এই অডিওটি আশ্শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ্ আল ‘উছাইমীন o কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত ইমাম ইবনু ক্বোদামাহ আল মাক্বদিছী o এর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ “লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ”এর ধারাবাহিক অডিও ভাষান্তর। বাংলা ভাষায় অডিওরূপে এটি ভাষান্তর করেছেন উছ্তায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c। এতে ছালাফে সালিহীনের (3) আক্বীদাহ-বিশ্বাসের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘উলামায়ে কিরামের চিরাচরিত স্বভাব–বৈশিষ্ট্যও হলো যে, তারা তাদের লিখনীর মাধ্যমে সর্বাগ্রে বিশুদ্ধ ইছলামী ‘আক্বীদাহ সংরক্ষণ এবং তা প্রচার ও প্রসার করে থাকেন। বক্তব্যের এ পর্বে উছতায হাম্মাদ বিল্লাহ c ‘হিছাব’ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আলোচনার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপঃ
১) ইবনু ক্বোদামাহ o বলেন, শাফা′য়াতের পর্ব শেষ হওয়ার পরেই আল্লাহ 0 তার বান্দাহদের হিসাব গ্রহণ করবেন এবং দাঁড়িপাল্লা প্রতিষ্ঠা করা হবে। অতঃপর প্রত্যেকের ′আমালনামাগুলো খুলে দেওয়া হবে। এই ′আমালনামাগুলো প্রত্যেকের ডানে-বামে উড়তে থাকবে। এই প্রসঙ্গে তিনি ক্বোরআনে কারীমের এই আয়াতগুলো উল্লেখ করেন-
فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا وَيَنْقَلِبُ إِلَى أَهْلِهِ مَسْرُورًا وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ فَسَوْفَ يَدْعُو ثُبُورًا وَيَصْلَى سَعِيرًا
অর্থাৎ- অতঃপর যার ‘আমালনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব সহজভাবেই নেয়া হবে। সে তার স্বজনদের কাছে সানন্দে ফিরে যাবে। আর যাকে তার ‘আমালনামা তার পিঠের পিছন দিক থেকে দেয়া হবে, সে মৃত্যুকে ডাকবে এবং জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।ছূরা আল ইনশিক্বাক- ৭-১২
এই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় শাইখ সালিহ্ আল ‘উছাইমীন o বলেন- “হিছাব” শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- সংখ্যা।
শারী‘য়াতের পরিভাষায় হিছাব হলো- ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ 7 বান্দাহদেরকে তাদের কর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- إِنَّ إِلَيْنَا إِيَابَهُمْ ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ
অর্থাৎ- নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমার দিকেই। অতঃপর নিশ্চয় তাদের হিসাব-নিকাশ নেয়া আমারই কাজ।ছূরা আল গাশিয়াহ- ২৫-২৬
রাছূলুল্লাহ 1 কোন কোন সালাতে বলতেন- “হে আল্লাহ! আপনি আমার থেকে সহজভাবে হিসাব নিন”। এ বিষয়ে ‘আয়িশাহ h রাছূলুল্লাহ্কে (1) বললেন- সহজ হিসাব কি? তখন রাছূলুল্লাহ বললেন- সহজ হিসাব হচ্ছে, আল্লাহ 8 বান্দাহ্র নামায়ে ‘আমালের দিকে তাকাবেন, অতঃপর তা উপেক্ষা করবেন।মুছনাদুল ইমাম আহ্মাদ
২) ক্বিয়ামাতের দিন মূমিনদের থেকে কিভাবে হিসাব নেয়া হবে?
আল্লাহ 8 তাঁর মূমীন বান্দাহদেরকে একাকী ডেকে নিবেন এবং প্রত্যেকের নিকট থেকে স্বীয় গুনাহের স্বীকারোক্তি নিয়ে নিবেন। যখন আল্লাহ 8 দেখবেন যে, গুনাহের কারণে তার বান্দাহ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি বলবেন যে, তোমার দুন্ইয়াওয়ী জীবনে এই গুনাহগুলোকে আমি ঢেকে রেখেছিলাম, আর আজকে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর তার হাতে তার সৎকর্মের কিতাবটি তুলে দেওয়া হবে।
ক্বিয়ামাতের দিন কাফির ও মুনাফিক্বের হিসাব কেমন হবে?
তাদেরকে সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে বলা হবে, এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যারা তাদের রাবের উপর মিথ্যারোপ করেছে। জেনে রেখো, অভিসম্পাত হচ্ছে যালিমদের প্রতি।সাহীহ্ বুখারী ও সাহীহ্ মুছলিম
এছাড়াও রাছূলুল্লাহ 1 এর উম্মাতের মধ্যে থেকে মোট ৭০ হাজার লোক বিনা হিসাবে এবং কোনো ধরনের শাস্তি ব্যতিরেকে জান্নাতে প্রবেশ করবে।সাহীহ্ বুখারী ও সাহীহ্ মুছলিম
ছাওবান 3 থেকে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- এই ৭০ হাজার লোকের প্রত্যেকের সাথে আরও ৭০ হাজার লোক থাকবে।মুছনাদুল ইমাম আহ্মাদ
৩) ক্বিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম রাছূলুল্লাহ্র (1) উম্মাতের হিসাব নেওয়া হবে। যেমন, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- আমরা সর্বশেষ জাতি। কিন্তু ক্বিয়ামাতের দিন আমরা থাকব সবার আগে। সমগ্র সৃষ্টির পূর্বে আমাদের ফায়সালা করা হবে।সাহীহ্ বুখারী ও সাহীহ্ মুছলিম
ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ্র (0) অধিকারের মধ্য হতে সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। যেমন, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- ক্বিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম বান্দাহ্র সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। যদি তার সালাত ঠিক থাকে, তবে তার অন্যান্য ‘আমালগুলোও ঠিক থাকবে। যদি এই সালাত বিনষ্ট হয়ে যায়, তবে অন্যান্য ‘আমলগুলোও বিনষ্ট হয়ে যাবে।ত্বাবারানী
ক্বিয়ামাতের দিন বান্দাহ্র অধিকারের মধ্য হতে সর্বপ্রথম মানুষ হত্যার বিচার করা হবে। যেমন, রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন- ক্বিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম মানুষের মধ্যে যে বিষয়ের ফায়সালা করা হবে, তা হচ্ছে- রক্তপণের বিষয়।সাহীহ্ বুখারী ও সাহীহ্ মুছলিম
৪) ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
অর্থাৎ- অতএব শপথ আপনার রাবের! তাদের সবাইকে অবশ্যই অবশ্যই আমি জিজ্ঞেস করবো, তারা যা করেছে সে সম্পর্কে।ছূরা আল-হিজ্র- ৯২-৯৩
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু ‘আব্বাছ h বলেছেন- তাদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তুমি কী ‘আমাল করেছিলে বা তুমি কেন এই ‘আমাল করেছিলে?
অপর আরেকটি আয়াতে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- فَيَوْمَئِذٍ لَا يُسْأَلُ عَنْ ذَنْبِهِ إِنْسٌ وَلَا جَانٌّ
অর্থাৎ- সে দিন না মানুষকে, না জিনকে তার গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।ছূরা আর্ রাহ্মান- ৩৯
এখন বাহ্যিকভাবে পরস্পর বিরোধী এই আয়াত দু’টির সমন্বয় আমরা কিভাবে করতে পারি?
ক) এই ব্যাপারে ইবনু ‘আব্বাছ h বলেছেন- মানুষকে তাদের গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে না। বরং, তাকে জিজ্ঞেস করা হবে- তুমি কেন এই ‘আমল করেছিলে?
এর জবাবেই তারা বলবে-
رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَ رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا
অর্থাৎ- হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় আমরা আমাদের নেতাদের ও আমাদের প্রধানদের আনুগত্য করতাম। তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের পালনকর্তা! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন আর তাদেরকে ভয়াবহ অভিশাপে অভিসম্পাত করুন।ছূরা আল আহ্যাব- ৬৭-৬৮
খ) ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 7 আরো ইরশাদ করেছেন- يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ لَا تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ
অর্থাৎ- সেদিন তোমাদেরকে (বিচারের জন্য) হাযির করা হবে, আর তোমাদের গোপনই গোপন থাকবে না।ছূরা আল হাক্ব্ক্বাহ- ১৮
এছাড়াও এই ব্যাপারে শাইখ আরও কিছু ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
৫) ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন-
فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا
অর্থাৎ- অতঃপর যার ‘আমালনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব সহজভাবেই নেয়া হবে।ছূরা আল ইনশিক্বাক- ৭-১২
এই প্রকার লোকের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের মধ্যে অবশ্যই কিছু গুণাবলী থাকতে হবে। সেগুলো হলো-
ক) আমাদেরকে অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আমি অবশ্যই হিসাবের মুখোমুখি হবো।
খ) আমি অবশ্যই আমার কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবো।
গ) আমাকে অবশ্যই আমার রাবের সামনে দাঁড়াতে হবে।
এই তিনটি বিষয়কে যারা অস্বীকার করবে বা ভুলে যাবে, তারাই বিপরীত অবস্থার সম্মুখীন হয়ে যাবে। যেমন, আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন- وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ فَسَوْفَ يَدْعُو ثُبُورًا وَيَصْلَى سَعِيرًا
অর্থাৎ- আর যাকে তার ‘আমালনামা তার পিঠের পিছন দিক থেকে দেয়া হবে, সে মৃত্যুকে ডাকবে এবং জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।ছূরা আল ইনশিক্বাক- ১০-১২
৬) ক্বোরআনে কারীমের আয়াত থেকে জানা যায় যে, হিসাবের দিক থেকে মু’মিনরা তিন ভাগে বিভক্ত হবে। যেমন-
ক) ছাবিক্বোম বিল খাইরাত। এরা বিনা হিসাব ও বিনা ‘আযাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
খ) মুক্বতাসিদ। এরা সহজ হিসাবের মুখোমুখি হবেন।
গ) যালিমুল লি-নাফসিহী। এরা হিসাবের মুখোমুখি হবে এবং ‘আযাবের সম্মুখীন হবে।
যেমন আল্লাহ 0 ক্বোরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন-
ثُمَّ أَوْرَثْنَا الْكِتَابَ الَّذِينَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَا فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِنَفْسِهِ وَمِنْهُمْ مُقْتَصِدٌ وَمِنْهُمْ سَابِقٌ بِالْخَيْرَاتِ بِإِذْنِ اللَّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَضْلُ الْكَبِيرُ
অর্থাৎ- অতঃপর আমি কিতাবটির উত্তরাধিকারী তাদেরকে করেছি যাদেরকে স্বীয় বান্দাহদের মধ্যে হতে বেছে নিয়েছি। অতঃপর তাদের কতক নিজেদের প্রতি অত্যাচারকারী, আর কতক মধ্যপন্থী, আর তাদের কতক আল্লাহর নির্দেশে সৎকাজে অগ্রগামী। এটা (কিতাবের জন্য মনোনীত করা) বড় দয়া-ই।ছূরা ফাত্বির- ৩২
ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-
১) السلام عليكم ورحمة الله وبركاته।
শাইখ, যে গুণাহ্গুলোর জন্য বান্দাহ দুন্ইয়াতে আল্লাহর (7) নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছে এবং তাওবাহ করেছে কিংবা ভালো ‘আমালের (যেমন মাক্ববূল হাজ্জ, সাদাক্বাহ ইত্যাদি) দ্বারা ক্ষমা পেয়ে গেছে, হাশ্রের দিনে কি আবার সেই গুনাহগুলোর হিসাব হবে?
২) হিসাব ছাড়া যেসকল বান্দাহ নাজাত পাবে, তারা কি “হিসাবে ইয়াছীর” এর সম্মুখীন হওয়া মুক্বতাসিদীন বান্দাহ থেকে অবশ্যই সর্ববিষয়ে উত্তম হবে, নাকি বিশেষ মর্যাদা পেয়ে বিশেষ কোনো ‘আমালের জন্য সাধারণ কোনো মু’মিনও বিনা হিসাবে নাজাতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে? আল্লাহ 0 আপনাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন!