো- ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ 0 বান্দাহদেরকে তাদের কর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- إِنَّ إِلَيْنَا إِيَابَهُمْ ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ
অর্থাৎ- নিশ্চয় আমারই দিকে তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তাদের হিসাব নেয়া তো আমারই কাজ।ছূরা আল গাশিয়াহ- ২৫-২৬
রাছূলুল্লাহ 1 সালাতে কখনো কখনো এই দু‘আ করতেন- “হে আল্লাহ! আপনি আমার থেকে সহজভাবে হিসাব নিন”। এ সম্পর্কে ‘আয়িশাহ f রাছূলুল্লাহ্‌কে (1) বললেন- সহজ হিসাব কি? তখন রাছূলুল্লাহ বললেন- সহজ হিসাব হচ্ছে, আল্লাহ 7 বান্দাহ্‌র নামায়ে ‘আমালের দিকে তাকাবেন, অতঃপর তা উপেক্ষা করবেন।মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ
২) ক্বিয়ামাতের দিন মূমিনদের থেকে কিভাবে হিসাব নেয়া হবে?
আল্লাহ 0 তাঁর মূমীন বান্দাহদেরকে একাকী ডেকে নিবেন এবং প্রত্যেকের নিকট থেকে স্বীয় গুনাহের স্বীকারোক্তি নিয়ে নিবেন। যখন আল্লাহ 0 দেখবেন যে, গুনাহের কারণে তার বান্দাহ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি বলবেন যে, তোমার দুন্‌ইয়াওয়ী জীবনে এই গুনাহগুলোকে আমি ঢেকে রেখেছিলাম, আর আজকে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর তার হাতে তার সৎকর্মের কিতাবটি তুলে দেওয়া হবে।
ক্বিয়ামাতের দিন কাফির ও মুনাফিক্বের হিসাব কেমন হবে?
তাদেরকে সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে বলা হবে, এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যারা তাদের রাবের উপর মিথ্যারোপ করেছে। জেনে রেখো, অভিসম্পাত হচ্ছে যালিমদের প্রতি।সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম
এছাড়াও রাছূলুল্লাহ 1 এর উম্মাতের মধ্যে থেকে মোট ৭০ হাজার লোক বিনা হিসাবে এবং কোনো ধরনের শাস্তি ব্যতিরেকে জান্নাতে প্রবেশ করবে।সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম
ছাওবান 3 থেকে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- এই ৭০ হাজার লোকের প্রত্যেকের সাথে আরও ৭০ হাজার লোক থাকবে।মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ
৩) ক্বিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম রাছূলুল্লাহ্‌র (1) উম্মাতের হিসাব নেওয়া হবে। যেমন, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- আমরা সর্বশেষ জাতি। কিন্তু ক্বিয়ামাতের দিন আমরা থাকব সবার আগে। সমগ্র সৃষ্টির পূর্বে আমাদের ফায়সালা করা হবে।সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম
ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ্‌র (0) অধিকারের মধ্য হতে সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। যেমন, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- ক্বিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম বান্দাহ্‌র সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। যদি তার সালাত ঠিক থাকে, তবে তার অন্যান্য ‘আমালগুলোও ঠিক থাকবে। যদি এই সালাত বিনষ্ট হয়ে যায়, তবে অন্যান্য ‘আমলগুলোও বিনষ্ট হয়ে যাবে।ত্বাবারানী
ক্বিয়ামাতের দিন বান্দাহ্‌র অধিকারের মধ্য হতে সর্বপ্রথম মানুষ হত্যার বিচার করা হবে। যেমন, রাছূলুল্লাহ k বলেছেন- ক্বিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম মানুষের মধ্যে যে বিষয়ের ফায়সালা করা হবে, তা হচ্ছে- রক্তপণের বিষয়।সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম

ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ 0 আসবেন এবং বান্দাদের হিসাব নিবেন। যেমন- ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন- کَلَّاۤ اِذَا دُکَّتِ الۡاَرۡضُ دَکًّا دَکًّا وَّ جَآءَ رَبُّکَ وَ الۡمَلَکُ صَفًّا صَفًّا
অর্থাৎ- এটা মোটেই ঠিক নয়, যখন পৃথিবীকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে সমতল বানিয়ে দেয়া হবে, আর আপনার প্রতিপালক আসবেন, আর ফিরিশতারা থাকবেন সারিবদ্ধ অবস্থায়।ছূরা আল-ফাজ্‌র- ২১-২২১০
৪) আবূ হুরাইরাহ 3 থেকে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- ক্বিয়ামাতের দিন মানবজাতি বেহুঁশ হয়ে যাবে। আর আমিও তাদের সাথে বেহুঁশ হয়ে যাবো। আর আমিই হবো সেই ব্যক্তি যার সর্বপ্রথম জ্ঞান ফিরে আসবে। আমার জ্ঞান ফিরে আসার পর আমি দেখতে পাবো যে, মূছা আল্লাহ্‌র (0) ‘আরশের খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানিনা যে, মূছা কি আদৌ বেহুঁশ হবেন না, না-কি আমার আগেই তার হুঁশ ফিরে আসবে।
মূছা বেহুঁশ হবেন কি হবেন না, এই ব্যাপারে ‘উলামাদের মধ্যে কিছুটা দ্বিমত আছে। যেমন-

ক) কারো মতে- মূছা عليه السلام বেহুঁশ হবেন না। কারণ, তিনি পৃথিবীতে তার রাব্বের তাজাল্লী দেখে একবার বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলেন। তাই ক্বিয়ামাতের দিন তিনি আর বেহুঁশ হবেন না।
খ) আবার কারো কারো মতে- মূছাও () বেহুঁশ হবেন। এবং অন্যান্যদের মতো তিনিও হুঁশ ফিরে পাবেন।

৫) হাশ্‌রের ময়দানের অবস্থা হবে নিম্নরুপঃ

ক) হাশ্‌রের ময়দানে মাথার খুব নিকটেই সূর্য থাকবে।
খ) সূর্য অতি নিকটে থাকার ফলে মানুষের শরীর থেকে পানির মত করে ঘাম বের হবে। মানুষ স্বীয় কৃতকর্মের অনুপাতে সেই ঘামে ডুবে থাকবে।
গ) রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ 7 সমগ্র যমীনকে স্বীয় মুষ্ঠির মধ্যে নিয়ে নিবেন এবং আকাশকে তার ডান হাতের মধ্যে ভাঁজ করে নিবেন। অতঃপর আল্লাহ 0 ইরশাদ করবেন- আমিই মালিক। আমিই হচ্ছি মহান বাদশাহ। দুন্‌ইয়ার বাদশাহরা আজ কোথায়?সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম১১
ঘ) অতঃপর রাছূলুল্লাহ্‌র (1) এর সুপারিশের ফলে বিচারকার্য শুরু হবে।
এছাড়াও আল্লাহ 0 ক্বোরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন-

یَوۡمَ یَفِرُّ الۡمَرۡءُ مِنۡ اَخِیۡہِ وَ اُمِّہٖ وَ اَبِیۡہِ وَ صَاحِبَتِہٖ وَ بَنِیۡہِ لِکُلِّ امۡرِئٍ مِّنۡہُمۡ یَوۡمَئِذٍ شَاۡنٌ یُّغۡنِیۡہِ

অর্থাৎ- সেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাই থেকে এবং তার মাতা, তার পিতা, তার স্ত্রী ও তার সন্তান থেকে, সেদিন তাদের প্রত্যেকের অবস্থা এমন হবে যে, সে কেবল নিজেকে নিয়েই ব্যতিব্যস্ত থাকবে।ছূরা ‘আবাছা- ৩৪-৩৭১২

৬) হাশ্‌রের ময়দানের এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বাঁচার উপায় কি?
আবূ হুরাইরাহ 3 থেকে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- (হাশ্‌রের ময়দানে) মোট ৭ প্রকার লোককে আল্লাহ 0 সেদিন তার ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। সেই ৭ প্রকারের লোক হলো নিম্নরূপ-

ক) ন্যায় বিচারক ইমাম বা শাসক।
খ) সেই যুবক, যে তার যৌবনকে রাব্বের ‘ইবাদাতে ব্যয় করেছে।
গ) সেই লোক, যার অন্তর মাছজিদের সাথে আবদ্ধ থাকে।
ঘ) ঐ দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহ্‌র (0) জন্যই একে অপরকে ভালোবাসে, আবার আল্লাহ্‌র (7) জন্যই একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।
ঙ) সেই লোক, যাকে অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত বংশের সুন্দরী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু উত্তরে সে বলে- আমি আল্লাহ্‌কে (7) ভয় করি।
চ) ঐ ব্যক্তি, যে এমনভাবে সাদাক্বা করে যে, তার বাম হাত জানে না; তার ডান হাত কি সাদাক্বা করলো।
ছ) ঐ ব্যক্তি, যে নীরবে এমনভাবে আল্লাহ্‌কে (0) স্মরণ করে যে, তার চোখ থেকে পানি প্রবাহিত হয়।
৭) কুফ্‌ফার এবং মুনাফিক্বোনদের মধ্যে যারা ভালো কাজ করবে, তারা হয়তো কিছুটা কম মাত্রার ‘আযাব ভোগ করবে। কিন্তু তারা জাহান্নামের ‘আযাবে চিরস্থায়ীভাবে নিপতিত থাকবে।

 

ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-
১) যখন আমাদের রাব্ব বিচারকার্য পরিচালনা করার জন্য আসবেন, তখন কি সমগ্র মানবজাতি তাকে দেখতে পাবে?
২) “আল্লাহ্‌র (0) ছায়া” দ্বারা কি বুঝা যায় যে, এটি আল্লাহ 7 সৃষ্টি করেছেন, না-কি অন্য কিছু?
৩) হিছাব ছাড়া যে ৭০ x ৭০ হাজার বান্দাহ পার পেয়ে যাবে, তারা কি “হিছাবে ইয়াছীর” পাওয়া মুক্বতাসিদীন বান্দা থেকে অবশ্যই সবদিক থেকে উত্তম হবে, নাকি বিশেষ মর্যাদা পেয়ে বিশেষ কোনো ‘আমালের জন্য কোনো সাধারণ মুছলিমও নাজাতপ্রাপ্ত ৭০০০০ x ৭০০০০ বান্দার কাতারে আসতে পারে?
৪) “হিছাবে ইয়াছীর”, “শাফা‘য়াতে ‘উজমা” এবং “আল্লাহর ছায়া” কি একই বান্দাহ পাবেন, নাকি এগুলো আল্লাহ্‌র (0) ভিন্ন ভিন্ন পুরস্কার হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন বান্দার জন্য বরাদ্দ থাকবে?
৫) যারা “হিছাব ও ‘আযাব ব্যতিরেকে” জান্নাতে যাবেন, তারা কি সবাই দুন্‌ইয়াতে আহলুছ্‌ ছুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অংশ হবেন, না-কি আক্বীদাহ/‘ইল্‌ম/ছুন্নাতের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও “হিছাব ও ‘আযাব ব্যতিরেকে” জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে আল্লাহ 0 রহম করতে পারেন?


১. ছূরা আল ইনশিক্বাক্ব- ৭-১২ 
২. ছূরা আল গাশিয়াহ- ২৫-২৬ 
৩. মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ 
৪. সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম 
৫. সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম 
৬. মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ 
৭. সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম 
৮. ত্বাবারানী 
৯. সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম 
১০. ছূরা আল-ফাজ্‌র- ২১-২২ 
১১. সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম 
১২. ছূরা ‘আবাছা- ৩৪-৩৭ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close