নারীদের সম-সাময়িক বিভিন্ন সমস্যা এবং তা থেকে উত্তোরণের ক্বোরআন-ছুন্নাহ ভিত্তিক পথ ও পদ্ধতি (৩৮তম পর্ব)

আবূ ছা`আদাহ হাম্মাদ বিল্লাহ c ধারাবাহিক এই অডিও বক্তব্যে নারীদের সম-সাময়িক বিভিন্ন সমস্যা এবং এসকল সমস্যা থেকে উত্তোরণের পথ ও পদ্ধতি বিষয়ে ক্বোরআন-ছুন্নাহ্‌র আলোকে অত্যন্ত মূল্যবান আলোচনা পেশ করেছেন। পারিবারিক এবং বৈবাহিক জীবনে নারীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়া, সন্তানদের লালন-পালন করা, সুখী ও সমৃদ্ধ পরিবার গড়ে তোলা, ঘরের বাইরে কাজ-কর্ম করা ইত্যাদি অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে। এই পর্বে উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার ও কনে দেখার ছুন্নাহ সম্মত উপায়’ নিয়ে আলোচনা করেন, তন্মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো:-
১) বিয়ের প্রস্তাব পেশ করাকে বিয়েতে প্রবেশের দরজার সাথে তুলনা করা হয়েছে। বিয়ের প্রস্তাব হঠাৎ করে দেওয়া যায় না। এর পূর্বে কিছু কাজ রয়েছে। এই কাজগুলো করলেই তবে প্রস্তাবটি ফলপ্রসূ ও অর্থবহ হবে। সেগুলো হলো-

ক) আগেই সেই ছেলে বা মেয়ে সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে।
খ) একে অপরের সম্পর্কে জানতে হবে।
এরপর প্রস্তাব পেশ করা হলে, যে কোনও পক্ষ চাইলে সেটা গ্রহণ করতে পারে বা প্রত্যাখ্যান করতে পারে। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হলে সেটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিহিংসা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

২) বিয়ের প্রস্তাব মেয়েদের পক্ষ থেকেও আসতে পারে। ছালাফদের মধ্যে এর অনুশীলন পরিলক্ষিত হয়। উল্লেখ্য যে, কোর্ট ম্যারেজ এবং জোরপূর্বক বিবাহ ইছলামে হারাম।
৩) প্রস্তাব প্রদানের পরবর্তী কাজ হলো- কনে দেখা। কনের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে তাকে বিয়ে করা যাবে। রাছূলুল্লাহ 1 সেই বৈশিষ্ট্যগুলো বলে দিয়েছেন। সেগুলো হলো-

ক) তার বংশীয় মর্যাদা
খ) তার সম্পদ
গ) তার সৌন্দর্য
ঘ) তার দ্বীন।

এবং এগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে তার দ্বীনকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। কারণ তাক্বওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাক্বওয়ার গুরুত্ব বর্ণনায় আল্লাহ 0 ছূরা হুজুরাতের ১৩নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন:-

إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ

অর্থাৎ- তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই লোকই অধিক সম্মানী যে লোক অধিক মুত্তাক্বী।
এছাড়াও ছুনানু ইবনি মাজাহ-তে বর্ণিত আছে যে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- আল্লাহর তাক্বওয়া অর্জনের পরে সবচেয়ে উত্তম যে বিষয় একজন পুরুষ অর্জন করে, তা হলো- একজন সৎকর্মশীল নারী।হাদীছটি যা‘য়ীফ
দ্বিতীয়তঃ বংশীয় মর্যাদা দেখতে হবে।
তৃতীয়তঃ সৌন্দর্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তবে ছালাফদের অনেকে ইচ্ছে করেই কালো মেয়ে বিবাহ করতেন। কারণ এতে অন্যের নজর থেকে স্বীয় স্ত্রীর নিরাপদ থাকার সম্ভাবনা বেশি। তবে মনে রাখতে হবে যে, এক্ষেত্রে এমন মেয়ে হওয়া চলবে না, যাকে দেখলে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয় না। কারণ বিয়ে করার মূল উদ্দেশ্যই হলো- মানসিক প্রশান্তি লাভ।
সাহীহ্‌ ইবনু হিব্বানে বর্ণিত আছে যে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- একজন নারীকে কেবল তার সৌন্দর্য দেখে বিয়ে করো না। কারণ তার সৌন্দর্য তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। আবার কেবল সম্পদ দেখেই কোনো নারীকে বিয়ে করো না। এটি তাকে গুনাহের মধ্যে লিপ্ত করতে পারে। বরং, কোনও নারীকে তার দ্বীনের জন্য বিয়ে করো। নাক কাটা কালো মহিলার মধ্যে যদি দ্বীন থাকে, তবে সে-ই উত্তম।হাদীছটি যা‘য়ীফ
ছুনানু ইবনি মাজাহ ও দারুক্বোত্বনী-তে ‘আ-য়িশাহ f হতে বর্ণিত আছে যে, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- তোমরা বিয়ের জন্য তোমাদের সমকক্ষ কারো কাছে যাও।এই হাদীছটিও যা‘য়ীফ
৪) একটি ছেলে যদি অভাব-অনটনে থাকে, এবং সে চিন্তা করে যে, এই মেয়েকে বিয়ে করলে আমি এখান থেকে কিছু ধন-সম্পদ পাবো। তবে এটি দোষণীয় কিছু নয়। এটি তার জন্য হালাল হবে। তবে এটি দ্বীনকে প্রাধান্য দেওয়ার উদ্দেশ্যে হতে হবে। দুন্‌ইয়ার জন্য নয়।
৫) হাদিছে আরো দুইটি বিষয়কে দেখে নিতে বলা হয়েছে। যেমন-

ক) সেই মেয়ের বাচ্চা জন্মদানের ক্ষমতা। এক্ষেত্রে সেই মেয়ের মা-খালার সন্তান সংখ্যা দেখলেই বুঝা যাবে।
খ) সেই মেয়ে মায়াবী কি-না, তা দেখে নিতে হবে। আর এ বিষয়টি তার আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝা যাবে।

৬) এরপরের ধাপ হলো- কনে দেখা।
মেয়ে দেখে তারপর বিয়ে করাটা হলো- ছুন্নাহ। এটি হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।
হাদীছে এসেছে, মুগীরাহ 3 যখন একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন, তখন রাছূলুল্লাহ 1 তাকে বললেন, আগে তুমি তাকে দেখ। কারণ, এর দ্বারা তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালোবাসা বা ঐক্য তৈরি হতে পারে।জামি‘উত্‌ তিরমিযী, ছুনানু ইবনি মাজাহ ও সাহীহুল বুখারী
আরেকটি হাদীছে এসেছে, এক ব্যাক্তি রাছূলুল্লাহ-কে (1) এসে বললেন- তিনি একজন আনসারী মহিলাকে বিয়ে করতে চান। রাছূলুল্লাহ 1 তাকে বললেন- তুমি কি তাকে দেখেছ? তিনি বললেন- না দেখিনি। অতঃপর, রাছূলুল্লাহ 1 তাকে বললেন- তুমি সেই মহিলাকে দেখ। কারণ, তাদের চোখে কিছু একটা আছে।———
‘উলামায়ে কিরামের মতে, এই “কিছু একটা” এর দুইটি ব্যাখ্যা হতে পারে। সেগুলো হলো- হয়তো তাদের চোখ খুব ছোট ছোট। অথবা তাদের চোখ নীলাভ।
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাছূলুল্লাহ 1 পুরুষদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা বিয়ের পূর্বেই কনেকে দেখে নেয়।
অনেক সন্তান পিতা-মাতাকেই মেয়ে দেখতে বলে দেয়। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কারণ, উক্ত হাদীছে রাছূলুল্লাহ 1 সেই সাহাবাকে বলেছেন- তুমি দেখ। অর্থাৎ স্বয়ং বরকেই দেখতে বলেছেন, কেননা আল্লাহ চাহেতো মেয়েটি তারই জীবনসঙ্গী হতে চলেছে।
৭) কনেকে প্রয়োজন হলে একাধিকবার দেখা যেতে পারে। এটি জা-ইয আছে। কারণ “কনেকে একবারই দেখা যাবে” মর্মে হাদীছে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। আবার লুকিয়ে লুকিয়ে কনে দেখাও জা-ইয আছে।
যেমন- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- যখন তোমাদের কেউ কোনো নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে, তখন সে চাইলে ওই নারীর দিকে তাকাতে পারে, এতে দোষের কিছু নেই, যদিও ওই নারী জানেনা যে, লোকটা তার দিকে তাকাচ্ছে (অর্থাৎ গোপনে বা আড়ালে তাকাচ্ছে)।মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ
মোটকথা, কনেকে দুইভাবে দেখা যেতে পারে। প্রথমতঃ- সরাসরি দেখা, যা একাধিকবার হতে পারে। দ্বিতীয়তঃ- গোপনে কনে দেখা যেতে পারে।
৮) যদি এমন হয় যে, মেয়ের পরিবার অত্যন্ত দ্বীনদার এবং মেয়ে যথেষ্ট সুন্দরী হিসেবে সুপরিচিত, তবে সেই মেয়েকে না দেখেই বিয়ে করা জা-ইয আছে।
তাছাড়া, কেউ যদি দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেয় এবং চিন্তা করে যে, মেয়ের নাক কাটা বা কান কাটা হলেও সমস্যা নেই। তাহলেও সে মেয়েকে না দেখেই বিয়ে করতে পারে।

 

ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-
১) السلام عليكم । দ্বীনের আলোকে মাহ্‌রের পরিমাণ কতটুকু হওয়া উত্তম? আমাদের দেশে যে, কনের পরিবার অনেক বেশি মাহ্‌র ধার্য করার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে কনের কি করা উচিত?
২) অনেক সময় দেখা যায় যে, শুধু মাহ্‌রের পরিমাণ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে কনের পরিবার তাদের মেয়ের বিয়ে বাত্বিল করে দিচ্ছে। যদিও বর কনের জন্য দ্বীনের দিক থেকে উত্তম ছিল। শাইখ, এই বিষয়ে আপনার নাসীহাহ কি?
৩) السلام عليكم । স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব যেহেতু স্বামীর উপরই বর্তায়, তাহলে হালাল রিযক্ব এর জন্য সম্পদশালী মেয়ে বিয়ে করার অনুমতির ব্যাখ্যাটা কি? বিয়ের পরে স্ত্রীর সম্পদের উপরে স্বামীর অধিকার কতটুকু?


১. হাদীছটি যা‘য়ীফ 
২. হাদীছটি যা‘য়ীফ 
৩. এই হাদীছটিও যা‘য়ীফ 
৪. জামি‘উত্‌ তিরমিযী, ছুনানু ইবনি মাজাহ ও সাহীহুল বুখারী 
৫. ——— 
৬. মুছনাদুল ইমাম আহ্‌মাদ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close