আল্লাহ্র প্রতি এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, যেহেতু একমাত্র আল্লাহ 0 মানবজাতিকে এবং জগতের সকল কিছুকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই সমগ্র জগতের একক সৃষ্টিকর্তা, নির্দেশ প্রদানকারী, জীবন ও মৃত্যু দানকারী, একক পালনকর্তা, জীবিকা প্রদানকারী এবং সমগ্র জগতের একক মালিক, পরিচালক ও ব্যবস্থাপক। তিনি (আল্লাহ 7) তাঁর অনুগত বান্দাহ্গণকে প্রতিদান ও অবাধ্যদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন। তিনি সর্বশক্তিমান। তাই তিনিই (আল্লাহ তা‘আলাই) ‘ইবাদাতের একমাত্র যোগ্য ও হক্বদার, সত্য ও সত্যিকার মা‘বূদ। আল্লাহ 8 ব্যতীত ‘ইবাদাতের যোগ্য ও সত্য উপাস্য আর কেউ নয়। আল্লাহ 0 জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ‘ইবাদাত করার জন্যে এবং তাদেরকে তিনি এই নির্দেশই প্রদান করেছেন।
আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ. مَا أُرِيدُ مِنْهُم مِّن رِّزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَن يُطْعِمُونِ. إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ.سورة الذاريات- ٥٦-٥٧
অর্থাৎ- আমি জিন ও মানবজাতিকে কেবল আমার ‘ইবাদাতের জন্যই সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের নিকট হতে কোন জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমার আহার্য (খাদ্য) যোগাবে। আল্লাহ্ই (0) তো রিয্ক্বদাতা সর্বশক্তিমান সুদৃঢ়।ছূরা আয্ যা-রিয়া-ত- ৫৬-৫৭
অন্য আয়াতে আল্লাহ b ইরশাদ করেছেন:-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ. الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الأَرْضَ فِرَاشاً وَالسَّمَاء بِنَاء وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقاً لَّكُمْ فَلاَ تَجْعَلُواْ لِلّهِ أَندَاداً وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ.سورة البقرة- ٢١-٢٢
অর্থাৎ- হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের‘ ইবাদাত করো, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তাতে আশা করা যায় তোমরা আল্লাহ্ভীরুতা অর্জন করতে পারবে। যিনি (যে পবিত্র ও মহান সত্তা; আল্লাহ) তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা ও আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তদ্বারা তোমাদের জন্য জীবিকা স্বরূপ ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন। অতএব, তোমরা কাউকে আল্লাহ্র (0) সমকক্ষ নির্ধারণ করো না। বস্তুত এসব তোমরা জানো।ছূরা আল বাক্বারাহ- ২১-২২
“আল্লাহ্ই একমাত্র সত্য ও সত্যিকার মা‘বূদ এবং ‘ইবাদাতের প্রকৃত যোগ্য ও হক্বদার। আল্লাহ 7 ব্যতীত ‘ইবাদাতের যোগ্য ও সত্য উপাস্য আর কেউ নয়”। এই সত্যকে সুস্পষ্ট করে দেয়ার জন্যে এর প্রতি তথা তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ প্রতিষ্ঠার প্রতি উদাত্ত আহবান জানাতে এবং এর পরিপন্থি বিষয় থেকে সর্তক ও সাবধান করার জন্যে আল্লাহ 8 যুগে যুগে বহু নাবী-রাছূল পাঠিয়েছেন এবং কিতাব সমূহ নাযিল করেছেন।
আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ.سورة النور- ٣٦
অর্থাৎ- নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির প্রতি রাছূল পাঠিয়েছি এই মর্মে যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহ্র ‘ইবাদাত করো এবং ত্বাগুতদের থেকে দূরে থাক।ছূরা আন্ নাহ্ল- ৩৬
আল্লাহ 8 আরো ইরশাদ করেছেন:-
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ.سورة الأنبياء- ٢٥
অর্থাৎ- আপনার পূর্বে আমি যে রাছূলই প্রেরণ করেছি তাঁর প্রতি এ প্রত্যাদেশই (অহী) প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত আর কোন মা‘বূদ নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ‘ইবাদাত করো।ছূরা আল আম্বিয়া- ২৫
অন্য আয়াতে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ.سورة الإسراء- ٢٣
অর্থাৎ- তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তোমরা একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারও ‘ইবাদাত করো না।ছূরা আল ইছরা- ২৩
আয়াতে উল্লেখিত -‘ইবাদাহ- এর প্রকৃত অর্থ হলো:- যাবতীয় ‘ইবাদাত খাঁটিভাবে একমাত্র আল্লাহ্র (b) জন্য নিবেদন করা এবং আল্লাহ্র সাথে কাউকে বা কোন কিছুকে শরীক (অংশীদার) না করা। ক্বোরআনে কারীমের বেশিরভাগ আয়াত এই মহান মৌলিক নীতি (তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ বা ‘ইবাদাতে আল্লাহ্র একত্ব প্রতিষ্ঠা করা) সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছে।
আল্লাহ্র প্রতি ঈমানের অন্তর্ভুক্ত ও অবিচ্ছেদ্য আরেকটি বিষয় হলো- আল্লাহ 0 তাঁর বান্দাহ্দের উপর যে সব বিষয় ও কাজ পালন করা ফার্য বা আবশ্যকীয় করে দিয়েছেন, সেগুলোকে ফার্য তথা অবশ্য করণীয় বলে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা।
যেমন, ইছলামের পাঁচটি ভিত্তি বা রুক্ন যথা:- (১) এই ঘোষণা ও স্বাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাছূল। (২) সালাত ক্বায়িম করা। (৩) যাকাত প্রদান করা। (৪) রামাযান মাসে রোযা পালন করা এবং (৫) বায়তুল্লাহ শরীফে পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হাজ্জ পালন করা। (উপরোক্ত রুক্নগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান রুক্ন হলো- এই ঘোষণা ও সাক্ষ্য প্রদান করা যে, “আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাছূল”। এছাড়াও ক্বোরআন ও ছুন্নাহ দ্বারা আরো যেসব বিষয় ফার্য-ওয়াজিব বলে প্রমাণিত সেগুলোকে ফার্য-ওয়াজিব বলে বিশ্বাস ও পালন করা।
আল্লাহ্র (7) প্রতি ঈমানের অন্তর্ভুক্ত আরেকটি অপরিহার্য বিষয় হলো- এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, একমাত্র আল্লাহ b মানবজাতিকে এবং জগতের সকল কিছুকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই সমগ্র জগতের একক সৃষ্টিকর্তা ও নির্দেশ প্রদানকারী। একমাত্র তিনিই তাদের জীবন ও মৃত্যূ দানকারী, জীবিকা প্রদানকারী, তাদের প্রতি অনুগ্রহকারী, সমগ্র জগতের একক পালনকর্তা এবং সমগ্র জগতের একক মালিক, পরিচালক ও ব্যবস্থাপক। তিনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে স্বীয় জ্ঞান ও ক্বোদরাত দ্বারা সমগ্র জগত পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি সর্বশক্তিমান, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞানী। তিনি জগতের প্রতিটি বস্তুর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত। তিনি ব্যতীত আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই, নেই কোন রাব্, নেই কোন ইলাহ (উপাস্য)। তিনিই তাঁর বান্দাহ্গণের সার্বিক সংশোধনের জন্যে, তাদেরকে ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মঙ্গল ও কল্যাণের প্রতি আহবান জানানোর জন্যে নাবী-রাছূলগণকে (m) প্রেরণ করেছেন এবং আছমানী কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন। এ স-ব বিষয়ে আল্লাহ্র কোন শরীক বা অংশীদার নেই।
মোটকথা, আল্লাহ্কে (0) তাঁর রুবূবিয়্যাহ্তে অর্থাৎ তাঁর যাবতীয় কর্মে একক, অদ্বিতীয় ও অংশীদারমুক্ত বলে বিশ্বাস করা।
ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-
اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ.سورة الزمر- ٦٢
অর্থাৎ- আল্লাহ্ই প্রতিটি বস্তুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই সকল বস্তুর কর্মবিধায়ক।ছূরা আয্যুমার- ৬২
আল্লাহ 0 আরো ইরশাদ করেছেন:-
إِنَّ رَبَّكُمُ اللّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلاَ لَهُ الْخَلْقُ وَالأَمْرُ تَبَارَكَ اللّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ.سورة الأعراف- ٥٤
অর্থাৎ- নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হলেন আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি ‘আরশের উপর আসীন হয়েছেন। তিনি রাতকে দিনের উপর সমাচ্ছন্ন করে দেন, যাতে রাত দ্রুত গতিতে দিনের অনুসরণ করে চলে। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও তারাকারাজি। সবই তার নির্দেশে পরিচালিত। জেনে রেখো, সৃষ্টি আর হুক্ম প্রদানের মালিক তিনিই। চির মঙ্গলময় মহান আল্লাহ্, তিনিই সর্বজগতের পালনকর্তা।ছূরা আল আ‘রাফ- ৫৪
আল্লাহ্র (b) প্রতি ঈমানের অন্তর্ভুক্ত ও অপরিহার্য আরেকটি বিষয় হলো, ক্বোরআনে কারীমে এবং রাছূল 1 এর হাদীছে বর্ণিত আল্লাহ্র (0) সর্বসুন্দর নামসমূহ ও তাঁর সুমহান গুণরাজির উপর কোন প্রকার বিকৃতি, অস্বীকৃতি, আকার, গঠন, উপমা বা সাদৃশ্য আরোপ না করে কিংবা কোন সমতুল্য অথবা সমকক্ষ নির্ধারণ না করে ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্তে এগুলো যেভাবে বর্ণিত রয়েছে, বাহ্যিক মহান অর্থসহ হুবহু সেগুলোর উপর বিশ্বাস পোষণ করা। আর এটাই হলো- তাওহীদুল আছমা ওয়াস্ সিফাত। আল্লাহ 7 ইরশাদ করেছেন:-
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ.سورة الشورى- ١١
অর্থাৎ- কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।ছূরা আশ্শুরা- ১১
অন্য আয়াতে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
فَلاَ تَضْرِبُواْ لِلّهِ الأَمْثَالَ إِنَّ اللّهَ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ.سورة النحل- ٧٤
অর্থাৎ- সুতরাং তোমরা আল্লাহ্র কোন সদৃশ স্থির করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না।ছূরা আন্ নাহল- ৭৪