তাওহীদুল আছমা ওয়াস্ সিফাত হলো:- আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলী সমূহ যা ক্বোরআন ও ছুন্নাহতে বর্ণিত রয়েছে, সেগুলোর কোনরূপ পরির্বতন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং সৃষ্ট কোন বস্তর সাথে সেগুলোর কোন প্রকার তুলনা, উপমা, সদৃশ কিংবা আকার-আকৃতি, উৎপ্রেক্ষা নির্ধারণ না করে ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্তে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, বাহ্যিক অর্থসহ হুবহু সেগুলোর প্রতি দৃঢ়ভাবে ঈমান পোষণ করা। কেননা আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ.سورة الشورى- ١١
অর্থাৎ- কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।ছূরা আশশুরা- ১১
তাই প্রত্যেক মুছলমানের উপর ওয়াজিব, আল্লাহ 0 নিজে তাঁর যে সকল নাম ও গুণাবলী বর্ণনা করেছেন, এমনিভাবে রাছূল 1 হতে আল্লাহ্র যে সব নাম ও গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে এবং যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, বাহ্যিক অর্থসহ হুবহু সেগুলোর প্রতি দৃঢ় ঈমান পোষণ করা। তাতে শব্দগত কিংবা অর্থগত কোনরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বিবর্তন, সংযোজন-বিয়োজন না করা এবং নিজের পক্ষ থেকে আল্লাহ্র কোন নাম বা গুণ সাব্যস্থ না করা। যারা আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে এরকম কিছু করে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
وَلِلّهِ الأَسْمَاء الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُواْ الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَآئِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ.سورة الأعراف- ١٨٠
অর্থাৎ- আর আল্লাহ্র জন্য রয়েছে উত্তম নামসমূহ। কাজেই সেসব নাম ধরেই তাঁকে ডাকো। আর তাদেরকে বর্জন করো, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।ছূরা আল আ‘রাফ- ১৮০
আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলির কোন কিছুকে অস্বীকার করল, সে নিশ্চয়ই কুফ্রী করল। আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
كَذَلِكَ أَرْسَلْنَاكَ فِي أُمَّةٍ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهَا أُمَمٌ لِّتَتْلُوَ عَلَيْهِمُ الَّذِيَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَهُمْ يَكْفُرُونَ بِالرَّحْمَـنِ قُلْ هُوَ رَبِّي لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ مَتَابِ.سورة الرعد- ٣٠
অর্থাৎ- এমনিভাবে আমি আপনাকে একটি উম্মাতের মধ্যে প্রেরণ করেছি। তাদের পূর্বে অনেক উম্মাত অতিক্রান্ত হয়েছে। যাতে আপনি তাদেরকে ঐ নির্দেশ পড়ে শুনান, যা আমি আপনার কাছে প্রেরণ করেছি, তথাপি তারা দয়াময়কে অস্বীকার করে। বলুন! তিনিই আমার পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করেছি এবং তাঁর দিকেই আমার প্রত্যাবর্তন।ছূরা আর্রা‘দ- ৩০
“আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ- তারা আল্লাহ্র (0) ঐ সকল পরিপূর্ণ গুণাবলিই নির্ধারণ করেন, যা আল্লাহ 7 নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন এবং ঐসকল গুণাবলি প্রত্যাখ্যান করেন, যা আল্লাহ 7 নিজের জন্য পছন্দ করেননি। আর তারা (আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ) আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলী নির্ধারণ ও প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্র উপর নির্ভর করেন।
যেমন- আল্লাহ (0) এর বাণী:- الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى (রহমান ‘আরশের উপর অধিষ্ঠিত), এক্ষেত্রে আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ বলেন “استوى” বা অধিষ্ঠিত হওয়া, এটা আল্লাহ 0 তার বড়ত্ব ও মহত্ত্বের জন্য যেভাবে উপযোগী সেভাবেই হয়েছেন। তারা “استوى” কে (অধিষ্ঠিত হওয়াকে) “استولى” (ক্ষমতাসীন হয়েছেন) অর্থে ব্যাখ্যা করেন না। বরং তারা এই গুণটিকে এভাবেই নির্ধারণ করেন এবং এভাবেই ঈমান পোষণ করেন যেমন ভাবে আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব ও মহত্ত্বের উপযোগী হয়। কেননা “استيلاء” শব্দের দ্বারা “استوى” এর ব্যাখ্যা করা, শব্দকে তার স্থান থেকে পরিবর্তন করা ও কোন প্রমাণ ছাড়া শব্দকে তার বাহ্যিক বা প্রকাশ্য অর্থ থেকে পরিবর্তন করে দেয়ার নামান্তর।
তেমনি ভাবে আল্লাহ্র (0) বাণী:- “بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ” (ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৬৪) এখানেও তারা আল্লাহ্র হাত বলতে এমন হাতই নির্ধারণ করেন, যা আল্লাহ্র (8) মহত্ত্ব ও তার মহান শান উপযোগী। যাহমিয়্যাহ ও মু‘তাজিলা সম্প্রদায় এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসারী মুআওয়্যিলাহ (অপব্যাখ্যাকারী) সম্প্রদায়ের মত তারা (আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ) হাতকে ক্বোদরাত (শক্তি) ও নি‘মাত অর্থে ব্যাখ্যা করেন না। তেমনিভাবে আল্লাহ্র (0) বাণী:- “وَجَاء رَبُّكَ” (ছূরা আল ফাজ্র- ২২) এক্ষেত্রেও আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ বলেন যে, আল্লাহ 7 তার মহান শান ও মর্যাদা অনুযায়ী যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে আসবেন। এসম্পর্কে তারা এর বাহিরে আল্লাহ্র (0) আগমনের ধরন ও প্রকৃতির বিবরণ সম্বলিত কোন ব্যাখ্যা প্রদান করেন না। ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্তে বর্ণিত আল্লাহ্র (0) সকল নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে আহলুছ্ ছুন্নাহ ওয়াল জামা`আত এই নীতি অনুসরণ করে চলেন।
আর এ কারণেই তারা আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলিকে বাতিল ও অনর্থক সাব্যস্তকারী যাহমিয়্যাহ ও মু‘তযিলাহ সম্প্রদায় এবং আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলির আকার ও সৃষ্টির সাথে সদৃশ্য নির্ধারণকারী মুমাছ্ছিলা ও মুশাব্যিহা সম্প্রদায়ের তুলনায় মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী বলে গণ্য হন। আল্লাহ্র (b) নামরাজি ও গুণাবলির ক্ষেত্রে যাহমিয়্যাহ ও মু‘তাযিলাহ সম্প্রদায়ের বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতায় পতিত হওয়ার মূল কারণ হলো- তারা এগুলোকে সৃষ্টির নাম ও গুণাবলির মতই বলে বুঝতে পারে।
তাই তারা মহান স্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে যাতে তুলনা করতে না হয়, সে জন্য তারা আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলিকে বাতিল ও অনর্থক সাব্যস্ত করে কিংবা এগুলোর অপব্যাখ্যা করে থাকে। তাদের অবস্থা হলো- রুদ্র থেকে বাঁচতে গিয়ে আগুনে ঝাঁপ দেয়ার মতই। কেননা তারা আল্লাহ্র সদৃশ্য নির্ধারণ থেকে বাঁচতে গিয়ে মহান আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলিকে অস্বীকার করে বসে, কিংবা এগুলোর প্রকৃত সঠিক অর্থ বাদ দিয়ে ভুল অর্থ গ্রহণ করে নেয়। তাই প্রত্যেক মুছলমানের জন্য ওয়াজিব- আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলি যেভাবে তার মহান শান ও শওকতের জন্য হওয়া উপযোগী, ঠিক সেভাবেই এগুলোর প্রতি ঈমান পোষণ করা। মাক্কার সুপ্রসিদ্ধ ইমাম মালিককে (o) যখন এক বিদ‘আতী প্রশ্ন করেছিল যে, আল্লাহ ‘আরশের উপর কিভাবে অধিষ্ঠিত? এ প্রশ্নের অত্যন্ত চমৎকার একটি উত্তর দিয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেছিলেন- ”আল্লাহ ‘আরশের উপর অধিষ্ঠিত” এটা জানা বিষয়, কিন্তু কিভাবে অধিষ্ঠিত তা আমাদের অজানা, ”আল্লাহ ‘আরশের উপর অধিষ্ঠিত” এ সত্যকে বিশ্বাস করা ওয়াজিব, তবে হ্যাঁ, কিভাবে অধিষ্ঠিত, সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা বিদ‘আত।
ইমাম মালিক o ইছতিওয়া (আল্লাহ ‘আরশের উপর অধিষ্ঠিত হওয়া) সম্পর্কে এই যে কথাটি বলেছেন, আল্লাহ্র সকল সুন্দর নামরাজি ও মহান গুণাবলির ক্ষেত্রে এটাই হলো আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি। এ নীতিকে অনুসরণ করা সকল মুছলমানের অপরিহার্য কর্তব্য।