উম্মাতে মুহাম্মাদীয়ার (صلى الله عليه وسلم) গুমরাহীর কারণ কি?

যুগে যুগে বিভিন্ন নাবীর (m) উম্মাতের মধ্যে যেভাবে ধীরে ধীরে নানারকমের গুমরাহী (ভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তি) দেখা দিয়েছিল, তদ্রুপ মুহাম্মাদ 1 এর উম্মাতের মধ্যেও নানা ধরনের গুমরাহীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটতে থাকবে।

আর যে সব গুমরাহী যে পথে ঐ সব উম্মাতের মধ্যে প্রবেশ করেছিল, অবিকল সে সব গুমরাহী সেই সব পথ ধরেই এই উম্মাতের মাঝেও প্রবেশ করছে।

যেমন, রাছূল 1 অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলে গেছেন:-

لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ قَبْلَكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ، وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ—————— الخ.رواه البخاري و مسلم و أحمد

অর্থ- তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতি সমূহের পথগুলো হুবহু অনুসরণ করবে ইঞ্চি ইঞ্চি, গজ গজ করে———-।সাহীহ্‌ বুখারী, সাহীহ্‌ মুছলিম ও মুছনাদে ইমাম আহ্‌মাদ

অন্য হাদীছে বর্ণিত, রাছূল 1 বলেছেন:-

لَتَسْلُكُنَّ سَنَنَ مَنْ قَبْلَكُمْ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ.مستدرك حاكم

অর্থ- তোমরা প্রতি পদে পদেই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতি সমূহের পথগুলো হুবহু অনুসরণ করবে, যেমনি জোড়ার একটি জুতার সাথে অপরটির হুবহু সাদৃশ্যতা ও মিল পাওয়া যায়। (অর্থাৎ গুমরাহী ও ভ্রষ্টতা অনুসরণে পূর্ববর্তী জাতিসমূহের সাথে তোমাদের তেমনি মিল থাকবে, যেমনি মিল থাকে এক জোড়া জুতার একটির সাথে অপরটির)।মুছতাদরাকে হাকিম

‘আক্বীদাহ ও ‘আমালের ক্ষেত্রে নাবীদের (m) প্রদর্শিত পথ ও মতের অনুসরণই হলো হিদায়াত, আর এই পথ ও মত থেকে বিচ্যুত হওয়াই হলো গুমরাহী। পূর্ববর্তী উম্মাতের গুমরাহীর কারণ যা ছিল, উম্মাতে মুহাম্মাদীয়ার গুমরাহীর কারণও হুবহু তা-ই। মূছা k ও ‘ঈছা k এর উম্মাতের জন্য যা কিছু গুমরাহীর কারণ ছিল, আমাদের; এই উম্মাতের গুমরাহীর কারণও তাই। যেমন- ‘আক্বীদাহ ও ‘আমালের ক্ষেত্রে নাবীদের (m) অনুসরণ বাদ দিয়ে শির্‌ক (অংশীবাদ) ও তাশবীহ্‌র (সাদৃশ্যতা নির্ধারণ) ‘আক্বীদাহ সৃষ্টি করা, ধর্মের বিকৃতি সাধন করা, ধর্মের মধ্যে বিদ‘আত তথা নতুন নতুন রীতি-নীতি ও প্রথা চালু করা এবং পাপাচারে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি অন্যান্য উম্মাতের গুমরাহীর কারণ হয়েছে, তদ্রুপ উম্মাতে মুহাম্মাদীয়ার গুমরাহীর কারণও এগুলোই।

অনুরূপভাবে পূর্ববর্তী উম্মাতের হিদায়াতের মূল ভিত্তি যা ছিল, উম্মাতে মুহাম্মাদীয়ার হিদায়াতের মূল ভিত্তিও তাই। মূছা k ও ‘ঈছা k এর উম্মাতের জন্য যা কিছু হিদায়াতের মৌলিক ভিত্তি ছিল, আমাদের জন্যও তা-ই হিদায়াতের মৌলিক ভিত্তি।

মোটকথা, পূর্ববর্তী ও বর্তমান; উম্মাতে মুহাম্মাদীয়ার হিদায়াত ও গুমরাহীর মৌলিক ভিত্তির মধ্যে কোন ভিন্নতা নেই, বরং তা সর্বযুগেই এক ও অভিন্ন। কেননা সকল নাবীরই (m) মূল দা‘ওয়াত ছিল এক ও অভিন্ন। আর তা ছিল দা‘ওয়াতুত্‌ তাওহীদ তথা আল্লাহ্‌র এককত্বের প্রতি আহবান। যদিও ‘আমাল বা দ্বীনী আনুষাঙ্গিক বিষয়ে তাদের দ্বীন বা শারী‘য়াতে কিছুটা পার্থক্য ছিল, কিন্তু মৌলিক ‘আক্বীদাহ্‌গুলো ছিল এক ও অভিন্ন। সকল নাবীই উম্মাতকে আল্লাহ্‌র একত্বের দিকে (তাওহীদের দিকে) আহবান জানিয়েছেন এবং শিরক, বিদ‘আত ও তাশবীহ, তামছীল (মানবীয় কোন গুণ আল্লাহ্‌র 0 জন্য সাব্যস্ত করা, কিংবা আল্লাহ্‌র জন্য কোনরূপ সাদৃশ্য নির্ধারণ করা) ইত্যাদি বর্জন করার এবং এরূপ ‘আক্বীদাহ পোষণ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।


১. رواه البخاري و مسلم و أحمد 
২. সাহীহ্‌ বুখারী, সাহীহ্‌ মুছলিম ও মুছনাদে ইমাম আহ্‌মাদ 
৩. مستدرك حاكم 
৪. মুছতাদরাকে হাকিম 

Subscribe to our mailing list

* indicates required
Close