এটি মুহ্তারাম আশ্শাইখ সালিহ্ আলফাওযান c কর্তৃক আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের প্রখ্যাত ইমাম- ইমাম আল বারবাহারী o এর অনবদ্য গ্রন্থ “শারহুছ্ ছুন্নাহ” এর অতি চমৎকার ও মূল্যবান ব্যাখ্যাগ্রন্থের অডিও ভাষান্তর। এতে ইছলামের মৌলিক বিষয়াদী, সঠিক ইছলামী ‘আক্বীদাহ ও মানহাজ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলা ভাষায় গ্রন্থটি ধারাবাহিকভাবে অডিও ভাষান্তর করছেন উছতায আবূ ছা‘আদা হাম্মাদ বিল্লাহ c।
এই পর্বে উছতায হাম্মাদ c নিম্নোক্ত বিষয়াদী সম্পর্কে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ইছলামী দল-উপদল সম্পর্কে চমৎকার আলোচনা করেছেন:-
১) ইমাম বারবাহারী o বলেছেন- “জেনে রাখুন! সত্যবিচ্যুত হওয়া এটা দু’ভাবে হতে পারে, প্রথমতঃ ব্যক্তি তার অনিচ্ছাবশতঃ সত্য-সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, যদিও তার উদ্দেশ্য এরূপ থাকে না বরং তার উদ্দেশ্য সৎ ও সঠিকই থাকে। এরূপ ব্যক্তির ভ্রান্তির অনুসরণ করা যাবে না, কারণ তা ভ্রষ্টতা ও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। দ্বিতীয়তঃ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সত্য পরিহার করে এবং স্বেচ্ছায় সত্য-সঠিক পথ থেকে বেরিয়ে যায়। সে এমনসব কাজকর্ম করে থাকে যা তার পূর্ববর্তী আল্লাহভীরু লোকদের কাজকর্মের সাথে সাংঘর্ষিক। এরূপ ব্যক্তি নিজে পথভ্রষ্ট এবং অপরকে পথভ্রষ্টকারী। সে হলো এই উম্মাতের জন্য চরম সীমালংঘনকারী শাইত্বান। এরূপ ব্যক্তি সম্পর্কে যিনি অবহিত হবেন, তার দায়িত্ব হবে সাধারণ মানুষকে উক্ত পথভ্রষ্টকারী শাইত্বান থেকে সতর্ক করা এবং তার অবস্থা ও অবস্থান মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে তুলে ধরা, যাতে করে কেউ তার বিদ‘আত ও গুমরাহীতে পতিত হয়ে ধ্বংস না হয়”।
২) ইমাম বারবাহারী o বর্ণিত উক্ত পয়েন্টের ব্যাখ্যায় শাইখ সালিহ্ আল ফাওযান c বলেছেন যে, সঠিক পথ থেকে যারা বেরিয়ে যায় তারা নিম্নোক্ত দুই প্রকৃতি থেকে যেকোন এক প্রকৃতির লোক হয়ে থাকে:-
প্রথম প্রকার হলো- যারা সত্য-সঠিক পথ থেকে অনিচ্ছায় বেরিয়ে যায়। সঠিক পথ থেকে বেরিয়ে যাওয়া কিংবা সত্যকে উপেক্ষা করা তাদের উদ্দেশ্য হয় না বরং কল্যাণ অর্জন করাই তাদের উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু নিজেদের চিন্তা-ভাবনা বা ইজতিহাদ বশতঃ তারা অসৎ ও অকল্যাণের পথ অবলম্বন করে নেয় যদ্দরুন তারা দ্বীনের সঠিক পথ থেকে বেরিয়ে যায়। কেননা দ্বীনের ক্ষেত্রে কেবল নিয়্যাত বা উদ্দেশ্য সৎ ও সুন্দর হওয়াই যথেষ্ট নয় বরং একই সাথে অবলম্বিত পথও সৎ ও সঠিক হতে হবে। এরূপ ব্যক্তিকে ভুল বা অন্যায়কারী বলে গণ্য করা হবে। আর যে ব্যক্তি তার এই ভুলকে ভুল বলে জানা সত্ত্বেও তার সাথে একমত পোষণ করবে এবং তার অনুসরণ করবে, তাহলে সে হবে ধ্বংসশীল। কেননা ভুল ও অন্যায়ের পথ হলো ধ্বংসের পথ, যদিও এর দ্বারা উদ্দেশ্য ভালো হয়ে থাকে।
দ্বীনী ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাস বিষয়ে যারা নিজেদের পক্ষ থেকে নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনা আবিষ্কার করে থাকে, তাদের বেশিরভাগের অবস্থাই এরকম হয়ে থাকে। তাই দ্বীনী ‘আক্বীদাহ বিষয়ে নিজের পক্ষ থেকে নতুন কোন ইজতিহাদ বা চিন্তা-ভাবনা আবিষ্কার করা জা-ইয নয়। আর কেউ যদি এরূপ করে থাকে এবং তার উদ্দেশ্য যদি সৎ ও সুন্দর হয়ে থাকে তথাপি এতদ্বিষয়ে তার অনুসরণ করা যাবে না, কেননা আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-
وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ.
অর্থাৎ- এবং এই হলো আমার সরল সঠিক পথ, অতএব তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, নতুবা তা তোমাদেরকে তাঁর (0) পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।ছূরা আল আন‘আম- ১৫৩
৩) শুধু নিয়্যাত বিশুদ্ধ হওয়াই যথেষ্ট নয় বরং কার্যকলাপও ছুন্নাহ অনুসারে হতে হবে।
৪) উছতায হাম্মাদ c তাবলীগ জামা‘আত এবং ইছলামী দা‘ওয়াতের সাথে জড়িত অন্যান্য ইছলামী দল সম্পর্কে আলোচনা করতে যেয়ে বলেছেন- যদিও বাহ্যিকভাবে মনে হয় যে, তাদের নিয়্যাত সত্য-সঠিক কিন্তু তাদের কার্যকলাপ ছুন্নাহ সম্মত নয়। উছতায c বিষয়টি বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন।
৫) আর দ্বিতীয় প্রকারের লোক হলো ঐ ব্যক্তি যে জেনে-শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে সত্যবিচ্যুত হয়। এই জাতীয় লোক সত্যকে ভালো করে জানে আর এটাও জানে যে, সে যে পথ অবলম্বন করছে সেই পথ হলো বাত্বিল ও ভ্রান্ত। এতদসত্ত্বেও সে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার হীন উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সঠিক পথ পরিহার করতে চায়।
৬) প্রথমোক্ত ব্যক্তি; তার উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সংশোধন বা পরিশুদ্ধ করা, যদিও সে নিজে সত্য-সঠিক পথে পরিচালিত নয়। অপরদিকে দ্বিতীয় প্রকারের লোক; তার উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সত্য বিচ্যুত করা এবং তাদেরকে সত্য-সঠিক পথ থেকে দূরে রাখা। এই শেষোক্ত ব্যক্তি হলো শাইত্বান, কারণ সে মানুষকে সত্য-সঠিক পথ থেকে দূরে রাখে। ইবলীছ তার পালনকর্তাকে বলেছিল-
لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ.
অর্থাৎ- অবশ্যই আমি আপনার সরল-সঠিক পথে তাদের জন্য ওৎ পেতে বসে থাকব”।ছূরা আল আ‘রাফ- ১৬
৭) দ্বিতীয় প্রকার ব্যক্তি; সে ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্বেষবশতঃ সত্যকে জেনেশুনে পরিহার করছে। তার উদ্দেশ্য হলো মানুষকে পথভ্রষ্ট করা। মূলতঃ এরূপ ব্যক্তি হলো মানবরূপী শাইত্বান।
৮) রাফিযাহ, খাওয়ারিজ, জাহমিয়াহ এবং অন্যান্য আরো অনেক দল রয়েছে যারা সত্যকে জানে কিন্তু মানে না বা অনুসরণ করে না। মূলতঃ এরা সত্য সম্পর্কে অজ্ঞ নয়। বাত্বিল সম্প্রদায়সমূহ এটা ভালো করেই জানে যে, শুধুমাত্র আহলুছ্ ছুন্নাহ-ই সত্যের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
৯) উক্ত সমস্যার সমাধানে শাইখ সালিহ্ আল ফাওযান c ইমাম বারবাহারীর (o) উক্তি তুলে ধরেছেন, ইমাম বারবাহারী o বলেছেন- “যার নিকট কোন ব্যক্তি পথভ্রষ্টকারী হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট তার দায়িত্ব হলো মানুষকে উক্ত পথভ্রষ্টকারীর ব্যাপারে সতর্ক করা এবং তার অবস্থা মানুষের নিকট স্পষ্ট করা, যাতে করে কেউ তার বিদ‘আতে পতিত হয়ে ধ্বংস না হয়”। উছতায হাম্মাদ c বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।
১০) শাইত্বান মানুষকে সত্য পথ থেকে বিচ্যুত করে।
১১) যে ব্যক্তি মানুষকে সত্য বিচ্যুত করার হীন উদ্দেশ্যে কোনরূপ কার্যক্রম পরিচালনা করে, তার ব্যাপারে মানুষকে সাবধান ও সতর্ক করা আবশ্যক।
১২) জ্ঞানভিত্তিক প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে এটাই হলো নীতি।
১৩) ‘উলামায়ে কিরামের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- সত্যকে সবার সামনে তুলে ধরা।
১৪) যারা মানুষকে সত্য বিচ্যুত করছে তাদের ব্যাপারে নীরব থাকা সত্য গোপন করার শামিল।
ক্লাস শেষে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করা হয়:-
ক) ছালাফদের কোন একজনের একটি উক্তি বর্ণনা করা হলে কিছু লোক বলে যে “এই উক্তির উপর সমগ্র ছালাফদের ইজমা‘ নেই”। এ অবস্থায় আমাদের করণীয় কি?
খ) যদি কেউ বলে যে “আহলুছ্ ছুন্নাহ সত্যের সর্বাধিক নিকটবর্তী দল, তবে পুরোপুরি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত দল নয়” তাহলে এমন লোকের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান কেমন হওয়া উচিত?
গ) কোন ইজতিহাদী বিষয়ে সাহাবায়ে কিরামের (4) মধ্যে যদি দ্বিমত থাকে, তাহলে সে বিষয়ে কি পরবর্তী কেউ ইজতিহাদ করার অধিকার রাখেন?
ঘ) السلام عليكم ورحمة الله وبركاته। উছতায! যেসব হাদীছের শুদ্ধতা ও অশুদ্ধতা বিষয়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী হাদীছ বিশেষজ্ঞগণ পরস্পর ভিন্নমত পোষণ করেছেন, সে সব হাদীছ বিষয়ে একজন সাধারণ মুছলিমের করণীয় কী?
ঙ) সেইসব লোককে দা‘ওয়াত কিভাবে দেব যারা বলে যে,- “আমরা শুধু ক্বোরআনে কারীম থেকেই দালীল গ্রহণ করব হাদীছ থেকে নয়”?