হাজ্জ ও ‘উমরাহ্‌ পালনের ছুন্নাহ্‌সম্মত পদ্ধতি

আপনি যদি হাজ্জ সম্পাদন করতে চান এবং সে উদ্দেশ্যে হাজ্জের মাস সমূহের মধ্যে মীক্বাতে (যেখান থেকে হাজ্জের ইহ্‌রাম বাঁধা হয় সে স্থানে) পৌঁছে যান, তাহলে আপনি তিন প্রকারের যে কোন এক প্রকার হাজ্জ পালন করতে পারেন। এই তিন প্রকার হাজ্জ হলো যথা:-

১। হাজ্জে তামাত্তু‘। আর এটাই হলো সবচেয়ে উত্তম। হাজ্জে তামাত্তু‘ হলো- আপনি যদি আপনার সাথে ক্বোরবানীর পশু না নিয়ে যান এবং আপনার হাতে যদি হাজ্জের জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে, তাহলে আপনি মীক্বাত থেকে ‘উমরাহ্‌র নিয়্যাতে ইহ্‌রাম বাঁধবেন। এক্ষেত্রে আপনি বলবেন- “লাব্বাইকা বি ‘উমরাতিন” এবং আপনি ‘উমরাহ্‌র কার্যাবলী সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাবেন, স্বীয় স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করবেন, আপনার জন্য ইহ্‌রামকালীন যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ তখন হালাল হয়ে যাবে। আপনি আপনার স্বাভাবিক কাজ-কর্ম চালিয়ে যাবেন। এমতাবস্থায় ৮ই যিলহাজ্জ যেটাকে ইয়াওমুত্‌ তারওয়িয়াহ বলা হয়, আপনি হাজ্জ সম্পাদনের নিয়্যাত বা সংকল্প নিয়ে ইহ্‌রামের কাপড় পরিধান করে হাজ্জের যাবতীয় কার্যাদি সম্পাদন করবেন। জেনে রাখবেন! হাজ্জে তামাত্তু‘ পালন করলে আপনাকে অবশ্যই ক্বোরবানী দিতে হবে।

২। হাজ্জে ইফরাদ। আর তা হলো মীক্বাত থেকে “লাব্বাইকা হাজ্জান” বলে হাজ্জ পালনের নিয়্যাত করা। এমতাবস্থায় পবিত্র মাক্কায় পৌঁছে ত্বাওয়াফে ক্বোদূম সম্পন্ন করে ইহ্‌রাম ভঙ্গ না করে তথা হালাল না হয়ে ইয়াওমুন্‌ নাহ্‌র অর্থাৎ ক্বোরবানীর দিন পর্যন্ত ইহ্‌রাম অবস্থায় থেকে হাজ্জের যাবতীয় কার্য সম্পাদন করা। হাজ্জে ইফরাদ সম্পাদনকারীর উপর ক্বোরবানী ওয়াজিব নয়।

৩। হাজ্জে ক্বিরান। আর তা হলো মীক্বাত থেকে “লাব্বাইকা হাজ্জান ওয়া ‘উমরাতান” অথবা “লাব্বাইকা বি হাজ্জিন ওয়া ‘উমরাতিন” বলে হাজ্জ ও ‘উমরাহ্‌র নিয়্যাত একত্রে করা। মাক্কায় পৌঁছার সাথে সাথে ত্বাওয়াফে ক্বোদূম সম্পন্ন করে ইহ্‌রাম ভঙ্গ না করে বরং পরিপূর্ণরূপে ইহ্‌রাম অবস্থায় থেকে যাওয়া এবং ৮ই যিলহাজ্জ থেকে ইয়াওমুন্‌ নাহ্‌র পর্যন্ত হাজ্জের যাবতীয় কার্য সম্পাদন করা। ক্বিরান হাজ্জকারীর জন্য ক্বোরবানী ওয়াজিব। তবে মাক্কাহ্‌র অধিবাসীদের উপর ক্বোরবানী ওয়াজিব নয়।

৮ই যিলহাজ্জ হলো হাজ্জের প্রথম দিন। মূলত: এ দিন থেকেই হাজ্জের কার্যক্রম শুরু করতে হয়। ৮ই যিলহাজ্জকে ইয়াওমুত তারওয়িয়াহ্‌, ৯ই যিলহাজ্জকে ইয়াওমুল ‘আরাফাহ এবং ১০ই যিলহাজ্জকে ইয়াওমুন্‌ নাহ্‌র বলা হয়।

৮ই যিলহাজ্জ – এ দিনে করণীয় :

১) আপনি যদি তামাত্তু‘ হাজ্জকারী হয়ে থাকেন, তাহলে এ দিন ইহ্‌রামের কাপড় পরিধানের আগে নখ, গোঁফ কেটে-ছেঁটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ভালোভাবে গোছল করে হাজ্জ সম্পাদনের নিয়্যাত করে ইহ্‌রামের কাপড় পরিধান করবেন। আপনি যদি পুরুষ হয়ে থাকেন তাহলে সাদা রংয়ের সেলাইবিহীন একখানা লুঙ্গি ও একখানা চাদর পরিধান করবেন। এবং টাখনু ঢাকবে না এরকম এক জোড়া সেন্ডেল অথবা মোজা পরিধান করবেন। মাথা উন্মুক্ত রাখবেন, টুপি অথবা পাগড়ী ব্যবহার করবেন না। আর মহিলা হলে, শারী‘য়াত নারীদেরকে স্বাভাবিক অবস্থায় যেরূপ পোষাক পরিধানের অনুমতি দিয়েছে সেরূপ স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করবেন।  তবে ইহ্‌রাম অবস্থায় নিক্বাব, বোরক্বা, আচ্ছাদন, মাথায় রুমাল কিংবা হাত আবৃতকারী মোজা ইত্যাদি পরিধান করবেন না।

আপনি (পুরুষ কিংবা নারী) যদি হাজ্জে ক্বিরান অথবা ইফরাদ পালনকারী হয়ে থাকেন, তাহলে তো আপনি আগে থেকেই (৮ই যিলহাজ্জের আগে থেকেই) ইহ্‌রাম অবস্থায় আছেন। সুতরাং সাবধান! তামাত্তু‘ হাজ্জ পালনকারীর ন্যায় আপনি নখ, চুল, গোঁফ ইত্যাদি কাট-ছাঁট করবেন না।

২) আপনি যদি তামাত্তু‘ হাজ্জ পালনকারী হয়ে থাকেন, তাহলে এই দিন চাশ্‌তের সময় আপনি আপনার অবস্থান স্থল থেকেই হাজ্জ সম্পাদনের সংকল্প নিয়ে ইহ্‌রাম বাঁধবেন। আপনি বলবেন “লাব্বাইকা হাজ্জান” অথবা “লাব্বাইকা বি হাজ্জিন”।

আর যদি হাজ্জকর্ম সম্পাদনকালীন কোন প্রতিবন্ধকতা আপনার মাঝে দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে “লাব্বাইকা বি হাজ্জিন” বলার সাথে মনে মনে একথাও বলবেন যে, “যদি কোন প্রতিবন্ধক আমাকে হাজ্জকর্ম সম্পাদন থেকে রুখে দেয়, তাহলে যেখানে আমাকে রুখে দিবে সেখানে সে অবস্থাতেই আমি হালাল হয়ে যাব তথা ইহ্‌রাম ত্যাগ করব”। আর যদি এরূপ কোন কিছুর আশঙ্কা না থাকে, তাহলে অযথা হাজ্জের নিয়্যাতের সাথে কোনরূপ শর্ত জুড়ে দিবেন না।

৩) হাজ্জের নিয়্যাত অর্থাৎ ইহ্‌রাম বাঁধার পর ইহ্‌রাম ভঙ্গকারী তথা ইহ্‌রাম-বিরোধী যাবতীয় কাজ-কর্ম থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন।

৪) অতঃপর তখন থেকে ১০ই যিলহাজ্জ জামরাতুল ‘আক্বাবাহ্‌-তে পাথর নিক্ষেপ শেষ হওয়া পর্যন্ত বেশি বেশি তালবিয়াহ্‌

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ.

((লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান্‌ নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্‌ক। লা-শারীকা লাক)) পাঠ করতে থাকবেন।

৫) তারপর আপনি তালবিয়াহ্‌ পড়তে পড়তে মীনায় চলে যাবেন, সেখানে যুহ্‌র, ‘আসর, মাগরিব, ‘ইশা ও ফাজ্‌র প্রত্যেক সালাত যথাসময়ে আদা করবেন। তবে চার রাকা‘আতের ফার্‌য সালাত ক্বাস্‌র হিসেবে দু’ রাক্‌‘আত পড়বেন। আপনি যদি মাক্কাহ্‌র অধিবাসীও হয়ে থাকেন তথাপি উপরোক্ত সালাতগুলো ঐদিন মীনায় আপনাকে ক্বাস্‌র হিসেবেই আদা করতে হবে।

৬) সব সময় নামাযের পর এবং সকাল-সন্ধ্যায় পঠিতব্য যেসব দু‘আ ও যিক্‌র-আযকার রাছূলুল্লাহ 1 থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত রয়েছে, সেগুলো পাঠ করবেন।

৭) ৮ই যিলহাজ্জ দিবাগত রাত মীনায় যাপন করবেন। রাছূলুল্লাহ 2 হাজ্জকালীন এ রাত এখানেই কাটিয়েছেন।

৯ই যিলহাজ্জ- এ দিনে করণীয়:-

এ দিনটি হলো হাজ্জের ২য় দিন। ৮ই যিলহাজ্জ দিবাগত রাত মীনা ময়দানে কাটানোর পর ফাজ্‌রের সালাত জামা‘আতের সাথে আদা করবেন।

১) ৯ই যিলহাজ্জ সূর্য উদয়ের পর তালবিয়াহ

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ.

((লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান্‌ নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্‌ক। লা-শারীকা লাক)) ও তাকবীর

اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، وَلِلَّهِ الْحَمْدُ.

((আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্‌দ)) যথাসম্ভব উচ্চ আওয়াযে পড়তে পড়তে ‘আরাফাহ্‌র দিকে রওয়ানা হবেন।

সাবধান! এ দিন রোযা রাখবেন না। কেননা রাছূলুল্লাহ 1 এ দিনে রোযা রাখেননি। বিশুদ্ধ হাদীছ দ্বারা জানা যায় যে, এ দিন রাছূলুল্লাহ-কে (1) এক পেয়ালা দুধ দেয়া হলে তিনি তা পান করেন।

২) ‘আরাফাহ্‌র উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে প্রথমে নামিরাহ নামক স্থানে সম্ভব হলে সূর্য ঢলে পড়া পর্যন্ত অর্থাৎ যুহ্‌রের সালাতের সময় শুরু হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করবেন। নামিরাহ হলো ‘আরাফাহ্‌র নিকটবর্তী একটি স্থান।

৩) সূর্য ঢলে গেলে অর্থাৎ যুহ্‌র সালাতের ওয়াক্বত শুরু হয়ে গেলে সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে ‘উরানাহ উপত্যকায় এসে হাযির হবেন। (‘উরানাহ উপত্যকা ‘আরাফাহ্‌র অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তা ‘আরাফাহ্‌র মাঠের সীমার বাইরে অবস্থিত।)

এখানে ইমাম সাহেব একটি খুতবাহ্‌ প্রদান করবেন। অতঃপর সেখানে জামা‘আতের সাথে যুহ্‌র্‌ ও ‘আস্‌রের সালাতকে জাম‘য়ে তাক্বদীম অর্থাৎ যুহ্‌রের ওয়াক্বতে যুহ্‌র ও ‘আস্‌রের সালাত একত্রে ক্বাস্‌র (অর্থাৎ চার রাকা‘আতের বদলে দু’ রাক্‌‘আত) করে পড়বেন।

যদি ইমামের সাথে সালাত আদা করা সম্ভব না হয়, তাহলে সেই একই পদ্ধতিতে ওয়াক্বতদ্বয়ের সালাত একাকী অথবা নিজের আশেপাশে আরো যারা জামা‘আতে সালাত আদা করতে পারেননি তাদের নিয়ে জামা‘আতে আদা করে নেবেন।

এই দু’টি সালাতের জন্য একটি আযান ও দু’টি ইক্বামাত হবে। সাবধান! এই দুই ওয়াক্বত সালাতের মাঝখানে ছুন্নাত বা নফল কোন সালাত আদা করা যাবে না।

৪) অতঃপর ‘আরাফাহ্‌র মাঠে নিজের অনুপ্রবেশ নিশ্চিত করবেন এবং সম্ভব হলে জাবালে রাহ্‌মাতের নিচে সাখারাত নামক স্থানের কাছে জাবালে রাহ্‌মাতকে আপনার ও ক্বিবলাহ্‌র মাঝখানে রেখে অবস্থান করবেন। যদি এভাবে করা সম্ভব হয় তাহলে সেটা উত্তম। আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন যে, হাজ্জের অন্যতম রুক্‌ন হলো ‘আরাফাহ্‌র মাঠে অবস্থান। তাই অবশ্যই আপনাকে ‘আরাফাহ্‌র সীমানার মধ্যে যে কোন জায়গায় অবস্থান করতে হবে। সমস্ত ‘আরাফাহ্‌ই অবস্থান স্থল।

৫) ‘আরাফাহ্‌-তে অবস্থানকালীন সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুরো সময়টা আল্লাহ্‌র যিক্‌র-আযকারে মাশগুল থাকবেন। এ সময় বেশি বেশি তাহ্‌লীল

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.

((লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুল্‌কু ওয়া লাহুল হাম্‌দু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর)), তালবিয়াহ (লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান্‌ নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্‌ক। লা-শারীকা লাক) এবং রাছূলুল্লাহ 1 এর প্রতি সালাত পাঠ করবেন এবং পূর্ণ বিনয় ও আনুগত্য সহকারে একনিষ্ঠ মনে ক্বিবলাহ্‌মুখী হয়ে দু’হাত তুলে মহান আল্লাহ্‌র (0) নিকট দু‘আ করবেন।

৬) সূর্যাস্তের আগে ‘আরাফাহ থেকে বের হবেন না। এটা নিষিদ্ধ এবং জাহিলিয়্যাতের কাজ। যদি কেউ সূর্যাস্তের আগে ‘আরাফাহ থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরামের অভিমত হলো- তাকে ফিদইয়াহ আদা করতে হবে এবং তা হারামের (বাইতুল্লাহ্‌র) আশেপাশে অবস্থানরত ফক্বীর-মিছকীনদের মধ্যে বিতরণ করে দিতে হবে।

৭) সূর্যাস্তের পর আস্তে-ধীরে শান্তি ও স্বস্তিতে আল্লাহ্‌র যিক্‌র-ইছতিগফার করতে করতে মুয্‌দালিফাহ্‌র দিকে রওয়ানা হবেন। কোথাও যদি রাস্তা একটু ফাঁকা পান বা সুযোগ থাকে তাহলে হালকা দ্রুত চলার চেষ্টা করবেন। এটা ছুন্নাহ। রাছূলুল্লাহ্‌ 1 এমনই করতেন।

৮) মুযদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও ‘ইশার সালাত একত্রে আদা করবেন। মাগরিবের সালাত তিন রাকা‘আত এবং ‘ইশার ফার্‌য সালাত চার রাকা‘আতের স্থলে দু’ রাক্‌‘আত পড়বেন। অতঃপর শুধু ওয়িতর (বিতর) ছাড়া আর কোন নাফ্‌ল বা ছুন্নাত সালাত পড়বেন না।

যদি আশঙ্কা হয় যে, রাস্তায় অত্যধিক ভীড় বা অন্য কোন কারণে অর্ধ রাত্রির আগে তথা ‘ইশার সালাতের সময়ের মধ্যে মুয্‌দালিফায় পৌঁছতে পারবেন না, তাহলে আপনি পথিমধ্যে উপরোক্ত নিয়মে মাগরিব ও ‘ইশার সালাত আদা করে নেবেন।

৯) মুয্‌দালিফায় পৌঁছে আপনি সেখানে ফাজ্‌র পর্যন্ত ঘুমান। তবে দুর্বল পুরুষ ও মহিলারা অত্যধিক ভীড় এড়ানোর জন্য চাইলে অর্ধ রাত্রির পর মুয্‌দালিফাহ ছেড়ে মীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে উত্তম হলো চাঁদ অদৃশ্য হওয়ার পরে মীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া। নতুবা মুয্‌দালিফায় রাত্রিযাপন করা আবশ্যক।

১০ই যিলহাজ্জ- এ দিনে করণীয়:-

১) এ দিনটি হাজ্জের তৃতীয় দিন। এ দিন ফাজ্‌রের সালাত মুয্‌দালিফায় আদা করে নামায শেষে পঠিতব্য যেসব মাছনূন দু‘আ-দুরূদ ও যিক্‌র-আযকার রয়েছে সেগুলো পাঠ করবেন। তারপর তাহ্‌মীদ, তাক্‌বীর, তাহ্‌লীল পাঠ করবেন এবং আল্লাহ্‌র দরবারে দু’হাত তুলে দু‘আ করবেন। ভোরের আকাশ উজ্জল না হওয়া পর্যন্ত এসব ‘আমাল চালিয়ে যাবেন।

২) তারপর সূর্য উঠার আগেই তালবিয়াহ্‌ পড়তে পড়তে মীনা-র দিকে রওয়ানা হবেন। এসময় কোনরূপ তাড়াহুড়ো করবেন না। বরং ধীরে-সুস্থে এগিয়ে যাবেন।

৩) মীনায় যাওয়ার পথে যখন ওয়াদী মুহাছ্‌ছির বা মুহাছ্‌ছির উপত্যকায় পৌঁছবেন তখন সে জায়গাটুকু যথাসম্ভব দ্রুত অতিক্রম করার চেষ্টা করবেন।

৪) মুয্‌দালিফাহ থেকে মীনায় যাওয়ার পথে যে কোন স্থান থেকে কিংবা মীনা থেকে বুটের (চানার) দানা থেকে একটু বড় সাতটি ছোট ছোট পাথর কুঁড়িয়ে নিবেন।

৫) তারপর জামরায়ে ‘আক্বাবাহ-তে পৌঁছে যাবেন। সেখানে গিয়ে জামরায়ে ‘আক্বাবাহ্‌র দিকে মুখ করে মীনা-কে ডানে এবং মাক্কাহ-কে বামে রেখে জামরায়ে ‘আক্বাবাহ-তে পর পর সাতটি পাথর নিক্ষেপ করবেন। প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সময় বলবেন “আল্লাহু আকবার”। পাথরগুলো এমনভাবে নিক্ষেপ করবেন যাতে সেগুলো জামারাহ্‌তে আঘাত করে গর্তে পড়ে। নিক্ষেপিত পাথর যেন গর্তের বাহিরে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মনে রাখবেন যে, ১০ই যিলহাজ্জ সূর্যোদয়ের পর পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই সূর্যোদয়ের আগে পাথর নিক্ষেপ করবেন না।

৬) পাথর নিক্ষেপের পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত তাক্‌বীর এবং তাহ্‌লীল পড়তে থাকবেন। তবে পাথর নিক্ষেপ শুরু করার সাথে সাথে তালবিয়াহ পড়া বন্ধ করে দেবেন।

৭) অতঃপর আপনি যদি ক্বোরবানী করতে চান তাহলে মীনায় ক্বোরবানীর জন্য নির্দিষ্ট স্থানে এসে আপনার পশু নিজ হাতে ক্বোরবানী করবেন, এটাই উত্তম। যদি সম্ভব না হয় তাহলে প্রতিনিধির দ্বারা ক্বোরবানী করিয়ে নেবেন। সমগ্র মীনা এবং মাক্কার অলিগলি- যে কোন স্থানে ক্বোরবানী করা যাবে। তবে মনে রাখবেন যে, আপনি যদি তামাত্তু‘ অথবা ক্বিরান হাজ্জ পালনকারী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার উপর ক্বোরবানী করা ওয়াজিব; অবশ্যই আপনার ক্বোরবানী দিতে হবে। তবে হাজ্জে ইফরাদ পালনকারীর উপর ক্বোরবানী ওয়াজিব নয়।

৮) ক্বোরবানীর গোশ্‌ত আপনি নিজে খাবেন এবং ফক্বীর-মিছকিনদের মধ্যে বন্টন করে দিবেন।

৯) তারপর আপনি হাজ্জ পালনকারী যদি পুরুষ হন, তাহলে সমস্ত মাথা মুন্ডাবেন অথবা চুল কেটে ছোট করবেন। তবে মনে রাখবেন যে, মাথা মুন্ডানোই উত্তম। আর আপনি যদি মহিলা হন, তাহলে চুল একত্র করে মুটো করে ধরে আঙ্গুলের অগ্রভাগ কিংবা তার চেয়ে একটু বেশি পরিমাণ চুল অগ্রভাগ থেকে কেটে ফেলবেন।

এই পর্যায়ে এসে আপনি প্রায় হালাল হয়ে যাবেন, অর্থাৎ ইহ্‌রাম অবস্থায় যা কিছু আপনার জন্য নিষিদ্ধ ছিল সব কিছুই (শুধুমাত্র স্ত্রী সম্ভোগ ব্যতীত) আপনার জন্য হালাল হয়ে যাবে। আপনি তখন ইহ্‌রামের কাপড় রেখে আপনার স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করে নিতে পারবেন।

১০) অতঃপর এ দিনই অর্থাৎ ১০ই যিলহাজ্জ সূর্যাস্তের পূর্বে ৭ বার বাইতুল্লাহ্‌র ত্বাওয়াফ সম্পন্ন করার চেষ্টা করবেন। একান্ত যদি এদিন সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই পরে ত্বাওয়াফ করবেন। এই ত্বাওয়াফকে বলা হয় ত্বাওয়াফে ইফাযাহ। এই ত্বাওয়াফের সময় রামাল করবেন না অর্থাৎ ঘন ঘন পা ফেলে দ্রুত হাটবেন না। এই ত্বাওয়াফের সময় ইযত্বিবা‘ করবেন না অর্থাৎ চাদর ডান বগলের নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে তা বাম কাঁধের উপর রাখবেন না। এই ত্বাওয়াফ সম্পন্ন করার মাধ্যমেই আপনি পুরোপুরি হালাল হয়ে যাবেন।

১১) ত্বাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমের কাছে দু’ রাকা‘আত সালাত আদা করবেন। প্রথম রাক্‌‘আতে ছূরা কাফিরূন আর দ্বিতীয় রাক্‌‘আতে ছূরা ইখলাস পাঠ করবেন।

১২) তারপর আপনি যদি তামাত্তু‘ হাজ্জ পালনকারী হয়ে থাকেন তাহলে সাফা ও মারওয়ার মাঝে ৭ বার ছা‘য়ী করবেন। ছা‘য়ী শুরু করবেন সাফা পাহাড় থেকে আর শেষ করবেন মারওয়া পাহাড়ে। যাওয়া আসা মিলে হবে দু’ বার অর্থাৎ সাফা থেকে মারওয়ায় যাওয়া ১ চক্কর এবং সেখান থেকে সাফায় আসা ১ চক্কর বলে গণ্য হবে। এভাবে ৭ বার। মোটকথা সাফা থেকে মারওয়ায় ৪ বার যাবেন আর মারওয়া থেকে সাফায় ৩ বার আসবেন।

যখনই সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করবেন তখন প্রথমে কা‘বার দিকে মুখ করে এ আয়াতটি পাঠ করবেন:-

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ اللّهِالبقرة-١٥٨

অর্থাৎ- নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্‌র নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত।ছূরা আল বাক্বারাহ্‌- ১৫৮

তারপর তিনবার “আল্লাহু আকবার” বলবেন। এরপর বলবেন:-

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ.

((লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু  ওয়াহ্‌দাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুল্‌কু ওয়া লাহুল হাম্‌দু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীরলা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু, আনজাযা ওয়া‘দাহু ওয়া নাসারা ‘আব্দাহু ওয়া হাযামাল আহ্‌যা-বা ওয়াহ্‌দাহু)) এই বাক্যগুলো তিনবার বলবেন এবং নিজের দুন্‌ইয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য আল্লাহ্‌র (0) নিকট কায়মনে দু‘আ করবেন।

প্রতিবার সাফা ও মারওয়াতে আরোহণ করে এই একই নিয়ম পালন করবেন। সাফা থেকে স্বাভাবিকভাবে হেটে সবুজ বাতি পর্যন্ত আসবেন, সেখান থেকে অপর সবুজ বাতি পর্যন্ত জায়গাটুকু দ্রুতপদে অতিক্রম করবেন। তারপর আবার স্বাভাবিকভাবে হেটে মারওয়াতে আরোহণ করবেন। মারওয়া হতে সাফায় ঠিক একই নিয়মে আসবেন। চলার পথে আল্লাহ্‌র মহত্ত্ব ও মর্যাদা বর্ণনা করুন, আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা ও রাহ্‌মাত প্রার্থনা করুন। আপনি যদি ক্বিরান বা ইফরাদ হাজ্জ পালনকারী হয়ে থাকেন এবং ইতোপূর্বে আপনি যদি সাফা ও মারওয়ার ছা‘য়ী সম্পন্ন না করে থাকেন, তাহলে উপরোক্ত নিয়মে আপনাকেও ছায়ী আদা করতে হবে।

১৩) ছা‘য়ী শেষ হলে পরে ইচ্ছেমতো যাম্‌যামের পানি পান করবেন, অসুবিধা না হলে মাথায়ও দেবেন।

১৪) সম্ভব হলে মাক্কায় যুহ্‌রের সালাত আদা করবেন।

১৫) অতঃপর আবার মীনায় চলে যাবেন। সেখানে ১০ তারিখ দিবাগত রাত, ১১ তারিখ দিবাগত রাত এবং ১২ তারিখ দিবাগত রাত- এই তিন রাত যাপন করবেন। মনে রাখবেন! ১১, ১২ ও ১৩ই যিলহাজ্জ- এই তিন দিন হলো আইয়্যামে তাশরীক্ব।

১১, ১২ ও ১৩ই যিলহাজ্জ -এই দিনগুলোতে করণীয় :-

এই তিন দিনের প্রতিদিন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পর (অর্থাৎ যুহ্‌রের সালাতের সময় হয়ে যাওয়ার পর) তিনটি জামরাহ্‌তে (ছোট, মাঝারী ও বড়) ৭টি করে (চানা-বুটের থেকে সামান্য বড় সাইজের) পাথর নিক্ষেপ করবেন। খেয়াল রাখবেন! প্রতিটি পাথরই যেন জামরাহ্‌তে আঘাত হানে। যেগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে সেগুলো পুনরায় নিক্ষেপ করবেন।

প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সময় “আল্লাহু আকবার” বলবেন। প্রথমে ছোট জামরাহ যেটি মাছজিদে খাইফের সন্নিকটে অবস্থিত সেটিকে এক এক করে (একাধারে) সাতটি পাথর নিক্ষেপ করবেন। পাথর নিক্ষেপ শেষ হলে পরে ডান পার্শ্বে একটু সামনে গিয়ে ক্বিবলাহ্‌মুখী হয়ে দাঁড়িয়ে একাকী দু’ হাত তুলে আল্লাহ ছুবহানাহু ওয়া তা‘আলার কাছে বিনীতভাবে একাগ্রচিত্তে দু‘আ করবেন।

অতঃপর দ্বিতীয় জামরায় এসে সেটিকেও পূর্বোক্ত নিয়মে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করবেন। প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সময় “আল্লাহু আকবার” বলবেন। দ্বিতীয় জামরায় পাথর মারা শেষ হলে বাম পার্শ্বে একটু সামনে গিয়ে ক্বিবলাহমুখী হয়ে দু’ হাত তুলে একাকী মহান আল্লাহ্‌র দরবারে দু‘আ করবেন।

অতঃপর তৃতীয় জামরাহ তথা জামরায়ে ‘আক্বাবাহ্‌তে এসে সেটিকে সামনে রেখে এবং বাইতুল্লাহ্‌কে বাম পার্শ্বে আর মীনাকে ডান পার্শ্বে রেখে পুর্বোক্ত নিয়মে পাথর নিক্ষেপ করবেন। তবে এখানে পাথর নিক্ষেপ শেষে দাঁড়াবেন না বা দু‘আ করতে যাবেন না।

যদি কেউ ১১ ও ১২ই যিলহাজ্জ – এই দুই দিন পাথর মেরে (১২ই যিলহাজ্জ দিবাগত রাত মীনায় যাপন না করে এবং ১৩ই যিলহাজ্জ দিনে পাথর নিক্ষেপ না করে) চলে যায়, তাহলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে উত্তম হলো আইয়্যামে তাশরীক্বের রাতগুলো মীনায় যাপন করা এবং পর পর তিন দিন পাথর নিক্ষেপ করা। মনে রাখবেন! ১৩ই যিলহাজ্জ সূর্যাস্তের পূর্বে পাথর নিক্ষেপের কাজ শেষ করতে হবে।

মীনায় অবস্থানকালীন দিনগুলোতে জামা‘আতের সাথে পাঁচ ওয়াক্বত সালাত আদা করা কর্তব্য। যদি সম্ভব হয়, তাহলে মাছজিদে খাইফে পাঁচ ওয়াক্বত সালাত (যে কয়দিন থাকবেন) জামা‘আতের সাথে আদা করবেন। ত্বাবারানী ও অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ্‌ 2 বলেছেন যে, “খাইফের মাছজিদে সত্তর জন নাবী সালাত আদা করেছেন”।

আইয়্যামে তাশরীক্বের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় দিনে পাথর নিক্ষেপ শেষ হয়ে গেলে আপনার হাজ্জ সম্পন্ন হয়ে যাবে। অতঃপর আপনি মীনা ছেড়ে মাক্কায় চলে যাবেন। সেখানে যে কয়দিন অবস্থান করবেন, অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্বত সালাত জামা‘আতের সাথে মাছজিদুল হারামে আদায়ের সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।

সম্ভব হলে আরো দু-চারটি ‘উমরাহ করবেন। তা না হলে বেশি বেশি সালাত, ত্বাওয়াফ এবং হাজারে আছওয়াদ ও রুক্‌নে ইয়ামা-নী স্পর্শ করার চেষ্টা করবেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে, হাজারে আছওয়াদ বা রুক্‌নে ইয়ামা-নী স্পর্শ করতে যেয়ে কিংবা মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে সালাত আদা করতে যেয়ে অন্যকে যেন কষ্ট দেয়া না হয়। এছাড়া মাক্কায় অবস্থানকালীন বেশি বেশি যিক্‌র-আযকার এবং একাগ্রচিত্তে আল্লাহ্‌র (8) দরবারে প্রার্থনায় যথাসম্ভব মাশগুল থাকবেন।

হাজ্জের ছফর শেষ করে দেশে ফিরে আসার আগে বাইতুল্লাহ্‌র বিদায়ী ত্বাওয়াফ করবেন। কেননা রাছূলুল্লাহ 2 বলেছেন:-

لَا يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ الطَّوَافَ بِالْبَيْتِصحيح مسلم- ١٣٢٧. سنن أبي داود- ٢٠٠٢

অর্থ- (তোমাদের) কেউ যেন শেষ বারের মতো বাইতুল্লাহ্‌র ত্বাওয়াফ না করে রওয়ানা না হয়।সাহীহ্‌ মুছলিম- ১৩২৭। ছুনানু আবী দাঊদ- ২০০২

মোটকথা, দেশে ফেরার আগে আপনার সর্বশেষ কাজ যেন হয়- বাইতুল্লাহ্‌র ত্বাওয়াফ।

এখানে একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, অনেক লোককেই দেখ যায়- তারা ত্বাওয়াফ শেষে বাইতুল্লাহ্‌র প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে পিছনে হেঁটে বাইতুল্লাহ্‌ থেকে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা সম্মান প্রদর্শনের শারী‘য়াত সম্মত কোন পদ্ধতি আদৌ নয় বরং এটি একটি সুস্পষ্ট বিদ‘আত। কেননা রাছূলুল্লাহ 2,  সাহাবায়ে কিরাম তথা ছালাফে সালিহীন (4) বাইতুল্লাহ্‌র সম্মান সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি ও অনুধাবন করেছেন এবং বাইতুল্লাহ্‌র প্রতি তাঁরাই সবচেয়ে বেশি সম্মান প্রদর্শন করেছেন, এতদসত্ত্বেও তাদের কেউ বাইতুল্লাহ থেকে এভাবে পিছনে হেঁটে বেরিয়ে এসেছেন মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

আর যেহেতু আল্লাহ্‌র (0) মহিমান্বিত, বরকতময় ও অতি সম্মানিত গৃহ থেকে পিছনে হেঁটে বেরিয়ে আসা- এটাকে ইছলাম সম্মান প্রদর্শন বলে গণ্য করে না বরং এ কাজকে বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতা বলে আখ্যায়িত করে, সুতরাং কোন পীর-বুযুর্গ বা মূ’মিন অলী-আউলিয়ার ক্ববরস্থান (যেটাকে আমাদের সমাজে মাযার বলা হয়) থেকে পিছনে হেঁটে বেরিয়ে আসা- এটা যে কত বড় জঘন্য বিদ‘আত, ন্যূনতম বিবেকসম্পন্ন যে কোন লোক তা সহজেই অনুধাবন করতে পারবে।

যাই হোক, আপনি হাজ্জের ছফরকালীন কিংবা এমনিতেই কেবল মাছজিদে নাবাওয়ীতে সালাত আদায়ের জন্য যেতে (ছফর করতে) পারেন। আপনি যখন মাছজিদে নাবাওয়ীতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মাদীনাহ মুনাওয়ারাহ যাবেন, তখন আপনি ক্বোবা মাছজিদেও সালাত আদা করতে পারেন। আপনি সেখানে রাছূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া  ছাল্লাম এবং তাঁর মহান দুই সাথী; আবূ বাক্‌র ও ‘উমার (h) এর ক্ববরদ্বয়,  মাক্ববারাতুল বাক্বী‘ এবং উহুদের জিহাদে শহীদগণের (4) ক্ববর যিয়ারত করতে পারবেন। সেখানে আপনি ক্ববরবাসীদের জন্য দু‘আ করবেন।

তবে সাবধান! তাদের কাছে কিছু প্রার্থনা করবেন না। কেননা প্রথমতঃ প্রার্থনা বা দু‘আ হলো ‘ইবাদাত। আর ‘ইবাদাতের বিন্দুমাত্র আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো উদ্দেশ্যে নিবেদন করা যাবে না। এটা হলো শির্‌ক।

দ্বিতীয়তঃ মৃত ব্যক্তিগণ কারো কোন উপকার বা অপকার করার আদৌ কোন সাধ্য বা সামর্থ্য রাখেন না। বরং অনেক ক্ষেত্রে তারাই জীবিতদের থেকে দু‘আ প্রত্যাশা করেন।

আমরা মহান আল্লাহ্‌র দরবারে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদের সকলকে তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী বাইতুল্লাহ্‌র হাজ্জব্রত পালনের তাওফীক্ব দান করেন।  তিনি যেন আমাদের হাজ্জকে পূণ্যময় হাজ্জ হিসেবে ক্ববূল করেন, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন, আমাদের শ্রম ও চেষ্টাকে ক্বাবূল করেন। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আমাদের প্রত্যেককে তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী বারবার পবিত্র বাইতুল্লাহ্‌র হাজ্জ ও ‘উমরাহ পালনের তাওফীক্ব দান করুন- আ-মী-ন।

মূল:- আশ্‌শাইখ ‘আব্দুল মুহ্‌ছিন ইবনু নাসির আল ‘উবাইকান c

সূত্র:- আল মিনহাজ ফী ইয়াওমিয়াতিল হা-জ্জ।


১. البقرة-١٥٨ 
২. ছূরা আল বাক্বারাহ্‌- ১৫৮ 
৩. صحيح مسلم- ١٣٢٧. سنن أبي داود- ٢٠٠٢ 
৪. সাহীহ্‌ মুছলিম- ১৩২৭। ছুনানু আবী দাঊদ- ২০০২ 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close