ইছলাম হলো সেই দ্বীন, যে দ্বীন দিয়ে আল্লাহ 7 তাঁর রাছূল মুহাম্মাদকে (1) সমগ্র মানবজাতির প্রতি পাঠিয়েছেন। আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا.سورة سبأ- ٢٨
অর্থাৎ- আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে পাঠিয়েছি।ছূরা ছাবা- ২৮
ইছলাম হলো সেই দ্বীন, যদ্বারা আল্লাহ 8 অন্য সকল ধর্মের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন।
আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا.الأحزاب- ٤٠
অর্থাৎ- মুহাম্মাদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নয় বরং তিনি আল্লাহ্র রাছূল এবং শেষ নাবী। আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত।ছূরা আল আহ্যাব- ৪০
যেহেতু উল্লেখিত আয়াত দু‘টিতে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন যে, তিনি মুহাম্মাদকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী; সর্বশেষে নাবী হিসেবে পাঠিয়েছেন, তাই এর দ্বারা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, মুহাম্মাদ এর নিয়ে আসা দ্বীন বা ধর্মই হলো সমগ্র মানবজাতির একমাত্র দ্বীন এবং যেহেতু তিনি হলেন সর্বশেষ নাবী; তাঁর পরে আর কোন নাবী বা রাছূল আসবেন না, তাই তাঁর নিয়ে আসা দ্বীনই হলো সর্বশেষ দ্বীন।
ইছলাম হলো সেই ধর্ম, যেটাকে আল্লাহ তাঁর বান্দাহ্দের জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন, যদ্বারা তিনি তাদের প্রতি তার নি‘মাত (বিশেষ দান ও অনুগ্রহ) সম্পন্ন করেছেন এবং যেটাকে তিনি ধর্ম হিসাবে তাঁর বান্দাহ্দের জন্য পছন্দ ও মনোনীত করেছেন।
আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا.سورة المائدة- ٣
অর্থাৎ- আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নি‘মাত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইছলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৩
অন্য আয়াতে আল্লাহ 0 আরো ইরশাদ করেছেন:-
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ.سورة آل عمران- ١٩
অর্থাৎ- নিঃসন্দেহে আল্লাহ্র নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন হলো একমাত্র ইছলাম।ছূরা আ-লে ‘ইমরান- ১৯
ইছলাম হলো সেই দ্বীন, যে দ্বীন ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন আল্লাহ্র নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ.سورة آل عمران- ٨٥
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি ইছলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কখনো তা তার থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত।ছূরা আলে ‘ইমরান- ৮৫
আল্লাহ সমগ্র মানবজাতির উপর ফার্য করে দিয়েছেন- তারা যেন ইছলামকে আল্লাহ্র মনোনীত দ্বীন হিসেবে গ্রহণ ও পালন করে। তাই তো তিনি তাঁর রাছূলকে সম্বোধন করে বলেছেন:-
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ يُحْيِـي وَيُمِيتُ فَآمِنُواْ بِاللّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ.سورة الأعراف- ١٥٨
অর্থাৎ:- বলে দিন, হে মানবজাতি তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ্র প্রেরিত রাছূল; সমগ্র আছমান ও যমীনে যার (যে আল্লাহ্র) রাজত্ব, তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত আর কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি (আল্লাহ) জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহ্র উপর, তাঁর প্রেরিত সেই উম্মি নাবীর উপর; যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহ্র এবং তাঁর সমস্ত বাক্যের উপর, এবং তোমরা তাঁর অনুসরণ করো যাতে সঠিক পথপ্রাপ্ত হতে পার।ছূরা আল আ‘রাফ- ১৫৮
এ সম্পর্কে আবূ হুরায়রাহ 3 থেকে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, রাছূল 1 বলেছেন:-
وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّ، وَلَا نَصْرَانِيٌّ، ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ، إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ.رواه مسلم
অর্থ- যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তার শপথ, ইয়াহুদী কিংবা নাসারা এই উম্মাতের যে কেউ আমার কথা শুনার পর আমাকে যা দিয়ে (যে দ্বীন দিয়ে) পাঠানো হয়েছে- তার প্রতি ঈমান না এনে মৃত্যু বরণ করবে, সে ব্যক্তি অবশ্যই জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।সাহীহ্ মুছলিম
রাছূলের প্রতি ঈমান পোষণের অর্থ হলো- আল্লাহ্র পক্ষ থেকে তিনি যা বলেছেন তথা দ্বীনের যে বার্তা পৌঁছিয়েছেন এবং তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ যে দ্বীন বা শারী‘য়াত প্রবর্তন করে দিয়েছেন, শুধুমাত্র সেই বার্তা ও শারী‘য়াত অনুযায়ী আল্লাহ্র ‘ইবাদাত করা, সেটাকে সত্য বলে বিশ্বাস ও স্বীকার করে সাথে সাথে তা গ্রহণ করা এবং এর প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য ও বশ্যতা প্রদর্শন করা।
রাছূলের রিছালাত ও শারী‘য়াতকে সত্য বলে শুধুমাত্র মুখে স্বীকার করার নাম ঈমান নয়। এ কারণেই আবূ ত্বালিব রাছূলের প্রতি ঈমানদার বলে গণ্য হননি, যদিও তিনি রাছূল এর নিয়ে আসা দ্বীনকে সত্য দ্বীন বলে মৌখিকভাবে স্বীকার করেছেন এবং এটাকে অন্য সকল ধর্ম থেকে উত্তম ধর্ম বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
ইছলাম হলো সেই ধর্ম, যা মানুষকে যাবতীয় সৃষ্টবস্তুর দাসত্ব পরিহার ও বর্জন করে একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের দাসত্ব তথা ‘ইবাদাত করার নির্দেশ দেয়।
দ্বীনে ইছলাম হলো সেই দ্বীন, যা মানুষকে তার ইহ-পরকালের সার্বিক মঙ্গল ও সফলতা অর্জনের পথ দেখায়।
ইছলাম ধর্ম হলো সেই ধর্ম, যে ধর্মের মধ্যে আগেকার সকল ধর্মের মধ্যে যতসব কল্যাণ নিহিত ছিল সে সব কল্যাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সর্বোপরি ইছলাম ধর্মের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, তা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত সকল কালের, সকল স্থানের, সকল মানুষের জন্য সমানভাবে কল্যাণকর ও উপযোগী। আল্লাহ 0 তাঁর রাছূলকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেছেন:-
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ.سورة المائدة- ٤٨
অর্থাৎ- আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়-বস্তুর রক্ষনাবেক্ষণকারী।ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৪৮
“দ্বীনে ইছলাম সর্বকালের, সর্বস্থানের সকল মানুষের জন্য সমানভাবে উপযোগী” কথাটির অর্থ হলো:- ইছলামের অনুসরণ কোন কালে, কোন সময়ে, কোন স্থানে, কোন মানুষের কল্যাণ লাভের পথে বাঁধা বা অন্তরায় সৃষ্টি করে না। বরং ইছলামের অনুসরণ প্রতিটি যুগে, প্রতিটি স্থানে, প্রতিটি মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ বয়ে আনে। দ্বীনে ইছলাম কখনো কোন স্থান, কাল, জাতি বা পাত্রের নিকট নতি স্বীকার করে না। কেননা ইছলাম এসবের অধীনস্থ নয়। বরং স্থান, কাল, পাত্র এ সবই হলো ইছলামের অধীন। তাই আধুনিকায়নের নামে ইছলামকে সময় যুগ, স্থান, কাল, জাতি-গোত্র বা ব্যক্তির উপযোগী করার কোন অবকাশ নেই। ইছলাম সদা-সর্বদা সকল স্থানে সকল মানুষের জন্য সম্পূর্ণ যথার্থ, উপযোগী ও কল্যাণকর।
ইছলাম হলো জ্ঞানের ধর্ম, তাতে অজ্ঞতার কোন স্থান নেই। ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
فاعلم أنه لا له إلا الله.سورة محمد- ١٩
অর্থাৎ- জেনে নিন যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মা‘বূদ নেই।ছূরা মুহাম্মাদ- ১৯
তাইতো রাছূল 1 বলেছেন:-
طلب العلم فريضة على كل مسلم.رواه البيهقى والطبرانى وإبن عبد البر فى جامع بيان العلم
অর্থ- জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুছলমানের অবশ্য কর্তব্য।বায়হাক্বী, ত্বাবারানী, জামি‘উ বয়ানিল ‘ইলম
দ্বীনে ইছলাম হলো একমাত্র সত্য ধর্ম, যে বা যারা এ দ্বীনকে যথাযথভাবে গ্রহণ করবে এবং এই দ্বীনের বিধি-বিধানকে সঠিকভাবে অনুসরণ করবে, এ দ্বীনকে মেনে চলবে, তাদেরকে সাহায্য করার এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর তাদেরকে বিজয়ী করার যিম্মাহ্দার হলেন আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন। ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ.سورة التوبة- ٣٣
অর্থাৎ- তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রাছূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন তিনি এ দ্বীনকে অপরাপর সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।ছূরা আত্ তাওবাহ- ৩৩
অন্য আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন:-
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُم فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ.النور- ٥٥
অর্থাৎ- তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তাদেরকে তিনি অবশ্যই পৃথিবীতে শাসন কর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি (আল্লাহ) শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার (আল্লাহ্র) ‘ইবাদাত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য।ছূরা আন্নূর- ৫৫
দ্বীনে ইছলাম হলো একটি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও একটি পূর্ণাঙ্গ শারী‘য়াত বা জীবন বিধান।
ইছলাম, মানুষকে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার তথা সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ্র এককত্ব অক্ষুন্ন রাখার নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ্র সাথে অংশীদার নির্ধারণ (শির্ক) থেকে নিষেধ করে।
ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ.سورة النحل- ٣٦
অর্থাৎ- আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যেই রাছূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহ্র ‘ইবাদাত করো এবং ত্বাগুত থেকে দূরে থাকো।ছূরা আন্নাহল- ৩৬
আল্লাহ 8 আরো ইরশাদ করেছেন:-
وَاعْبُدُواْ اللّهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا.سورة النساء- ٣٦
অর্থাৎ- তোমরা আল্লাহ্র ‘ইবাদাত করো এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না।ছূরা আননিছা- ৩৬
দ্বীনে ইছলাম, মানুষকে সত্য ও সত্যবাদীতার নির্দেশ দেয় এবং মিথ্যা ও মিথ্যাচার থেকে নিষেধ করে। ইছলাম ধর্ম- ন্যায়, ইনসাফ ও সুবিচারের নির্দেশ দেয়, অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচার থেকে নিষেধ করে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ন্যায়-ইনসাফ ও সুবিচারের অর্থ হলো:- অভিন্ন; একজাতীয় বা সর্বদিক থেকে সমজাতীয় বিষয়-বস্তুর মধ্যে কোনরূপ পার্থক্য নির্ধারণ না করে বরং এগুলোকে সমান দৃষ্টিতে দেখা এবং বিভিন্ন প্রকার তথা পরস্পর ভিন্ন-ভিন্ন জাতীয় বিষয়-বস্তুর মধ্যে পারস্পরিক ভিন্নতা ও পার্থক্য বজায় রাখা।
সাধারণভাবে একজাতীয় এবং বহুজাতীয় বা ভিন্নজাতীয় সকল বিষয়-বস্তুকে সমান অধিকার প্রদান কিংবা সমান দৃষ্টিতে দেখাকে ন্যায় বা ইনসাফ বলে না, যেমনটি কিছু সংখ্যক লোকের ধারণা। তারা তাদের এ ভুল ধারণা বশতঃই বলে থাকে যে, “ইছলাম হলো- সাধারণভাবে সাম্যের বা সমান অধিকার প্রদানকারী ধর্ম”।
কিন্তু প্রকতপক্ষে তাদের এ দাবি সঠিক নয়। কেননা ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির বা বহুজাতীয় বিষয়-বস্তুর পারস্পরিক ভিন্নতা ও পার্থক্যকে উপেক্ষা করে এগুলোকে সমান দৃষ্টিতে দেখা বা এক মনে করা কিংবা সবগুলোকে সমান অধিকার প্রদান করা, এটা সুস্পষ্ট অন্যায় ও অবিচার। এরূপ কাজ ইছলাম কোন অবস্থাতেই করে না এবং করতে পারে না।
তরল জাতীয় পদার্থ বলেই কি দুধ আর কেরোসিনকে এক দৃষ্টিতে দেখা যাবে বা একই বস্তু মনে করা যাবে? অবশ্যই না। তাই সাধারণভাবে ইছলামকে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা বা প্রদানকারী ধর্ম বলে দাবি করা সঠিক নয়।
দ্বীনে ইছলাম, আমানাতদারী তথা বিশ্বস্ততা রক্ষার নির্দেশ দেয় এবং খিয়ানাত বা বিশ্বাস ভঙ্গ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে।
ইছলাম ধর্ম, ওয়া‘দা বা অঙ্গীকার রক্ষার ও সততার নিদের্শ দেয় এবং ওয়া‘দা ভঙ্গ ও প্রতারণা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে।
দ্বীনে ইছলাম, পিতা-মাতার সাথে অসদাচরণ ও তাদের অবাধ্যতা থেকে (যদি তাদের কোন আদেশ পালন করতে যেয়ে আল্লাহ্র আদেশ-নির্দেশ লঙ্ঘিত না হয়) নিষেধ করে।
ইছলাম ধর্ম, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার আদেশ দেয় এবং সম্পর্কচ্ছেদ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে।
দ্বীনে ইছলাম, প্রতিবেশীর সাথে সদাচারণ ও সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দেয় এবং অসাদাচরণ থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করে।
ইছলাম, মানুষকে মন্দ ও নিকৃষ্ট চরিত্র অবলম্বন থেকে এবং সকল প্রকার দুরাচার, দুর্ব্যবহার বা অসদাচরণ থেকে নিষেধ করে।
ইছলাম, মানুষকে সর্বপ্রকার ভাল কাজের আদেশ দেয় এবং সর্বপ্রকার খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করে। যেমন ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالإِحْسَانِ وَإِيتَاء ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ.سورة النحل- ٩٠
অর্থাৎ- আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, খারাপ কাজ এবং সীমালঙ্ঘন করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখো।ছূরা আন্নাহ্ল- ৯০