শাইখ হাম্মাদ বিল্লাহ c কর্তৃক এই অডিও বক্তৃতাটি হলো মূলত ইমাম ইবনুল ক্বায়্যিম o প্রণীত -‘উদ্দাতুস্ সাবিরীন ওয়া যাখীরাতুশ্ শাকিরীন- নামক কিতাবের ভাষান্তর। গ্রন্থকার ইছলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে -সাব্র বা ধৈর্য্য, অধৈর্য্য এবং শুক্র বা কৃতজ্ঞতা- এ ক‘টি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনী বিষয়ের অনুশীলনমূলক কাঠামো এবং এগুলোকে কিভাবে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে সংযুক্ত ও রপ্ত করা যায়, সেসব বিষয়ে অত্যন্ত চমৎকার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়েছেন। গ্রন্থখানি ছয় শতাব্দী পূর্বে লিখা হলেও এর বিষয়-বস্তু অত্যন্ত সময় উপযোগী এবং বর্তমান বাস্তবতার সাথে অতি প্রাসঙ্গিক। ভাষান্তরিত বক্তব্যে শাইখ হাম্মাদ বিল্লাহ c নিম্নোক্ত বিষয়ে আলোচনা করেছেন:-
১) পূর্ববর্তী; ৩নং ক্লাসে নাফ্ছ সম্পর্কে উল্লেখিত সর্বশেষ বিষয়টির পূণঃআলোচনা।
২) সাব্র বা ধৈর্য হলো দুই প্রকার- শারীরিক ও মানসিক। এ দু’টির প্রত্যেকটি আবার দু’প্রকার- (এক) ইখতিয়ারী বা ইচ্ছাধীন (দুই) ইযত্বিরারী বা বাধ্যতামূলক।
ক) ইচ্ছাধীন বা ইচ্ছাকৃত শারীরিক সাব্র হলো যেমন- স্বেচ্ছায় শারীরিক কঠোর পরিশ্রম করা।
খ) অনিচ্ছাকৃত বা বাধ্যতামূলক শারীরিক সাব্র হলো যেমন- অসুস্থতা বা রুগ্নাবস্থায় ধৈর্যধারণ করা, অন্যের দ্বারা শারীরিক আঘাত বা প্রহার সহ্য করা, প্রচন্ড শীত কিংবা গরম সহ্য করা ইত্যাদি।
গ) ইচ্ছাকৃত মানসিক সাব্র। তা হলো যেমন- নিজের নাফ্ছ বা প্রবৃত্তিকে এমনসব কাজ-কর্ম থেকে বিরত রাখা যেগুলো শারী‘আহ এবং সাধারণ বিবেকের দৃষ্টিতে সুন্দর বা শোভনীয় নয়।
ঘ) অনিচ্ছাকৃত বা বাধ্যতামূলক মানসিক সাব্র। যেমন-নাফছ এবং তার প্রিয় কোন বস্তু কিংবা বিষয়ের মধ্যে কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে যাওয়ার কারণে ঐ বিষয় বা বস্তু থেকে নাফ্ছের বাধ্যতামূলক বিরত থাকা বা ধৈর্যধারণ করা।
৩) সাব্রের রকমফের-
ক) মানবজাতির সাব্র বা ধৈর্যশীলতা এবং জীব-জন্তুর ধৈর্যশীলতা।
খ) জিনজাতির সাব্র
গ) ফিরিশতাগণের সাব্র
৪) সাব্র সম্পর্কে ইমাম ক্বাতাদাহ o এর ভাষ্য
৫) যখন কোন মানুষের বিবেক-বুদ্ধি তার প্রবৃত্তির তাড়না ও কামনা-বাসনার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে নেয়, তখন সে ব্যক্তি গুণ বা বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে ফিরিশতাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হয়। আর যখন কারো প্রবৃত্তির তাড়না ও কামনা-বাসনা তার মানবীয় বিবেক-বুদ্ধির উপর প্রাধান্য বিস্তার করে নেয়, তখন সে ব্যক্তি গুণ বা বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে পশুর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হয়।
৬) প্রবৃত্তি ও কুমনোবৃত্তির মোক্বাবিলা বা প্রতিরোধে শক্তি ও সামর্থের দিক থেকে সাব্রের প্রকারভেদ-
কুমনোবৃত্তি বা প্রবৃত্তির কুতাড়নার মোক্বাবিলায় দ্বীনী প্রেরণা বা তাড়নার অবস্থা নিম্নোক্ত তিন প্রকারের মধ্যে যে কোন এক প্রকার হয়ে থাকে-
(এক) কুমনোবৃত্তি বা প্রবৃত্তির উপর দ্বীনী প্রেরণা বা তাড়না আধিপত্য ও প্রাধান্য বিস্তার করবে এবং তা (দ্বীনী প্রেরণা) কুমনোবৃত্তি বা প্রবৃত্তিকে শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ, দমন বা প্রতিহত করবে। এরূপ সাব্রের অধিকারী লোকেরা দুন্ইয়া ও আখিরাতে সফল ও সাহায্যপ্রাপ্ত এবং তারাই আল্লাহ্র (0) সঙ্গিত্ব লাভে ধন্য।
(দুই) দ্বীনী প্রেরণা বা তাড়নার উপর কুমনোবৃত্তি বা প্রবৃত্তির তাড়না আধিপত্য ও প্রাধান্য বিস্তার করবে, আর এতে করে দ্বীনী প্রেরণা সম্পূর্ণরূপে ধরাশায়ী বা ম্লান হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তখন সম্পূর্ণরূপে শাইত্বান ও তার বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করবে আর শাইত্বান তাকে নিজের ইচ্ছামত পরিচালিত করবে। যখন কোন মানুষের কুপ্রবৃত্তি ও কুমনোবাসনা তার দ্বীনী প্রেরণা বা তাড়নার উপর প্রবল ও জয়ী হয়ে যাবে তখন শাইত্বান বাহিনীর সাথে তার সম্পর্ক দু’প্রকারের মধ্যে যেকোন এক প্রকার হবে- (ক) হয়তো সে শয়তানের অনুসারী এবং তার বাহিনীর একজন সৈন্যে পরিণত হবে। এটা দুর্বল ঈমানদার লোকদের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। (খ) শাইত্বান উক্ত ব্যক্তির অধিনস্থ সৈন্যে পরিণত হবে, সে হবে শাইত্বানের নেতা বা গুরু। ক্ষমতাধর মারাত্মক পাপাচারী কিংবা কিছু লোক অনুসরণ করে থাকে এরকম বিদ‘আতী দা‘য়ীর ক্ষেত্রেই এরূপ হয়ে থাকে।