নারীদের সম-সাময়িক বিভিন্ন সমস্যা এবং তা থেকে উত্তোরণের ক্বোরআন-ছুন্নাহ ভিত্তিক পথ ও পদ্ধতি (১৯তম পর্ব)

উছতায আবূ ছা‘আদাহ হাম্মাদ বিল্লাহ c এই অডিও বক্তব্যে নারীদের সম-সাময়িক বিভিন্ন সমস্যা এবং এসকল সমস্যা থেকে উত্তোরণের পথ ও পদ্ধতি বিষয়ে ক্বোরআন-ছুন্নাহ্র আলোকে অত্যন্ত মূল্যবান আলোচনা পেশ করেছেন। পারিবারিক এবং বৈবাহিক জীবনে নারীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়া, সন্তানদের লালন-পালন করা, সুখী ও সমৃদ্ধ পরিবার গড়ে তোলা, ঘরের বাইরে কাজ-কর্ম করা ইত্যাদি অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
এই পর্বে উছতায  “আল-হায়া” বিষয়ে আলোচনা করেছেন। উক্ত বক্তব্য থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ ক’টি বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো:-
১) ইমাম নাওয়াওয়ী o, জুনাইদ o, যুন্‌নূন o, ইমাম ইবনু ক্বায়্যিম o সহ আরো অন্যান্য ‘উলামায়ে কিরাম কর্তৃক প্রদত্ত হায়া বা লজ্জাশীলতার সংজ্ঞা।
২) ক্বাল্‌ব তথা অন্তরের প্রাণ বা হায়াত এবং লজ্জাশীলতা বা হায়া এ দুটি বিষয় পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত ও সহায়ক।
৩) লজ্জাশীলতা সম্পর্কে ফুযায়ল ইবনু ‘ইয়ায o এর বক্তব্য।
৪) মহান পালনকর্তা; আল্লাহ্‌র (0) লজ্জাশীলতা এবং বান্দাহ্‌র লজ্জাশীলতার সংজ্ঞা।
৫) লজ্জাশীলতা ও ঈমানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক।
৬) লজ্জাশীলতা ১০ প্রকারের (লজ্জাশীলতার এই প্রকারভেদ মাদারিজুছ্‌ ছালিকীন পুস্তক থেকে সংক্ষিপ্তাকারে সংগৃহীত)। এগুলো হলো:-
(এক) অপরাধজনিত লজ্জাশীলতা।
এজাতীয় লজ্জাশীলতারই অধিকারী ছিলেন আদাম 5। যখন তিনি (আদম 5) জান্নাতে লুকিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তখন আল্লাহ 7 তাকে বললেন:- হে আদাম! তুমি কি আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছ? তখন তিনি বললেন- হে আমার প্রতিপালক! আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি না, বরং (স্বীয় কৃতকর্মের দরুণ) আপনার সামনে আসতে লজ্জাবোধ করছি।
(দুই) ত্রুটিজনিত লজ্জাশীলতা।
আর এটা হলো যেমন ফিরিশতাদের লজ্জাবোধ। তারা দিবারাত্রি আল্লাহ্‌র (0) তাসবীহ্‌-তাহ্‌মীদ করে থাকেন, কখনো তাঁর অবাধ্যতা করেন না। এতদসত্ত্বেও ক্বিয়ামাতের দিন তারা বলবেন- হে আল্লাহ! আপনি সকল প্রকার ত্রুটির ঊর্ধ্বে, আমরা যথাযথভাবে আপনার ‘ইবাদাত করতে পারিনি।
(তিন) সম্মানজনিত কারণে লজ্জাবোধ।
এটি হলো বান্দাহ্‌র তার রাবের সম্মান সম্পর্কে জ্ঞান থাকার কারণে তার মধ্যে যে লজ্জাবোধ দেখা দেয়। বান্দাহ তার রাবের সম্মান সম্পর্কে যে পরিমাণ জ্ঞান রাখবে, তার মধ্যে এই প্রকার লজ্জাশীলতা সেই অনুপাতে হবে।
(চার) ভদ্রতাজনিত লজ্জাবোধ।
এটি হলো যেমন- রাছূলুল্লাহ 1 যায়নাব f এর ওয়ালীমাহ-তে লোকজনকে দা‘ওয়াত দিয়েছিলেন। ওয়ালীমাহ শেষে তাদের অনেকে দীর্ঘ সময় ধরে রাছূলুল্লাহ 1 এর নিকট বসেছিলেন। রাছূলুল্লাহ 1 দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু তারা যাচ্ছিলেন না, এতদসত্ত্বেও তিনি  ভদ্রতাজনিত লজ্জাবোধের দরুণ তাদেরকে চলে যেতে বলতে পারছিলেন না।
(পাঁচ) চক্ষুলজ্জা জনিত লজ্জাশীলতা।
এটি হলো যেমন- ‘আলী 3 এর স্বীয় রোগ সম্পর্কে রাছূলুল্লাহকে (1) সরাসরি প্রশ্ন করতে লজ্জাবোধ।
(ছয়) নিজেকে তুচ্ছজ্ঞান বশতঃ লজ্জাবোধ।
এই প্রকার লজ্জাবোধ দুটি কারণে হতে পারে- ক) প্রার্থনাকারীর নিজেকে খুবই তুচ্ছজ্ঞান করা এবং স্বীয় অপরাধকে পাহাড়সম মনে করা।
খ) প্রার্থনাকারী যার নিকট প্রার্থনা করছে তার বিশালতা ও মহানত্ত্ব অনুধাবন করতে পারা।

(সাত) ভালোবাসা জনিত লজ্জাবোধ।
এটি হলো- ভালোবাসা পোষণকারী কর্তৃক যাকে সে ভালোবাসছে তার উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতিতে তার প্রতি তার লজ্জাশীলতা।
(আট) ‘ইবাদাতজনিত লজ্জাবোধ।
এটি হলো- ভালোবাসা ও ভয়ের সংমিশ্রণে সৃষ্ট লজ্জাবোধ। এধরনের লজ্জাবোধ তখনই দেখা দেয় যখন বান্দাহ প্রকৃত অর্থে উপলব্ধি করতে পারে যে, আল্লাহ্‌র (0) প্রতি তার ‘ইবাদাত-বন্দেগী মোটেও যথেষ্ট ও যথাযথ হচ্ছে না, বরং সে যার ‘ইবাদাত করছে সেই আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের অবস্থান ও মর্যাদা এর থেকে অনেক অনেক ঊর্ধ্বে। এই উপলব্ধি থেকে যে লজ্জাবোধ দেখা দেয় সেটি হলো- ‘ইবাদাতজনিত লজ্জাবোধ।
(নয়) আত্মমর্যাদাবোধ জনিত লজ্জাশীলতা।
এটি হলো- স্বীয় অবস্থান ও মর্যাদার তুলনায় নিজের দান-খয়রাত ইত্যাদি ভালো কর্মগুলোকে অপেক্ষাকৃত কম, অপ্রতুল কিংবা মানানসই মনে না করার দরুন লজ্জাবোধ করা।
(দশ) নিজের প্রতি নিজের লজ্জাবোধ।
এটি হলো- উঁচু মর্যাদা সম্পন্ন কারো পক্ষে নিজের যৎসামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোকে মেনে নিতে লজ্জাবোধ। এটি হলো লজ্জাশীলতার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ। কারণ যখন কোন ব্যক্তি নিজের সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য নিজের প্রতি লজ্জাবোধ করবে তাহলে সে অবশ্যই অন্যের প্রতি এর থেকে অনেক অনেক বেশি লজ্জা পোষণ করবে।

 

ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:
ক) অনুগ্রহ করে লজ্জাশীলতার ষষ্ঠ, নবম ও দশম প্রকারটি পূণর্বিশ্লেষণ করুন।
খ) পালনকর্তা আল্লাহ্‌র (7) মা‘রিফাত লাভের উপায় কি?
গ) السلام عليكم। উছতায, ‘হায়া সম্পর্কে বিশেষ কোন দু‘আ জানালে আমরা আল্লাহ চাহে তো উপকৃত হতাম।

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close