এই অডিওটি হলো আশ্শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্ আল ‘উছাইমীন o কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ আল মাক্বদিছী o রচিত সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ “লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ” এর ধারাবাহিক অডিও ভাষান্তর। বাংলা ভাষায় অডিওরূপে এটি ভাষান্তর করেছেন উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c । এতে ছালাফে সালিহীনের (4) ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাসের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘উলামায়ে কিরামের চিরাচরিত স্বভাব–বৈশিষ্ট্যও হলো যে, তারা তাদের লিখনীর মাধ্যমে সর্বাগ্রে বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ্র সংরক্ষণ এবং তা প্রচার ও প্রসার করে থাকেন।
অদ্যকার আলোচনায় আল্লাহ্র (0) “ইছতিওয়া ‘আলাল ‘আর্শ বা ‘আর্শের উপর আল্লাহ্র অবস্থান” সম্পর্কে চমৎকার আলোচনা করা হয়েছে এবং মু‘আত্ত্বিলা সম্প্রদায়ের ভ্রান্ত বিশ্বাস ও দাবিসমূহ প্রমাণ সহকারে খন্ডন করা হয়েছে। একই সাথে আল্লাহ্র (7) “ইছতিওয়া ‘আলাল ‘আর্শ” সম্পর্কে বিভিন্ন সংশয়ের প্রজ্ঞাপূর্ণ জাওয়াব দেয়া হয়েছে। জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাশীলদের জন্য আলোচনাটি নিঃসন্দেহে উপভোগ্য। বক্তব্যের এ পর্বে উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c নিম্নোক্ত বিষয়ে আলোচনা করেছেন:-
১) পূর্ববর্তী ক্লাসে আলোচিত বিষয় “আল্লাহ্র (8) সুমহান নাম ও গুণাবলী এবং ইছতিওয়া ‘আলাল ‘আর্শ বা ‘আর্শের উপর আল্লাহ্র অবস্থান” সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পূণঃআলোচনা।
২) ‘আর্শের উপর আল্লাহ্র অবস্থান” বিষয়ে আমাদের তিনটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আর তা হলো:-
ক) আল্লাহ b সবকিছুর ঊর্ধ্ধে, আর এটাই হচ্ছে মূল বিষয়। “আল্লাহ 0 সবকিছুর ঊর্ধ্ধে” এ বিষয়টি সর্বস্বীকৃত প্রমাণিত সত্য।
খ) আল্লাহ 7 আকাশের উপরে।
গ) আল্লাহ 8 ‘আর্শের উপরে।
শ্রোতারা যাতে সহজেই বুঝতে পারে তজ্জন্য শাইখ হাম্মাদ বিল্লাহ উপরোক্ত তিনটি বিষয় নানা আঙ্গিকে অত্যন্ত চমৎকার ও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝার জন্য শ্রোতাদেরকে অবশ্যই মনোযোগী হতে হবে।
৩) যদি কেউ এটা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ 0 ‘আর্শের উপরে নয় বা আকাশের উপরে নয় কিংবা সবকিছুর ঊর্ধ্ধে নয়, তাহলে এরূপ ধারণা-বিশ্বাস হলো কুফ্র।
৪) মু‘আত্ত্বিলা সম্প্রদায় হলো তারা যারা আল্লাহ্র (b) সিফাতকে অস্বীকার করে।
৫) “ইছতিওয়া” হলো আল্লাহ্র (0) একটি সিফাতে ফে‘লিয়্যাহ বা কর্মবাচক গুণ। ‘উলূ (সর্বোচ্চ বা সর্বোর্ধ্ধ) হলো আল্লাহ্র (8) একটি সিফাতে যাতিয়্যাহ বা সত্তাগত একটি সিফাত।
৬) ছূরা আল আ‘রাফের ৫৪নং আয়াতের প্র্রেক্ষিতে কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, যেহেতু আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করার পর আল্লাহ 7 ‘আর্শের উপরে অবস্থান করেন, অথচ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির বহু পূর্বেইতো ‘আর্শ সৃষ্টি করা হয়েছিল, তাহলে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করার পূর্বে কি আল্লাহ 0 ‘আর্শের নিচে ছিলেন?
এ প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলব, আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টির উর্দ্ধে ছিলেন এবং তিনি সদা-সর্বদাই সবকিছুর ঊর্ধ্ধে, তিনি সবসময়ই সমুচ্চ। মূলতঃ ‘আর্শের উপরে সমুচ্চ হওয়া এটি হলো একটি বিশেষ ধরনের সমুচ্চতা বা ঊর্ধ্ধে অবস্থানের একটি বিশেষ রূপ। আল্লাহ্র (b) এরূপ অবস্থানের বিষয়টি কেবল সম্পাদিত হয় আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পরে। এর অর্থ এটা নয় যে, আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ ‘আর্শের নিচে ছিলেন কিংবা তাঁর অবস্থান সমগ্র সৃষ্টির উপরে বা ঊর্ধ্ধে ছিল না। সারকথা হলো, আল্লাহ 0 সর্বদাই স্বীয় সৃষ্টি হতে উর্ধ্ধে ছিলেন, তবে ‘আর্শের উপরে অবস্থান নেয়া- এটা হলো বিশেষ সমুচ্চতায় আল্লাহ্র (8) অবস্থান, আর এই অবস্থান আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পর সংঘটিত হয়েছে। উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c বিষয়টির অত্যন্ত বিশদ ও সুক্ষ্ণ ব্যাখা উপস্থাপন করেছেন।
৭) আল্লাহ্র (0) সিফাত বিষয়ে নিজেদের মনগড়া ও কল্পনাপ্রসূত ব্যাখা দেয়ার কারণেই মু‘আত্ত্বিলা সম্প্রদায় পথভ্রষ্ট হয়েছে। সুতরাং আমাদেরকে অত্যন্ত সতর্ক-সাবধান হতে হবে। আহলুত্ তা‘ত্বীল বা মু‘আত্ত্বিলা সম্প্রদায় “ইছতিওয়া”-র সঠিক অর্থ ও মর্ম অনুধাবন করতে পারেনি, তাই তারা “ইছতিওয়া”-র ব্যাখ্যা “ইছতীলা” দ্বারা করেছে (ইছতীলা অর্থ হলো- কোন কিছু জবরদখল বা পূনর্দখল করা কিংবা জোর-শক্তি দিয়ে কোন কিছুকে নিজের মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণে নেয়া)। আহলুত্ তা‘ত্বীলরা ছূরা ত্বা-হা এর ৫নং আয়াতের যে ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে, উছতায c এ বিষয়টিও আলোচনা করেছেন।
কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারে যে, আহলুত্ তা‘ত্বীলরা কেন-কোন যুক্তিতে এরূপ ভুল ব্যাখা দিয়ে থাকে? মূলতঃ আহলুত্ তা‘ত্বীলরা তাদের দাবির স্বপক্ষে যেসব প্রমাণ পেশ করে থাকে তন্মধ্যে একটি হলো ছনদ বা বর্ণনাসূত্রহীন জনৈক অনারব (যদিও তাদের দাবি হলো যে, তিনি একজন ‘আরব কবি) কবির একটি কবিতা। তারা তাদের দাবির স্বপক্ষে আরো যেসব যুক্তি উপস্থাপন করে থাকে সেগুলো হলো যথা:-
ক) “ইছতিওয়া”-কে যদি প্রকৃত অর্থেই ইছতিওয়া বলে মেনে নেয়া হয় তাহলে ‘আর্শ সরিয়ে নিলে আল্লাহ্র পড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে মেনে নিতে হয়। (سبحان الله)
খ) “ইছতিওয়া”-কে যদি প্রকৃত অর্থেই ইছতিওয়া বলে মেনে নেয়া হয় তাহলে আল্লাহ্র (b) জন্য একটি দেহাবয়ব সাব্যস্থ করতে হয়, যা আল্লাহ্কে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। (أعوذ بالله)
গ) “ইছতিওয়া”-কে যদি প্রকৃত অর্থেই ইছতিওয়া বলে মেনে নেয়া হয় তাহলে আল্লাহ সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মেনে নিতে হয়। কেননা ‘আর্শের একটা সীমা-পরিসীমা আছে। আর কেউ যদি এমন কোন বস্তুর উপর অবস্থান করে থাকে যেটি সীমাবদ্ধ তাহলে একথা মেনে নিতে হবে যে, এই সীমাবদ্ধ বস্তুটির উপর যিনি অবস্থান করছেন তিনিও সীমিত ও সীমাবদ্ধ।
শাইখ হাম্মাদ c মু‘আত্ত্বিলা সম্প্রদায়ের এসব দাবি, যুক্তি ও সংশয়গুলো সুস্পষ্ট দালীল-প্রমাণ সহকারে খন্ডন, নিরসন ও বাত্বিল সাব্যস্থ করেছেন।
৮) আল্লাহ্র (0) সিফাত বিষয়ে শাইখ সালিহ আল ‘উছাইমিন (o) এর বক্তব্য।
৯) সেই সকল লোকদের দাবি প্রত্যাখাত যারা বলে যে, “আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে ‘আর্শ আল্লাহ্র (7) নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল না”। কেননা যদি তাই হয় তবে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে যে, তাহলে তখন আল্লাহ ব্যতীত আর কে ‘আর্শ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করছিল? কে ছিলো ‘আর্শের মালিক?
১০) যারা দাবি করে যে “ইছতিওয়া” অর্থ হলো “ইছতীলা”, কিংবা যারা “ইছতিওয়া”-কে প্রকৃত অর্থে ইছতিওয়া বলে স্বীকার করে না, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান ও খন্ডন।