মহাবিশ্বের পরতে পরতে রয়েছে মহান আল্লাহ্র পরিচিতি ও নিদর্শন । ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
أَفِي اللَّهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ.سورة إبراهيم- ١٠
অর্থাৎ- সমগ্র আছমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্র ব্যাপারে কি কোন সন্দেহ আছে?ছূরা ইবরাহীম- ১০
আল্লাহ b আরো ইরশাদ করেছেন:-
وَفِي الْأَرْضِ آيَاتٌ لِلْمُوقِنِينَ. وَفِي أَنْفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ.سورة االذاريات- ٢٠-٢١
অর্থাৎ- যমীনে রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শন এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও, তাহলে কেন তোমরা গভীর দৃষ্টিতে তা দেখো না।ছূরা আয্ যারিয়াত- ২০-২১
সমগ্র সৃষ্ট বস্তু ও প্রকৃতি জগত হলো আল্লাহ্র (0) অসীম জ্ঞানের সুস্পষ্ট এবং শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। বস্তুর পরিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্যেই আল্লাহ্র (0) এবং তাঁর ক্বোদরাত, হিকমাত ও অন্যান্য সুমহান গুণাবলির পরিচয় লাভ করা খুবই সহজ। তাঁর অনন্ত-অশেষ দয়া, মায়া ও রাহমাত সমগ্র জগতের সকল কিছুকে জীবন ও অস্তিত্ব দান করছে। জগতের প্রতিটি বস্তুই অস্তিত্ব ও বিকাশ লাভের জন্যে আল্লাহ্র (b) দয়া-মায়া ও ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু ও অণু-পরমাণু মহাজ্ঞানী আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন’র মহা প্রজ্ঞা ও মহান বুদ্ধিবৃত্তির ক্রিয়াশীলতার সাক্ষ্য বহন করে চলছে। বিচিত্র, বিশাল, নিপুণ, নিখুঁত, বর্ণাঢ্য ও অপরূপ এই সৃষ্টিজগতের শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার পরতে পরতে রয়েছে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র (b) মহাশক্তির বাস্তব প্রমাণ ও নিদর্শন। অবাধ্যতা-নাফরমানী আর সীমালঙ্ঘনের দরুন অতীতের বিভিন্ন জাতি ও জনগোষ্ঠীর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ানক ইতিহাসের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ্র (b) অসীম শক্তি ও ক্ষমতার সুস্পষ্ট প্রমাণ। এসব প্রমাণ ও নিদর্শনগুলো দার্শনিক প্রমাণের মত জটিল কিংবা গুরুভার নয়। বরং এ সবই হলো মহান আল্লাহ্র অনাদি-অনন্ত, স্বয়ংসম্পূর্ণ অস্তিত্ব ও বিদ্যমানতার অনাড়ম্বর, সহজ-সরল ও প্রত্যক্ষ প্রমাণ। মহাবিশ্বের অপরূপ বিন্যাস, অগণিত অসংখ্য সৃষ্টকণিকার মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ, ঐক্য ও নির্ভরশীলতা, সুষ্ঠু-সুন্দর, নিখুঁত, সুশৃঙ্খল পরিচালনা ও প্রতিপালন- এসব বিষয়গুলো এমন যে, শিক্ষিত, অশিক্ষিত যে কেউই নিজের সাধ্যানুযায়ী সাদা মন আর সত্যান্বেষূ দৃষ্টিতে তাকালে অনায়াসেই আল্লাহ্র (0) পরিচয় ও তার একত্বের তথা লা-শরীক হওয়ার প্রমাণ পেয়ে যেতে পারে।
কোন এক ‘আরাবী কবি যথার্থই বলেছেন:-
ألا كل شيئ ما خلا الله باطل- وكل نعيم لا محالة زائل -وفى كل شيئ له آية- تدل على أنه الواحد.
অর্থাৎ- জেনে রেখো! আল্লাহ ব্যতীত যা কিছু, সবই অনর্থক-বাত্বিল আর সকল নি‘মাতই নিঃসন্দেহে বিলুপ্তশীল। প্রতিটি বস্তুতেই রয়েছে তাঁর নিদর্শন, যা তাঁর এককত্বের প্রমাণ করে প্রদর্শন।
যারা আল্লাহ ও ধর্মে বিশ্বাস করে না এবং জীব-জগত এলোমেলোভাবে এমনিতেই সৃষ্টি ও উন্নতি লাভ করেছে বলে মনে করে, যারা আল্লাহ্র বিদ্যমানতা এবং তাঁর এককত্বের বিষয়ে জগত-প্রকৃতির মাঝে যে সব অকাট্য দলীল-প্রমাণাদি রয়েছে এবং তাঁর বিধানের মধ্যে যে প্রগাঢ় হিকমাত নিহিত রয়েছে সে সবের প্রতি দৃষ্টিপাত করে না, প্রখ্যাত ইংরেজ পদার্থ বিজ্ঞানী উইলিয়াম কেলভিন থমাস (W. kelvin Thomson, 1824-1907 A.D) তাতে (ঐ সব লোকদের অজ্ঞতা, পক্ষপাতিত্ব ও সত্যবিমূখতা দেখে) খুবই হতাশ ও আশ্চর্যান্বিত হয়ে ঐসব লোকদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছেন। তিনি বলেছেন:- “মানুষের পক্ষে এ কথা কল্পনা করাই কঠিন যে, কোন পরিকল্পনাকারী সৃজনশীল শক্তি বিদ্যমান থাকা ছাড়া জীবনের সূচনা বা তা চলমান থাকতে পারে কিংবা তা সচল থাকতে পারে। অর্থাৎ সঠিক পরিকল্পনাকারী ও সৃষ্টি করতে সক্ষম কোন সুমহান সত্তার অস্তিত্ব না থাকলে জগতে কোন কিছুই অস্তিত্ব লাভ করতে বা তার অস্তিত্ব সচল ও টিকিয়ে রাখতে কিংবা সৃষ্টির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে না। আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি যে, কোন কোন বৈজ্ঞানিকগণ জীব সম্পর্কিত তাদের তাত্ত্বিক গবেষণার ক্ষেত্রে এ জগতের প্রকৃতি ও বিধান সমূহে (সৃষ্টিকর্তার পরিচয়ের) যে সব অকাট্য প্রমাণাদি রয়েছে, তা তারা বিশেষভাবে এড়িয়ে গেছেন। কারণ, আমাদের চারপাশে হাজারো রকমের অকাট্য প্রমাণ উপস্থিত রয়েছে যা এক মহাশক্তিশালী ও মহাকুশলী ব্যবস্থাপকের অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করছে। প্রকৃতির মাঝে বর্তমান এ সব দলীল-প্রমাণ ও নিদর্শন আমাদেরকে এক স্বয়ং সম্পূর্ণ, স্বাধীন, সার্বভৌম সত্তার সন্ধান দেয়। এই প্রমাণগুলো আমাদের বলে দেয় যে, প্রতিটি বস্তুই এক, অদ্বিতীয় এবং চিরঞ্জীব মহান স্রষ্টার সৃষ্টি এবং সবাই তাঁরই উপর নির্ভরশীল”।
প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক নিউটন বলেছেন- “সৃষ্টিকর্তার বিদ্যমানতার বিষয়ে (অর্থাৎ সমগ্র জগতের একজন সৃষ্টিকর্তা যে আছেন সে ব্যাপারে) কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করো না। কারণ, হঠাৎ করে (অপরিকল্পিতভাবে) সংঘটিত একটি ঘটনা এ সৃষ্টির (এতো সুবিন্যস্ত, সুসজ্জিত ও সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো এই মহাজগত সৃষ্টির) মূল (সৃষ্টির উৎস বা কারণ) হওয়ার বিষয়টি কোনভাবেই বোধগম্য নয়”।
মনস্তত্ত্ব ও সমাজতত্ত্বের উপর লেখক ও গবেষক, বৃটিশ দার্শনিক স্পেন্সার (Spencer : 1820-1903) এ প্রসঙ্গে বলেন- “আমরা এ কথার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য যে, এ মহাবিশ্বের নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা প্রবাহ আমাদেরকে এমন এক মহাশক্তিমান সত্তার সন্ধান দেয়, যাকে অনুধাবন করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। ধর্মই সর্বপ্রথম এ সর্বশক্তিমান সত্তাকে গ্রহণ এবং মানব জাতিকে তাঁর সম্পর্কে জ্ঞান দান করে”।
আসলে ক্বোরআনে কারীমের নিম্নোক্ত আয়াতে আল্লাহ 0 এ কথাটিই বলেছেন:-
لَا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ.سورة الأنعام- ١٠٣
অর্থাৎ- কোন মানব-দৃষ্টি তাঁকে দেখতে পারে না, অথচ তিনি সকল কিছুই দেখতে পান এবং তিনি অতীব সূক্ষ্ণদর্শী এবং সর্বজ্ঞ।ছূরা আল আন‘আম- ১০৩
অষ্টাদশ শতকের দার্শনিক, জ্যোতির্বিদ ও আকাশবিদ, টেলিস্কোপ যন্ত্রের আবিষ্কারক উইলিয়াম হারসেল (William Hershel : 1738-1822 ) বলেছেন- “জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরিধি যতই বিস্তৃত হবে ততই একজন অসীম শক্তিধর সৃজনশীল প্রাজ্ঞ কুশলীর অস্তিত্ব ও বিদ্যমানতার উপর প্রমাণাদি বাড়তে থাকবে।
সূত্র: –
১) এগাছাতুল লাহ্ফান লি ইবনিল ক্বায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ
২) দারউ তা‘আরুযিল ‘আক্বল ওয়ান্ নাক্বল
৩) মুক্বারানাতুল আদইয়ান।
৪) আল ক্বোরআন দ্যা চ্যালেঞ্জ।