আল ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্‌ আল ‘উছাইমীন কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত আল ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ আল মাক্বদিছী রচিত -‘আক্বীদাহ সংকলন- গ্রন্থ (৩৮নং পর্ব)

এই অডিওটি হলো আশ্শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্ আল ‘উছাইমীন o কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ আল মাক্বদিছী o এর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ “লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ” এর ধারাবাহিক অডিও ভাষান্তর। বাংলা ভাষায় অডিওরূপে এটি ভাষান্তর করেছেন উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c। এতে ছালাফে সালিহীনের (4) ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাসের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘উলামায়ে কিরামের চিরাচরিত স্বভাব–বৈশিষ্ট্যও হলো যে, তারা তাদের লিখনীর মাধ্যমে সর্বাগ্রে বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র সংরক্ষণ এবং তা প্রচার ও প্রসার করে থাকেন। বক্তব্যের এ পর্বে উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c ক্বিয়ামাতের ‘আলামাত সম্পর্কে আলোচনা করেছেন:-
১) ক্বিয়ামাতের নিদর্শনাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা।
২) একমাত্র আল্লাহ-ই (0) গাইব বা অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত। কেবলমাত্র ক্বোরআন ও সাহীহ্‌ হাদীছের প্রমাণাদির ভিত্তিতেই ক্বিয়ামাতের ‘আলামাতসমূহ নিরূপিত ও নির্ধারিত হবে, অন্য কিছুর ভিত্তিতে নয়।
৩) তথাকথিত যেসব দা‘য়ী নিজেদের যুক্তি কিংবা ইয়াহূদী-নাসারাদের গবেষণালব্ধ বিভিন্ন তথ্য-উপাথ্যের উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর আয়ূ কিংবা দুন্‌ইয়া ধ্বংসের সময়-সীমা নির্ধারণ করে, অথবা ক্বিয়ামাতের কোন নিদর্শন প্রকাশিত হওয়ার সময়-সীমা নির্ধারণ করে দেয়, পথভ্রষ্টকারী এসব দা‘য়ী থেকে সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে।
৪) বর্তমান যুগে বা বর্তমান সমাজে ক্বিয়ামাতের ‘আলামাতগুলো কিভাবে, কিরূপে বিদ্যমান রয়েছে কিংবা প্রকাশ পাচ্ছে, এ বিষয়টি মনগড়া যুক্তি ও ব্যাখ্যা দ্বারা মানুষের সামনে তুলে ধরা কারো উচিত নয় এবং এটা কারো দায়িত্বও নয়। উছতায বিষয়টি সবিস্তার আলোচনা করেছেন।
৫) ক্বিয়ামাতের ছোট ছোট ‘আলামাত সমূহের মধ্যে যেগুলো ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়ে গেছে আর আগামীতে যেগুলো প্রকাশ পাবে- এ সংক্রান্ত আলোচনা।
৬) ক্বিয়ামাতের ছোট ছোট যেসমস্ত ‘আলামাত ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়ে গেছে এগুলোর মধ্যে কতক হলো-

ক) নাবীর (5) আগমন এবং তাঁর মৃত্যুবরণ।
খ) চন্দ্রের দ্বীখন্ডিত হয়ে যাওয়া।
গ) হিজায অঞ্চল থেকে আগুন বের হওয়া।

৭) যেসমস্ত ছোট ছোট ‘আলামাত এখনও প্রকাশ পাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো- নাবুওয়্যাতের মিথ্যা দাবি করা।
৮) ক্বিয়ামাতের ১০টি প্রধান ‘আলামাত যা এখনো প্রকাশ পায়নি, উছতায নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করেছেন।

ক) আগুনের এক বিশেষ ধোঁয়া।
খ) দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ
গ) দাব্বাতুল আর্‌য বা মাটির নিচে থেকে এক বিশেষ প্রাণীর আত্মপ্রকাশ।
ঘ) পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া।
ঙ) ‘ঈছা ইবনু মারইয়াম 5 এর আকাশ থেকে অবতরণ।
চ) ইয়া’জূজ ও মা’জূজের আত্মপ্রকাশ
ছ, জ, ঝ। তিনটি বিশেষ ভূমিধস। একটি পূর্বাঞ্চলে, একটি পশ্চিমাঞ্চলে এবং একটি ‘আরাব উপদ্বীপে।
ঞ) একটি বিশেষ আগুন, যা মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে একটি জায়গায় জড়ো করবে।

৯) শাইখের (c) আলোচনায় উঠে আসা ক্বিয়ামাতের ছোট ছোট ‘আলামাতের তালিকা নিম্নে তুলে ধরা হলো-

* রাছূলুল্লাহ 1 এর আবির্ভাব ও তাঁর মৃত্যু।
* চন্দ্রের দ্বীখন্ডিত হয়ে যাওয়া।
* হিজায অঞ্চল থেকে আগুন বের হওয়া।
* সাহাবায়ে কিরামের মৃত্যু।
* বাইতুল মাক্বদিছ মুছলমানদের দখলে আসা।
* মহামারী
* খাওয়ারিজদের আত্মপ্রকাশ।
* নাবুওয়্যাতের মিথ্যাদাবিদার ৩০ জন লোকের আত্মপ্রকাশ।
* ধন-সম্পদের প্রাচুর্য দেখা দেবে।
* এমন কতক অত্যাচারীর আত্মপ্রকাশ, যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে চাবুক দিয়ে পিঠাবে।
* মারামারি ও যুদ্ধ-বিগ্রহ বেড়ে যাবে।
* আমানাতদারী বা বিশ্বস্থতার গুরুত্ব কমে যাবে।
* এই উম্মাত তাদের পূর্ববর্তী জাতির (ইয়াহুদী ও নাসারাদের) পদে পদে অনুসরণ-অনুকরণ করতে শুরু করবে।
* দাঁসীর ঘরে তার মালিক জন্ম নেবে।
* সুউচ্চ অট্রালিকা ও দালান নির্মাণের হিড়িক পড়ে যাবে।
* ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপকতা লাভ করবে।
* স্বামীর সাথে স্ত্রীও ব্যবসা তথা কেনা-বেচা করবে।
* গুটিকতক লোকের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে।
* মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার প্রবণতা বেড়ে যাবে।
* সত্যের পক্ষে স্বাক্ষ্য গোপন করা হবে।
* ব্যাপকভাবে অজ্ঞতা প্রকাশ ভাবে এবং প্রকৃত ‘ইল্‌ম বা জ্ঞান ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
* অপকর্ম ও পারিবারিক সম্পর্ক বিচ্ছেদ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে।
* মানুষ আয়-রোজগার করবে কিন্তু তার আয়-রোজগারের উrস হালাল না-কি হারাম, সেদিকে সে ভ্রুক্ষেপও করবে না।
* মানুষ গানীমাতের মালকে নিজের সম্পদ মনে করবে।
* মানুষ জ্ঞান (‘ইলমে দ্বীন) অর্জন করবে দুন্‌ইয়া লাভের জন্য, আল্লাহ্‌র (7) সন্তুষ্টি লাভের জন্য নয়।
* ব্যক্তি তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মায়ের অবাধ্য হবে।
* আপন পিতাকে দূরে ঠেলে দেবে এবং বন্ধুদেরকে কাছে টেনে নেবে।
* লোকজন মাছজিদে জাগতিক ও উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলতে শুরু করবে।
* সমাজের অথর্ব লোকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হবে।
* ব্যক্তিকে তার অত্যাচারের ভয়ে মানুষ সম্মান দেখাবে।
* ব্যভিচারকে মানুষ হালাল বা বৈধ মনে করবে।
* সুদকে মানুষ হালাল মনে করবে।
* মানুষ মদপান করাকে হালাল মনে করবে।
* বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপকতা এবং এগুলোর ব্যবহারকে হালাল মনে করবে।

১০) ক্বিয়ামাতের ছোট ‘আলামাতগুলোর মধ্যে যেগুলো এখন পর্যন্ত প্রকাশ পায়নি, এবং যেসব ‘আলামত ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়ে এখন পর্যন্ত চলছে সেগুলো হলো নিম্নরূপ-

* মানুষের ধন সম্পদ বেড়ে যাবে।
* ভূগর্ভস্থ প্রাকৃতিক সম্পদ বেরিয়ে আসবে।
* পশু বা জন্তুর আকৃতিতে মানব সন্তান জন্ম নেবে।
* বৃষ্টি বর্ষিত হবে তবে উদ্ভিদ গজাবে না।
* গাছ ও পাথর কথা বলবে।
* ইয়াহূদীদের বিরুদ্ধে মুছলমানগণ যুদ্ধ করবে।
* চাঁদের আকার বড় দেখাবে।
* মৃতব্যক্তির উত্তসূরিদের মাঝে তার সম্পদ (ফারাইয) বন্টন করা হবে না।
* জীব-জন্তু কথা বলবে।
* মানুষের ক্বালব থেকে ক্বোরআনে কারীম বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
* ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবেন।

 

ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-
ক) السلام عليكم ورحمة الله।
ক্বিয়ামাতের ‘আলামাত হিসেবে হিজাজের আগুন যে ইতিমধ্যে দেখা গিয়েছে, সে ব্যাপারে জমহুর ‘উলামাদের কী মত? ঐ ঘটনা কবে দেখা গিয়েছে? বিস্তারিত জানালে আশা করি সবাই উপকৃত হবেন।
খ) অনেকে ক্বিয়ামাতের ‘আলামাতগুলোর কোন কোনটিকে প্রতীকী অর্থে ব্যাখ্যা করে থাকেন এবং এটা করার মধ্য দিয়ে তারা প্রকারান্তরে ঐ ‘আলামাতটি যে ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে, সেটাই প্রমাণ করতে চান। এ ব্যাপারে সঠিক ‘আক্বীদা-বিশ্বাস কি হওয়া উচিত এবং এধরনের ব্যক্তিদের প্রতি আমরা কেমন ধারণা পোষণ করব?
গ) ক্বিয়ামাতের ‘আলামাতগুলোকে আমরা কি নেতিবাচক ভাবে নিব নাকি ইতিবাচক ভাবে? বাহ্যিকভাবে অধিকাংশ ‘আলামাত নেতিবাচক বলে মনে হয়, কিন্তু ইমাম মাহদী’র আগমনসহ আরো কিছু ‘আলামাত ইতিবাচক বলেই মনে হয়। উল্লেখ্য, আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটা বিষয় হলো- যে কোন খারাপ বিষয় হতে দেখলেই সেটিকে ক্বিয়ামাতের ‘আলামাত হিসেবে গণ্য করা এবং এ নিয়ে মুখরোচক কথা-বার্তা বলা হয়। এ বিষয়ে সঠিক মত ও পথ কি হওয়া উচিত?

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close